ঝুম বৃষ্টির এই দিনে

জিসান শা ইকরাম ১ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:৫১:৩০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৪ মন্তব্য

লক ডাউনের কারনে আজকে সমস্ত দিনই বাসায়। শুয়ে, বসে, সোনেলা ব্লগ এবং ফেসবুকে বিচরণ। অনেকদিন পরেই কাজহীন আমি।

সকাল থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি।বরিশালে নিজের বাসা থাকলেও এখনো থাকি আমি আব্বার বানানো টিনের চালের বাড়ীতে।এই যে বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দ তা একমাত্র টিনের চাল থাকলেই অনুভব করা যায়।
দুপুরে ভাত ঘুম শেষে বৃষ্টি দেখতেই ছেলেদের মা সহ বারান্দায় বসে ছিলাম। বাগানের রঙ্গন গাছের ফুলগুলো বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।কামিনী ফুলগুলো হাসছে। মাথার উপরে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ, চাল থেকে গড়িয়ে পরা বৃষ্টির পানি, সামনে বাগানের পাতাবাহার, রঙ্গন আর কামিনী ফুলে বৃষ্টির মাখামাখি। খুবই রোমান্টিক সময় পার করছিলাম।
এমন অবস্থায় মুড়ি ভাজা খেতে ইচ্ছে করলো। বললাম বউকে – মুড়ি ভাজা খেতে ইচ্ছে করছে।আশা করছিলাম সে বলবে ‘ আচ্ছা আমি বানিয়ে আনি।’ কিন্তু সে বৃষ্টি দেখছে তো দেখছেই। অগত্যা আমি আবার বললাম ‘ আচ্ছা আমিই বানিয়ে আনি।’ মনে মনে বলছিলাম ‘ এবার অন্তত বলো যে আমি বানিয়ে আনি। কিন্তু সে বললো ” আচ্ছা বানিয়ে আনো।”
এইডা কিছু হইলো? আমি কখনো মুড়ি ভাজা করেছি? তারপরেও স্মার্টলি বললাম ‘ তুমি বসো, আমি বানিয়ে আনি।’

ছুটলাম রান্না ঘরে। কোথায় মুড়ি, কোথায় হাড়ি? পেলাম অবশেষে। কড়াই চুলায় দিয়ে তেল দেবো তাতে। উপরে তেলের পট দুইটা। কোনটা দেবো? নাকের কাছে নিয়ে দেখি একটায় সরিষার তেল অন্যটায় সোয়াবিন। কি তেল দেবো? বিসমিল্লাহ্ বলে সরিষার তেল দিলাম কড়াইতে। চুলার আচ বেশ বাড়ানো ছিলো বলে মুহুর্তের মধ্যেই তেল গরম। মুরির পট ঢেলে দিলাম কড়াইতে।

পট আটকিয়ে পটের স্থানে রেখে চুলার কাছে আসতেই মুড়ি পোড়া গন্ধ।কাজ সারছে। মুড়ি পুরে কালো হয়ে গিয়েছে অনেক। কি করি কি করি? চুলা থেকে দ্রুত কড়াই উঠিয়ে ফেললাম। কানে স্পষ্ট ভেসে আসলো কার কথা যেন
‘ মুড়ি পুড়েছে ? এবার আর রক্ষা নেই, আমি পালাই।’ যাবার আগে বলে গেলো ‘ এবার পিয়াজ কেটে আর শুকনা মরিচ দিয়ে আবার ভাজতে হবে।’

বউর কাছে তো প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে। দ্রুত পিয়াজের ডালা খুঁজে তিনটা পিয়াজ কাটলাম ছুরি দিয়ে। আঙুল কেটে রক্তারক্তি অবস্থা হয়ে গেলো। এরপর শুকনা মরিচ খোঁজা শুরু। অনেক খুঁজে তাও পেলাম। ঝটপট দুইটা ছিড়ে নিলাম। দুই হাত দিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পোড়া মুড়ি বাছাই শেষ করলাম। এত দ্রুত কিভাবে বাছাই করলাম আমি? নিজের দ্রুততায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম 🙂


অবশেষে কড়াইতে আবার তেল দিয়ে, পিয়াজ শুঁকনো মরিচ কিছুটা টেলে সব মুড়ি আবার দিয়ে দিলাম। মাথা কিছুটা ঠান্ডা এখন। চিনিও দিলাম একটু। মুখে নিয়ে দেখলাম সেরাম টেস্ট 🙂 আমি এত ভালো মুড়ি ভাঁজতে পারলাম!

মুড়ি ভর্তি বাটি নিয়ে বারান্দায় ফিরে এলাম। বউ মুখে দিয়ে খেলো, বললো ‘ ভালোই বানাতে পেরেছো, এখন হতে তুমিই মুড়ি ভেজে খাওয়াবে।’

এই লুমান্টিক সময়ে তার কথা ভালোই লাগলো।

 

৮২১জন ৬৬৬জন
0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