
কথিত গ্রামীণ গল্প-
পাশাপাশি দুজন মানুষের বসবাস। একজন গরীব কৃষক আলাল মিয়া আর তার তিন সন্তান। আর অন্যজন শিক্ষিত , জ্ঞানী, মান্যবর ব্যাক্তি। যাঁর যে কোন নাম হলেই চলে; কিংবা দরকার হয়না। সবাই মান্যবর হিসেবেই মানে।
সকাল বিকাল মান্যবরের বাসায় অনেক ভীর। লোকজন নানা জ্ঞান নিতে আসে উপঢৌকনসহ। বলেনও তিনি ‘মাশাআল্লাহ্’ অক্ষরে অক্ষরে।
আলাল মিয়া মান্যবরের ফুট ফরমায়েস খাটে। দুবেলা তার পরিবারের ঠিকমত খাওয়া হয় না। তারা তাতেই খুশি কারন আল্লাহকে খুশি করবার মত তার কিছু নেই, আল্লাহ তাকে আর কি দেবে। যা দেয় তাই বেশি। দিনের বেলা দুরে অন্যের বাড়িতে কাজে গেলে আল্লাহর কাজ তো করতে পারে না। তাই আশাও কম, অভিযোগও নেই।
বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতেই পাশের ছোট্ট নদীটুকুতে কোমর পানি বাঁধে। দুরে কাজে যেতে কষ্ট, পানি পাড় হয়ে যেতে হয়। সেদিন আলাল মিয়া কাজ থেকে ফিরেছে। লুঙ্গি মালকোচা করে কোমরে লেংটি করা। মান্যবর বাইরেই ছিলেন। সান্ধ হাওয়ায় গা জুরাচ্ছেন। আলাল মিয়াকে এমন দেখে বললেন , ‘কি সর্বনাশ; কি সর্বনাশ করেছ? লুঙ্গি নামিয়ে পড়। হাঁটুর উপর লুঙ্গি তোলা হারাম। হারাম হল আল্লাহকে অমান্য করা। আল্লাহকে অমান্য মানে জাহান্নাম।’
আলাল মিয়া জানত না, লজ্জায় মাথা নত করে তওবা করল। সেই থেকে আলাল মিয়া লুঙ্গি মালকোচা করে না। সন্ধ্যায় ভেজা লুঙ্গি নিয়েই বাড়িতে আসে। বৌ চিল্লায়, গরীব মানুষ সন্ধ্যায় লুঙ্গি ভিজলে সারারাত ভেজা থাকে,পঁচে যায়। ছিঁড়ে গেলে কিনতে টাকা পাবে কই?
বৌয়ের কথায় আর লুঙ্গির মহব্বতে আলাল মিয়া বুদ্ধি বের করল। সেদিন মালকোচা না করে পানিতে নেমে লুঙ্গি আস্তে আস্তে উপরে তুলে নিল। পানিতে তো কেউ দেখছে না। পার হবে আর যেমন আস্তে আস্তে তুলেছিল তেমনি আস্তে আস্তে নামিয়ে দেবে। বিপত্তি হল অন্য জায়গায়। ছোট্ট নদীতে হাল্কা স্রোত বইছিল। অবলা চিংড়ি মাছ দল বেঁধে যাচ্ছিল কোথাও। আটকা পড়ল আলাল মিয়ার বিশেষ জায়গার বা*লে( চুলে)।
বেশ অনেকগুলোই, রান্না করলে সেবেলা সবার খাওয়া হয়ে যাবে। আলাল মিয়া খুশিমনে বাড়ি নিয়ে এল। বৌ রান্নাও করল। খেতে গিয়ে মনে হল, মান্যবরের কাছে একবার জানা দরকার বা*লের মাছ খাওয়া যাবে কিনা।
মান্যবর বললেন ‘নাউযুবিল্লাহ’ মোটেও না। কড়াই শুদ্দ টাটকা লাল মাছের তরকারী ফেলে দিয়ে তারা নুন ঢলে ভাত খেল। বাচ্চারা কাঁদল । কিন্তু আলাল মিয়া শুনল না।
পরদিন মান্যবর আলালকে ডেকে পাঠিয়েছেন। বিশদ ভাবে শুনে নিলেন, কেমনে কোন দিক দিয়ে গেলে বা ফেরত আসলে মাছ আটকায়। এরপর মান্যবর প্রায়ই চিংড়ি মাছের দোপেয়াজা খেতে থাকলেন।
আলাল মিয়ার সন্দেহ হল, পরক্ষনেই ছি! ছি! তিনিই তাকে কত কিছু শেখান। এমন কাজ করতেই পারেন না। অসম্ভব! এবং ভেবেই নিল, তার তো টাকা- পয়সা আছে অবশ্যই বাজার থেকে কিনেছেন।
তবে রাতে যে মান্যবর পাশের নদীতে গোসলে যায়? যাবে না? যা গরম পড়েছে, নদীর পানি ঠান্ডা তাই হয়ত যায়।
পৃথিবীতে পাঠানোর আগে আল্লাহ আমাদের রুহুকে কিছু প্রশ্ন করেন। তার উত্তরের উপর নির্ভর করেই আমরা পৃথিবীতে কেউ গরীব, কেউ টাকাঅলা। আবার সেভাবে বিভিন্ন দায়িত্বও পেয়ে থাকি। আমরা সেদিন প্রতিশ্রতিও দেই, যার যতটুকু দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করব।
পৃথিবীতে আসার পর আমরা লালশায় নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য, নৈতিকতা বিসর্জন দেই। তারপর কি হয় আমরা ভুলেই যাই কথা দিয়েছিলাম। কিংবা আমি বা আমরা কারও আদর্শ। আদর্শ যখন বিচ্যুত হয় তখন হাজার হাজার মানুষ মন খারাপ করে। তারাও আদর্শচূত হয়ে পরে, বিপথগামী হয়। মনে করে, কর্নধারই যদি না মানেন, আমি কি করি মেনে?
