তোর্ষা,
কেমন জানি নিষ্প্রভ লাগে বলতি না? তোর এই কথাটি নিয়ে কতো হাসাহাসি করতাম আমরা সবাই। অনেক কষ্ট থেকেই বলতি সেটা কখনোই মনে হয়নি আমাদের। আর তোর এই কথাটি এতো বেশী ভালো লাগতো, যে তুই হেসে এলিয়ে পড়ে গিয়েও বলতি। তুই ছিলি আমাদের সবার মধ্যে সবচেয়ে আনন্দময়ী তরুণী। যার হাসানোর ক্ষমতা অপরিসীম, যে কষ্ট-যন্ত্রণাকে বিষফোঁড়ার সমতুল্য মনে করতো। একদিন ঊর্ণা এসে কি কান্না, কারণ ভুল মানুষকে ভালোবাসা। তুই ওকে একটিবারও না আটকে বললি, “কাঁদুক। ফোঁড়া পেকে গেছে পুঁজ বেড়িয়ে গেলে আবার সব ঠিক।” ঊর্ণা কান্না থামিয়ে বমি শুরু করলো। কি বকা তোকে এসব ঘেণ্ণার কথা বলিস বলে। ওর বমি দেখে তুই বললি, “যাহ এ কি করলি? বেচারা ছাগলটার জন্যে মাত্র এ ক’ফোঁটা জল ফেললি?” তোর্ষা কোনোদিন কখনো জানতে চাইনি, তোর কি কোনো কষ্ট ছিলো তখন? শুধু একদিন পুলক এসে বললো, “কি যে পায় গোপন করে। একটা মানুষ হাসি ঢেলেই যাচ্ছে আর আমরা সেটা নিয়েই যাচ্ছি।” সে সময় সবাই বসে ছিলাম আমরা। আর তুই তখন কি একটা তাড়া ছিলো, চলে গেলি। আমি পুলককে বললাম কি বলতে চাস? পুলক মাথা নেড়ে বললো আমি নাকি বুঝবো না।
একদিন বাস ছেড়ে দিলো, দেখছিলাম। কি দৌঁড়! বাস স্টার্ট করলো, তুই বাস কন্ডাক্টরকে চিৎকার করে ডাকলি— “ও পিচ্চি ভাই।” বাসে ওঠার পর ড্রাইভার বললো, “আপা আইজ আপনার পছন্দের গানের ক্যাসেট কিনছি।” তুই তখন উল্টে বললি, “ড্রাইভার ভাই ছোট মেয়েটা কেমন আছে? ওরে পড়াইবেন, বড়োটার মতো কম বয়সে বিয়া দিয়েননা যেনো।” ড্রাইভার তখন বললো, “না, না আপা এই ভুল আর করমু না।” তারপর চললো তপন চৌধুরীর গান “মন শুধু মন ছুঁয়েছে।” বললাম তোকে, তোর মন যে কোন মনকে ছোঁবে, কে জানে! তুই বললি, “আমার মন কেউ ছুঁতে পারবে না রে। হয়তো আমি একাই আটকে যাবো কোনো মনের।” বললাম এতো কঠিন কথা বলিস না তো,আজ এমনিতেই ইংরেজি টেষ্ট।
মনে আছে একদিন আমরা সবাই মিলে পিকনিকে গেলাম কলেজ থেকে সেই মাধবকুণ্ডতে? স্যারদের অনেক প্রিয় আর আদুরে মেয়েটি তুই। জানিস হিংসায় কচ্ছপের মতো গুটিয়ে যেতাম। তোকে বললে সেই কথা, তুই বলতি “আমার বিশ্বাস কর অপ্রিয় হতে মন চায়। দেখ সবাই কতো দুষ্টুমী করছে, আর আমি…।” আসলেই তাই। টিচাররা ডেকে বলতো তোকে, “তোর্ষা ওদিকটায় খেয়াল রেখো তো!” পুলক, অদ্রিতা, তূর্য, নিনাদ ওরা বলতো, “আহারে বেচারী।” অনেক ভারিক্কী নিয়ে ক্যামেষ্ট্রি স্যারের সামনে গিয়ে বললি, “স্যার সবাই ওই কুন্ডর উপরে উঠছে। আমারও যাওয়া উচিৎ। তা নইলে কখন কি এক্সিডেন্ট হয়ে যায়…।” স্যার তখন সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “তাইতো! শোনো তুমি একা যেওনা। কাউকে নিয়ে যাও। পুলক-নিনাদ-অদ্রিতা ওদেরকে সাথে নিও।” ওদের তখন পাবি কই তুই? ওরা তো কুন্ডর উপর থেকে তোকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে। তুই তখন স্যারকে বললি, “ঠিক আছে স্যার। এইতো আমার সাথে (আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে দেখালি) পৌলমী আছে।