
এক লোক কলা মাথায় বাজারে যাচ্ছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন জিজ্ঞেস করছিল, ভাই কই যান? মাথায় কি নিয়া যান?
উত্তর দিতে দিতে বেচারা কাহিল। এমনি মাথায় একগাদা কলা তারউপর হেঁটে বাজারে যেতে হবে। শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। আবার একজন জিগায়,”ভাই কই যাও?মাথায় কি?”
উত্তর,”কলা যাই? মাথায় বাজার।”
হি হি করে হেসে আবার প্রশ্ন‘ “ভাই কলা নিয়া বাজারে যাও। উল্টা পাল্টা বকতেছ কেন? মাথা ঠিক আছে তো”?
এটা আমাদের সমাজ। আপনি যাবেন কই? যেটাই করবেন বিরাট সমালোচনা। অন্যের মনমত হওয়া বা তাদের মত চলা কি যায়? কিংবা চলাটা খুব জরুরী? আমার তো মনে হয় ছোটছোট কিছু স্বাধীনতা আমাদের থাকা উচিত।
যুগের পর যুগ পুরুষরা বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা, তামাক, গুল, জর্দা সবই খায়। কোন সমস্যা নেই শুধু নারী খেলে সমস্যা। আর তা যদি রাস্তায় হয় আরও সমস্যা। হেনস্তা করার জন্য পুরো সমাজ দাড়িয়ে যাবে। কোনকালে কি কোনো পুরুষ সিগারেট খাবার জন্য হেনস্তা হয়েছে? প্রকাশ্যে ধূমপান সবার জন্যই মানা। অথচ বেয়ারা নারী তাকে বাঁধতেই হবে।
সমীকায়সার বিয়ে করেছে বুড়োকে। তার ভালো লেগেছে করেছে। এটাতেও সবার সমস্যা। কেন সমস্যা তুমি কি বিয়ে করতা? না তোমার কেউ ছিল বিয়ে করানোর মত? সমস্যা সেটা না, সমীকায়ছার সুখী হোক এটা আমরা চাই না। চাই বাকিজীবন একা একা দুঃখী দুঃখী ভাব করে; সতীসাধ্বী হয়ে কাটিয়ে দিক। আমরা তখন সহানুভূতির আহা! উহু! পসরা ছড়াতাম।
বিউটি পার্লারে আমরা নারী পুরুষ সবাই যাই। চুল কাটাসহ সব কাজই করি। তাছাড়া বউ বর সবাই না সাজলে বিয়েই হয়না। আনন্দ অপূর্ণ থাকে। বিউটিশিয়ান যেহেতু সাজায় তাই ফিটফাট হয়ে থাকাটা তার জরুরী। সেজেগুজে, চুল কালার টালার করে থাকে। আমরা সাজগোজ শেষ করে বাইরে বের হয়ে বলি, পার্লারের মেয়েরা নষ্ট হয়। তারা ভালো না, ওদের বিয়ে করা অনুচিত। আবার পত্রিকা ম্যাগাজিন সব খানে বিউটি টিপস থাকে।সেখানে বিভিন্ন স্বনামধন্য বিউটিশিয়ানদের ভরপুর সাক্ষাতকার। তাদের এওয়ার্ডও দেওয়া হয়। সেগুলো হা করে গিলে হলুদ বাটতে বসে যাই।
ভারতের বিখ্যাত বিউটিশিয়ান পুরুষ,তাকে একবার বাংলাদেশ ভাড়া করে অতিথী বানিয়ে নিয়ে এল।তার কাছে নাকি শেখার আছে। শত শত মেয়ে তার হেয়ার স্ট্যাইল দেখে, সৌন্দর্য দেখে পাগল হয়ে গেল। বেচারা মধ্যবয়সী বুড়ো বিউটিশিয়ান সে তো নাপিতই। ভাড়া করা নাপিত বলে তার মূল্য বেশি। আর দেশী নাপিত বিয়ে করা অন্যায়? এটা কেমন।
আচ্ছা ভাবুনতো, এই নাপিত না থাকলে কি যে হতো চুলের অবস্থা। তাই প্রত্যেকটি বিষয় আমাদের সমালোচনা করার আগে ভাবা উচিত।
সাঁইত্রিশ বিসিএস থেকে আনসার ক্যাডারে ট্রেনিংয়ে থাকামেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। তাতেও সমস্যা। মেয়েটি নিশ্চয়ই খারাপ ছিল, বদচরিত্র ছিল। না হলে এমন জাহান্নামের কাজ কেন করে? কিন্তু একবারও ভাবিনা সে সকল সফলতা শেষে কেন এ কাজ করল? আমাদের সহানুভূতির দুয়ার কারও জন্যই খোলা নেই।কেউ কিছুই করতে চায় না। সবাই চায় নিজের মত করে স্বাধীনতায় বাঁচতে, আমরা দেইনা। তাকে বিভিন্ন মানষিক যন্ত্রণা দেই। কেউ সব সহ্য করে বেঁচে থাকে আর কেউ পারেনা বলেই আত্মহত্যা করে।
