ডায়রির পাতা।

রিতু জাহান ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, মঙ্গলবার, ০৭:৪৭:৪১অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, গল্প ১৬ মন্তব্য

বিগত দিনগুলির চেয়ে আজ আমি বেশী পরিশ্রান্ত।
তুমি যতোটা মনে করো তারচেয়েও বেশী।
আজ এ বাতায়নে বসে এক অদ্ভুদ চোখে চেয়ে আছি আমি জীবনের পানে। কি অদ্ভুদই না লাগে জীবনের পানে তাকাতে। এই তো ছোট এক জীবন। অথচ কতো তার পথ চলা। ঘূর্ণায়মান জীবনের পরিক্রমায়, শিশু থেকে কিশোরী, কিশোরী থেকে এই এখন এক পরিনত বয়সে এসে পৌছে গেছি। উচ্ছল সেই দিনগুলি পিছনে ফেলেছি। সন্ধ্যা রাতের বুকের মাঝে পরিণত জীবন আমার গোধূলী লগনের মতো একাকার হয়ে আছে। রক্তিম এ সূর্য রাতের অন্ধকারে মিশে যাবে পৃথিবির নিয়ম মেনে অন্য পৃথিবীর অন্য পৃষ্ঠে আলো দিতে।
এইতো ডুবে গেলো সূর্য। আমার এ ঘরে আলো দিতে হবে এখন আমাকেই।
চারদেয়ালের এই ছোট বাসাটাতে এখন একেবারেই একা এক পরিণত মধ্যবয়সি নারী সুফি। সন্তানরা পড়ছে বাইরে। ইদানিং কতো কি যে ভাবনাগুলো ভীড় করে সুফির মনে! জীবনের এই প্রান্তে এসে দুজনই শুধুমাত্র দুজনেরই সংগী। সময়ের প্রবাহে এটাই হয়ত নিয়ম। এক সময় ভরপুর জীবন ছিল তার। আত্নীয় স্বজনে ভরা থাকতো বাসাটা তার। সবার সব সমস্যাতে অর্থ ও শ্রম দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করত। এই মে মাটির খাঁচার মাঝে যে অন্তর আত্নাটি তার, তাকে বোঝাতে চেয়েছে মনই মন্দির মনই মসজিদ। এই ভুবনের আলো ও আধারের মাঝে এসেছে যতো মনিষী পাপী তাপী মানুষ সবাই এই মাটিতেই মিশেছে। জন্মতরে নাম মিলেছে। কর্মগুনে নামের মাঝেই কুখ্যাতি নামের মাঝে সুখ্যাতি।
সুফি অল্প বয়সেই স্বামীর হাত ধরে চলে এসেছিল এক নতুন পরিবেশে। সেই পরিবেশে তার স্বামীই ছিল একমাত্র সংসারের হালধরার মানুষ। অর্থাৎ অর্থনৈতিক ভাবে চালক ব্যাক্তি। অল্প বয়সেই শিখেছিল সুফি সংসার মানে ত্যাগ। ছোটবেলায় তাকে কে যেন বলেছিল,”ভোগের থেকে ত্যাগেই শান্তি”। আত্নতৃপ্তি নাকি অনেক। তবে এই এখন এই বয়সে কেন এতো অতৃপ্তি! তবে কি তার সব ত্যাগ অপাত্রে ছিল?
সুফি জানে, সংসারে একেকটা মানুষ একেকরকম। ঝগড়া মান অভিমান নিয়েই জীবন। সুফি সবই সহ্য করতে পারে, কারো ধোকাবাজি সহ্য করতে পারে না। তা সে যতো আপনই কেন না হোক। ক্ষমা সহজে করতে পারে না। আসলে কিছু কিছু অন্যায় ক্ষমা করা যায়ও না। যে বোনকে সে তার সর্বস্ব দিয়ে সাহায্য করল, সেই বোনই তার সব বিশ্বাস ভেঙে চুরমার করে দিল। সুফির তাই মা বলে ডাকেনি কাউকে অনেকদিন। মা সুফির সম্পত্তিও তার বোনকে দিয়ে দিল। মা বাবাও সন্তানকে দুই চোখে দেখে। এটাই হয়ত পৃথিবীর আর এক নিয়ম।
নাহ! বুড় গেল তো গেলো কোথায়? এখনো আসছে না! মাথায় কি যে সব না পাওয়া চেপে বসেছে আজ।
অনেক বেশী অভিমান এই বুড়োর। সতৎ থেকেছে আজীবন। আত্নীয় স্বজন এই নিয়ে তীরষ্কার করেছে আজীবন। সবার কাছ থেকে তাই নিরব থেকেছে। কেমন যেন চুপসে গেছে এই বুড়ো। বাচ্চাদের মতো হয়ে গেছে একটুতেই তার অভিমান।
এখন শুধু প্রতিক্ষা একটা শেষ ঠিকানার।

৯৫৫জন ৯৫৪জন
0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