
শশায় কি আর পেট ভরে! থাক্ – ৮০ টাকায় কিনবো না,
ফুলকপিটাও দেখতে দারুন, সীমটা ও তেমন মন্দ নাহ ।
মাছের বাজেট তিনশো হলো,
চারশো হলে কাতলা ছিলো;
ডালটা ও শেষ বলেই দিলো,
মাছটা কিনলে বলতে হবে, ওগো- ডাল মশলা আর হলোনা,
গেল পঞ্জিকায় মাছের ব্যাগে, বোয়াল কাতলা উঠলো না !
নিম্নবিত্তের টানাপোড়ন, আর এক জনমে শেষ হলোনা ।
কাঁচা বাজারের ব্যাগটা ভারী, আলুর তো কম ওজন না,
ডানের ব্যাগটা বিশ কিলো হবে, বাম হাতেও বারো আনা ।
ত্রিশ টাকায় রিক্সা নিলে,
খানিকটা না হয় স্বস্তি মেলে,
চায়ের জন্য দুশো গ্রামের ডানো কেনা হবে না,
জুতো জুড়া পেড়েক মারা, লাগলে পা’য়ে সয় না,
চার মাস ধরে কিনছি কিনবো, বাটায় যাওয়া হয়না ।
যখন- বিষ্ণুটা একাদশে, তখন অস্টমে সুনয়না,
সামনের মাসে পরীক্ষা ছেলের, স্কুল ড্রেসটা মেয়ের হবে না ।
বড় মেয়েটা শশুড় বাড়ি,
বেয়াইয়ের ভিষন জমিদারি,
ফটক থেকে ভেতর বাড়ি,
পাইক পেয়াদার ছড়াছড়ি,
হাজার টাকার মিস্টিতেও সবার হাতে রসে ভেজে না,
ট্রেনে বাসে ছয়শো লাগে, সেই ন’মাস – যাওয়া হলো না ।
দিন কেটে যায় যেমন তেমন, রাত্রিটা ভোর হয়না,
ফুসরত পেলে গিন্নি কাঁদে,
গরীব হওয়ার অপরাধে ;
বড় সন্তান মেয়েই ছিলো, কেন ছেলেটা বড় হলো না ।
একদিন,
বড় বাবু হেসে বলেছিলো কাকা,
বিষ্ণুর জন্য এই টেবিল টা রাখা ,
সাত বছরেও হিসাব রক্ষকের হিসেবটা আর বাড়ালো না ।
কম্পিউটারের যুগ এসে গেলো,
পাশের টেবিলে নিয়োগ হলো,
হাতের লিখা টালি খাতার; যুগটা তো আর রইলো না ।
বলি গিন্নি-
মাত্র তো- আর কয়টা বছর,
ছোকরাটার এমবিএর পর,
বড়বাবুর নতুন মিলে আমার চাকুরিটা তারই পাওনা ।
বুড়ো বুড়ি তীর্থে যাবো,
মেয়ের বাড়ি অতিথি হবো,
ওগো সে বাড়িতে এ বছর কি লক্ষ্মী পুজা হবে না ?
বেয়াইয়ের পত্র পেলাম সেদিন-
কোথাও নিমন্ত্রন যে লিখা ছিলো না___॥
গৌরীটা হয়তো চোখ বুজেছে,
মাজার ব্যাথায় কস্টে আছে,
নিতাই বাবু ও পাশ ফিরে-
হাজার লাইনের যোগের ভীড়ে,
কাজের ছুটি পাঁচটায় হলো, হিসেবের শেষ হলো না ।
গৌরী হটাৎ উঠলো ডেকে,
বুকের উপর হাতটা রেখে,
বলি শুনছো,
পোস্ট অফিসের বীমার খাতায়, দু লক্ষ কি হবে না ?
ছোকরিটারও চৌদ্দ হলো,
বড়’দা সেদিন বলে গেল,
লক্ষ টাকায় পণ হলেও, ভোজন লাখে হবে না !
