নিনিষ্ণম,
আমাকে কি তোমার মনে পড়ে কখনো? চব্বিশটি ঘন্টার প্রতিটি রুটিনের মধ্যে আমার অবস্থান কি আছে এখনও? নাকি ন্যাপথালিনের ঘ্রাণের মতো মিলিয়ে গেছি? আচ্ছা অনেক ভোরে যখন শান্ত শহরটা আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠার প্রস্তুতি নেয়, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা কফি মগে চুমুক দিতে দিতে ওই আকাশের দিকে কি চোখ যায় তোমার? দূরের ওই আকাশে ধ্রুবতারার ম্লান হয়ে যাওয়া দেখে কখনো কি মনে পড়ে তোমার এই “ভিনদেশী তারা”র কথা? অথবা গীটারের কর্ডে টুংটাং সুর তোলার সময় আনমনে কি রূপঙ্করের “চলে এসো আজ রাতে প্রিয়তমা” গানটি চলে আসে? চমকে থেমে গিয়েই মাথা নুয়ে দীর্ঘ একটি শ্বাস কি ছাড়ো? মান্না দে’র “আমি যামিনী, তুমি শশী হে” গানটা মনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেজে ওঠে কি আজও? নিজেরই অজান্তে গুনগুন করতে গিয়ে বাতাসে কি তোমার দীর্ঘশ্বাস মিশে যায়?
নিনিষ্ণম আমায় কখনো কি মনে পড়ে? বোলপুরে পৌষের মেলায় যাবার পথে গাড়ী থামিয়ে চায়ের ছোট্ট ধাবাতে মাটির ভাঁড়ে চায়ে চুমুক দিয়ে অনেক অনেক গল্প বলা, সেসবের কথা কি মনে আছে? একদিন শহর থেকে অনেক দূরের অরণ্যে তোমার বাইকের পেছনে বসে ভয়ে তোমার কাঁধ খামচে ধরা, তারপর তোমাদের বিশাল রাজবাড়ীতে রাত কাটানো, মনে পড়ে? আমার নোখের আঁচড়ে তোমার সমস্ত পিঠে দাগ, মিথ্যে রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞাসা “এই শাঁকচুন্নী নোখ কাটোনা কেন?” তার উত্তরে আমার বলে ওঠা, নোখ কাটবো মানেটা কি? চেয়ে দেখো তো আঙুলে লম্বা নোখ আছে কিনা! বাতাসের আর্দ্রতা তোমার শ্বাসে এসে ধাক্কা খায়। তখন তোমার ক্লান্ত চোখ দুটো কি খোঁজে আমায়? আচ্ছা নিনিষ্ণম বেলী ফুলের মালায়, কিশোরীর হাতে ঝোলানো গাজরায়, তাঁতের শাড়ী দেখে আমার এই লাজুক চোখটাকে কি একটুকুও ভাবো, যে তোমার অপেক্ষা করতে করতে আজও ক্লান্ত হয়নি? আচ্ছা আমায় কি তোমার মনে পড়ে? ক্ষয়ে যাওয়া মুহূর্তে, নিঃসঙ্গ একাকীত্ত্বে, অনেকের ভীড়ে একাকী ভাবনায় কখন মনে পড়ে? কখন??
ব্যস্ততার শিডিউলে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে বিশাল প্রেজেন্টেশন, প্রোজেক্টর স্ক্রীনের দিকে চেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ আলোচনার ভেতর আচমকা আমি কি এসে তোমার আবেগে ধাক্কা দেই? ম্যানেজিং ডিরেক্টরের চেয়ারে বসে একেকটি ফাইল দেখে সাইন করা শেষ হলে সেলফোনের দিকে চেয়ে আজও কি পড়ো আমার টেক্সট? তারপর সেই পুরোনো টেক্সট, ছবির ফোল্ডার খুলে মনে মনে কি ভাবো তুমি আমায়, এখন কেমন আছি, কোথায় আছি? বিজনেসের কাজে দেশের বাইরে যাবার সময় প্লেনের ভি.আই.পি সিটে বসে আমার সাথে ইন্টারনেটে দুষ্টুমী আর আমায় ক্ষ্যাপানো, মনে পড়ে? সেই যে একবার চায়নাতে গেলে ফিরে এসে কতো যে চেষ্টা তোমার আমাকে ক্ষ্যাপানোর, কিন্তু হেরে গেলে। মিথ্যে ভণিতা তোমাকে দিয়ে যে হয়না, এ আমার চেয়ে আর কেইবা জানে! আচ্ছা আজকাল কাকে তোমার অভিমান দাও? আছে কি সেই জায়গা? তোমার অবুঝ রাগ আর তারপর গাল ফুলিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে নেয়া, তেমনি কি এখনও আছো? ওই মেয়েটি কি তোমার অভিমান-নীরব কষ্ট আগলে নিতে পারে? যার জন্যে অনায়াসে তুমি নিজেকে আড়াল করে নিয়েছো, তুমি কি পেরেছো আমায় ভুলে যেতে? শুনেছি ফিলিংস ওয়ান-ওয়ে হয়না কখনো, হয় কি?