রাজনীতি ভালো না কিংবা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেউ ভালোনা। এ কথা অতি সত্য। পলিটিক্যাল সায়েন্স এর স্টুডেন্ট বলে আমার রাজনীতি কখনোই টানেনা। নিজের পেট পুজা করি। তারপরও মনে করি অবশ্যই আমাদের আলোচনা-সমালোচনা থাকা উচিত। তাহলে অন্যায়-অনাচার কম হবে। কিন্তু যেটা নিখুঁত ভালো কাজ সেটারও তো সুনাম করা দরকার। আমরা তা করবনা, কষ্ট হবে? পদ্মা সেতুর কাজ হবেই না, হতেই পারে না এমন কথা শুনে শুনে সেতুর নির্মাণ শেষ। শুরু হলো পিলার খোঁড়াখুঁড়ি ভেজাল আছে কিনা। কিংবা অতি দ্রুতই এ সেতু ভেঙে পরবে।
আমাদের নিজের পাছায় ‘হাগু‘ নিয়ে অন্যের পাছা শুঁকে বেড়ানো বন্ধ করা দরকার। নিজের স্বাধীনতায় অন্যের ক্ষতি না করে কেউ বাঁচলে বাঁচুক। এটা তার অধিকার! কেন অযথা সেটা নিয়ে হইচই। গ্রামে প্রবাদ আছে, ” কাম নাই যে কুত্তার, সে ঘোরে আইলে আইলে”। সবশেষে এটাই সত্য।
আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সবার জন্য শুভ কামনা।🌹🌹
১৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার বলেছেন আপু। পুরোপুরি একমত পোষণ করছি। আমরা অন্যের সমালোচনার জন্য মুখিয়ে থাকি। কেউ বিয়ে করলেও দোষ, না করলেও দোষ , কাকে বিয়ে করেছে সেটা নিয়ে ও ভরপুর খেঁচাখেঁচি।কে জাহান্নামে যাবে, কে যাবে না সেটাও সবাই বলে দেয়।মোট কথা সমালোচনা, দোষ দেয়া এগুলো না করলে এদের বদহজম হয়। নেই কাজ তো খই ভাজ । নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দিদিভাই।
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল😍😍
বন্যা লিপি
কিছু শব্দ আপত্তিকর।
এই যে আমরা লিখছি! সময়ক্ষেপে আমরাই আবার সমালোচনায় নেমে যাই স্ববিরোধী মনোভাবের পরিচিয় দিয়ে।সবচে বড় বিষয় মেয়েরাও মেয়েদের বড় শত্রু। পুরুষ নাগরিকের তো কথাই নেই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ বড়আপু।
মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু কথা সত্যি।
শুভ কামনা। শুভ সকাল😍😍
তৌহিদ
কাম নাই কুত্তার আইলে আইলে দৌড়ায়! নিজের তলে ময়লা অথচ মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ানো কিছু মানুষের স্বভাব। সমালোনাকারী সকল মানুষকে আমি এড়িয়ে চলি আর মনে মনে হাসি। কারন কি জানেন? নিশ্চিত আমার মধ্যে ভালো কিছু আছে তাই তারা হিংসেয় জ্বলে পুড়ে মরছে। সো টেনশন নট, জাস্ট চিল আপু।
চমৎকার লিখেছেন, শুভকামনা রইলো।
সোনেলা আপনার মতন ব্লগার পেয়ে গর্বিত। নিয়মিত লিখুন, লেখকীয় ভবিষ্যৎ আপনার উজ্জ্বল কিন্তু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার আইডিয়া চমৎকার। ফলো করতে হবে।
আমাকে পাওয়ার সকল ক্রেডিট গোজ টু সাবিনা ইয়াসমিন। তাকে আবারো ধন্যবাদ। কিন্তু মাঝে মাঝে,,,,
