
গুচ্ছকবিতা || মাহবুবুল আলম
এক.
মনের বসত কই
মানস তরঙ্গে শিহরিত আবেগের ঢেউ
কোথা থেকে আসে! এই যে হৃদয়-মন
তারই বা বাড়ি কই; কি বা তার পরিচয়
সাকিন ঠিকানা, কিছুতেই এর ভেদ
ভাঙতে যে পারিনা।
তাকে খোঁজে কিবা লাভ বুঝতে চাই
শুধু শরীরের ভাষা, প্রণয় ব্যঞ্জনা তার
লুকিয়ে থাকে কোনখানে
হৃদয়ের কোন সিন্দুকে।
জানি না যাকে চিনি না তাকে ,
তবু তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার বলি
রক্ত-মাংসের এই দেহতরী
এ বোঝি জাগায় প্রেম সারাঅঙ্গ খুলি
হঠাৎই ডুব দেয় আত্মসম্মোহণে।
এই ভাল এই কালোমেঘ
বোঝিনা তার ভাও মতিগতি চলাফেরা
কার সাথে কখন সে করে বিচরণ।
মনের কী যে বিচিত্র খেলা-
এইতো ভাসালো আনন্দ-হিল্লোলে
পরেই নিয়ে যায় বেদনার ধূ-ধূ বালুচরে।
দুই.
মৃত্যু ছেড়ে দিলে হাত
অালিঙ্গন শেষে মৃত্যু ছেড়ে দিলে হাত
বোঝা যায় তার কতটা উত্তাপ;
কত তার বাহুবল, রুদ্রমূর্তি, পিষ্ট করতে
চায় পাগলহাতি কোনো এক পাষাণ হৃদয়।
এরপর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার লোভ
অারো বেশি যায় বেড়ে, সুন্দর পৃথিবী;
পরিবার স্বজনের প্রিয়মুখ, প্রিয় হাসি
সকালের সূর্যোদ্বয়, চাঁদ-তারার রাতের
অাকাশ, রূপ অপরূপ সময়ের
প্রতিটি ক্ষণ, কত মধুময়।
তাই, মরতে চাই না অামি, চাই না ছেড়ে
যেতে পৃথিবীর সৌন্দর্য অপার, প্রিয়জনের
ভালোবাসা অাদর-সোহাগসহ অামরত্ব
চায় এই নশ্বর দেহ, অাত্মাকে কর না বেদেহী
হে পরম শ্রষ্টা, হে মহাদয়াময়।
তিন.
মধুর এক যৌথজীবন
প্রতিদিন এক জোয়ারের নদী আমার
পাশে এসে ঘুমায়, নদীটি কুলকুল
বয়ে যায়, স্রোতের ইশারায় ডাকে;
অামিও তখন তীব্র তৃষ্ণার্থ বুকে
নদীর একদম কাছাকাছি সিক্ত
উপত্যকায় সাঁতারে নেমে পড়ি।
যেখানে এক স্বর্গীয় অমৃতধারা
কাটালের কুন্ডলী, ঘূর্ণি ঝড়ের
উৎস মুখের ন্যায় টেনে নেয়,
টেনে নেয় অন্য এক উৎত্রাসে।
তা আমি আগাগোড়া উপভোগ করি
অবাধ সাঁতার কেটে কেটে
উচ্ছ্বাস আর উত্তেজনার
মিলিত দ্বৈরথে চড়ি বুকের ওপর,
সেও আমায় অক্টোপাসের বাঁধনে বেঁধে
টেনে নেয় আরও গভীরে একেবারে
উপত্যকার গুপ্তগুহায়।
সাঁতার শেষে ক্লান্ত ঘামের শরীর মেলে
দেয় পানকৌড়ির ডানা, ঘাম মুছে গেলে
অন্তিম চুম্বন শেষে ওঠে আসি নদীতীরে
যেখানে উর্বর কাদামাটি, আর ক্লান্ত বিধ্বস্ত
নদী তখন হাই তোলে ঘুমের বিছানায়।
দিন শেষে নদী আবার গোধূলীর রঙে
সুরভিত প্রসূনের পরাগরেণু মেখে
অারও এক মায়াবীরাতের অপেক্ষায়
সেজেগুজে বসে থাকে, এভাবে
দিন আসে দিন যায়, শীত গ্রীষ্ম বর্ষায়
সাঁতার কেটে কেটে পার করি যৌথসময়।
এভাবেই নদী তার গুছানো শয্যায়
মাতিয়ে রাখে প্রতিদিন, আমিও
আষ্কারা পেয়ে নিত্যদিন তার
অমৃতসুধার পান করে বার বার
সাঁতারের উল্লাসে মেতে ওঠি
সাঁতার কেটে কেটে এখন আমি
পেশিবহুল এক টাগরাপুরুষ।
চার.
