
ভারতের ওড়িশা রাজ্যের পুরী জেলার কোণার্ক শহরে অবস্থিত সূর্য মন্দির। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পূর্ব গঙ্গা রাজবংশের (১০৭৮-১৪৩৪) রাজা প্রথম নরসিংহদেব(১২৩৮-১২৬৪) দ্বারা নির্মিত এই মন্দিরটি আন্তর্জাতিক বিশ্ব ঐতিহ্য প্রকল্প কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ও ইউনেস্কো নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকার মধ্যে স্থান পেয়েছে। শোনা যায় এটি নির্মান করতে দশ হাজার লোকের বারো বছর সময় লেগেছিলো। এই মন্দিরের দিকে তাকালে মনে হবে এটা যেন কোন মন্দির না। যৌন পিপাসুদের মনোরঞ্জনের আখড়া। যাইহোক, সেসব যুক্তি-তর্কে না গিয়ে চলুন আমরা ঘরে বসেই ঘুরে আসি ওড়িশা রাজ্যের সেই সূর্য মন্দির থেকে। আর তার ফাঁকে ফাঁকে থাকবে টুকটাক কিছু তথ্য…
১) মন্দিরটি ধূসর বেলে পাথরে বিশাল একটি রথের আকারে গড়া হয়েছে । সমুদ্র থেকে উঠে আসা সূর্যদেবের বিশাল রথ, তার সামনে রয়েছে সাত জোড়া ঘোড়া। বারো জোড়া বিশাল চাকার ওপর পুরো মন্দিরটি নির্মিত।
২) চাকার কারুকার্য দর্শকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। প্রতিটি চাকাকে বলা হয় একেকটি সূর্যঘড়ি। চাকার ভেতরের দাঁড়গুলো সূর্যঘড়ির সময়ের কাঁটা বলা হয়। এখনো নাকি নিখুঁতভাবে সময় জানা যায় এই সূর্যঘড়ির সাহায্যে।
৩) মন্দিরের প্রবেশ পথেই রয়েছে বিশাল দুটি সিংহের মূর্তি যারা লড়াই করছে দুটি রণহস্তীর সঙ্গে।
৪) মন্দিরের বেদী থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি জায়গায় পাথরের ভাস্কর্য ও কারুকার্য রয়েছে। দেবতা,অপ্সরা,কিন্নর,যক্ষ,গন্ধর্ব,নাগ,মানুষ,বিভিন্ন প্রাণী,পৌরাণিক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিরূপ,নৃত্যরত নরনারী,প্রেমিক যুগল,রাজদরবারের বিভিন্ন দৃশ্য,শিকারের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাথরের বুকে। মূর্তিগুলোর মানবিক আবেদন,নিখুঁত গড়ন,লীলায়িত ভঙ্গী শিল্পকলার চরম উত্কর্ষের নিদর্শন।
৫) কলিঙ্গ রীতিতে নির্মিত মন্দিরের চূড়াগুলো পিরামিড আকৃতির। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্ডপ। এখানে একসময় দেবদাসীরা দেবতার উদ্দেশ্যে পূজানৃত্য পরিবেশন করতেন। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে নাটমন্দির,ভোগমন্দির ও গর্ভগৃহ। মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮৫৭ ফুট। তবে মন্দিরের অনেক অংশ এখন বালিতে দেবে গেছে। মন্দিরের দেয়াল এখনো ২০০ ফুট উঁচু।
৬) ১৯০৩ সালে এই মন্দির পুনরাবিষ্কৃত হয়। খননের মাধ্যমে তোলে আনা হয় বালির প্রলেপ খুঁড়ে। উন্মোচন করা হয় মানুষের জন্য। ১৯৪৮ সালে ইউনেস্কো এই মন্দিরকে তুলে নেয় বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায়। কোণার্ক মন্দিরের অনেক শিল্প কীর্তি এখন সূর্য মন্দির জাদুঘর ও উড়িষ্যার জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে। প্রতিদিনই শত শত দর্শনার্থী কোণার্কের সূর্য মন্দির দেখতে আসেন। প্রাচীন ভারতীয় স্থপতি ও ভাস্করদের এই শিল্পনৈপুণ্য ও সৃষ্টিশীলতা আজও মানুষকে বিস্ময় বিমুগ্ধ করে।