ওখানে উঠে তোর সেই আনন্দ দেখে কে? আমি দেখছিলাম তোর চোখে ঝিলিক দিচ্ছে। অন্যরকম ঝিলিক। একদিন কোন একটা ছেলে একটা মেয়েকে টিজ করছিলো, তুই গিয়ে বললি “প্রেম করতে চাইলে মেরুদন্ড লাগে।সেটা যেদিন হবে, সেদিন এসে প্রোপোজ করো।” তোর চোখে কি একটা ছিলো কখনো তোকে কেউ ফিরিয়ে দিতে পারতো না। তোর ছোটবেলার বান্ধবী জুঁহি একদিন আমায় এসে বলে, তোকে নিয়ে অনেক চিন্তা ওর। এতো সহজ তুই, এই আজন্ম পরিচিত জায়গা ছেড়ে বাইরে যখন যাবি, তখন এভাবে নিজেকে ধরে রাখতে পারবি কি তুই? অথচ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলি। সেখানের হলে গিয়ে আমি পুরো এক সপ্তাহ কাটিয়ে এলাম। তোর্ষা যাদুতে সবাই এতো আন্তরিক যে অনেক গর্ব হচ্ছিলো তুই আমার বন্ধু।
তোকে দেবো সীমানা ছাড়া
আদর-ভালোবাসা
তোর জন্যেই রেখেছি আমি
স্বপ্ন ভরা আশা।
তোকে বলবো গল্প-কথা
যতো যা জমেছে
প্রাণের মাঝে কেমন করে
তোর স্মৃতি আজোও নাচে।
চলবে—–
হ্যামিল্টন, কানাডা
১৬ মে, ২০১৫ ইং।
৩২টি মন্তব্য
অরণ্য
তোর্ষার গল্প শুনতে ভালই লাগছে।
অপেক্ষায় থাকলাম তোর্যাকে আরও জানবার।
(y)
নীলাঞ্জনা নীলা
তোর্ষা এভাবে স্থান পেয়ে যাবে সোনেলার সোনালী ভূবনে লেখার সময় ভাবিনি।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে অরণ্য। 🙂
অনিকেত নন্দিনী
তোর্ষাকে নিয়ে আরও অনেক কিছু জানার আগ্রহ জানাচ্ছি দিদি।
নীলাঞ্জনা নীলা
আজই দিচ্ছি পরের পর্ব। দেরী হবেনা। 🙂
রিমি রুম্মান
তোর্ষা’র চরিত্রটি আমি যেন দেখতে পাচ্ছি। খুব চেনা… ভালোলাগা নিয়ে পড়লাম। শুভকামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমাদের সবার মধ্যেই তো একজন তোর্ষা আছে। ঠিক না?
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং ফুলেল ভালোবাসা। -{@
ব্লগার সজীব
একবার নয়,দুবার পড়লাম লেখাটি নীলাদি।তোর্ষার প্রেমে পড়ে গেলাম দিদিভাই।এমন চরিত্রের প্রেমে না পড়া অন্যায়। দ্বিতীয় অংশ দ্রুত দিন প্লিজ।
নীলাঞ্জনা নীলা
তোর্ষার প্রেমেই পড়ে গেলেন?
আজই দিচ্ছি তোর্ষার পরের পর্ব। খুশী? 🙂
সিকদার
সুন্দর । অবিরত চলুক ।
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ আপনাকে, লেখার এ পর্বে সুন্দর মন্তব্যের জন্যে।
তানজির খান
বন্ধুত্বের স্মৃতি চারণ। আপি, ভাল লেগেছে এই অনু গল্প।
নীলাঞ্জনা নীলা
বন্ধুত্ত্বের চেয়ে আমার কাছে নিঃস্বার্থ আর নির্ভেজাল কোনো সম্পর্ক নেই। বুঝলে ভাইয়া? 🙂
খেয়ালী মেয়ে
আপু তোর্ষাকে লিখা চিঠিটা পড়ে তো তোর্ষা সম্পর্কে আরো জানতে ইচ্ছে করছে–অপেক্ষা শুরু হলো পরের পর্বের জন্য 🙂
তোকে বলবো গল্প-কথা
যতো যা জমেছে
প্রাণের মাঝে কেমন করে
তোর স্মৃতি আজোও নাচে।….. (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
তোর্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার যে উৎসাহ পাচ্ছি, তারপর কি আর অপেক্ষা করালে চলে?
