মরা মুরগি, মরা গরু-ছাগল, শিয়াল-কুকুরের গোশতের চেয়ে মৃত মানুষের গোশতই বেশী মজা!!
***
আক্কেল আলী ও সবজান্তা পরস্পর ঘনিষ্ট দুই বন্ধু।
আক্কেল আলী রাগের চোটে কথা বলতে না পেরে তুতলাতে থাকে। তার মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না।
সবজান্তা বলল, বুঝতে পারছি না তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেন! আমি কি মিথ্যা কিছু বলেছি?
আক্কেল আলীঃ তুই প্রায় সব মানুষকে মানুষের গোশত খেকো বানিয়ে ছাড়ছিস আবার বলছিস মিথ্যা কিছু বলেছিস কিনা! আমি যেন তুকে আজকে নতুন করে দেখছি!
সবজান্তাঃ আক্কেল, মাথা ঠান্ডা করে আমার কথাগুলো চিন্তা কর। আর কিছু মানুষ যে মানুষের গোশত খায় এটা তো কোরআন হাদিসেও আছে। শুধু মানুষ নয়, কতক ভাই খায় আপন ভাইয়ের গোশত।
আক্কেল আলীঃ ভাই খায় আপন ভাইয়ের গোশত? এটা কি কখনও সম্ভব? তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? আরো বলছিস এটা কোরআন হাদিসেও আছে?
সবজান্তাঃ এখনও পাগল হইনি, তবে যেভাবে আদম সন্তানগুলো নিজের ভাইয়ের গোশত খেতে শুরু করেছে তাতে পাগল হতে বেশী সময় লাগবে না। আর হ্যাঁ, এটা অবশ্যই কোরআন হাদিসেও আছে। এটা নিয়ে আল্লাহও কথা বলেছেন আবার আল্লাহর রাসূল হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কথা বলেছেন।
আক্কেল আলীঃ দোস্ত ক্লিয়ার করে বলতো! আক্কেল আলীর সুর নরম হয়ে আসে। কোরআন হাদিসের কথা শুনে সে আর বিরূপ মন্তব্য করার সাহস পাচ্ছে না।
সবজান্তাঃ শুন, মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর সময়ের কথা। একবার হযরত আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু ও হযরত ওমর (রা.) একজন খাদেমসহ সফরে বের হলেন। তারা ঘুম থেকে জেগে দেখলেন তাঁদের খাদেম নিদ্রায় মগ্ন, এখনো তাঁদের খাদ্য তৈরী হয়নি। তখন একে অপরে বলাবলি করতে লাগলেন, খাদেমটি বাড়ীর মত নিদ্রা যাচ্ছে অর্থাৎ সে নিন্দ্রাতুর। অতঃপর তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কাছে গিয়ে আমাদের সালাম বলো এবং তাঁর কাছ থেকে আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসো। খাদেমটি রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কাছে গিয়ে খাবার চাইলে তিনি বললেন: তারা তো খেয়ে নিয়েছে। তারা একথা শুনে শঙ্কিত হলেন এবং রাসূলূল্লাহ্ (সা.)-এর দরবারে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার কাছে খাদ্য চেয়ে লোক পাঠালাম আর আপনি বলেছেন, আমরা খাদ্য গ্রহণ করেছি। আমরা কী খেয়েছি? তিনি বললেন: তোমাদের ভাইয়ের (খাদেমের) গোশত খেয়েছো। ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি তোমাদের দাঁতের সাথে তার (খাদেমের) গোশত দেখতে পাচ্ছি, তারা বললেন, আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বললেন: সেই তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। এ হাদিস থেকে পরিস্কার বুঝা গেল যে, কারো স্বভাব নিয়ে আলোচনা করাও গীবতের অন্তর্ভূক্ত।” তারপর সবজান্তা বলল, এবার তুইই বল মানুষ নিজের ভাইয়ের গোশত নিজে খাচ্ছে কিনা!
কিছুক্ষণ নিরব থেকে সবজান্তা আবারো বলতে লাগল, ‘মুহাদ্দিছুল উম্মাহ আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন: তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহবায়ে কিরাম উত্তর করলেন: আল্লাহ ও তদীয় রাসূলই সম্যক জ্ঞাত। তিনি বললেন: গীবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু বলা যা তাকে নাখোশ করবে। জানতে চাওয়া হলো: যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে তা বিদ্যমান থাকে তাহলেও কি? তিনি জবাবে বললেন: তোমার ভাইয়ের মধ্যে যা কিছু বিদ্যমান তা বললেই গীবত হবে; অন্যথায় তুমি তাকে অপবাদ দিলে।
হযরত মুত্তালিব ইবনু আব্দিল্লাহ্ (রা,) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন: গীবত হলো কোনো ব্যক্তি সম্বন্ধে তার অগোচরে এমন কিছু বলা যা তার মধ্যে বিদ্যমান।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন: গীবত হলো তোমার ভাই সম্বন্ধে তার অনুপস্থিতিতে এমন কিছু বলা যা সে অপছন্দ করে।
সুতরাং…. সবজান্তা বলে যেতে লাগল, তুই বল মানুষ ভাইয়ের গোসত মজা করে করে আয়েসে জোস করে খাচ্ছে কিনা!
