
জীবনের গল্প-১৯-এর শেষাংশ:☛ জায়গার নাম ফুলিয়া। সেই বাড়িতেই তোমরা থেকে বাড়ি দেখাশুনা করবে। এতে ভালোই হবে।’ এই বলেই কানাই আমার বাসা থেকে চলে গেলো ওদের বাসায়। পরদিন আমি নগর খানপুর রতন চক্রবর্তীর সাথে দেখা করে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করে ভারত যাবার প্রস্তুতি নিই।
তারপর কানাইর সাথে ভারতের উদ্দেশে রওনা হলাম। সাথে কানাইর দুই বোন। সময়টা ২৭ চৈত্র ১৩৯৯ বাংলা। বর্ডারে দুইদিন আটকে থাকার পর পহেলা বৈশাখ ১৪০০ বাংলা ভারতের মাটি স্পর্শ করলাম। তখন রাত প্রায় ৯ টা। বনগাঁও রেলস্টেশনে পৌঁছলাম রাত ৯.৩০ মিনিটের সময়। রাত ১০ টায় শিয়ালদার একটা ট্রেন ছিলো। সেই ট্রেনে চড়ে গেলাম দমদম রেলস্টেশন। তখন রাত ১২টার মতো বেজেছিল মনে হয়। গিয়েছিলাম কানাইর এক পরিচিত বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন সকালে দমদম থেকে শিয়ালদা, তারপর বাঘা যতিন সংলগ্ন কানাইর ভাড়া বাসায়।
কানাই যেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো, সেই বাসাটা ছিলো খুবই ছোট। সাথে যাওয়া ওর দুই বোন সারাদিন ঘরে থাকলেও, রাতে বাড়িওয়ালাদের ঘরে গিয়ে ঘুমাতো। আমি আর কানাই ছোট ঘরেই ঘুমাতাম। দুইদিন পর ফুলিয়ায় গেলাম, রতন চক্রবর্তীর বাড়ির ঠিকানায়। সেখানে গিয়ে দেখি রতন চক্রবর্তীর বাড়ি নেই। আছে একটুকরো কেনা জমি। সেই জমি দেখাশোনা করছিল, আমারই পরিচিত গৌরাঙ্গ নামে এক লোক। এই অবস্থা দেখে সাথে সাথে ফুলিয়া থেকে কলকাতা চলে আসি, কানাইর ভাড়া বাসায়। ক’দিন পর রতন চক্রবর্তীর স্ত্রী বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেলে, তাকে পাকড়াও করে মিথ্যা বলার জন্য অপমান অপদস্ত করে ছেড়ে দিই।
তারপর আমি কানাইর ওখান থেকে নিজের ভাগ্য নিজেই পরিবর্তন করার জন্য চলে গেলাম, জলপাইগুড়ি জেলা ভুটান ঘেঁষা বীরপাড়া বড় দিদির বাড়ি। সেখানে গিয়ে ভাগিনাদের সাথে গাড়ির গ্যারেজে বছর দেড়েক কাজ করে খুব কষ্টে বুড়িমারী বর্ডার পাড় হয়ে বাংলাদেশে চলে আসি। আসার সময় বড় দিদির দেওয়া সব বর্ডারেই দালালরা লুটেপুটে রেখে দিয়ে আমাকে বুড়িমারী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেয়। তারপর বুড়িমারী বাসস্ট্যান্ডে এসে এক বাস কোম্পানির ম্যানেজারের হাতে-পায়ে ধরে বিনা টিকেটে ঢাকা পৌঁছে সদরঘাট থেকে বেহায়ার মতো শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছাই।
এরপর কিছুদিন সেখানে থেকে আবার নারায়ণগঞ্জ এসে চাকরি করা শুরু করি। এরপর নিজের অভাবের সংসার চালাতে গিয়ে সিলেট, নরসিংদী, মাধবী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ-সহ আরও অনেক জায়গায় গিয়ে চাকরি করেছি। কিন্তু ভাগ্য আর পরিবর্তন করতে পারিনি। একসময় এলাকার দশজন থেকে সাহায্য তুলে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। খুব কষ্টের মধ্যে নিজের একমাত্র ছেলেটাও ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছিল। কিন্তু একসময় নিজের ছেলেটা দারিদ্রতার কাছে ছেলেটা দুর্বল হয়ে অভাবের সংসারের মায়া ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে অচিন দেশে পাড়ি জমায়।