কাল আমার এক বন্ধু বলল, ‘ বন্ধু এতদিন যা যা মেনে চলতাম, আর মানব না। কারন সবাই যদি অপরাধ করে ক্ষমা পায়। জেনা করে, ব্যাভিচার করে, মিথ্যা বলে, কোরআনের কথা অমান্য করেও বেহেস্ত যায় আমি কেন নয়?’
আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। ঈশার নামাজ আমারও কাজা হয়ে গেল। ভয় যেন কেটে গেছে। সে অপরাধী আমি তো সাধারন! আমার এমনিতেই তো কোনকালই নেই?
বন্ধুর উদ্দেশ্যে দুটি হাদিস খুঁজে পেলাম, আমি বিষেশ কেউ না ভুল হলে মাফ করবেন।
“এক শ্রেণীর আলেম হবে; যারা জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে মানুষকে ডাকবে। যারা তার ডাকে সাড়া দেবে, তারাও তার সাথে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
[বুখারীঃ ৩৬০৬, মুসলিমঃ ১৮৪৭, হবনে মাজাহঃ ১৯৭৯]
রাসূল (সঃ) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে ৭৩ দল হবে।শুধু একদল জান্নাতে যাবে,বাকিরা জাহান্নামী। অথচ তাদের দাঁড়ি,টুপি,ঝুব্বা সবই থাকবে।’
আমি নিজেও একজন হিজাব পরিহিতা নারী। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। রোজা রাখি, কলেমা, দান খয়রাত করি, বাবা- মায়ের সেবা করি, পরিবার পরিজনের অন্যান্য দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একজন শিক্ষক। শিক্ষকতা করতে গিয়ে অনেক কম বয়সী আবেগী ছাত্র প্রেমে পড়ে যায়। নানা উপঢৌকনসহ আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে একটু আধটু কথা বলি রাত জেগে। কোথাও বেড়াতে যাই।কিংবা এমনও হল, ম্যাম আপনি যথেষ্ঠ ইয়াং, সুন্দরী। শরীরটা ভোগের জিনিস, তাকে কেন অবহেলা করছেন? ব্যবহার করেন? জীবন উপভোগ করেন? আমি কি করতে পারি? মন তো চায়ই!
তাহলে? ভয় হচ্ছে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। কেন যাচ্ছি? কে নিয়ে যাচ্ছে? এবং তারপর কি হবে?
প্রেম- অন্ধপ্রেম, ভক্তি- অন্ধভক্তি, বিশ্বাস- অন্ধবিশ্বাস এই শব্দগুলোর আমাদের তফাত বুঝতে হবে। আমরা প্রিয় মানুষের অন্ধভক্তি, অন্ধবিশ্বাস, অন্ধপ্রেমে এবং অতি আবেগের বশীভূত হয়ে নিজেকে আত্নহত্যার মত জঘন্য কাজেও সামিল করে ফেলি। আসলে সেটা কতটুকু সঠিক বেঠিক তখন মাথায় থাকেই না।
“আবেগ বড় কঠিন জিনিস। কারন আবেগ আর বিবেক পরস্পর ব্যাস্তানুপাতিক। মানুষের মধ্যে আবেগ আর বিবেক কখনো একই তালে কাজ করতে পারে না।যখন একটি বাড়ে তখন অপরটি কমে।”
তবে অনুরোধ একটাই নৈতিকতা আমাদের নিজের, তাকে রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। আমরা ভালোমন্দ বিচার করতে শিখব এবং সে অনুযায়ী পথ চলব।অযথা না জেনে না বুঝে, আবেগের বশীভূত হয়ে কারও কথায় বিপথগামী হব না।
ছবি- নেট থেকে।
২১টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
👏👏👏👏 ব্রাভো. সাহসী লেখা। নৈতিকতার উপদেশমূলক। সাথে উপঢৌকন বলা যায় বারতি উপযোগ। এর বেশি কিছু বলার নেই। কারন চিত্রগুলো চিরাচরিত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেকদিন পর আপনার পছন্দ হল তাহলে? সেজন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা ও প্রথম সাহসী মন্তব্যের জন্য ভালোবাসা রইল।
বন্যা লিপি
অপছন্দের মত কিছু লেখেন না আপনি। ব্রেন নিয়ে টানাটানিতে আছি। মন্তব্যের ভাষার টানাটানি যাকে বলে। এখন থেকে ভাবছি খালি মন্তব্যই করব। নিজে আর কিছু লিখব না। আপনাদের দাপটে আমি ফতুর………
ছাইরাছ হেলাল
কিছু মানবিক সীমিত সুবিধে আপনি আড়ালে আবডালে নিতেই পারেন।
তবে ধারা পড়লে জান ফানা ফানা হবে সে কিন্তু নিশ্চিত।
আপনার জুহান্নাম কেউ ঠ্যাকাতে পারবে না।
