প্রথম পর্বঃ

16508775_1238469876239157_3677331890038459207_n

অনন্ত আকাশের উপরে স্তরে স্তরে ভাসমান আসমান আর নীচে বিস্তৃর্ণ ভূমন্ডল। আসমানে ফেরেস্তা আর ভূমন্ডলে জ্বিনজাতি। ফেরেস্তা নূরের তৈরী আর জ্বিন ধূয়াবিহীন আগুনের তৈরী। আল্লাহ বলেন, ‘আর এর পূর্বে জ্বিনকে বানিয়েছি ধ্রুম্রহীন বিশুদ্ধ অগ্নি হতে’। ফেরেস্তার নিজস্ব কোন স্বাধীনতা না থাকলেও কিন্তু জ্বিনজাতিকে আল্লাহ স্বাধীনতা দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার এই দুই মাখলুখ বা সৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন বু্দ্ধিমান সৃষ্টির অস্তিত্ব ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলে ছিল না। সৃষ্টিকর্তার হুকুম পালন করাই ফেরেস্তার কাজ। অন্যদিকে জ্বিনকে সৃষ্টিকর্তা চাল-চলন, আচার-আচরণ, জীবন অতিক্রম করার গাইডলাইন দিয়েই পাঠিয়েছেন। তবে তাদেরকে নিজস্ব স্বাধীনতাও দিয়েছেন। জ্বিন জাতিকে স্বাধীনতা দিয়ে দুনিয়াতে ছেড়ে দেয়া হয়। বলা হয়ে থাকে মানুষ তৈরীর দুই হাজার বছর পূর্বে জ্বিন সৃষ্টি করা হয়। জ্বিনের আদি পিতা আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয় চেয়েছিলেন যা মহান আল্লাহ কবুল করেছিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আবুল জিন্নাত (বা জ্বিনজাতির আদিপিতা) ‘সামূম’কে আগুনের শিখা দিয়ে সৃষ্টি করার পর বলেন তুমি কিছু কামনা করো। সে বলে- ‘আমার কামনা হলো এই যে, আমরা (সবাইকে)দেখব কিন্তু আমাদের যেন কেউ না-দেখে এবং আমরা যেন পৃথিবীতে অদৃশ্য হতে পারি আর আমাদের বৃদ্ধরাও যেন যুবক হয়ে তারপর মারা যায়।’ অতএব তার এই কামনা পূরণ করা হয়। ‘ জ্বিনেরা নিজেরা সবাইকে দেখতে পায়, কিন্তু অন্যদের চোখে পড়ে না এবং মারা গেলে যমীনের মধ্যে গায়েব হয়ে যায় আর জ্বিনদের বুড়োরাও জোয়ান হয়ে মারা যায়।

জ্বিনজাতিকে গাইড লাইনের মাধ্যমে দিক-নির্দেশনা দেয়া থাকলেও তারা অল্প কিছু দিন লাইনমত চলে তারপর আবার বেপরোয়া চলতে থাকে। নিজেদের মাঝে কলহ-বিবাদ, মারা-মারি, কাটা-কাটি লেগেই থাকত। তাদের সৃষ্টির উপাদান আগুন হওয়ার কারণেই হয়তো তাদের উশৃংখল জীবনধারা অব্যাহত ছিল। সৃষ্টিকর্তা মাঝে মাঝে তাদেরকে সতর্ক করলে কিছুদিন ভাল থেকে আবার আগের মত আচরণ শুরু করে। সৃষ্টিকর্তা মাঝে মাঝে আসমান থেকে ফেরেস্তার প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে তাদেরকে সতর্ক করেন। আবার বেশী বাড়াবাড়ি করলে ফোরেস্তার শক্তিশালী কমান্ডো দল পাঠিয়ে তাদেরকে দমন করেন। যারা বেশী অবাধ্য আচরণ করে তাদেরকে হত্যা করা হত।

