
প্রাইমারিতে থাকতে ভাবতাম চোর কেমন হয় !!
সারা শরীরে সরিষার তেল আর পাতিলের তলার কালি মেখে, লেংটি দিয়ে, খুন্তি হাতে, চৌকির নিচ বরাবর সিঁধ কাটে তেমন মানুষটা চোর হবে।
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ভাগ্যবান গৃহস্থ চোর ধরবে। স্কুল ছুটির পর তাড়াতাড়ি ফিরেই সিঁধ কাটা দেখতে যাবো। ওরে আল্লাহ, এতো ছোট গর্ত দিয়ে চোর কি করে ঢোকে ?
সন্ধ্যেবেলায় মেম্বার বাড়ির উঠানে, গোল হয়ে বসা শালিশ বৈঠকে, ভীরের পিছন থেকে মামার কাঁধে চড়ে দেখা হতো, সাদা ফতুয়া পড়া চার পাঁচ জন মোড়লের সামনে দুই হাঁটুর মাঝখানে মাথা নিচু করে মুখ লুকানো, খালি গায়ের লেংটি করা মানুষটার সামনে একটা খুন্তি। ছালার বস্তার উপর তিনটা কাঁসার থালা, দুইটা পিতলের কলস আর একটা সিলভারের বদনা।
জটলার পিছন দিক থেকে নারী কন্ঠের অস্পষ্ট কান্নার আওয়াজ। হেয় তো কিছু নেতে পারে নাই, হেরে মাফ কইরা দেন।
সেগুন কাঠের চেয়ারে আলাদা করে বসা, সবচেয়ে মোটা ভুরিওয়ালা লোকটার দরাজ কন্ঠ- কাইন্দা লাভ নাই, জামাই সামলাইয়া রাখ। তুই আমাগো গেরামের মাইয়া, হের লাইগ্গা শেষ বারের মতো কাল্লুরে মাফ কইরা দিলাম।
এরপর যদি কোন দিন চুরির কতা হুনি, তোরে শুদ্দা গ্রাম ছাড়া করমু।
চারিদিকে সামান্য গুঞ্জন, ওইদিকে চোর মিয়া কুঁজো হয়ে মাথা নুয়াইয়া সাদা পোষাকধারীদের পা ছুঁয়ে যেত গুনে গুনে।
ততক্ষনে আমার চোর দেখার অভিযান শেষ, মামার কাঁধে বসেই উল্টোদিকে মাথা ঘুড়িয়ে দেখতাম, ভাঙ্গা ভীরের মধ্যে ছেঁড়া শাড়ি পড়া মহিলাটির পিছনে দাড়িয়ে খুন্তি ওয়ালা কালি মাখা চোর- শ্রমের কডা কডা।
কত লজ্জা ছিলো চোরের।
কাল থেকে চোর দেখলে, দুর দিয়ে হেঁটে যাবো। স্কুলে গিয়ে ছুটির ঘন্টায় চোর বেচারার গল্প শোনাবো।
যুগ বদলেছে, আজকাল চোর দেখি চকচকে পার্লার ফেরত কোট টাই পড়া, দামী লেদারের সোফায় বসা, সামনে ত্রিশ চল্লিশেক মাইক্রোফোন আর পিছনে আট দশজন দেহরক্ষী নিয়ে দন্ত উদ্ভাসিত হাসির সাথে কি চমৎকার রঙিন ছবিতে পত্রিকার প্রথম পাতায়।
ওরা অভাবে চুরি করে না, স্বভাবে করে।
ওরা ঘর জামাই না, নিজের বাংলোয় থাকে।
ওদের দেহে মুখে কালি নেই, ওরা ২৪/৭ কেমেরা ফেইস নিয়ে রেডি থাকে।
ওরা ধরা পড়ে মাথা নুয়ে রাখে না, সেলিব্রিটি হয়।
ওদের গল্প স্কুলের বাচ্চারা জানেনা, অনলাইনে ভাইরাল হয়।
ওদের খুন্তি লাগে না, আধা খাওয়া আপেল মার্কা ল্যাপটপ লাগে।
ওদের বিচার আর বিচারক সবাই দেখে না, গল্প শুনে।
ওদের পক্ষে ওদের বৌ থাকে না- এডভান্স পেইড; উকিল থাকে।
ওরা চৌকির নিচ দিয়ে রাতের আঁধারে সিঁধ কাটে না- ভূয়া কাগজ বানিয়ে দিনের আলোয় চা, ঠান্ডা খেতে খেতে, এসির হাওয়ায় বসে, তারের ভিতর দিয়ে চুরির কর্ম সারে।
আবার বিনা তারে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে ব্যাংকের লকারে ঢোকে।
ওরা চুরি করা মাল কাঁধে বহন করে না, অনলাইন ট্রান্সফার করে।
ওদের লজ্জা আছে কি না জানিনা, কার কাছে ধরা খাইয়া, কার কাছে মাফ চাইয়া পাড় পায়- তা ও শুনিনা।শুধু ওদের কালো আয়নার গাড়ি শতমাইল বেগে দৌড়ায় ধূলা উড়িয়ে, আমরা পলিউশানের ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকি।
আচ্ছা, ব্যাংক ছাড়া এখনও তো চুরি হয় গ্রামে, গঞ্জে, শহরে। বাস ষ্ট্যান্ড আর লঞ্চ ঘাটে, হাটবারের জটলায়।
তেমন গাঁও গেরামের বখাটে আর পকেটমারদের যদি চোর টাইটেল বলবৎ থাকে,
ডিজিটাল খুন্তিওয়ালা অনলাইন চোরদের অপমান হয় না ?