ওগো – নিম্ন বিত্তের বালিশ হলো, ঘুম বুঝি আর হলো না ।
সেই দিনতো সেই কবেই গেল,
বাবার টেবিলে বিষ্ণু এলো,
আজ নিতাই বাবুর হাতে চিঠি, লিখবে ছেলের ঠিকানা
বাবা,
জ্বর সর্দি আর পেটের পীড়ায়, পথ্যটা ঠিক মিলছে না,
ছেলের হলো ব্যাংক একাউন্ট, শুধু পাল্টে গেছে সীমানা ।
বড়বাবুর নাতনী ছিলো,
নিতাই বাবুর বৌ-মা হলো,
জমিদারের মেয়ে- জমিদারী স্টাইল, কড়ায় গন্ডায় সেয়ানা ।
বিষ্ণুটা শিক্ষিত বটে, মানুষ হয়ে উঠল না,
সে বাড়িতে নিতাই বাবুর ভান্ডে অন্ন জুটলো না ।
নিম্ন-বিত্তের এই তো খুশি,
শূণ্য পেটে মুখে হাসি,
দিন বদলায়, কেলেন্ডার বদলায়, সময়টা যে বদলায় না ।
ছোটকিটার আজ অনেক কাজ,
সেই সে কবে ভেঙ্গেছে লাজ,
তিন তিনটে টিউশিনিতেও সংসার টা যে চলেনা,
বাবার পথ্য, মায়ের ঔষধ, এক হলে, এক হয় না ।
সেদিন মামা এলো, বুঝিয়ে গেলো,
এমনিতে আর চলে দিন ?
শেয়ানা মেয়ে বাবার কাঁধে !
সমাজ ধর্মের বেজায় ঋণ !!
ছোটকি বলে, আমি যাবোনা ফেলে,
মা বাবা আর কত্তো দিন ;
ওদের কাছে, সন্তানেরও আছে,
জন্ম দানের- জন্ম ঋণ ॥
নিতাই বাবু- বুঝল সবই, বুঝল না সুনয়না,
বুড়ো বুড়ি বেজায় খুশি, লাখেও এমন হয়না ।
এদিকে,
মেয়ের সুখের জন্য জীবন, আর যে রাখা যায় না,
আসলে,
নিম্ন-বিত্তের পেনশন শেষে, আর নি:শ্বাস নিতে হয়না ॥
-০-
-১১/১১/২০১৮
ছবি নেট থেকে
৩২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এ তো দেখছি কষ্ট-গাথা,
জড়িয়ে গড়িয়ে আছে
সমাজের ও-মাথা থেকে এ-মাথা।
এতখানি টেনে নিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা না।
এস.জেড বাবু
অবসরটায় লিখালিখি
সময়ে পেলে খুঁজেও দেখি
কে লিখল, কে লিখল না
আপনার মন্তব্য না পেলে, পূর্ণতা যেন আসেনা
শুকরীয়া ভাইজান
ছাইরাছ হেলাল
আমি তো আপনার লেখার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি।
অপেক্ষায় থাকি কখন আপনি লিখবেন, কঠিন সত্য না হলেও সত্য কিন্তু!
লেখক না, পাঠক হিসেবে সুনাম আছে আমার (নিজের ঢোল)।
এস.জেড বাবু
বছরের এই সময়টা অনেকটাই অবসর থাকি- আপনার চোখের সামনে স্পিডব্রেকারের মতো পড়বে আমার লিখা। হাহাহা
ভাইজান কথায় লিখায় কে জেতে আপনার সাথে- কারণ আমি সত্যিটা জানি- “আপনি নিয়মিত পাঠক”
শুভেচ্ছা ভাই
সুরাইয়া পারভিন
টেনেটুনে দিন পার করা মধ্যবিত্তের গল্প গুলো এমন।স্বখদ থাকলেও কেনা হয়ে উঠে না সেরাটা।
চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া
এস.জেড বাবু
অনেক ধন্যবাদ আপু
শুভেচ্ছা নিবেন
রাফি আরাফাত
সেদিন মামা এলো, বুঝিয়ে গেলো,
এমনিতে আর চলে দিন ?
শেয়ানা মেয়ে বাবার কাঁধে !
সমাজ ধর্মের বেজায় ঋণ !!