সয়ম্বরসভা
তোমার কাঞ্চনজঙ্গায় সুগন্ধী গোলাপ
খুঁজে বেড়ায় কত অলি, ঘুমহীন রাত
করে দেয় পার অমৃতের অাশায়, সবাই
পায় না তার ছোঁয়া কত বেড়াজাল,
পাতা থাকে গভীর গুহায়।
তোমার সয়ম্বরসভায় সে ই পায় সব,
যে তোমার মনের মতন, খুলে দাও তারে
প্রণয়দুয়ার মেলে দাও গিড়িখাত;
খুলে দাও মধুর অমৃতভান্ডার, গোলাপ
জড়িয়ে নেয় বুকে পরম মমতায়,
তখনই অলি যুবরাজ তোমার উদ্যত বুকে,
খোঁজে যেন- সাজ দেয়া সেতারের তার।
তোমরা তখন স্বপ্নের পঙ্খিরাজে চড়ে,
উড়ে যাও কোনো এক নিরুদ্দেশে;
সাহসি সোয়ারী যদি ধরতে পারে জিন,
নিয়ে যাও তুমি তারে, অনন্তের ওপারে।
২৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
মনের অতল তলের ঠিকানা আমাদের জানা হয় না।
মরিতে চাই না এ সুন্দর ভূবন থেকে।
আপনার কবিতা সত্যি অনবদ্য।
মাহবুবুল আলম
হেলাল ভাই! অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা
রইল। ভাল থাকবেন!
ফয়জুল মহী
পাঞ্জল শব্দের গাঁথুনি। লেখা পড়ে বিমোহিত হলাম।
মাহবুবুল আলম
ধন্যবাদ ভাই! ভাল থাকবেন সবসম!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া চমৎকার লিখেছেন। প্রতিটি লাইন চিরন্তন সত্য। খুব সুন্দর কাব্যিকতায় ভরে উঠেছে শব্দের মায়াজালে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা নিরন্তর
মাহবুবুল আলম
ধন্যবাদ আপনাকে সুহৃদ !
ভাল থাকবেন।
শুভেচ্ছা জানবেন ।
সাবিনা ইয়াসমিন
মনের কী যে বিচিত্র খেলা-
এইতো ভাসালো আনন্দ-হিল্লোলে
পরেই নিয়ে যায় বেদনার ধূ-ধূ বালুচরে।..
মনের ভাব বুঝতে পারা যেখানে কঠিন, সেখানে এমন কথা গুলো অক্ষমতার তীরের মতো বিঁধে থাকে নিজ-নিজ মনে।
অসাধারণ লেখেন আপনি প্রফেসর সাহেব। একজন সত্যিকারের সাহিত্যিকের দেখা পাই আপনার প্রতিটি লেখায়।
সয়ম্বরসভা পড়তে পড়তে মনে হলো, যেন কোন রাজদরবারে বসে আছি। এখন ভাবছি প্রাচীন যুগই ভালো ছিলো,, কি দারুণ দারুণ বিশ্লেষণ দিয়ে প্রত্যাশিত নারীদের পটাতো পাণিপ্রার্থীরা 😀😀
নিয়মিত লিখুন,
শুভ কামনা অবিরত রইলো 🌹🌹
মাহবুবুল আলম
প্রতিটি কবিতাধরে ধরে সুন্দর ও নান্দনিক
মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুহৃদ। আপনারা মঙ্গল হোক!
সুপায়ন বড়ুয়া
“অালিঙ্গন শেষে মৃত্যু ছেড়ে দিলে হাত
বোঝা যায় তার কতটা উত্তাপ;”
গুচ্ছ কবিতার আড়ালে সবটাই হয় ভাল।
উপরের লাইন দুটো দাগ কেটে গেল।
শুভ কামনা।
মাহবুবুল আলম
দাদা। মন্তব্য পড়ে ভীষণ প্রীত হলাম। অনেক ধন্যবাদ !
ভাল থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
তৌহিদ
মনের অতলের ইচ্ছেগুলো আমরা কতটাইবা জানি। একগুচ্ছ কবিতা ভালো লেগেছে ভাই। ভালো থাকুন সবসময়।
মাহবুবুল আলম
ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই।
ভাল থাকবেন সর্বদা।
ইঞ্জা
গুচ্ছ কবিতা গুলো পড়ে ভালো লাগলো ভাই।
মাহবুবুল আলম
ইঞ্জা ভাই!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাল থাকবেন।
ইঞ্জা
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই।
রুমন আশরাফ
চমৎকার লেখনী।
মাহবুবুল আলম
ধন্যবাদ!
অনেক শুভেচ্ছা রইলো ।
নিতাই বাবু
চার খণ্ডে কবিতাখানি সত্যি অসাধারণ লাগলো। যেন বাস্তব জীবনের স্মৃতিকথা।
কবিকে অজস্র ধন্যবাদ!
মাহবুবুল আলম
নিতাই দাদা! ধন্যবাদ
কেমন আছেন।
অনেক দিন পরে দেখলাম!
জিসান শা ইকরাম
কবিতাগুচ্ছ ভালো লেগেছে খুব ভাই।
শুভ কামনা।
মাহবুবুল আলম
অনেক অনেক ধন্যবাদ সুহৃদ জিসান ভাই!
ভাল থাকবেন। শুভেচছা রইল।
সুরাইয়া পারভীন
সবগুলো কবিতা দারুণ
না জানি না ধাম জানি না
তবুও খুঁজে বেড়াই মনের খোঁজ
যে মনের মতন
অকপটে তারই সামনেই তো খুলে দেবে সব
তাকেই দেবে কাঞ্চনজঙ্ঘার সুগন্ধি সৌরভ
উর্বশী
প্রতিদিন এক জোয়ারের পানি আমার পাশে এসে ঘুমায়,নদীটি কুলকুল বয়ে যায়, স্রোতের ইশারায়—— এত চমৎকার লেখা,আমি তো প্রকৃতির মাঝে মিশে গেলাম।লেখা পড়ে অনেক ভাল লেগেছে। এক কথায় কবিতা গুচ্ছ অসাধারণ।