২২টি মন্তব্য
মোহাম্মদ দিদার
যাকে বলে ডিজিটাল চোর।
যুগ বদলেছে, আজকাল চোর দেখি চকচকে পার্লার ফেরত কোট টাই পড়া, দামী লেদারের সোফায় বসা, সামনে ত্রিশ চল্লিশেক মাইক্রোফোন আর পিছনে আট দশজন দেহরক্ষী নিয়ে দন্ত উদ্ভাসিত হাসির সাথে কি চমৎকার রঙিন ছবিতে পত্রিকার প্রথম পাতায়।
ওরা অভাবে চুরি করে না, স্বভাবে করে।
ওরা ঘর জামাই না, নিজের বাংলোয় থাকে।
ওদের দেহে মুখে কালি নেই, ওরা ২৪/৭ কেমেরা ফেইস নিয়ে রেডি থাকে।
ওরা ধরা পড়ে মাথা নুয়ে রাখে না, সেলিব্রিটি হয়।
ওদের গল্প স্কুলের বাচ্চারা জানেনা, অনলাইনে ভাইরাল হয়।
ওদের খুন্তি লাগে না, আধা খাওয়া আপেল মার্কা ল্যাপটপ লাগে।
ওদের বিচার আর বিচারক সবাই দেখে না, গল্প শুনে।
ওদের পক্ষে ওদের বৌ থাকে না- এডভান্স পেইড; উকিল থাকে।
আমার ভালো লাগুক না লাগুক, কথাগুলো সত্য।
এস.জেড বাবু
অনেক ধন্যবাদ ভাইজান
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুবই চমৎকার
এস.জেড বাবু
শুভেচ্ছা রইলো আপু
সুরাইয়া পারভিন
ডিজিটাল খুন্তিওয়ালা অনলাইন চোরদের অপমান করবে কে?
যারা চোর ধরবে শাস্তি দেবে সবাই এক একটা বড়ো চোর
এস.জেড বাবু
সত্যি বলেছেন আপু । নিরেট সত্যি।
শুভেচ্ছা রইলো।
নুর হোসেন
যুগ বদলে গেছে বদলে গেছে চোর,
শহুরে ভুত ল্যাম্পপোষ্টে ঝুলে আর গ্রাম্য ভুত গাছের ডালে ঠ্যাং ঝুলায়!
সর্ষের ভিতরেই ভুত তাড়াবে কে?
এস.জেড বাবু
কেউ তাড়ানোর প্রয়োজন মনে করে না।
যাদের প্রয়োজন, তারা তাড়ানোর ক্ষমতা রাখে না।
অনেক ধন্যবাদ ভাইজান
ছাইরাছ হেলাল
এনালগ আর ডিজিটালের পার্থক্য আমি নিজ গুণে মেনে নিলে আর সমস্যা
থাকার কথা না।
এস.জেড বাবু
মেনে নেয়ার মত মন সবার নেই যে।
শুভেচ্ছা রইলো প্রিয় লিখক ভাইজান।
প্রদীপ চক্রবর্তী
এনালগ চুর এখন ডিজিটাল চুরে পরিণত।
ভালো লেখনী দাদা।
এস.জেড বাবু
হাহাহা
সত্যিই বলেছেন ভাই।
সব আধুনিক হয়ে গেছে।
শুভেচ্ছা রইলো ভাই
নিতাই বাবু
আধুনিক চোর যাকে বলে।
চোর নিয়ে আপনার দারুণ ভাবনা প্রকাশ করেছেন দাদা।
এস.জেড বাবু
সর্বাধূনিক চোর
ধরা যায় না, কুইচ্চার মতো মুচরাইয়া ছুইট্টা যায়।
শুভেচ্ছা রইলো ভাইজান
কামাল উদ্দিন
সবাই আধুনিক আমরা, এখন চোরদের হাতে খুন্তি মানায় না। আধ খাওয়া এ্যপেলটাই ওদের ব্যাংক লকার খুলে দেয়। সুতরাং………..
এস.জেড বাবু
হাহাহা
আধুনিক যন্ত্রে অত্যাধুনিক চোর
একটা উন্নয়নশীল দেশের ঘুণপোকা ।
শুভেচ্ছা রইলো ভাই
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যেও 😀
তৌহিদ
আধুনিক চোর এমনই হয়। এরা প্রকাশ্যে কিছু করেনা, তবে এসির বাতাসে সব কুটনি ভাল চেলে জনদূর্ভোগ চরমে নিয়ে যায়। তারা নিপাত যাক।
এস.জেড বাবু
এরা দেশের সমাজের ঘুণপোকা
এদের শেষ নেই ভাই-
সত্যি হলো, দেশ একটাই, যুগে যুগে বদলায় চোর।
শুভেচ্ছা ভাইজান
রুমন আশরাফ
হেই দিন কি আর আছে! দিন বদলাইছে না! চোরেরাও আপগ্রেড হইসে। হা হা হা।
এস.জেড বাবু
সত্যি বলছেন। ওরা ও আপডেট হচ্ছে।
শুভেচ্ছা রইলো ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
.চমৎকার লিখেছেন বাবু ভাই।