আচ্ছা বলোই না নিনিষ্ণম, আমায় কি তোমার মনে পড়ে?
ইতি,
এখনও তোমারই স্নির্তা
হ্যামিল্টন, কানাডা
৩০ আগষ্ট, ২০১৬ ইং।
**২০১৬ সালের প্রথম লেখা ছিলো চিঠি। কবিতা-গল্প সবকিছুর চেয়ে আমার প্রিয় বিষয় হলো চিঠি। এখানে যেনো আমি হারিয়ে গিয়ে আমার আমি’কে এক অন্যরূপে পাই। সেই পহেলা জানুয়ারী চিঠি লিখেছিলাম অহর্নিশকে। আজকের চিঠি নিনিষ্ণমের জন্য।**
২২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
পোক্ত হাতের লেখা চিঠি, পড়ছি সেই কবে থেকেই।
এমন চিঠিতে কে কোথায় কখন কুপোকাত কে জানে।
নাম তো মাশাল্লা শক্ত শক্ত, রস-কস বুঝতে পাকা মানুষ লাগবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
কবে থেকে পড়ছেন শুনি! আপনার তো দেখি দিব্যদৃষ্টিওও আছে!!! 😮
এমন চিঠি আমার নীলের জন্য লিখেছি তার চোখে পড়লেই হলো। এখন জানতে চাইবেন নীল কে? নীল আমার প্রিয় নাম, প্রিয় রঙ। বুঝেছেন গো কবিরাজ ভাই?
আমি চেষ্টা করি অপ্রচলিত নাম আমার লেখায় রাখতে।
যাক রিপ্লাই কি দেবেন? কতো বকর-বকর করলাম সেনসোডাইন টুথপেষ্ট দিয়ে দাঁত মেজে। 😀
ছাইরাছ হেলাল
অহম- তিরিরা কি ল্যাহা লেহি করত!!
নীল রং আপনি কিন্না নেছেন মুনে লয়, দৃষ্টিতে দিব্য নেই তবে ফকফকা আছে,
তাও একেবারে মন্দ না কামকাইজে।
অপ্রচলিত নাম তো ভালই, দিন না বেশি বেশি, তবে কটমটে না হলেই আরাম,
নীলাঞ্জনা নীলা
চিন্তা কইরেন না। শুনেন অহম-তিরি আমার চেয়ে ভালো চিঠি লিখতেই পারেনা।
হ, নীল জন্মগতভাবে আমার। বুজছেন কুবিরাজ ভাই?
দিব্য নাই ফকফকা দৃষ্টি। তা তো হইবোই। চক্ষু এপস নতূন কইরা ইন্সটল করছেন, সেসব তো জানি। 😀
মৌনতা রিতু
এতো এতো আবেগ ! এই চিঠি পড়ে তার যে বুকের উথাল পাথাল হবে এটা নিশ্চিত।
আমিই তো ভাবুক হয়ে গেলাম এ চিঠি পড়ে।
অনেক ভাল লাগল চিঠিটা।
নীলাঞ্জনা নীলা
মৌনতা আপু তোমার মন ভিঁজেছে তো? তাহলেই হবে।
উথাল-পাথাল হওয়া কি অতোই সহজ গো? তাহলে তো এই বয়সে প্রেমের চিঠি লিখতাম না। :p 😀
মিষ্টি জিন
চিঠি আমি খুবই পছন্দ করি.. আর তা যদি হয় এত্ত ভালবাসা আর আবেগে ভরা ,তাহলেতো কথাই নেই।
পুরাই কুপোকাত।
অসাধারন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
মিষ্টি আপু এমন চিঠি কেউ দেয়নি আমায়। 🙁 এই দু:খ কোথায় রাখি? ;(
আর এখন তো কূপোকাত কেউ হবেও না। হতে চাইলেও রিজেক্ট। 😀
মিষ্টি জিন
আপু আমাকেও কেউ দেয়নি ;(
নীলাঞ্জনা নীলা
কাঁদবেন না মিষ্টি আপু। এক কাজ করি আপনি আমাকে দিন, আমি আপনাকে। 😀
ব্লগার সজীব
অদ্ভুত সুন্দর একটি চিঠি পড়লাম নীলাদি। নাম দুটো কত সুন্দর! চিঠি এত সুন্দর হতে পারে!!??
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাভু বাইয়া আপনি আরোও সুন্দর চিঠি লিখতে পারেন। আমাদের ভাভু ভাবীকে তাড়াতাড়ি আনুন। তখন চিঠি কিন্তু এই সোনেলাতেই পোষ্ট করতে হবে, মনে থাকে যেনো। 😀
ইঞ্জা
এতো আবেগ নিয়ে কারে লিখলেন এই চিঠি, মন তো এমনিতেই ছুঁয়ে গেলেন কিন্তু যাকে লিখেছেন সে কি পেয়েছে, আধো পাবে কি?
