
এক
ছোটবেলায় সে কখনও রাগ করেনি এমন কেউ বলেনি। কিন্তু তার মধ্যে অদ্ভুত আচরণ ছোট থেকেই ছিলো। এখন তার বয়স একুশ বছর। “তোর মতো ছেলে কী একটা বিধবা নষ্টা মহিলাকে বিয়ে করে ? এ-ই বয়সে মন কতো সুন্দর থাকে ছেলে-মেয়েরা আনন্দ ফূর্তিতে থাকে।
অথচ তুই দুই বাচ্চার মা’কে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছিস! তোর জায়গা আমার বাড়িতে নেই! যা তুই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা। ” এইটুকু কথা বলার জন্যই লোকটার প্রাণ চলে গেলো। সে আর কেউ নয় মুশফিকের নিজেরই বাবা।
এ-র আগেও গ্রামের চেয়ারম্যান সাহেব মুশফিকের হাতে নিহত হয়েছেন। তখন বিষয়টাকে কেউ এতো সিরিয়াসলি নেয়নি। কেউ কেউ বিশ্বাসও করেননি মুশফিকের দাঁড়া এমন কাজ হতে পারে।কিন্তু তার বাবার মৃত্যুর পর বিষয়টি এখন এলাকার অনেকেই নিশ্চিত হয়েছেন।
এই নিয়ে কথার কোন শেষ নেই। ইদানীং বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না মুশফিক। পথে কারও সাথে দেখা হলে মুখপোড়া বলে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
কেউ কেউ রাস্তা থেকে নেমে এলোপাথাড়ি দৌড় দেয়। যেন একটা নেকড়ে তারা করেছে। মুশফিক খুব বিচলিত হয় কিন্তু কী আর করা। বাড়িতেও তার এখন নির্জন নিবাস। তার ঘর বাড়ি আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির মধ্যে আরেকটা বাড়ি সে বাড়ি মুশফিকের। মুশফিক এই যন্ত্রণা কারও কাছে বলতেও পারে না। আর এভাবে তো বেঁচেও থাকা যায় না। পাখিরাও তো কথা বলে সন্ধ্যায় কিচিরমিচির করে গান গায়। কিন্তু মুশফিক কী করবে সে জানে না।
একজন গরীব মহিলা যে কীনা চেয়ারম্যানকে খুব বিরক্ত করছিলো দুঃস্থ কার্ডের জন্য। চেয়ারম্যান বিধবা মহিলাকে কার্ড না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিলো একটি লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে। মহিলা একপাশে ক্ষুধা একপাশে সন্তান
আরেক পাশে নিজের শরীর জ্বালিয়ে দিয়ে বসে বসে কান্না করতেন। যেন তার শরীরের দিকে কেউ না তাকায়, কিন্তু তাই হতো। স্বামী ছাড়া মেয়েগুলো যেন হরিণের মাংসের মতো মানুষ ডাকে। রাস্তায়-বাজারে নদীর-ঘাটে তার শরীরে যেন খেলা করে শকুনের চোখওয়ালা রাস্তা ও পথ।
সেদিন ছিলো চাঁদনী রাত। চেয়ারম্যানের হাতে পাঁচ কেজি চাল আর কিছু আটা নিয়ে হাজির হয়েছে দিলারার বাড়িতে।
দরজায় ঠকঠক শব্দ করে চেয়ারম্যান ডাকেন, “দিলারা ঘুমাইয়া গেছো ? ” দিলারা চুপচাপ শোনে কোন কথা কয় না, কিন্তু সে এটাও ভাবে এতো রাইতে চেয়ারম্যান চাউল লয়া আইছে, মতলব তো বালা না।
এ-র আগেও সে কয়েকদিন কুপ্রস্তাব দিছেন। আজ সারাদিন কিছুই রান্না হয়নি দিলারার ঘরে, পাশের বাড়িতে চাল ঝেড়ে কিছু খোদ পেয়েছেন তা রান্না করে দুই বাচ্চাকে খাইয়েছেন। সকালে খাওয়ার কিছু নেই।
অনেক ভেবে চিন্তে দিলারা উত্তর দেন, “চাউল দরজার সামনে রাইখ্যা চইলা যান, এত্তো রাইতে দরজা খুলুন যাইবো না।” চেয়ারম্যান নাছোড়বান্দা সে বলেন, চাউল কী বাইরে রাখা যায়, কুকুরে মুখ দিবে! ” দিলারা তখন জবাব দেয়, দরজার ভেতরেও কুকুর আসতে পারে আপনি অহন যান , আপনার চাউল আমার লাগবো না।”
এই কথা শোনে , চেয়ারম্যান বলেন, “আচ্ছা দরজার সামনেই রাইখ্যা গেলাম । সকালে নিয়ে বাচ্চাদের ভাত খাওয়াবে আরও কিছু লাগলে এসে নিয়ে যাইয়ো।
চেয়ারম্যান চলে গেছে। চেয়ারম্যানরা কী চলে যায়! গিরগিটির মতো চোখ যাদের তারা রঙ পরিবর্তন করে মানুষের রক্তেও ঢুকে যেতে পারে! প্রায় তিরিশ মিনিট পর
দিলারা ভাবেন এবার যাওয়া যায়। দিলারা দরজা খোলেন বের হোন দরজার একটু সামনেই চাল আর আটার বস্তা রাখা আছে।
সেগুলো নিয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকেন। কিন্তু তার সাথে সাথেই ঢুকেন আরেকটা কুকুর। দিলারা চেচামেচি করেন কিন্তু কুকুর তো কথা শোনে না। মানুষের ভাষা বোঝে না!
৭টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
সুন্দর বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। এভাবেই দিলারাদের হেরে যেতে বাধ্য করে তথাকথিত সমাজপতিরা। শুভ কামনা রইলো।
দালান জাহান
ধন্যবাদ কবি শুভেচ্ছা
আরজু মুক্তা
এখনো এদের দেখা যায় সমাজে। এইসব কুকুর কুকুরই থাকে। সমাজ আদরে তাদের লালিতপালিত করে এজন্য এরা মাথা উঁচিয়ে চলে
দালান জাহান
ধন্যবাদ আপু ভালো থাকুন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ গাঁথুনিতে উপন্যাসের শুরু। খুব ভালো বলেছেন এরা আসলেই একেকটা বেওয়ারিশ কুকুর। এরা নারী শরীরের গন্ধ পেলে পাগলা কুত্তা হয়ে যায়।
দালান জাহান
কৃতজ্ঞতা আপু ভালো থাকুন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
বলেই ফেলি, সিরিজ উপন্যাস পড়ায় আমার অপারগতা।
ধন্যবাদ।