আক্কেল আলী তন্ময় হয়ে শুনতে থাকে সবজান্তার কথা। তার মুখে কোন কথা আসছে না।
সবজান্তা বলতে থাকে,
গীবত বা পরনিন্দাকে সূরা ‘হুজুরাত’ এ অতি ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমেনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাকো, কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত খেতে চাইবে। বস্তুত: তোমরা তো এটাকে ঘৃণ্যই মনে করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী পরম দয়ালু।’ (আয়াত-১২)
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হুজুর (সা.) বলেছেন; ‘শবে মেরাজে এমন এক জাতির কাছে আমি গমন করি যাদের নখ ছিল তামার এবং তারা তা দ্বারা নিজেদের চেহারা ও বুক খামচাচ্ছিল। আমি জিবরাইলকে (আ.) জিজ্ঞাসা করি, এরা কারা? তিনি বললেন, ‘এরা সে সব লোক যারা লোকেদের গোশত খেত এবং তাদের ইজ্জত আব্রু হরণ করত।’ (আবু দাউদ) এরা লোকদের গীবত করত বলে এ শাস্তি।’
একবার ভীষণ দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদেরকে বললেন, ‘তোমরা জানো এটা কি?’ তিনি নিজেই বললেন, ‘এটি ওইসব লোকের দুর্গন্ধ যারা মুসলমানদের গীবত করত।’ (আদাবুল মোফরাদ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘দুই ব্যক্তি জোহর অথবা আছরের নামাজ আদায় করে এবং তারা দুই জনই রোজা রেখেছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজ শেষ করার পর তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা পুনরায় অজু করো এবং আবার নামাজ পড়ো এবং রোজা পূরণ করো। তবে তা অপর কোনো সময় কাজা হিসেবে আদায় করবে।’ তারা উভয়ই বলল, ‘হুজুর! এর কারণ কি?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা অমুক ব্যক্তির গীবত করেছিলে।’ (মেশকাত)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘গীবত, জেনা (ব্যভিচার) অপেক্ষা গুরুতর পাপ।’ সাহাবাগণ আরজ করলেন, ‘হুজুর! গীবত জেনা অপেক্ষা গুরুতর কিভাবে’ হুজুর বললেন, ‘মানুষ জেনা করার পর তওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, মানুষ তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু গীবতকারীকে ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ না যার গীবত করা হয়েছে সে ক্ষমা করে দেবে। হজরত আনাস (রা.) এর বর্ণনায় আছে, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘জেনাকারীর জন্য তওবার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু গীবতকারীর জন্য তওবার সুযোগও নেই।’ (মেশকাত)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘গীবতের একটি কাফ্ফারা এই যে, তুমি যার গীবত করেছ তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবে এবং এভাবে বলবে, হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার মাগফিরাত করো।’ (মেশকাত)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মৃত ব্যক্তিদেরকে মন্দ বলো না, কেননা তারা নিজেদের আমলগুলো পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।’(বোখারি)
অনেক মুসলমান মুসলমানের গীবতচর্চায় লিপ্ত থাকে। কোরআন ও হাদিসের শিক্ষার কথা স্মরণে রাখলে এবং সেই মোতাবেক আমল করলে গীবতচর্চা হতে আত্মরক্ষা করা যেতে পারে।
আক্কেল আলীঃ সত্যি বলেছিস তুই। কোন হোটেলে যদি মরা মুরগী, কুকুর-শিয়ালের গোশত পাওয়া যায় দেশব্যাপী হৈচৈ পড়ে যায়। মিডিয়া পাড়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়, সামাজিক সাইটে ভাইরাল হয়। কারণ সেগুলো খাওয়া জায়েজ নেই, হারাম অথচ আমরা কত সহজে জেনে ও না জেনে ভাইয়ের গোশত খাচ্ছি, তাও মরা ভাইয়ের গোস্ত। খাচ্ছি তো খাচ্ছিই…… । এটা কি ঐ সব মরা জন্তুর গোশতের চেয়ে মানুষের গোশত মজা বলেই!
