গল্প উপন্যাস ইতিহাস পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে অনেক মুভি নির্মিত হয়েছে। শুধু মাত্র একটি কবিতা অবলম্বনে কোন মুভি নির্মিত হতে পারে তা চিন্তাতেও আনতে পারিনি কোনোদিন। সরকারি অনুদান প্রাপ্ত বাংলাদেশের এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে গত জুন মাসে। মাসুদ পথিক এর পরিচালনায় চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন অভিনয় করেছেন- শিমলা, জুয়েল মামুনুর রশীদ, প্রবীর মিত্র, রাণী সরকার, তারেক মাহমুদ, রেহানা জলি, জুবায়ের। এ ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণসহ ( তবে নেকাব্বরের লাশ যখন রেলস্টেশনে পড়ে থাকে, তার লাশ দেখতে মানুষজন আসে। ভিড় ঠেলে কবি নির্মলেন্দু গুণও আসেন। লাশটি দেখে বিস্ময় বোধ করেন। কিন্তু পরে এই দৃশ্যটি বাদ দেয়া হয়েছে ) আরো ১৫ জন কবি। চলচ্চিত্রটিতে কাহিনী চিত্রের পাশাপাশি তথ্যচিত্রের আবহকে ধারণ করার চেষ্টা করে,প্রেম, প্রকৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের গাথা সূত্রে তথ্যের ইমেজ ধরে আবহমান বাংলার নিবিড় রিচুয়াল, জীবনের অন্তর্গত দর্শন, তথা জীবনবোধকে তুলে ধরা হয়েছে।

‘ ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ চলচ্চিত্র আমাদের চিন্তাকে নাড়া দিয়েছে। একজন বঞ্চিত মানুষের প্রতিকৃতি হচ্ছেন নেকাব্বর। যিনি অন্যায় ভাবে তাঁর সম্পদ হারিয়েছেন , ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে সে তার প্রেমিকাকে হারিয়েছেন, যুদ্ধে একটি পা খুইয়েছেন। যুদ্ধের পরে পঙ্গু হয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে হয়েছে। । তাঁকে পাগলা গারদেও থাকতে হয়েছে। পাগলা গারদ থেকে বেরিয়ে অনাহারে থেকেছেন,পেয়েছেন সমাজের  বঞ্চনা আর লাঞ্চনা। একজন নেকাব্বর এমনি লাঞ্চনা বঞ্চনা সহ্য করতে করতে একসময় মৃত্যু বরন করেন।

যে কবিতাটি অবলম্বনে ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ মুভিটি নির্মিত হয়েছে, তা শুনুন এখানে ক্লিক করে।
.
নেকাব্বর জানে তাঁর সম্পত্তির হিসাব চাইতে আসবে না

কেউ কোনোদিন।
এই জন্মে শুধু একবার চেয়েছিল একজন, ‘কী কইরা
পালবা আমারে,
তোমার কী আছে কিছু তেনা?’
সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে ফাতেমাকে জড়িয়ে দু’হাতে বুকে পিষে
বলেছিল নেকাব্বর;
‘আছে, আছে, লোহার চাককার মতো দুটা হাত,
গতরে আত্তীর বল – আর কীডা চাস্ মাগী।’
‘তুমি বুঝি খাবা কলাগাছ?’

আজ এই গোধূলিবেলায় প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালা চোখে নিয়ে
নেকাব্বর সহসা তাকালো ফিরে সেই কলাবাগানের গাঢ় অন্ধকারে।
তিরিশ বছর পরে আজ বুঝি সত্য হলো ফাতেমার মিষ্টি উপহাস।
পাকস্থলি জ্বলে ওঠে ক্ষুধার আগুনে, মনে হয় গিলে খায়
সাজানো কদলীবন,’
যদি ফের ফিরে পায় এতটুকু শক্তি দুটি হাতে, যদি পায়
দাঁড়াবার মতো এতটুকু শক্তি দুটি পায়ে।

কিন্তু সে কি ফিরে পাবে ফের?
ফাতেমার মতো ফাঁকি দিয়া সময় গিয়েছে ঢের চলে।
কারা যেন ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছে সব শক্তি তার।
বিনিময়ে দিয়ে দেছে ব্যাধি, জরা, দুর্বলতা, বক্ষে ক্ষয়কাশ-
অনাদরে, অনাহারে কবরে ডুবেছে সূর্য, ফাতেমার তিরিশ বছর।
এখন কোথায় যাবে নেকাব্বর?

হয়তো গিলেছে নদী তার শেষ ভিটেখানি, কবর ফাতেমা-
কিন্তু তার শ্রম. তার দেহবল, তার অকৃত্রিম নিষ্ঠা কারা নিলো?
আজ এই গোধুলিবেলায় এই যে আমার পৃথিবীকে মনে হলো পাপ,
মনে হলো হাবিয়া দোজখ – কেউ কি নেবে না তার এতটুকু দায়?
মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চায় না সুদুরে চলে যেতে, নেকাব্বর ভাবে,
অজানা অচেনা স্বর্গে বুঝি মেটে বাস্তবের তৃষ্ণা কোনোদিন?
তবু যারা চায়, তারা কেন চায়? তারা কেন চায়? কেন চায়?

নেকাব্বর শুয়ে আছে জীবনের শেষ ইস্টিশনে। তার পচা বাসী শব
ঘিরে আছে সাংবাদিক দল। কেউ বলে অনাহারে, কেউ বলে অপুষ্টিতে,
কেউ বলে বার্ধক্যজনিত ব্যাধি, – নেকাব্বর কিছুই বলে না।

নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ চলচ্চিত্রের সমস্ত গান এখানে শুনুন/ডাউনলোড করুণ

প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আমরা কবির রোগ মুক্তির জন্য প্রার্থনা করি।

৮৬২জন ৮৫৯জন
0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