এভাবে হাজার হাজার বছর জ্বিনদের জীবনাচরণ দেখে তাদেরকে শৃংখলার জীবনে ফিরিয়ে আনতে একসময় জ্বিনদের মধ্য থেকে ইয়াকুব নামের একজন নবীও পাঠানো হলো। ফাইনালী দুষ্টু জ্বিনেরা তাদের নবীকেও হত্যা করল। তাদের অশান্তির কারণে যখন পৃথিবীতে বিশৃংখলা দেখা দিল তখন সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য আসমান থেকে একদল ফেরেস্তা পাঠালেন। ফেরেস্তারা প্রায় সমস্ত জ্বিনকে ধরে ধরে হত্যা করল। অল্প কিছু ভাল জ্বিন দুর-দূরান্তে পালিয়ে গেল, কতককে সৃষ্টকর্তার সৈন্যবাহিনী সাগর ও দূর্গম পাহাড়, দ্বীপপুঞ্জের দিকে তাড়িয়ে দিল। এসময় ফেরেস্তারা জ্বিনের এক বাচ্চাকে পেল যে দেখতে খুব সুন্দর ছিল। নাদুস নুদুস ছেলেটিকে বেশ আদর লাগছিল। বাচ্চাটির নাম ছিল আযাযিল। শিশু আযাযিলের প্রতি ফেরেস্তাদের মায়া হল এবং তাদের নিজেদের সাথে আযাযিলকে আসমানে নিয়ে যাবার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দরখাস্ত করল। আযাযিলের ব্যাপারে সৃষ্টকর্তা ফেরেস্তাদের আবেদন মঞ্জুর করলেন। ফলে ফেরেস্তারা ফিরে যাবার সময় আযাযিলকে তাদের সাথে দ্বিতীয় আসমানে নিয়ে গেলেন। শুরু হল নতুন এক অধ্যায়।

ফেরেস্তাদের দেখাদেখি আযাযিলও সৃষ্টিকর্তার ইবাদতে মশগুল হয়ে থাকত। আযাযিলের ভদ্র আচরণ আর ইবাদতে একাগ্রতা দ্বিতীয় আসমানের ফেরেস্তাদেরকে ছাড়িয়ে গেলে সৃষ্টিকর্তা তাকে তৃতীয় আসমানে তুলে নিলেন। এভাবে প্রতি আসমানের ফেরেস্তাদের চেয়ে বেশী ইবাদত করায় আযাযিল একসময় সপ্তম আসমানে উঠে গেল। সেখানেও সে অগ্রগামী থাকায় সৃষ্টিকর্তা আযাযিলকে ফেরেস্তাদের সর্দার বানিয়ে দিলেন। আগুনের তৈরী আযাযিল হয়ে গেল আযাযিল ফেরেস্তা।
ঐদিকে দুনিয়ায় জ্বিনদেরকে ধ্বংস করার পর দুনিয়াটা বিরানভূমি হয়ে থাকল। সৃষ্টকর্তা চাইলেন দুনিয়াতে এমন একটি জাতি থাকুক যারা সর্বদা তাঁরই প্রসংশা করবে। তাই তিনি ফেরেস্তাদের ডেকে বললেন আমি দুনিয়াতে আমার প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চাই। ফেরেস্তাদের সীমিত জ্ঞান, তারা সৃষ্টিকর্তার শিখানো বুলি ছাড়া কিছুই জানে না। তারা ইতিপূর্বে দু্ষ্টু জ্বিনদের মারামারি, রক্তারক্তি দেখেছে। তাই ফেরেস্তেরা আল্লাহকে বলল, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা মারামারি, কাটাকাটি করবে? আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জাননা।

আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে।’ অত:পর আদমের সেই মাটির দেহকাঠামো চল্লিশ দিন যাবত ইবলীসের সামনে রেখে দেন। ইবলীস, হযরত আদমের সেই দেহকাঠামোর কাছে আসত। সেটিকে পা দিয়ে ঠোকর মারত। মুখ দিয়ে ঢুকে পিছনের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যেত এবং পিছন দিয়ে ঢুকে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেত। আর বলত-তোর কোনও গুরুত্ব নেই। তোকে সৃষ্টি করা না হলে কী এমন হত। আমাকে যদি তোর উপর দেওয়া হয়, তবে তোকে আমি ধ্বংস করে দেব। তোর পিছনে আমাকে লাগানো হলে, তোকে আমি নানান অপমানে জড়িয়ে দেব। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদমের দেহে প্রাণ সঞ্চারিত করার পর ফিরিস্তাদের নির্দেশ দেশ আদমকে সাজদা করার। সবাই সাজদা করলেও অস্বীকার করে কেবল আযাযিল। তার অন্তরে যে গর্ব-অহংকার সৃষ্টি হয়েছিল, তার দরুন সে ঐদ্ধত্য দেখায় এবং বলে-‘আমি ওকে সাজদা করব না। আমি ওর চাইতে সেরা। বয়সে বড় এবং শক্ত-সামর্থ শরীরের মালিক।
সেই সময় আল্লাহ তার থেকে সদগুণগুলো ছিনিয়ে নেন, যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে এবং তাকে ‘অভিশপ্ত শয়তান’ বলে অভিহিত করেন।

চলবে…….

(পজেটিভ সমালোচনা কাম্য)

৬৭৩জন ৬৭৩জন
0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