বাচ্চা তিনটার সামনে আজ আমার নিজেকে অনেক বেশি ছোট মনে হলো। অনেক, অনেক ছোট লাগলো। অপরাধবোধে মাথাটা নুইয়ে এলো। না জানি কোন মা-বাবার আদর্শে বেড়ে উঠা সন্তান ওরা। নিশ্চয় কোন মমতাময়ী মায়ের গর্ভজাত সন্তান!

মানুষ! হ্যাঁ, এরাই প্রকৃত মানুষ। লক্ষ লক্ষ কিলবিল করা অমানুষের ভিড়ে এরাই প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে। নিজের চোখে দেখা এই বাচ্চা তিনটার ভূমিকা আজ আমাকে ভীষণরকম অবাক করে দিয়েছে। আমি ভাবতেই পারছি না ছোট্ট কোমল মনের শিশুরা এতো উদার হতে পারে! তাদের ভেতরে এত্তো মমত্ববোধ কাজ করতে পারে! আত্মস্বার্থ নয়, নিঃস্বার্থও নয়, পরার্থবাদে নিজস্বার্থ উদার হস্তে দিতে পারে!! তাও আবার এখনকার যুগে? আত্মকেন্দ্রিক মনমানসিকতার বিষবাষ্প যেখানে পুরো সমাজ কাঠামোতে ভর করে আছে সেসময়টায় বেড়ে উঠা বাচ্চাদের মননে এমন বোধ জেগে আছে দেখে সত্যিই আমি যার পর নাই আশ্চর্য হয়েছি, অভিভূত হয়েছি।

যাহোক, আসল কথায় আসি। গাড়ীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি আর দেখছি অপ্রকৃতস্থ মহিলাটির লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া বাড়িখানা। কদিন আগে অপ্রকৃতস্থ মানুষটি টোকানো ইট, পলি, কাগজ আর এক টুকরো শাড়ী দিয়ে পথের ধারে কোনরকমে বাড়িমতো বানিয়ে থাকতে শুরু করেছিলো (বাড়ি না বলে ঝুপড়ি বলাই ঠিক)। আজ দেখি বাড়িখানা কেমন লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। আমি তাঁকে এখন খালা ডাকি। বাড়িতে এই মুহূর্তে সে না থাকলেও রাতে এখানেই যে ছিলো বুঝা যায়। রাস্তার কিনারা ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের কিছু কাটা ডালপালা তাঁর বাড়ির উপর পড়ে আছে। বুঝতে পারছি না এগুলো যারা কেটেছে তারাই ফেলে গেছে কি না, নাকি সে সংগ্রহ করে এনে স্তুপ করেছে! করতেও পারে। অপ্রকৃতস্থ মানুষ কতো কিছুই তো করতে পারে। আবার স্তুপের ধরণ দেখে মনে হয় কেটে ফেলাকালীন সময়ে ঠিক এখানে এভাবেই পড়েছে।

সময় গড়িয়ে যাচ্ছে অথচ গাড়ী আসছে না দেখে আমি বিপরীত দিকে তাকিয়ে ছিলাম, হঠাতই খলখল শব্দে ফিরে দেখি তিনটি বাচ্চা মেয়ে এসে খালার ঝুপড়িতে মাথা নুইয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে। ওদের একজন আরেকজনকে বলছে, ”না নেই”।
জিজ্ঞেস করলাম, ”কি খুঁজছো তোমরা?”
-এইখানে যে থাকে, তাকে।
-কেনো? (বাচ্চা মেয়েগুলোর মাঝে ইতস্ততভাব)। তোমরা চিনো তাকে?
-আমরা মাঝেমাঝে খাবার দেই।
-কি খাবার দাও?
-বিস্কুট (হাতে ধরা প্যাকেট দেখিয়ে। আমি জাস্ট ‘থ হয়ে গেলাম)।
-ভয় করে না তোমাদের?
-না। একবার আমাদের বাসায় গেছিলো, খেয়ে আসছে। আমরা স্কুলে যাবার সময় বিস্কুট দেই। দিলে খুশি হয়।
আদরে আহ্লাদীতে আমি বললাম, আসো, আসো, তোমাদের তিনজনের একটা ছবি তুলি। দাঁড়াও সুন্দর করে বলতেই একজন গালে আঙুল ঠেকিয়ে পোজ দিলো।
ছবি তোলা শেষ, মেয়েরা যাওয়ার জন্য রওয়ানা করেই আবার ফিরে দাঁড়িয়ে বললো, “আন্টি, রাস্তাটা একটু পার করে দিবেন?। (হাইওয়েতে তখন সমানে গাড়ী আসাযাওয়া)। আমার গাড়ীরও খবর নেই। বাচ্চা তিনটাকে ধরে পার করে দিয়ে আসলাম। উনারা আবার অই পারেও একখান ছবি তুলে দিতে আবদার জানালেন, যদিও তোলা ছবি দেখার আবদার নেই। তুলে দিলাম।

★ভাবছি,
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি। রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

বিঃদ্রঃ ছবি দিতে পারলাম না।

অপ্রকৃতস্থ মানুষ এবং রহস্যময় জীবন!

৪২৪জন ৪২৪জন
0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