
জীবনানন্দ বলে গেছেন – ‘ সবাই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।’ কথাটা আজ এ জন্য মনে হলো যে, মেডিকেলে পড়ে ডিগ্রী আর সার্টিফিকেট অর্জন করলেই সবাই রোগীর জন্য ডাক্তার হয়না। কেউ কেউ নিজের জন্য হয়, সুন্দরী বউয়ের জন্যও হয়।
বসে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে একটা ম্যাগাজিন পড়ছিলাম। তাই কিছুক্ষণ আগে পাশের সীটে কে এসে বসছে তা খেয়াল করিনি। খেয়াল করলাম আরো কিছুক্ষণ পর, যখন ছেলেটা মোবাইলে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। এই কান্না থামলো কান থেকে মোবাইল রাখার মিনিট পাঁচেক পর।
সান্ত্বনা দিবো নাকি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তবে আমাকে এই ভাবনার মধ্যে বেশিক্ষণ থাকতে হয়নি। একটু পরেই দ্বিধামুক্ত করে পিছনের সীট থেকে একজন মুরুব্বি ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো, কাঁদছো কেন ?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছেলেটি বলল, ‘ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আমার বোন ও বোনের সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু মৃত্যুর সাথে লড়াই করে যাচ্ছে , আজ দুইদিন ধরে।’ এই বলে আবার কাঁদতে শুরু করলো হাত দিয়ে চোখ ঢেকে।
কথাগুলো হচ্ছিলো ‘নিওনেটোলজি ও পেয়িং ওয়ার্ড ’ এর সামনে বসে । এই ওয়ার্ডের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। মেডিকেলের অন্য সব ওয়ার্ডে কান্নার শব্দ গুলো দুঃখের হলেও এই ওয়ার্ডে বেশিভাগ কান্নার শব্দ মধুর। আশাকরি ছেলেটির ভাগ্যেও মধুর কিছু থাকবে।
পরে ছেলেটার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা হলো। কথার এক পর্যায়ে জানতে পারলাম, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বছর তিনেক পরে ছেলেটিও ডাক্তারির সার্টিফিকেট হাতে পাবে। ঢাকায় একটি মেডিকেলে পড়ে সে।
এইভাবে প্রায় আধঘণ্টা কথা বলার পর আমি আবার চোখ রাখলাম ম্যাগাজিনের পাতায়। কিন্তু কোন ভাবেই পড়ায় মন বসাতে পারছিলাম না । কিছু দূর পর থেকে সারি সারি মাদুর পেতে শুয়ে আছে শতশত নারী পুরুষ বৃদ্ধ। তার মধ্য থেকে কয়েকজনের নাক ডাকার বিশ্রী শব্দ ভেসে আসছে কানে । যা মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে বারবার। এতে প্রতিবার’ই হিটলারের দেশের মানুষদের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো আমার।কোথায় যেন পড়েছিলাম জার্মানরা তাদের হিল্ডেসহাইম শহরে নাক ডাকা বিষয়ক একটি মিউজিয়াম বানিয়েছে। আবার, সেখানে নাকি একটি প্রদর্শনীতে ২০০ রকমের নাক ডাকার নমুনাও দেখানো হয়েছিল। নাক ডাকার ব্যাপারটা তাদের জন্য একটা শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয়তো তার কিছু প্রভাব বঙ্গদেশেও দেখা দিয়েছে।
এইদিকে আমার ঘড়ি বলে দিচ্ছে সেহেরির সময় হয়েছে। প্যান্টের বা’পকেটে হাত দিয়ে দেখি পকেট কিছুটা ভাড়ি, যা ভালো কোন হোটেলে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত।
১৬-০৬-২০১৭ ; চমেক
ছবি: সংগৃহীত
২৫টি মন্তব্য
নিতাই বাবু
আমাদের দেশে এমনই-তো হচ্ছে।
আকবর হোসেন রবিন
হ্যাঁ দাদা….. চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাওয়ার যে একটা রীতি তৈরি হয়েছে তা কবে যে বন্ধ হবে!
নিতাই বাবু
তা আর হবে বলেই বিশ্বাস করি, দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
কেউ কেউ কবি,
কেউ কেউ ডাক্তার।
দারুন উপলব্ধি।
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
ফেইসবুক পড়লে আপনি বুঝবেন যে প্রায় সবাই কবি,
দেশে কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশী। আমি বাদে 🙂
তবে এমবিবিএস পাশ করলেই সবাই ডাক্তার নন, এটি ঠিক আছে।
আপনি কি ডাক্তার?