তারপর ছেলের রেখে যাওয়া মোবাইল ব্যবহার করে ২০১৫ সালে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে একটা লেখা জমা দিয়ে বেশকিছু দিনের জন্য ব্লগ থেকে আত্মগোপন করি। একদিন ব্লগে প্রবেশ করে দেখি আমার সেই ছোট লেখা প্রকাশ পেয়েছে। অনেক লেখক মন্তব্য করেছে। তাদের মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়েই আজ পর্যন্ত শুধু ব্লগ আর ব্লগ নিয়েই সারাদিন, সারারাত পার করে দিচ্ছি। জানি না সামনের দিনগুলোতে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে। সবার আশীর্বাদ প্রার্থনা করছি।
সমাপ্ত।
১৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দুঃখে গড়া জীবন দুঃখের সাথে সন্ধি করেই বাঁচতে হচ্ছে। কি লিখবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা দাদা। ঈশ্বরের বিধিলিপির কাছে সবাই বন্দী। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো। ঈশ্বর সহায় হোন
ফয়জুল মহী
ভালোবাসার অপর নাম সাগর মহাসাগর এবং নীল আকাশ
শামীম চৌধুরী
দাদা,
কানাইয়ের বাসা থেকে দুদিন পর ফুলিয়া গেলেন। এতটুকু পড়ার পর ভাবলাম কি কারনে ফুলিয়া মানে ফুঁলে গেলেন। পরে পুরা বাক্য পড়ার পর বুঝলাম ফুলিয়া একটা জায়গার নাম।
বর্ডার এরিয়ায় দালালরা ওঁৎ পেতে থাকে। নিরীহ মানুষদের সব লুটে নিয়ে স্বর্বশান্ত করে দেয়। এটাই ভারত বাংলা সীমান্তের চরিত্র।
আপনার জীবনের কষ্টের গল্পগুলো পড়ে চোখ বেয়ে নিজের অজান্তেই জল গড়িয়ে এলো। একমাত্র মেয়ের জামাই হারানোর শোক নিয়ে আপনি এখনও বেঁচে আছেন। আমাদেরকে সবসময় হাসিখুশীতে মাতিয়ে রাখছেন। কতটুকু মনের জোর থাকলে একজন সর্বহারা মানুষ পারেন তার উজ্জ্বল প্রাম আপনি। আপনি আমাদের আইডল। স্যালুট আপনাকে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে আপনার অতীত ও বর্তমান একটি শিক্ষামূলক উদাহারন। কেউ অনুসরন করলে জীবনের চলমান চাকা থামাবে না।
আপনি আমৃত্যু ব্লগে থাকুন। আমরা অনেক কিছু শিক্ষা নিতে পারবো আপনার কলম থেকে।
এক কষ্টে জীবন যুদ্ধ করে আপনি একজন সৎ যোদ্ধা। এতেই আপনার সুখ। আপনি হার মানেননি।
আপনার জন্য আমার হৃদয়ের গভীর থেকে রইলো ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।
পরাজয় যখন শিখিসনি
দমাতে কেউ পারেনি
অর্থের সুখ নাই বা এলো
জীবন তবুও গতিময় রইলো।
ভাল থাকুন। ভাল থাকুন এবং ভাল থাকুন।
নিতাই বাবু
মেয়ের জামাই নয় দাদা। নিজের একমাত্র ছেলেটা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নিয়ে পরপারে পাড়ি দেয়।
শামীম চৌধুরী
