নারী

রিমি রুম্মান ৮ মার্চ ২০১৫, রবিবার, ০১:১৬:৩৬অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৪ মন্তব্য

স্বামী-স্ত্রী দু’জন প্রায় পাঁচ বছর আমাদের ভাড়াটিয়া ছিলেন। তাদের জমজ শিশু জন্মায়। একটি ছেলে, একটি মেয়ে। যেহেতু বাবা’কে জব করতে হয়, সেহেতু এক সাথে দু’জন শিশু লালন, পালন, দেখা-শুনা করা এই বিদেশ বিভূঁইয়ে একজন মা’য়ের একার পক্ষে বর্ণনাতীত কষ্টকর। তার মাঝে ছেলে শিশুটি কিছুটা শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। একটি পা বাঁকা। জন্মের পর থেকেই ছোট্ট শিশুটির পা’য়ে পর্যায়ক্রমে কয়েক দফা সার্জারি হয়। চিকিৎসার অংশ হিসেবে শিশুটির পা’য়ে লোহার রড লাগানো এক ধরনের বিশেষ জুতা পরিয়ে রাখতে হয় দৈনিক আঠারো ঘণ্টা। সেই জুতা যখন পরানো হয়, শিশুটি শরীরের সমস্ত শক্তিটুকু দিয়ে চিৎকার করতে থাকে। কোলে নিয়ে, আদর করে, দোলনায় দুলিয়ে__ কোন ভাবেই তাকে শান্ত করা যায় না। সেই গগনবিদারী চিৎকার কোন মানুষের পক্ষে বেশীক্ষণ সহ্য করা সম্ভব নয়। অনবরত সেই কান্না একটা সময় স্তব্দ হয় বটে। কিন্তু সেই মা’য়ের কান্না স্তব্দ হয় না। সন্তানের কষ্টে একজন মা’য়ের কান্না দেখে___ শরীর হিম হয়ে আসে। এভাবে দিনের পর দিন… মাসের পর মাস। এরই মাঝে অন্য শিশুটিকেও দেখাশুনা করতে হয়। ক’বছর চিকিৎসা চলে। এখন শিশুটি পুরোপুরি সুস্থ। স্কুলে যায় …

পরিবারটি মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে। জমজ ভাই-বোন বাড়িময় ছুটাছুটি করে। হাস্যজ্বল বাবা-মা সহ আমরা গল্পে মেতে উঠি। অতিথি আপ্যায়নের সময়টাতে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে আমি সেই মা’য়ের হাসিমাখা মুখের দিকে চেয়ে শ্রদ্ধায় নত হই। কেবলই সেইসব দুঃসহ দিনগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে। একজন নারী কখনো কাঁদে… কখনো হাসে। এ হাসি কিংবা কান্না’র পারদ উঠা-নামা করে আবেগ ভালোবাসার ব্যারোমিটারে। সন্তানের প্রতি, পরিবারের প্রতি প্রতিটি নারীর ত্যাগ, ভালোবাসা অসীম।

নারী দিবসে শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা সকল নারী’কে…

৮০৮জন ৮০৮জন

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