
পুরুষ-১
দুপুর বেলা। ছোট একটি মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এলো। মেয়েটির বয়স ৬/৭ বছর। সে অনবরত কেঁদেই চলেছে। অনেকক্ষণ বাদে কান্না থামলে তাকে সবাই জিজ্ঞেস করলো কান্নার কারণ। তার মুখে জানা গেলো, সে বাড়ির সদর দরজার সামনে খেলছিলো। এমন সময়ে তার পরিচিত এবং একই বাসায় ভাড়া থাকা এক আংকেল তার সামনে এসে তাকে বাড়ির পিছনে নিয়ে যেতে চাইছিলো। ও রাজি হয়নি দেখে তার গালে ঐ আংকেলটা জোরে চড় মেরেছে। সব শুনে মেয়ের বাবা গেলো ভীষণ ক্ষেপে। সে তক্ষুনি সেই আংকেলকে ধরে আনলেন। গালাগালি করলেন। নিজের বউকেও যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করলেন। আংকেল দুঃখ প্রকাশ করে স্যরি বলে সবার কাছে ক্ষমাও চাইলেন।
এরপর, সে যা বললো তা এই রকম _
আংকেল- বউটা বারোমাসি অসুস্থ। সারাদিন কাজ করে ঘরে ফিরতে মন চায় না। শরীরের একটা চাহিদা, তাও মিটে না। মাথাটা সময়ে অসময়ে নস্ট হয়ে যায়রে ভাই,,,
মেয়ের বাবা- কিন্তু তাই বলে আমার মেয়েটাকেই দেখলেন! ও কতো ছোট, আর শরীর স্বাস্থ্যও বেশি ভালো না। যদি দুর্ঘটনা ঘটতো তখন বিপদ সামাল দিতেন ক্যামনে?
আমরা এসব শুনে দেখে হতভম্ব + বাকরুদ্ধ ছিলাম কিছুক্ষণ। আসলে ঘৃণা প্রকাশ করার জন্যেও মাঝে মাঝে উপযুক্ত ভাষার দরকার হয়। সব সময়ে উপযুক্ত ভাষা গুলো মুখে আসে না।
মেয়েটার বাবা চটপটি বিক্রি করে, আর ঐ আংকেল বিভিন্ন দোকানে দুধ সাপ্লাই দেয়।
*******************************************************************************************************
পুরুষ -২
রাজধানীর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই কলেজের সবই ভালো, শুধু কলেজের অধ্যাপকদের কাছে প্রাইভেট পড়াটা অলিখিত বাধ্যতামূলক। ছেলে-মেয়েদের সেমিস্টার টপকাতে হলে শ্রেণী শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তেই হবে।
একটি মেয়ে সম্প্রতি এই কলেজে ভর্তি হয়েছে। একমাসের মতো নিয়মিত ক্লাস করেছে। প্রাইভেট পড়ার নিয়ম তাকে জানাতে ভুলেনি শ্রেণীর অধ্যাপক মহোদয়। মেয়েটি নিয়ম মানেনি। সে তার নিজের মতো কলেজে আসা-যাওয়া চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু অধ্যাপক তা সহজে মেনে নিতে পারলো না। শুরু করলো নানা বাহানায় মেয়েটিকে ক্লাসে নাজেহাল করা।
সেদিনের ঘটনা _
স্যার- তুমি আজকে ১১মিনিট লেট। আর তোমার চুল খোলা কেন? কি করো ঘুম থেকে উঠে ? দেখতে তো মাশাল্লাহ, এই চেহারা নিয়ে ফিল্মের নায়িকা হতে পারবে। কিন্তু পরীক্ষায় পাশের আশা নেই।
মেয়ে- স্যার আমার বাসা একটু দূরে। আর আমি বাসে করে আসি।
স্যার- তা, বুঝলাম কিন্তু পড়াশোনার কি খবর? কবে আসছ কোচিং এ?
মেয়ে- স্যার, আমার বাসায় টিচার আছে। আর আপনার কোচিং সেন্টার অনেক দূরে। সেখানে গিয়ে পড়লে আমার বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
– আরে, আসো। একবার এলেই তোমার ভালো লাগবে। এই ক্লাসের অনেক মেয়েরা আমার কাছে পড়তে যায়..
এইসব বলতে বলতেই স্যার মেয়েটির হাত ধরেছিল ভরা ক্লাসরুমে। মেয়েটি হাত ছাড়াতে পারছিল না, এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। তখনই পাশের সিটের ছেলেটা স্যারের মুখে দুম করে এক ঘুসি মেরে দিলো। স্যার ভ্যাবাচেকা খেয়ে ছেলের দিকে তাকালো, মুহূর্তে আরেকটা চড়। সারা ক্লাসে হৈচৈ শুরু হলো। তাদের ডাক পরলো প্রিন্সিপলের রুমে। সব জানার পর প্রিন্সিপল প্রশ্ন করলেন, তোমরা এখানে অভিযোগ না করে এমন করলে কেন? শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার শিক্ষা কে দিয়েছে তোমাকে?