ওহ। তবে আমি বুঝতে ভুল করেছিলাম। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
সুরাইয়া নার্গিস
শ্রদ্ধেয় দাদা আপনার বেশ কয়েক পর্ব পড়েছি আর আপনার প্রতি শ্রদ্ধাটা বেড়েই চলছে। পর্ব গুলো পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তে কেঁদেছি, এতকিছুর পরও আপনি আমাদের কত ভাবে আনন্দ রাখেন। নিজের কষ্ট আড়াল করে সবার সুখ, দুঃখের সাথী হয়ে আছেন এটার জন্য স্যালুট আপনাকে দাদা। দোয়া রইল আল্লাহ্ আপনার সহায় হোন, আপনাকে সুখে থাকুন,ভালো রাখুন।
শুভ কামনা রইল দাদা।
আলমগীর সরকার লিটন
সর্বপরি গল্পটা ভাললেগেছে প্রিয় নিতাই দা
বই প্রকাশ করে রাখিয়েন————————
রেজওয়ানা কবির
সুখে থাকুন, ভালো থাকুন ভাইয়া।
সুপায়ন বড়ুয়া
একজন জীবন সংগ্রামীর জীবন কাহিনী পড়তে গিয়ে
অনেক সময় আবেগাপ্লুত হই।
তবু থেমে থাকে না জীবন।
তবেই তো দাদাকে পেলাম।
দাদা এগিয়ে যান। আমরা আছি সাথে।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার জীবন সংগ্রামের কাহিনীর সাথে থাকতে পেরে সহমর্মিতা অনুভব করছি।
বিধাতা আপনাকে ভাল রাখুন , এমন ই চাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
ইশ্ কি কষ্ট???
শুভ কামনা দাদা।
কামাল উদ্দিন
আমরা সবাই কম বেশী পরিশ্রম করি। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকলে পরিশ্রমের ফলগুলো খুব একটা ভালো হয় না। এই যেমন ভাগ্য ফেরাতে আপনি ভারতে গিয়ে রিক্ত হস্তে ফেরৎ এলেন। আবার সন্তান মারা যাওয়ার শোক কাটিয়ে উঠা যে কোন বাবা মায়ের পক্ষেই খুবই কঠিন। আমি বলবো ভাগ্য আপনার সহায় ছিলো না। হয়তো ভালো দিন গুলো সামনেই অপেক্ষা করছে।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সুখদুঃখ নিয়ে সকলের জীবন।
আর জীবনে সফল হতে বেশ পরিশ্রমের প্রয়োজন।
আপনার ধারাবাহিক লেখা আপনার জীবনের অনেক বাস্তবিক দিক পড়েছি।
ভাগ্যেটা সবসময় পক্ষে লড়ে না!
আপনার আগামীর দিনগুলো সুখের হোক।
শুভকামনা দাদা।
তৌহিদ
আপনার জীবন আসলে এক সংগ্রামী দীর্ঘ পথ। এই ধারাবাহিকের প্রতিটি পর্ব জীবনকথার উঁচুনিচু চড়াইউৎরাইয়ে পূর্ণ ছিলো। যা আপনি অনেক কস্টে পার করেছেন। সন্তানের ব্যাথাতুর জীবনাসানে অত্যন্ত দুঃখ পেলাম দাদা। ভালো থাকুন সবসময়।
শুভকামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
চোখের পানি আর সমবেদনা থাকলো।
এখন কি একটাই মেয়ে?
আর আপনি আর বৌদি কোথায় থাকেন?
উর্বশী
সুখ ও দুঃখ নিয়েই জীবন গড়া সাধারণত তাই বলে সবাই,তবে কারো কারো জীবনে দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত হতে হয় খুব বেশী।একটি দুঃখের কারণ শেষ হতে না হতেই অন্যটি এসে হাজির হয়।সংগ্রামী দীর্ঘ এই পথ চলা অতি কষ্টের, বেশী কষ্টের ছোঁয়া সন্তানের জন্য,সমবেদনা জানাই।অতি আপ্নজনদের কষ্ট অনেক বড় বলে বুঝানো মুশকিল।দোয়া করি ভাল থাকুন দাদা সালাম রইলো।