
ভোরের আবির মেখে প্রেমের গাড়ি চলতে থাকলো। পূর্ব থেকে পশ্চিমে গড়িয়ে পড়তেই সূর্যের বয়স।মেয়েটি এমনভাবে মিশে গেলো জীবনের উপর যেভাবে মিশে যায় কাঠের সাথে পেরেক।
দু’হাতে আকাশ ছোঁয়ার জন্য তারা দুজনেই স্বপ্নসম্ভবা। তাদের পেন্সিল ভর্তি আকুলতা হৃদয়ের সমস্ত দুয়ার খোলে সেলাই করে বাবুইপাখির বাসা। তাদের মিশে যাওয়ার ব্যাকুলতা বন্যার অবাধ্য জলের চেয়ে ভয়ঙ্কর। চোখের উপরেই গড়ে উঠে তাদের সম্পর্কের সব বিন্দু।
মেয়েটি চতুর সে হেঁটে যায় সাতরঙা রঙধনুর দিকে। ছেলেটি সরলরেখা তার হৃদয়ে নেই জ্যামিতি কম্পাস অথবা আধুনিক ক্যালকুলাস। অপেক্ষা আর বিশ্বাসের মতো রঙ তুলিতে সে আঁকে জীবনের সাত নদী।
মেয়েটির চঞ্চল মুখ আর উদগ্রীব জিহবার উচ্চারণ মলিন, কিছুতেই হারাতে চাই না তোমায়। তাই দিনে দিনে বাড়তে থাকে বিয়ে করার চাপ। বেচারা জিসান তখনও অনার্স ফাস্ট ইয়ার।
বাবার পকেটের চাল ডাল খেয়ে ছাত্র মেসের স্বাস্থ্য ভালো কিন্তু স্টোরে কিছু নেই এ কথা তারা দুজনেরই জানা। কিন্তুএই ভরদুপুরে নিসর্গ ভূমিতে দাঁড়িয়ে ক্ষুধা আর দুর্ভিক্ষ ছাড়া কিছু দেখে না জিসান। তাই মেয়েটির চাপ আর নিতে পারছিলো না সে।
একটা অনিশ্চিত প্রশ্ন একটা অনাশ্রিত পথ সামনে নিয়ে জিসান মেয়েটিকে বলেন, “এখন বিয়ে করে তাকে খাওয়াবে কী?” মেয়েটি তখন যুক্তির দুয়ার খোলে হাতে দেয় জীবিকার চাবি এবং বলেন”তুমি ভালো স্টুডেন্ট যেখানে ইন্টারভিউ দিবে তুমি সেখানেই টিকবে তুমি চেষ্টা করো অন্তত আমার জন্য লেখাপড়াটা তো পড়েও করতে পারবে, তাই না?”
কিন্তু এ-ই যোগ্যতায় আমি কী চাকরি করব? মেয়েটা বললো কী চাকরি করবে তা বিষয় নয়! বিষয় হলো একটা চাকরি তোমাকে করতেই হবে । যাতে আমি বাসায় বলতে পারি।
জিসানও তাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলো তাই জিসান তখন কমিশনে এপ্লাই করলো এবং টিকে গেলো কিন্তু নামটা রয়ে গেলো ওয়েটিং লিস্টে।
ওয়েটিং লিস্টে শোনে মেয়েটি বিচলিত হলো, অনেকটা নার্ভাস হয়ে সে জিসানকে বললো, তুমি সৈনিকে ও পরীক্ষা দাও আপাতত এটা হোক পরে যদি ডাকে কমিশনে জয়েন্ট করবে নতুবা এটা করতে থাকবে। জিসান তাই করলো এবং টিকে গেলো। দশদিন পর এপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে মেয়েটির কাছে গেলো। মেয়েটি খুশিতে আকাশ ছুঁয়ে গেলো।
এ-র কিছুদিন পর জিসান ট্রেনিং এ চলে গেলেন। ট্রেনিং এ কষ্ট ও দাপাদাপির ভেতর যখন কচি হৃদয়টা পোড়ে পোড়ে শক্ত ও সামর্থ্যবান পাথর হয় তখন মেয়েটির মুখটিই তার একমাত্র দ্বীপশিখা হয়ে জ্বলে। জিসান চিঠি লিখে একটি চিঠির উত্তর আসলেও পরে আর উত্তর আসে না।