– আমার মা বাবা দিয়েছে। আমার মা বলেছে যখনই কোন মেয়েকে অপমান হতে দেখবি, সাথে সাথে প্রতিবাদ করবি। কার সামনে দাঁড়িয়েছিস এটা দেখবি না। জালিমদের কোন পরিচয় থাকে না, তাদের মর্যাদা দিতে হয় না।…… এটা ছিলো ছেলেটির উত্তর।
এই ঘটনাটি জেনে আনন্দে চোখ ভিজেছিল সেদিন। হ্যা, সমাজে কুলাঙ্গার যেমন আছে তেমনি রত্নগর্ভা মায়েরা এখনো বিদ্যমান। সেই ছেলেটি এমন মা বাবার অস্তিত্ব এভাবেই জানান দিয়েছিলো।
* সত্য ঘটনা *
২৪টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
ভাল এবং মন্দ দুটোই আছে আমাদের সমাজে, তবে মন্দের পরিমানটাই বেশী।
প্রথম ঘটনায় মেয়ের বাবার মানসিকতা খারাপ লোকটির মতই। খারাপ লোকটির যুক্তি মেনে নিয়ে মেয়ের বাবা কিছুটা সহানুভুতিও দেখালো।
২য় ঘটনায় অধ্যাপক চরম এক বাজে লোক, এই অধ্যাপকের কাছে যে সব মেয়ে পড়তে যেত সবাইকেই সে অপদস্থ করেছে। প্রিন্সিপল অধ্যাপকের দোষ চেপে রাখেন বুঝা যায়। সেও একধরনের অপরাধী।
শ্রদ্ধা জানাই চর মারা ছাত্রের মা এর প্রতি, যিনি তার সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছেন।
বেশ ভাল লিখেছেন,
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে দেখেছি, প্রথম ঘটনাটি সমাজে সাধারণত দুই শ্রেনীর মানুষের মাঝে দেখা যায়। উচ্চবিত্ত সমাজে এসব হয় লুকিয়ে/ ছাপিয়ে। যদিও নিজেদের বাচ্চাদের বেলায় এসব কম হয়, কিন্তু কিছু লম্পট ধনী ব্যক্তিদের কাছে তাদের বাড়িতে কর্মরত কর্মচারীদের বাচ্চাদের নিরাপত্তা থাকেনা। আর মালিকের ভয়ে গৃহকর্মীরাও ব্যপারগুলো নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনা।
আবার নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে এগুলো খুব বেশি ঘটে। সেই সব অভিভাবকরা সারাক্ষণ নিজেদের দারিদ্র্য বিমোচনের ধান্দায় থাকে, জৈবিক চাহিদা মেটানোই এদের নিকট একমাত্র সুখকর ব্যাপার। অশিক্ষা, এবং মেয়ে শিশুদের প্রতি উদাসীনতা তাদেরকে সন্তানের প্রতি মনোযোগ রেখে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়।
সু-সন্তান মায়েদের পেট থেকে অটোমেটিক জন্মায় না, সঠিক নিয়মে তাদের প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তুলতে হয়। ছেলেটির মা বাবা তেমন উদাহরণ দিয়েছেন। এমন অভিভাবকরা অন্য অভিভাবকদের কাছে অনুকরনীয়।
সুন্দর বিশ্লেষণে মতামত দেয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন,
শুভ কামনা 🌹🌹
সুপায়ন বড়ুয়া
“এই ঘটনাটি জেনে আনন্দে চোখ ভিজেছিল সেদিন। হ্যা, সমাজে কুলাঙ্গার যেমন আছে তেমনি রত্নগর্ভা মায়েরা এখনো বিদ্যমান। সেই ছেলেটি এমন মা বাবার অস্তিত্ব এভাবেই জানান দিয়েছিলো।”
এরকম কিছু বিবেকবান আছে বলেই
সমাজটা আজ ও টিকে আছে।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালো মন-মননের মানুষ আছে বলেই সমাজটা এখনো কোনো ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
খুব সুন্দর মন্তব্যে অনেক গুলো ধন্যবাদ, ও
শুভ কামনা 🌹🌹
সৈকত দে
বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এক কথায় মন্ত্রমুগ্ধ। শুভ কামনা 🌹🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
নতুন লেখা দিন সৈকত।
শুভ কামনা 🌹🌹
রাফি আরাফাত
ভালো খারাপ যেন এক পাল্লার দুই দিকে। ভিন্নধর্মী ভালো লেখা পড়লাম। অনেক ভালো লাগলো আপু। অনেক অনেক ভালো থাকো। শুভ কামনা
সাবিনা ইয়াসমিন
তুমিও খুব ভালো থেকো,
ভালোবাসা নিও ❤❤
সঞ্জয় মালাকার
ভাল এবং মন্দ দুটোই আছে আমাদের সমাজে, তবে মন্দের পরিমানটাই বেশী।
চমৎকার রচনাশৈলী লেখা দিদি পড়ে ভালো লাগলো খুব। শুভ কামনা জানাবেন দিদি, ভালো থাকুন সব সময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ দাদা,
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা 🌹🌹
সঞ্জয় মালাকার
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি, ভালো থাকুন সব সময় শুভ কামনা🌹🌹
পর্তুলিকা
পুরুষরা এখন প্রানীর রুপ ধরেছে। পুরুষ মানুষ এখনো আছে, সংখ্যায় নগন্য। ভালো লাগলো সত্য ঘটনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ আপনাকে,
শুভ কামনা 🌹🌹
ছাইরাছ হেলাল
প্রথম ঘটনাটি আমাদের এখানে নিত্য, হর হামেশাই হয়!