৭) ১৬২৬ সালে খুরদার তত্কালীন রাজা পুরুষোত্তম দেবের পুত্র নরশিমা দেব সূর্যদেবের বিগ্রহটি পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে নিয়ে যান । সেখানে একটি পৃথক মন্দিরে সূর্য ও চন্দ্র দেবতার বিগ্রহ স্থাপন করা হয় । শুধু বিগ্রহই নয় তিনি কোনার্ক মন্দির থেকে কারুকার্য করা অনেক পাথর পুরীর মন্দিরে নিয়ে যান। এমনকি নবগ্রহ পথ নামে একটি বিশাল প্রস্তর খন্ডও তিনি পুরীতে নিয়ে যান । মারাঠা শাসনামলে কোনার্ক মন্দির থেকে অনেক ভাস্কর্য ও প্রস্তরখন্ড পুরীতে নিয়ে যাওয়া হয় । ১৭৭৯ সালে কোনার্ক থেকে অরুণ কুম্ভ নামে বিশাল একটি স্তম্ভ নিয়ে পুরীর সিংহদ্বারের সামনে স্থাপন করা হয় । এই সময় মারাঠা প্রশাসন কোনার্কের নাট মন্ডপটি অপ্রয়োজনীয় মনে করে ভেঙ্গে ফেলে ।
৮) আরো কিছু ছবি –
আগ্রহী পাঠকরা সুর্য মন্দির সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইলে গোগল করতে পারেন…
***
এখানে ছবির কোয়ালিটি খারাপ মনে হলে এখানে দেখতে পারেন… https://www.facebook.com/notes/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%B2/%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%98%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87/341852759349610?pnref=story
ছবি সংগ্রহ – গোগল।
অন্যান্য তথ্য – ১) http://bengali.cri.cn/461/2011/10/28/41s117152.htm
২) www.Priyo.com
৩) http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A3%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95_%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF_%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B0
১০টি মন্তব্য
মেহেরী তাজ
জানলাম এই মন্দির সম্পর্কে।ধন্যবাদ আপনাকে।
আর্বনীল
আপনাকেও ধন্যবাদ
খসড়া
বৈদেশ যাইতে গেলে ভিসা লাগে পার্সপোট লাগে ট্যাকাও লাগে 🙁
সুন্দর পোস্ট এত সাবলীল ও প্রাণবন্ত করে লিখেছেন যে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। ছবি গুলি খুব সুন্দর হয়েছে
আর্বনীল
ধন্যবাদ
লীলাবতী
দেখলাম আপনার চোখে।ভালো লেগেছে।কিছু ফটো ২ বার এসেছে,লিংক আসেনি ভাইয়া।
আর্বনীল
বুঝতে পারছিনা…… ফটো আর লিংক দুটেতেই বেশ ঝামেলা হচ্ছে আমার……
শুন্য শুন্যালয়
মন্দিরটি সম্পর্কে আরো জানবার আগ্রহ জন্মালো। ছবিগুলো খুব সুন্দর। অল্প কথায় গুছিয়ে লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আর্বনীল
গোগল করলে হয়তো আরো কিছু তথ্য জানা যেতে পারে……
ধন্যবাদ আপনাকে…
মাহামুদ
ছবিগুলো চমৎকার, যেতে ইচ্ছে করছে ^_^
কামাল উদ্দিন
এসব দেখলে ঘর ছেড়ে পালাই পালাই ভাবটা বেড়ে যায় ভাই।