সবজান্তাঃ সহজ কথা সহজে বুঝতে পারিস বলেই তোর নাম আক্কেল আলী।
https://sonelablog.com/তিতা-কথা-১/
১২টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
মানুষ মানুষের ভাই ভাই। আবার ভাই খায় ভাইএর গোস্ত।মানুষ ধর্মীয় এবং উন্নত মানবতা বোধ সম্পন্ন হলে আর এমনটা করতো না। ব্যাক্তিত্ব বলেও কিছু কথা থাকে। যা আমরা ধারন করতে প্রায় সময় ভুলে যাই।
খুব ভালো পোস্ট লিখেছেন।
শুভ কামনা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বন্যাপু
নিতাই বাবু
আসলেও খায় দাদা।
২০১৩ সালের ঘটনা। ইন্দোনেশিয়ার একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদে কেঁপে গিয়েছিল পুরো বিশ্ব। খবরে প্রকাশ পেয়েছিল এক তরুণীর কাহিনি, মানুষের মাংস খেয়ে পেট ভরানো যার অভ্যেস, নেশাও বলা যায়। দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এই খবর। কিন্তু এই খবরের কতটুকু সত্যি?
জাকার্তা-নিবাসী ২৯ বছরের এই তরুণীর শখ ছিল মানুষের মাংস খাওয়া। নিজের বাড়িতে পরিচিতদের ডেকে এনে খাবার পরিবেশন করতেন তরুণী। সেই খাবারে মেশানো থাকত বিষ। অভ্যাগতের মৃত্যু হলেই তাঁকে কেটে তাঁর শরীর থেকে কাঁচা মাংস চিবিয়ে খেতেন তরুণী। উদ্বৃত্ত মাংস রেখে দিতেন ফ্রিজে। খবরে দাবি করা হয়েছিল, নিজের স্বামীকে পর্যন্ত খুন করে তার মাংস খেয়ে ফেলেছেন তরুণী। তাঁর বাড়িতে যখন বন্ধুবান্ধবরা আসতেন, তখন ফ্রিজ থেকে অনেক সময়ে নরমাংস বার করে রান্না করে তাঁদের আপ্যায়ন করতেন তিনি। বন্ধুরা জানতেও পারতেন না যে, যে সু্স্বাদু মাংস তাঁরা খাচ্ছেন, তা আসলে মানুষের মাংস। রান্নার ব্যাপারে সুনাম ছিল তরুণীর।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
অনেক দিনের একটি ঘটনাকে মন্তব্যে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা……
ছাইরাছ হেলাল
আমি এ লেখায় আপত্তি জানাচ্ছি,
অতি জরুরী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, রম্য করা সুযোগ নেই, উপস্থাপনে।
আপনি এ বিষয়ে লিখতেই পারেন, তবে এটি রম্য হতে পারে না,
ভাবুন ভাল করে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আপনার অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি লেখাটি রম্য থেকে উইথড্র করেছি। আমারও মনের মাঝে কোথায় যেন খচ্ খচ্ করছিলো। আপাতত এটাকে একান্ত অনুভূতিতে রাখলাম।
‘‘অতি জরুরী গুরুত্বপূর্ণি বিষয়ে রম্য করার সুযোগ নেই’ এ বিষয়ে আমি আপনার সাথে একমত।
আপনাকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং বিষয়টি আমার নজরে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এজন্যই ব্লগ আমার ভালো লাগে।
মনির হোসেন মমি
সুন্দর উপস্থাপনা। হাদিস কোরানের আলোকে গীবত একটি কবীরা গুনাহ ভাল ভাবেই আক্কেল আলীকে বুঝিয়ে দিলেন।
জিসান শা ইকরাম
গীবত তো মারাত্মক পাপ দেখা যাচ্ছে।
সত্যি হলেও গীবত করা যাবে না, অথচ আমরা হর হামেশা এসব করে যাচ্ছি।
এটি জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
হেফাজতের আমীর যখন বললেন ‘ ব্লগাররা নাস্তিক’, এখন আমরা ক্ষমা না করলে উনি তো এই অন্যায়ের মাফ পাবেন না,
উনি কি এই সব হাদিস জানেন না?
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
আসলেই আমরা মরা মানুষের মাংস খাচ্ছি।
অনেক কিছু জানলাম। ভালো লাগলো।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সুন্দর ও উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভিন
আমরা সবাই জানি কিন্তু মানিনা। কতো অনায়াসে নিজেরাই নিজেদের গোশত খেয়ে নিচ্ছি। খুব সুন্দর ও চমৎকার উপস্থাপন করেছেন
চাটিগাঁ থেকে বাহার
পড়ে মন্তব্য করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপু
শুভ কামনা।