দ্বিতীয় ঘটনা আমাদের এখানে প্রায় ঘটেই না।
ঘুসি দেয়া ছেলেটির চৌদ্দগুষ্টির খবর হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
বেশ লেখেন আজকাল, ডায়েরি থেকে!
সাবিনা ইয়াসমিন
ছেলেটি বহাল তবিয়তে আছে,
অধ্যাপকের চাকরি গেছে 🙂
সাহসীদের হার নেই
দুঃসাহসী দের মনে ভয় নেই..
কুলাঙ্গার পিতার কুপ্রভাব লুচ্চা প্রতিবেশীর কুদৃষ্টির সামনেও ম্লান হয়ে যায় 🙁
ধন্যবাদ মহারাজ,
সোনেলার উঠোন আমার একমাত্র ডায়েরি-খাতা।
এখানে লিখবো আমি,
সংরক্ষণের দ্বায় সোনেলার 😎😎
নিতাই বাবু
দুই পুরুষ হোক আর সহস্র পুরুষই হোক। পুরুষ কিন্তু সবাই সুপুরুষ নয়! কেউ পুরুষ, কেউ আবার কাপুরষও। তবে সমাজের ওইসব কাপুরষ বদপুরুষদের সবসময় সবাই ঘৃণা করাই উচিৎ বলে আমি মনে করি। পারলে মাইরের উপ্রেও রাখার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করছি। এতে দোষের কিছু হবে বলে মনে হয় না।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সকল পুরুষ ধর্ষক অতএব সকল পুরুষ ধর্ষক নয়!
ভালোমন্দ নিয়ে সমাজ বহমান।
শ্রদ্ধা জানাই চড় মারা ছাত্রের মা এর প্রতি, যিনি তার সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছেন।
.
লেখার আঙ্গিকতা ভিন্ন
বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দিদি।
তৌহিদ
আপনার লেখা দুটি ঘটনাই পুরুষ শাসিত এ সমাজের চরম নিকৃষ্ট বাস্তবতা। আমাদের প্রায় প্রত্যেক শিশুকেই এমন হয়রানির শিকার হতে হয় যা একজন পুরুষ হিসেবে আমি লজ্জিত।
সবার বিবেকবোধ জাগ্রত হোক। কোনো শিশুকেই যেন এমন নিকৃষ্টতার শিকার হতে না হয়।
ভালো থাকবেন সাবিনা আপু।
কামাল উদ্দিন
দিন দিন আমরা মনুষত্ব হারাচ্ছি, ইদানিং তো পত্রিকার পাতা উল্টাতে আর খবর শুনতে ভয়ই লাগে।
সুরাইয়া পারভীন
প্রথম গল্পে দুটোই শয়তান। সুযোগ পেলে এই মেয়েটার বাবাও অন্য কোনো বাবার মেয়েকে রেপ করতো।
দ্বিতীয় গল্পে আরো একটি ছেলে যে কিনা অন্য একটি ছেলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে অধ্যাপকেও ছাড়লেন না। ভালো মন্দ দুটোই আছে এখন পৃথিবীতে।
আসিফ ইকবাল
অসম্ভব ভালো একটি লেখা পড়লাম সাবিনা! বিশেষ করে দ্বিতীয় ঘটনাটি পড়ে মন ভালো হয়ে গেল। নীচে “সত্য ঘটনা” লেখা দেখে আরো ভালো লাগলো। এইসব শিক্ষক নামের কুলাংগারদের শুধু, ঘুষি বা চড় নয়, জুতো দিয়ে পেটাতে হবে। আর মায়েদের ভূমিকা আসলেও অনেক বড়। তাঁরা সন্তানকে যা শেখাবেন সন্তানরাও তা-ই শিখবে।
অনেক ধন্যবাদ নিও এমন চমৎকার একটা লেখার জন্যে।
আকবর হোসেন রবিন
এমন কতশত ঘটনা লুকিয়ে আছে চারপাশে!
শান্ত চৌধুরী
বাস্তব ঘটনার বাস্তব লিখা…
শুভ কামনা ….
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
পুরুষজাত টা যতটা না ভালো তারচে বেশি খারাপ..
তারা যতটা হেল্পফুল তারচে বেশি ক্ষতিকারক,
যতটা দয়ালু তারচে বেশি ভয়ঙ্কর…
পরুষের ভেতরে থাকা উলঙ্গ পুরুষটাকে যতদিন পোষাক পড়াতে না পারবে ততদিন এ জাতটা এমন ই থেকে যাবে
দ্বিতীয় ঘটনাটি ভালো লেগেছে খুব…
চমৎকার লেখেন আপনি