শুভ কামনা।
আকবর হোসেন রবিন
না। আমি সাংবাদিকতায় অনার্স করেছি। এক আত্মীয়ের জন্য হাসপাতালে রাত কাটাতে হয়েছে।
তৌহিদ
যে কোন প্রফেশন নিয়ে পড়াশুনা করলে সবাই সাফল্য পায় তা নয়। তবে অনেকেই পান। আমার কাছে মনে হয় কোন ডাক্তারই চান না তার রোগী ভালো না হোন। তবে পেশাগত জীবনে যেহেতু ডাক্তারদের সাথেই ওঠাবসা আমি জানি অনেক ডাক্তারের নিজস্ব ইথিকিস নেই। যার ফলাফল রোগীর উপর পড়ে।
আকবর হোসেন রবিন
অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
কি মন্তব্য করবো বুঝতে পারছি না।
চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তারদের মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। আমার মনে হয় এসব ভুল অনিচ্ছাকৃত। কোন ডাক্তার যদি ইচ্ছে করে ভুল চিকিৎসা করে তাহলে সে ডাক্তারি করার উপযুক্ত নয়।
আকবর হোসেন রবিন
গতবছর চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে আমার এক বান্ধবী সিজার করতে গিয়ে মারা যায়। অথচ, তার তেমন কোন সমস্যাই ছিলোনা। অনেক সময় মায়ের পেটে বাচ্চার অবস্থান এদিক-সেদিক হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটে, কিন্তু আমার বান্ধবীর তেমন কোন সমস্যা ছিলোনা।
গতকাল আমার এক কাজিনের সিজার করিয়েছে। তাও একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। গিয়ে দেখলাম সিজারের জন্য সিরিয়াল দিয়ে বসে আছে ৬-৭ জন। প্রতি আধাঘণ্টা পর পর একেকজন থেকে পেট কেটে বাচ্চা বের করা হচ্ছে। কি অদ্ভুত! সবার কি আর সিজার করা লাগে! কারো কি নরমালি বাচ্চা হয়না!
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ডেলিভারী রোগী পেলেই অপারেশন করাটা বাংলাদেশী ডাক্তারদের বাতিকে পরিনত হয়েছে। বেশীরভাগ ক্লিনিক ওদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সুরাইয়া পারভিন
সত্যিই তাই মেডিকেল পড়লেই সবাই ডাক্তার হয়,, আবার সবাই ডাক্তার হলেও মানুষ হয়না,, কেউ কেউ কষাই।
কবির কথা কিছু কিছু কইবো না🙊🙊🙈🙈
আকবর হোসেন রবিন
হা হা …
মনির হোসেন মমি
কথার ছলে চমৎকার কিছু তথ্য দিলেন-হিটলারের শহরে নাক ডাকার আয়োজন। ডাক্তারদের ভুল চিকিৎকায় আমরা বেশ ভুগছি।
আকবর হোসেন রবিন
চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাওয়ার যে একটা রীতি তৈরি হয়েছে তা কবে যে বন্ধ হবে!
মনির হোসেন মমি
যেদিন থেকে দেখবেন এদেশে ভাল কোন স্কুলে পড়াতে কোন বিশাল অংকের ঘুষ দিতে হয় না, ডাক্তারী পড়াতে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে দূর্ণীতি হয়-লেখা পড়ার অসীম ব্যায় চালাতে গিয়ে তার মা বাবাকে সর্বোস্ব জমি জমা বিক্রি করতে হয় না।সর্বোপরি আজকাল অভিভাবকদের মনে সন্তানদের লেখাপড়া করানো আগেই ভেবে বসে থাকেন ছেলে মেয়ে আমার ডাক্তার ইঞ্জিঃ হলে অনেক টাকা কামাবে এরকম মনোভাব বাদ দিয়ে যেদিন অভিভাবকদের মনে লেখা পড়া মানে – মানুষ হতে হবে এই মনোভাবটি আসবে সেদিন হতে এ সমস্যা দূর হতে নচেৎ নয়।
আকবর হোসেন রবিন
সুদিনের অপেক্ষায় রইলাম।
আরজু মুক্তা
এই কসাইগিরি বাদ দিলেই এরা ভালো ডাক্তার হবে। আর বড়লোকি প্রতিযোগিতা যদি বাদ দেয়।
আকবর হোসেন রবিন
হ্যাঁ। সুদিনের অপেক্ষা্য় আছি।
সাবিনা ইয়াসমিন
কবি, লেখক, গায়ক, শিল্পপতি, চিকিৎসক, শিক্ষক! কে কিসের জন্য কি হতে চায় তা আসলে বোঝা মুশকিল। কেউ পেশার খাতিরে দৌড়ায়, কেউ নেশায় আবার কেউ খ্যাতিমান হতে। আবার কেউ কেউ কোন তাগিদ ছাড়াই কিছু করে, করে দেখায়। নাক ডাকা রোগটি রোগী এবং ভুক্তভোগী উভয়ের নিকটই বিড়ম্বনার ব্যাপার।
ভালো লাগলো স্মৃতিচারণ।
শুভ কামনা 🌹🌹
আকবর হোসেন রবিন
আপনি মন্তব্যে এই ফুল গুলো কীভাবে দিতে পারেন? আমার এখানে তো লেখা ছাড়া কোন ইমুজি দেওয়ার অপশনই দেখিনা।
আপনার জন্যও শুভকামনা আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
এগুলো মোবাইলের কী-বোর্ডেই থাকে। ফেসবুকে যেভাবে দেন, ঐভাবে এখানেও দেয়া যায়। আপনি মোবাইল দিয়ে ট্রাই করে দেখুন, আসবে 🙂
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
এখন সময় টাই এমন,
চোখ বন্ধ করুন আর মেনেনিন সব কিছু।
আকবর হোসেন রবিন
আমার সমস্যা হচ্ছে সবকিছু সহজে মেনে নিতে পারিনা।