উত্তর না পেয়ে হতাশ জিসান ট্রেনিং শেষ হওয়ার আগেই ছুটিতে আসে মেয়েটির সাথে দেখা করতে। এসে শুনলো মেয়েটি একজন আমেরিকা প্রবাসী ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করেছেন। তিন বছরের কষ্টের মধ্যে যে আনন্দ জল জিসানের মনে জমে ছিলো মুহূর্তেই তা বাস্প হয়ে মিশে গেলো বায়ুমন্ডলে। শ্রাবণের আকাশের মতো মন নিয়ে জিসান ফিরে গেলো জীবনের জিরো পয়েন্টে।
সামনেই কাজল কাকুর দোকান এ-ই দোকানের থাকে থাকে তাদের অনেক স্মৃতি সাজানো আছে । কিন্তু আজ দোকানটা চোখে পড়ার পরেও জিসান এই প্রথম থামালো না! পার হয়ে চলে গেলো।
কিন্তু কাজল কাকু পেছন থেকে ডাক দিলো, জিসান ডাক শুনে গেলো কাজল কাকুর কাছে। কাজল কাকু বললেন, ‘আমাকে চিনতে পারছো না! না কি আমাকে দেখেও চলে যাচ্ছ ? “
যখন বুকের উপর দাঁড়িয়ে থাকা অসুস্থ বৃক্ষ মাটির দাঁত ভেঙে অস্বীকার করতে চায় শেকড়ের অস্তিত্ব তখন জিসানদেরউ ত্তর দেওয়ার মতো কোন শব্দ মাথায় থাকে না। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। কাজল কাকু অনেকের কথা বলছেন , কিন্তু জিসানের এসব শুনতে আর ভালো লাগছে না। জিসান শুধু বললেন আসি কাকু।
জিসান মনকে শক্ত করে আবার চলে গেলেন নিজ কর্মস্থলে। তাছাড়া শক্ত হওয়ার মতো যথেষ্ট মানসিক অবস্থা তার ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে।
একবছর পর আবার ছুটিতে এলেন জিসান। এই শহর তার কাছে আজ নতুন হয়ে ফিরে এসেছে। সূর্যের আলোটাও একধরনের সোনালী ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে। একটা জলপাই রঙের জিপের সামনে বসে আছে এক অলোক সুন্দরী।
জিপটি থামলো মেয়েটির বাড়ির সামনে। এখানেই কেন থামতে হবে ! কে জানে একটা বকুল গাছ কেটে ফেলার পরেও বছরের পর বছর তাকে মানুষ কেন বকুল তলাই বলে। জিসানের থামার উত্তর হয় তো এমন কোন বৃক্ষই দিতে পারবে।
জিসান জিপ থেকে নেমে কাজল কাকুর দোকানে গেলো। আজ জিসান আগের মতো জড়তা যুক্ত নয়। খুব হাসিখুশি মুখ যেন এখানে কিছু ছিলো না তার। শুধু ছিলো দোকানের তাকে সাজানো পাইন আপেল বিস্কুট। কাকুর সাথে অনেক খোশ গল্প হলো। কাকু একবার বলেই ফেললেন, মেয়ে মানুষ স্বার্থপর ও লোভী হয় বাবা! একজন সৈনিককে বিয়ে করতে রুচিতে বেঁধেছিলো । অথচ আসল মানুষ চিনলো না সে।
লোভের ফল এ-র চেয়ে ভালো হয় না, তাই এখন একা। শুনেছি ছেলেটি বাটপার আগে আরও দু’টো বিয়ে করেছেন বাচ্চাও আছে শুনেছি। এখন আর তার খবর নেয় না। দখিনের জানালায় বসে তোমার ছবি নিয়ে বসে বসে কাঁদে আজকাল।
জিসান কথাগুলো শুনলো অচেনা মানুষের গল্পের মতো। কিন্তু কোন উত্তর দিলো না। হয়তো এতোটা ভালোবাসা কখনও কখনও এতোটা ঘৃণা হয়ে উঠে যখন তার নাম উচ্চারণ করা যায় না। জিসান কথা না বাড়িয়ে এক লিটার মিনারেল ওয়াটার নিলো। জিপে বসা সুন্দরী মেয়েটা হঠাৎ জিসানকে ফোনে কল দিলো, জিসান কাছে এসে বললো কি হয়েছে?