তওবা করে দীনের পথে ফিরে আসুন। বেহেস্তি মেওয়ার অপেক্ষায় থাকুন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা মজা পেলাম কমেন্টে। ডুব দিয়ে রোজা রেখে পানি খাওয়ার মত।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
রেজওয়ানা কবির
মাঝামাঝি পর্যায়ে হাসি চিংড়ি মাছ আটকানোর ব্যাপারটিতে,,,, তবে যত পড়ছিলাম তত বুঝছিলাম আশেপাশের আমাদের চিত্র আর কিছু ম্যাসেজ, কথায় আছে, বুঝলে বুঝপাতা,না বুঝলে তেজপাতা।।।।
নৈতিকতা থাকে না বলেইতো,,,,,,,,আসলেই সাহসী লেখা,,,,,শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ আপুমনি। শুভকামনা।
ইঞ্জা
নৈতিকতা আমাদের নিজের, তাকে রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। আমরা ভালোমন্দ বিচার করতে শিখব এবং সে অনুযায়ী পথ চলব।অযথা না জেনে না বুঝে, আবেগের বশীভূত হয়ে কারও কথায় বিপথগামী হব না।
চমৎকার পোস্ট, অসাধারণ লিখলেন, সাথে শেষের কটি লাইন সবাইকে পথ দেখাবে নিশ্চয়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তাই যেন হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ইঞ্জা
শুভকামনা আপু
পপি তালুকদার
সুন্দর গোছানো লেখা।নৈতিকতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। কে কি করলো সেটা দেখে, বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার বুদ্ধি বিবেচনা মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের দিয়েছেন।তাই বিভ্রান্ত না হয়ে সবাই কে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমিন। সবাই যেন ভালোটা বোঝে সেই আশা।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা আপু।
হালিমা আক্তার
সুন্দর গুছানো ও উপদেশ মূলক রচনা | ভালো লাগলো | আল্লাহ আমাদের সত্য ও সুন্দরের পথে চলার তৌফিক দান করুন |
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
’কর্মের সাথে হলে ধর্মের যোগ
তবেই কমতে পারে এই রোগ’
দুনিয়ার মোহ মায়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা সত্যিই কঠিন তারপরও বলি
মৃত্যু ভীতি মানুষকে সকল পাপকর্ম থেকে দূরে রাখে।
মূল্যবান উপস্থাপনায় মুগ্ধতা রইল নিরন্তর।
আন্তরিক শুভ কামনা জানবেন সতত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভকামনা সতত
আরজু মুক্তা
উপদেশ তো দিলেন বা দিলাম। এইবার আমি বা আপনি রাতে তওবা করে আবার দিনে লোকদেখানো আচরণ না করি তার জন্য সতর্ক থাকি। নিশ্চয় আল্লাহ হেফাজতকারী।
লোকদেখানো লোক গুলোরে বুঝি। কিন্তু কিছু বলতে পারিনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
তৌহিদুল ইসলাম
আপনার লেখা খুব সুন্দর গুছিয়ে লিখেন বলে পড়তে ভালই লাগে। ছবিটা দেখে কিন্তু ভয় পেয়েছি। দুমুখো সাপ যেমন তেমনি দু মুখো মানুষ উভয়েই ক্ষতির কারণ। এরা মুখে বলে এক কথা কিন্তু অন্তরে বিষ। এরা আবার কথা দিয়ে কথা রাখে না। একেক জায়গায় একেক রকম কথা বলে। এদের থেকে সাবধান থাকাই উত্তম।
চমৎকার পোষ্ট লিখেছেন। শুভকামনা জানবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
দুমুখো সাপ থেকে সাবধান। কি ভয়ংকর দেখতে তাই না?
ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
দুমুখো সাপের বিচরণ সর্বত্র। শুধু দেখার মতো চোখ থাকতে হয়।
আবেগের বশে আমরা যতকিছু করি তার থেকে খুব কমই বিবেক ব্যবহার করি। ফলাফল অবশ্যই পতনের দিকে যায়।
আবেগ এর ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো,
আবেগ একটা ঘুণপোকা, যা ধিরে ধিরে বিবেককে খেয়ে নিঃস্ব করে দেয়। তাই সময়ের অপেক্ষা না করে আবেগ দমন করা জরুরী।
ভালো লিখেছেন সব সময়ের মতো।
শুভ কামনা 🌹🌹