ভালো লাগলো ভাই
এস.জেড বাবু
অনেক খুশি লাগছে মন্তব্য দেখে
অনেক ভাল থাকবেন রাফি ভাই
মাহবুবুল আলম
“নিতাই বাবুর বৌ-মা হলো” এই নিতাই বাবু কি সোনেলার নিতাই বাবু?? হাহাহা।
তৌহিদ
আমাদের মধ্যবিত্তের জীবনের গল্পগাঁথাগুলি এমনই আসলে আপনি দীর্ঘ কবিতায় এত সুন্দর করে লিখলেন অবাকই হয়েছি। আপনার লেখার মুন্সিয়ানার তারিফ করতেই হয় বাবু ভাই।
এস.জেড বাবু
এ নিতাই বাবু সুনয়নার গর্বিত পিতা-
বলা যায় দেশের হাজারো সুনয়নাদের এমন গর্বিত পিতা, ছেলেরা যাদের শেষ বয়সের ভার না নিলেও মেয়েরা নেয়।
আর আমাদের সোনেলার নিতাই বাবু আমার প্রিয় লিখক, আমার প্রিয় ভাই।
মন্তব্য পেয়ে চোখ বড় হয়ে গেল আমার- বুঝলাম আপনি অনেক মজার একজন মানুষ মাহবুবুল আলম ভাইজান।
শুভেচ্ছা
তৌহিদ
আমাদের মধ্যবিত্তের জীবনের গল্পগাঁথাগুলি এমনই আসলে আপনি দীর্ঘ কবিতায় এত সুন্দর করে লিখলেন অবাকই হয়েছি। আপনার লেখার মুন্সিয়ানার তারিফ করতেই হয় বাবু ভাই।
এস.জেড বাবু
তৌহিদ ভাই
আপনার মন্তব্যগুলি ভিটামিন এর মতো কাজ করে, সত্যি উৎসাহ পাই।
এবং গর্ব হয় আপনি / আপনারা উৎসাহ দেন।
শুভেচ্ছা ভাই
অনন্য অর্ণব
বাহ !!! কত চমৎকার শব্দে ছন্দে জীবনের টানাপোড়েন চিত্রায়ন করলেন। খুব ভালো লাগলো দাদাভাই।
এস.জেড বাবু
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাইজান,
অশেষ শুভেচ্ছা রইলো আপনার প্রতি।
রুমন আশরাফ
বেশ ভাল লাগলো। ছন্দে ছন্দে জীবন কাহিনী।
এস.জেড বাবু
লাখো শুকরীয়া ভাইজান
শুভেচ্ছা নিবেন
সঞ্জয় মালাকার
টেনেটুনে দিন পার করা মধ্যবিত্তের গল্প গুলো এমন।
দিন কেটে যায় যেমন তেমন, রাত্রিটা ভোর হয়না,
ফুসরত পেলে গিন্নি কাঁদে,
গরীব হওয়ার অপরাধে ;
বড় সন্তান মেয়েই ছিলো, কেন ছেলেটা বড় হলো না।
ছোকরিটারও চৌদ্দ হলো,
বড়’দা সেদিন বলে গেল,
লক্ষ টাকায় পণ হলেও, ভোজন লাখে হবে না !
ওগো – নিম্ন বিত্তের বালিশ হলো, ঘুম বুঝি আর হলো না ।
দাদা আপনার সবগুলো লেখার পাঠক হয়েই রবো।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধে দাদা, শুভ কামনা ।
এস.জেড বাবু
মন্তব্যে বুকটা ভরিয়ে দিলেন,
প্রিয় ভাই- পাশে থাকবো আপনাদের এইটুকু বলতে পারি।
শুভেচ্ছা রইলো দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
শুভেচ্ছা অফুরন্ত দাদা
নিতাই বাবু
শ্রদ্ধেয় দাদা, আমি আবার কী করলাম?
আপনার লেখা পড়ে তাই ভাবতে লাগলাম!
অনেক ভেবেও কূল যে খুঁজে পাচ্ছি না!
আপনার সাথে তো আমার নেই দেনাপাওনা!
তাহলে আমার নামটা কেন টানলেন?
দয়াপূর্বক পরিস্কারভাবে খুলে বলবেন!