আজই আসছে পরের পর্ব। 🙂
হিলিয়াম এইচ ই
অসাধারণ!!
তোর্ষার দ্বিতীয় পর্ব চাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
অসংখ্য ধন্যবাদ।
আর তোর্ষা আসিতেছে, আজই ৩ জুলাই, ২০১৫ ইং তারিখ রাত্রি ১০ ঘটিকার মধ্যেই। 🙂
স্বপ্ন
এত সুন্দর চিঠি! তোর্ষা আপু এখন কোথায়? কেমন আছেন উনি?
নীলাঞ্জনা নীলা
তোর্ষা এখন কোথায়? তার উত্তর একেবারে শেষ পর্বে। কেমন আছে সে খবরও ওই একই পর্বে আসবে। একটু কষ্ট করে অপেক্ষা করুন স্বপ্ন ভাইয়া। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
তোর্ষা, কি মিস্টি নাম!! তোর্ষার মধ্যে নীলা আপুর ছায়া দেখছি নাকি নীলাপু র মধ্যে তোর্ষার?
তোর্ষা আর লেখার যাদু আগ্রহ বাড়িয়ে দিলো আরো জানবার। অপেক্ষা করছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
তোর্ষা একটি নদীর নাম। জলপাইগুঁড়িতে এই নদীটি বয়ে যাচ্ছে। আমার প্রিয় নদীগুলোর মধ্যে এটি একটি।
“তোর্ষার মধ্যে নীলা আপুর ছায়া দেখছি নাকি নীলাপু র মধ্যে তোর্ষার?” প্রশ্নটা আমায় অনেক আনন্দ দিলো। আসলে আমাদের সবার মধ্যেই একজন তোর্ষা আছে। ভুল বললাম কি?
আজই দিচ্ছি পরের পর্ব। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে চাই না।
স্মৃতিই সম্বল আমাদের ক্ষয়িষ্ণু জীবনে। সব নামগুলো সুন্দর।
নীলাঞ্জনা নীলা
তোর্ষাকে নিয়ে এলাম আবার। অপেক্ষা করাতে চাইনা আমিও। এতো ধৈর্য কম যে লেখা থামিয়ে দিলেই আর লেখা হয়ে ওঠেনা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
মিথুন
কি মিষ্টি সব নাম। কেন জানি মনে হচ্ছে, এটা নীলা আপুর গল্প। আটটি লাইন ছুঁয়ে গেলো, অই মেঘের জল ছোঁয়ার মতই………
নীলাঞ্জনা নীলা
আরে না না। তোর্ষা আসলে আমাদের সবার মনের প্রতিনিধি। -{@
মেহেরী তাজ
যাক আমায় আর বেশি অপেক্ক
নীলাঞ্জনা নীলা
😱😱
মেহেরী তাজ
যাক আমায় আর বেশি অপেক্ষা করতে হলো না পরের পর্ব চলে আসছে। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
তোর্ষা লেখাটাকে শেষ করতে চাই, তা নইলে আবারও লেখার জটে আটকে যাবে। তাড়া তাই আমার। :p
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
অধীর আগ্রহে পরের পর্ব জন্য -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
পরের পর্ব দেয়া হয়েছে গতকাল রাতেই। ধন্যবাদ অপেক্ষায় থাকার জন্যে। 🙂
জিসান শা ইকরাম
আমার খুব পরিচিত একজনের সাথে তোর্ষাকে কিছুটা মিলিয়ে ফেলেছি……
পরের পর্বে হয়ত তাঁকে খুঁজে পাবো আমি।
তোমার লেখা পড়ে মাঝে মাঝে ভাবি, কিভাবে এত সাবলীল উপস্থাপনা করো?
এমন ভাবে লিখছো,যেন তোর্ষাকে দেখছি চোখের সামনে।
ফটো দুটো আর একটু বড় হলে ভালো হতো।
নীলাঞ্জনা নীলা
কে কে কে? তোর্ষার লেখিকা জানতে আগ্রহী কে সেই জন? ;?
আর আমি বড়োই আনাড়ী, ছবি কিভাবে বড়ো করে দিতে হয় জানা নেই। চেষ্টা করেছি। মাঝে-মধ্যে বড়ো হয়, আবার হয়না। অনেক কিছুই উলটাপালটা। কিভাবে যে ধারাবাহিক লিঙ্ক দিয়েছি আগে, এখন আবার ভুলে গেছি। মাথা ভরা গোবর আমার। ^:^