নীলাঞ্জনা নীলা
এটাই তো কথা! যাকে নিয়ে লিখলাম সে কি আদৌ পাবে? নাকি না? আচ্ছা আমি কাকে নিয়ে জানি লিখেছি?
ইঞ্জা বলুন তো দেখি! 😀
ইঞ্জা
মর জ্বালা,আমি যা জিগাইলাম আমারে আবার তাই জিগায়। ^:^
নীলাঞ্জনা নীলা
দুনিয়াই এমন, প্রশ্নের উত্তর আজকাল প্রশ্ন দিয়ে হয়। 😀
শুন্য শুন্যালয়
বুঝলাম না, নিনিষ্ণমের কাজকর্ম সব কী তুমি মাথায় উঠাতে চাও? গুরুত্বপূর্ন আলোচনায়ও তুমি, ফাইল দেখতে দেখতেও তুমি, প্রেজেন্টেশনেও তুমি। তোমার ভালোবাসায় চ্যাপ্টা হয়েই নিনিষ্ণম পালিয়েছে বুঝতে পেরেছি।
এত্তো কঠিন প্রশ্ন করা কিন্তু ঠিক না, ফিলিংস ওয়ান-ওয়ে হয়না, হয় কী? হয় আবার হয়না, যাক ও তুমি বুঝবেনা।
এতো ভালো চিঠি লিখতে যে পারে, তার মতো আবেগ-কষ্ট আগলে রাখবার ক্ষমতা কারোরই নেই, বুঝেছ? নিনিষ্ণমও শুনলাম আঙ্গুলের নখ বড় করছে।
এতো আবেগ ভালো কিন্তু ভালো না।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি যাকে ভালোবাসি, তার অবস্থা পাগল করে ছাড়ি। বুঝেছো তিলোত্তমা সুন্দরী?
আর আবেগ ছাড়া পৃথিবীতে কিছু আছে নাকি? দেখাও দেখি তোমার আবেগ নেই। যদি বোঝাতে পারো তোমার আবেগ নেই, তাহলে আবেগহীন লেখা লিখবো। শ্বাস থাকবে কিন্তু আত্মা থাকবে না। রাজী?
ইলিয়াস মাসুদ
গল্প কবিতার চেয়ে ও কখনো খনো চিঠি সুন্দর হয়, চিঠি আমারো দারুণ প্রিয়, তবে যে সে চিঠি না, কারো কারো চিঠি,কেউ কেউ আছেন যারা খুব দারুণ চিঠি লিখতে জানে,সে চিঠি যে পাবে সে কখুনো সেই চিঠি হাত ছাড়া করতে পারবে না, জানেন আমি ছোটবেলায় আমার এক আপুর চিঠি লুকিয়ে পড়তাম, আপুটা প্রেম করত এক কাকার সাথে ,কাকাটা কি যে দারুণ চিঠি লিখত, আমি একবার সেই চিঠি পড়ে চিঠির প্রেমে পড়ে যায়, তার পর থেকে আপুর চিঠি এলেই আমি চুরি করে পড়ে নিতাম, হাহাহাহাহ
আপনার এই চিঠি পড়ে আমারো চিঠি লিখতে ইচ্ছে করেছে ……।। দারুণ আবেগ, আবেগ তো নয় যেন শিমুলের তুলোর মত নরম কোমল আবার শীতের উননের মত ঊষ্ণ
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার মাসতুতো ভাই রানা আর আমি দুজন দুজনকে কতো যে চিঠি লিখতাম। অনেক আদরের ভাই আমার। আমার মনের মতো করে অনেক গিফট দেয়। এবারকার জন্মদিনে রানার থেকে পাওয়া এই কয়েকটি লাইন আমায় অনেক আনন্দ দিয়েছে। চিঠির প্রতি ভালোবাসা ওভাবেই এসেছে জীবনে। রানার লেখাটি দিলাম—-
তুই না থাকলে জনতা পার্টির পতাকা উড়তো না…
তুই না থাকলে আমার ব্যান্ডের ক্যাসেট কেনা হতোনা…
তুই না থাকলে কখনো জামবাক খাওয়ার কথা ভাবাই হতো না…
তুই না থাকলে… ১০টা নিয়ম শেখা হতো না…
তুই না থাকলে খামচা-খামচি যে একটা খেলা তাই জানতাম না…
তুই না থাকলে জীবনে তোর জন্য ভিখারির মতো হাত পেতে সিন্নী আনার আনন্দ পেতাম না…
তুই না থাকলে রাতের পর রাত কুলু আড্ডা দেয়া হতো না…
তুই না থাকলে ভাইয়ের প্রতি ভালবাসা কি আর কতটুকু, কোনদিন বুঝতাম না…
তুই না থাকলে বোন শব্দটার অর্থ জানা হতো না…
শুভ জন্মদিন রে…
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
চিঠি আমারো প্রিয়
গদ্য পদ্য মিলিয়ে চিঠিটি দারুন হয়েছে। (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই আপনি জীবনে এমন চিঠি কাউকে দিয়েছেন কখনো? 😀