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভ সকাল।🌹🌹
বোরহানুল ইসলাম লিটন
খুব সুন্দর লেখা।
আসলে সমালোচনা করা আমাদের স্বভাব দোষ।
ফাও কথায় যদি ভ্যাট ট্যাক্স লাগানো হয়
তবে আমার মনে হয় বিশ্বে ভ্যাট ট্যাক্স প্রদানকারী
হিসাবে বাংলাদেশই সর্বোচ্চ আসন দখল করবে।
ভীষণ মুগ্ধতায় শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম অন্তহীণ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। দারুন বলেছেন।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া। শুভ সকাল।🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
বাঙালী আড্ডা প্রিয় জাতি। গ্রামের ছাপড়া দেয়া চায়ের দোকানে বিকেল হতে এই আড্ডা চলে। করিম চাষীর ক্ষেতের মরিচ হতে শুরু করে আমেরিকার ট্রাম্প বাইডেন পর্যন্ত আলোচনা চলে। শুধু নিজেদের কোনো আলোচনা নেই। অগাধ সময় এদের।
ফেসবুক পেয়ে সেই চা এর দোকানের আড্ডা এখন ফেসবুকে দেয়। কুকুরের লেজ সোজা হয়না, স্বভাব যায় না মলে। এর সার্থক উদহারন হচ্ছে ফেসবুক। জ্বলে আর জ্বলে এরা। অন্যের দোষ দেখে। নিজেরটা না।
ভালো লিখেছেন।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সকল বুদ্ধিজীবী চায়ের দোকানে ছাপডার তলে।
অতি সত্য বাণী-
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল🌹🌹
মোঃ খুরশীদ আলম
রাগ, হিংসা, ক্রোধ, অহংকার, লোভ, ঘৃণা, তাকাব্বুরি, কৃপণতা ইত্যাদি মনুষ্যত্বের প্রধান প্রধান শত্রু। মানুষ ফেরেশতার চেয়েও উত্তম হয় যখন এই রোগ গুলো হতে নিজেকে হেফাজতে রাখতে পারে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। “ নিশ্চই যারা আত্নাকে শুদ্ধ করে আমার কাছে আসতে পারবে তারাই মুক্তি পাবে।” কুরআন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসাধারণ বললেন ভাই। আমাদের এগুলো পরিহার করা উচিত। শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
বাঙ্গালি হচ্ছে সেই জাতি যারা পরশ্রীকাতরতায় অদ্বিতীয়! তবে এখন সময় বদলাচ্ছে। কতোকিছু পরিবর্তন এসেছে। আশা করছি ইনশাআল্লাহ দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাবে। এই যে একটি সচেতনতা মূলক পোস্ট লিখেছ এটা পড়ে যদি একজন ও সচেতন হয় সেটাই সার্থকতা। লেখক ও রক্ত মাংসের মানুষ তার ও অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণে মন খারাপ হয় রাগ হয়।
তাই তুমি মন খুলে লিখতে থাক।
নিন্দুক কখনো কখনো উপকারী ও হয়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তুমি সবসময় অসাধারণ। আশা করি দিনবদলের।
দুদিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। উত্তর দিতে দেরী হল। শুভ কামনা রইলো বন্ধু। শুভ সকাল❤️❤️😍😍
আরজু মুক্তা
সমালোচনাও সুন্দর হয়, এটা ভুলে যাই। স্কচ টেপ চালু করা উচিত। ব্যক্তিগত বিষয় থাকা মনে হয় স্বৈরাচারী।
শুভকামনা সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইলো😍😍