চা…য়ে চা…য়ে

ছাইরাছ হেলাল ৬ নভেম্বর ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:০০:২০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৪০ মন্তব্য

এখানকার প্রধান ভীড় বহুল রেস্তোরাঁ রেলগেটের জাহাঙ্গীর রেস্টুরেন্ট (নাম-ধামে ভুল হতেই পারে) সহ আরও সাকুল্যে গোটা তিনেক প্রায় জ্যাঠা রেস্তোরাঁয় ঢু মেরে ফলাফলে আরও বেশি পেট চোঁ চোঁ নিয়ে ফ্যা ফ্যা ঘুরে বেড়াচ্ছি। সকালিক নাস্তা জুটবে কিন্তু চা হবে না। হায় এই মিহি ভোরে কিনা চা বিহীন ফাটা কপাল নিয়ে যাত্রাশুরু। একজন রেস্তোরাঁ মালিককে সবিনয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। নাস্তার আগে বা পরে চা পাব না ! তা চা বিক্রি করছেন না কেন? ছানাবড়া চোখ উত্তর দিলেন ‘বলেন কী চা বিক্রি করব?’ খুব যেন সম্মান হানিকর বিষয়।তাহলে চা কোথায় খাব এই সক্কাল বেলায় এই প্রশ্নের উত্তরে রাস্তার পাশে টং দোকান দেখিয়ে দিলেন তর্জনী উঁচিয়ে।যষ্মিন দেশে যদাচার।

সব রেস্তোরাঁয় হয়ত এমন নয়,যা পেয়েছি–খেয়েছি তা থেকেই বলছি। যদিও যেখানে থেকেছি সেখানে নাস্তার সাথে চা এর ব্যবস্থা ও ছিল।ছিল অন্য হ্যাপাও।তবে এখানকার চা কিন্তু সেরাম,শুধু চা খেয়েই দিনাতিপাত করা যায়।জাহাঙ্গীরের রেস্তোরাঁয় নাস্তা শেষে বিল দেয়ার সময় দেখি কাউন্টারে মালিক পক্ষের কেউ চা খাচ্ছে,আর যায় কোথায়! ‘ভাই আমাদের ফেলে একা একা চা খাচ্ছেন!’বিস্ময় ও ঈষৎ লজ্জিত হয়ে বলল ‘একটু বসেন আপনাদেরও আনিয়ে দিচ্ছি’ অভয় দিয়ে বললাম ‘আনিয়ে দিতে হবে না,দোকান দেখিয়ে দিন।’

সেই থেকে শুরু করেশেষ দিনেও চা পান চালু ছিল সেই দেখিয়ে দেয়া দোকানে।দু’কাপ চায়ের কথা বলে রাস্তার পাশে অর্ধেক কাঠ অর্ধেক লোহার বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করছি আর সকালের কুষ্টিয়ায় চোখের পরশ বোলাচ্ছি। প্রায় মগাক্রিতির কাপে চা এলো কিন্তু চা কাপের তলানিতে।মন খারাপ নিয়ে ফুঁ দিচ্ছি আর ভাবছি,বৈদেশি পেয়ে অগা-মগা বানাচ্ছে। এই ইট্টু চা ,তা আবার দশ আশরাফি কাপ প্রতি। বিভূঁইয়েএই ছিল কপালে! কপোলে না কিন্তু। ফুড়ুৎ ফুচুৎ ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে দু’জনেরই দু’চুমুকে চা শেষে। আমানত ভাই,চার কাপ চা তাড়াতাড়ি।জোড়া কপালচোখে (৪+৪)দু’হালি বিশাল বিস্ময়ের প্রশ্নবোধক নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। দুই বুইড়া দু’কাপ খেয়ে আরও চার কাপের অর্ডার দিচ্ছে ! আশে-পাশে তো কোন খোর দেখছে না।আশ্বস্ত করলাম,ভাই আপনার চা সেরাম,পেট ভরে খেতে চাই।মনে মনে ভাবছি পথে ঘাটে অক্কা পেলেও মুখে লেগে থাকা চা-পিয়োর শান্তি লেপ্টে থাকবে তা নিশ্চিত। কৌতূহলী হয়ে চা তৈরীর প্রক্রিয়ায় প্রায় শ্যেন দৃষ্টি।কেটলিতে লিকার জ্বাল দেয়া হয় না। ঘন দুধ,যা প্রায় লাল-হলুদে রং এর কাছাকাছি,মগে ঢেলে ছাকনিতে চা পাতা রেখে টগবগে পানি সামান্য দিয়ে দেয় কেটলি থেকে,পরে চিনি দিয়ে ঘুঁটা, না না ঘুঁটা নয়।চায়ের মগে বিশেষ দণ্ডযন্ত্রটি প্রবিষ্ট করে আবার তুলে অন্য মগে। সময়ের ব্যাপ্তি কয়েক সেকেন্ড। তাতেই কম্ম সাবাড়। প্রথমে বুঝতে পারিনি,আমানত ভাইয়ের কব্জি খপ করে ধরে উঁচু করে যা দেখলাম তাতে চক্ষু চড়কে ঘুঁটা যন্ত্র দেখে। আসছি
আবার ……
আমাদের আম্মার সাথে চায়ের দোকানে গিয়ে যথারীতি তিন জনের জন্য ন’কাপ চায়ের ফরমাশ। হঠাৎ খেয়াল হল আমানত ভাইয়ের দাঁতের সংখ্যা একটি একটিকরে গুনে বলা যায়,চৌষট্টি্টি। আম্মাদের জমিদারী এলাকার মধ্যেই দোকানটি,আমরা মেহমান,আমাদের দিকে যেন লক্ষ্য থাকে,আম্মা বলে দিয়েছে। উপচে পড়া খাতিরে আর নয় কাঠ-লোহার বেঞ্চি।ঘুপচি দোকানের মধ্যে বসেই অমৃত সাধের চা পিয়েছি সকাল থেকে রাত-অব্দি। চায়ের জন্য দু’মন দুধ বরাদ্দ রোজ দিনকার জন্য এ দোকানে।সর থেকে তৈরী হয় খাঁটি ঘি,প্রতি কেজি হাজার টঙ্কা মূল্যে। আম্মার লোক হিসাবে আমাদের জন্য রেয়াত ছিল কিন্তু মারা যাব শীঘ্র তাই আপাতত ঘি নাস্তি।(আসলে পরিবহন সমস্যা থাকায় নিতে পারিনি) ভাল কথা,কুষ্টিয়ায় দুগ্ধজাত পণ্য ভেজাল মুক্ত এখনও(পরীক্ষা প্রার্থনীয়)।হাতে তৈরী গোল মুঠোর মত ইলেকট্রিক টেপ জড়ানো,এক দিকে বলপয়েন্ট কলম,কালি বিহীন,শেষ মাথায় মাছির মাথার সাইজের দু’ব্লেডের প্রপেলার,এটি সাবমার্জিবল। মুঠোর অন্য প্রান্তে সরু দু’টো তার গিয়ে এ্যাডাপ্টারের সাথে সংযুক্ত। কাজেই কাপে কোন ঘুঁটা না দেয়ার কারণ এভাবেই উদ্ঘাটিত হলো।

আমি অন্তত এই প্রথম দেখলাম, আপনারা কি দেখেছেন এই জিনিস এই যন্‌তর? দেখে থাকলে ,কখন কোথায় কী রূপে তা ইট্টু যে যার জায়গায় দাড়িয়ে আওয়াজ দিয়ে সক্কলকে জানিয়ে দিয়েন।

১৬০৬জন ১৬০৬জন
0 Shares

৪০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