সুন্দরী তখন বললো অই যে দেখো একটি মেয়ে তোমাকে ডাকছে জিসান তখন তাকিয়ে দেখলো প্রাক্তন গাছটি বাতাসে দোলে পড়ছেন। জিসান তা পাত্তা না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন। ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দিলো। প্রাক্তন গাছটি তখন দৌড়ে এসে জিপের দরজায় ধরে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন, জিসান তুমি কথা শোনে যাও। আমার অনেক কথা আছে তোমার সাথে।
জিসান বললো, ড্রাইভার গাড়ি মুভ করো। সামনের সিটে বসে থাকা সুন্দরী মেহেদির মতো লাল ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন , তুমি মেয়েটাকে চেনো না? চেনো তো অবশ্যই ! গলার স্বরটা ভারী করে জিসান বললেন, সবাইকে চিনতে হয় নাকি ? তারপর স্বরটা আরেকটু নিচু করে বললেন , দুঃখের স্মৃতি মনে রাখতে নেই। সেকথা কেউ কি শুনেছে নাকি শুনেনি জিসান তা ভালো জানেন।
১৭টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ভালো পেলে কালো কেন, সুন্দরী পেলে ময়লা কেন?
ভালো লাগলো দালান ভাই।
দালান জাহান
কৃতজ্ঞতা দাদা শুভেচ্ছা
মোঃ মজিবর রহমান
শুভ ব্লগিং দালান ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এদের মতো বেঈমানদের জন্য একসময় চোখের জল, আঘাতের ক্ষতচিহ্ন হারিয়ে যায় গহীন অরণ্যে। তখন আর পিছু ফিরতে মন চায় না। চমৎকার অনুগল্প। ভালো থাকবেন সতত
দালান জাহান
ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকুন সবসময় চায়
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
চমৎকার গল্প।
দালান জাহান
ধন্যবাদ ভাই ভালো থাকুন সবসময়
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
সত্যিই তাই দুঃখের কথা মনে রাখতে নেই যা হবারতো হয়েই গেছে তাকে ফের মনে করা মানে নিজেকে পিছনে ফেলা। সুন্দর গল্প।
দালান জাহান
কৃতজ্ঞতা কবি শুভেচ্ছা
মনির হোসেন মমি
ভালবাসা অবিরাম।
হালিমা আক্তার
শেষ টা খুব ভালো লাগলো। প্রকৃতি শোধ নিতে ছাড়ে না। শুভ কামনা রইলো।
দালান জাহান
ধন্যবাদ আপু ভালো থাকুন সবসময়
সাবিনা ইয়াসমিন
কিছু স্মৃতি ভুলে যাওয়াতেই মঙ্গল। নইলে জীবন চলার পথে এগোনো যায় না।
গল্পের থীম আর সমাপ্তি ভালো লেগেছে, কিন্তু কি যেন নেই-নেই মনে হচ্ছে। সম্ভবত গল্পটা কিছু তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে। যাইহোক, এটা আমার ভুলও হতে পারে।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
দালান জাহান
সত্যিটাই সবসময় আশা করি এটাই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়। আমি জানি গল্পটা পাতলা হয়েছে। তবু ও দিলাম সবকিছুর ওজন ঠিক হয় না এই ভেবে। অণুগল্প এরপর আবার এডিট করব প্রেরণা পেলাম আপনার কাছ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ
উর্বশী
আসোলেই কি দুঃ খের কথা মনে রাখতে নেই ভাইয়া?
জিসানের ট্রেনিংয়ে যাওয়ার পর থেকে লেখায় তো পলক ই পড়তে দিলাম না। স্মৃতি ভুলে গেলেই হয়তো ভাল। চমৎকার গল্পের বিষয়। এক কথায় জীবনমুখী লেখা।বাস্তবতার উপখ্যান ও বলতে পারি। বেশ ভাল লেগেছে প্রকৃতিকে সাথে মিলিয়ে রেখেছো।ভাল থেকো, সুস্থ থেকো অফুরান শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
দালান জাহান
গল্পটা বাস্তব তাই ভালো লিখতে পারিনি। যদি অবাস্তব হতো হয়তো-বা আরেকটু ভালো লিখতে পারতাম। আপনাকেেই অশেষ ধন্যবাদ আপু। আন্তরিক শুভেচ্ছা