[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
অনেক অনেক ধন্যবাদের সাথে শুভকামনাও থাকলো।
এস.জেড বাবু
দাদা
দেনা পাওনা শেষ করি আগে
তা হলো-
নিয়মিত আপনার লেখা পড়তে চাই আর
আমাদের লিখায় মন্তব্য চাই ।
এবার নিতাই বাবুর পরিচয় দিচ্ছি,
রামচন্দ্রপুরে সেই ছোটকাল থেকে আমার প্রিয় মানুষদের মধ্যে লেবু সাহা, নিতাই বাবু, জোতিষ নানা, জেগে মামা এদের খুব কাছে থেকে বড় হয়েছি। ওরা জীবনের ছন্দে ছন্দে মিশে আছে,
কলি মাসি, দীপালী মাসি, গীতা মাসি এদের ছাঁয়াতলে বেড়ে উঠেছি।
ওরা জীবনের প্রয়োজনে, বলার প্রয়োজনে ভাবনায় এসেই যায়।
আর হ্যাঁ – নিতাই বাবু সম্পর্কে আমার নানা ছিলেন।
উনাকে অনেক মিস করি, সেই পড়ন্ত বিকেলে হাডুডু খেলা দেখতে গিয়ে কর্তার দোকানের পাঁচ টাকার পিঁয়াজু ।
তা আপনিও কি সেই নানা হবেন ? পিঁয়াজের যে দাম, তবু পিঁয়াজু খাওয়ালেই নাতি পেয়ে যাবেন।
অনেক কিছু মনে করিয়ে দিলেন সুন্দর সকালটায়।
ধন্যবাদ
প্রিয় নিতাই বাবু
নিতাই বাবু
আগে জানতে চাই, এস.জেড.বাবু নামের পুরো নাম,
তারপর না হয় নানা হলাম, না হয় দাদাই হলাম!
আমার ধারনায়, এস=শ্রী, জেড=জগদিশ, বাবু।
সব মিলিয়ে “শ্রী জগদিশ বাবু”। তা ঠিক হতে পারে, না-ও হতে পারে।
দয়াপূর্বক খুলে বলবেন।
এস.জেড বাবু
ভাগ্যক্রমে মুসলমানের ঘরে জন্ম, তাই হয়ত নামটা SamsuzZaman Babu ( সামছুজ্জামান বাবু) হয়ে গেছে-
আমার দাদা এই নাম রেখেছিলেন।
তবে আমার নানা যাদের নাম বললাম- ওরা প্রায় সব পুঁজায় পিঠা পুলি/ সন্দেশ নিয়মিত ই পাঠায়।
আমি আর এক নানা বাড়ির সৌখিন খাবারের অপেক্ষায়।
জিসান শা ইকরাম
একান্ত অনুভূতিতে সমাজের বাস্তবতার চিত্র ফুটিয়ে তুললেন,
এত কিছু বিশাল কবিতার মাধ্যমে আনা খুব কঠিন,
আপনি বেশ ভাল ভাবেই এই কঠিন কাজটি পারলেন।
শুভ কামনা।
এস.জেড বাবু
আপনাদের মত কিছু গুণী মানুষের নিরন্তর অনুপ্রেরনা। ভালো মন্দ মিলিয়ে ওরা আমার লিখা পড়ে- এবং বলে।
অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো ভাইজান।
শুভকামনা
মনির হোসেন মমি
কবিতা নাকি জীবনের কথা বলে । আপনার এ কবিতায় তাই খুজেঁ পেলাম।
দিন কেটে যায় যেমন তেমন, রাত্রিটা ভোর হয়না,
ফুসরত পেলে গিন্নি কাঁদে,
গরীব হওয়ার অপরাধে ;
বড় সন্তান মেয়েই ছিলো, কেন ছেলেটা বড় হলো না ।
পুরো একটি কবিতায় জীবনের অপ্রাপ্তিগুলোর দৃষ্টান্ত উদাহরণ টানলেন। চমৎকার।
এস.জেড বাবু
প্রিয় ভাইজান
অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো আপনার প্রতি।
শুভেচ্ছা ভাই।
আরজু মুক্তা
মধ্যবিত্তের গল্প। এমনি হয় জীবনে।
এস.জেড বাবু
জ্বী আপু
এমনি হয় মধ্যবিত্তের গল্প।
অনেক ধন্যবাদ আপু
শুভেচ্ছা
জাকিয়া জেসমিন যূথী
জীবনের গল্পে গাঁথা
অপরূপ সুন্দর গল্প,
উঠে এলো আপনার কবিতায়
টলে উঠলোনা কোথাও এক চুল
পেলাম না ভুল অল্প।
——— অসাধারণ। প্রিয়তে থাকলো।
এস.জেড বাবু
মন্তব্যে মুগ্ধতা রইলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় আপু।
ভাল থাকবেন সবসময়।