গল্পহীন গল্পে গল্পের বসবাস

দীপংকর চন্দ ১২ জানুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার, ১২:৫২:৪৪পূর্বাহ্ন বিবিধ ১৬ মন্তব্য

পিরীত১

 

প্রবেশক (১): এটি কোন গল্প নয়

প্রবেশক (২): না গল্প অথবা অন্য কিছু

অনেকদিন মেইল চেক করা হয় না!
মেইল বক্সে দুইশ আটাত্তরটা মেইল!
বেশিরভাগই জাঙ্ক!
ফেসবুক টুইটার অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন!
আমার পশ্চাদপসরতার বিবরণ সদর্পে ঘোষণা করছে বার্তাগুলো!
বার্তা অপঠিত আকারে পুষে রাখা দীর্ঘদিনের অভ্যাস আমার!

অন্তর্জাল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার আগে হঠাৎ চোখে পড়লো সানা নূরের বার্তা!
কৌতূহলী হওয়া কী উচিত আমার?
নাকি ফিরে যাওয়া উচিত অনারোগ্য বিষাদ অক্ষত রেখে?
নাহ! কৌতূহল শেষ হাসি হাসলো অবশেষে!
ছোট্ট বার্তা!
অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। তোমার জন্য আমি আমার ভালোবাসা ফিরে পেয়েছি আবার।
পড়তে পড়তে কুঁচকে উঠলো ভ্রু!
মানে কী এই বার্তার?

কী ব্যাপার? কোথায় ছিলে এতোদিন? বলোতো? স্বভাবসুলভ চাঞ্চল্য সানা নূরের। দ্রুত গতির জিজ্ঞাসা।
ব্যস্ততা সানা! সামান্য সংকোচ স্থিত রইলো আমার উত্তরে।
তুমি ভীষণ ভীষণ ভালো।
তোমার কথায় আমার কী একটু লজ্জা পাওয়া উচিত নয়?
হ্যাঁ। অবশ্যই পাওয়া উচিত! একটু লজ্জা পাও তো দেখি! দেখি লজ্জা পেলে কেমন লাগে তোমাকে দেখতে! সকৌতুকে সানার বিরামহীন কথন।
হা হা হা হা। সানা নূরের সরল কথায় না হেসে পারলাম না আমি।
এই শোনো, আগামীকাল বিকেলে হাসান ইকবাল বাসায় আসবে আমাদের।
হাসান ইকবাল কী ফিরেছে মালয়েশিয়ায়? কণ্ঠে নিরুত্তাপ বজায় রেখে জানতে চাইলাম আমি।
হ্যাঁ পুরোনো কোম্পানিতেই। আমি কিন্তু জানতাম তুমি পারবে ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে।
আমি কিছুই করিনি সানা। ভাগ্যই হাসান ইকবালকে ফিরিয়ে এনেছে তোমাদের দেশে।
হাসান আমাকে আগের মতোই ভালোবাসে, জানো।
আমি একটু চুপ করে রইলাম। বিবেচনাবোধের সাথে সামান্য সময় বোঝাপড়া করলাম মনে মনে। তারপর জানতে চাইলাম সসংকোচে, হাসান কী তোমাকে আয়েশা নামের কোন মেয়ের কথা বলেছে?
হ্যাঁ বলেছে। হাসান আমার কাছে কিছুই লুকায় না।
কী বলেছে সে আয়েশা সম্পর্কে?
বলেছে, বাড়ির সবাই হাসানের অমতে আয়েশার সাথে বিয়ে দিয়েছে ওর।
বিয়েটা কিন্তু ধর্মসম্মত এবং আমাদের দেশে প্রচলিত আইনসম্মতভাবে সম্পন্ন হয়েছে সানা।
কিন্তু জবরদস্তি যে! হাসান বলেছে সে আমাকেই ভালোবাসে। সে বিয়ে করবে আমাকে।
সানার কণ্ঠের দৃঢ়তা বিচলিত করে আমাকে! আমি আতঙ্কিত হই আয়েশার কথা ভেবে! ঘটনাপ্রবাহের বিরূপ গতিপ্রকৃতি যে তছনছ করে দিতে পারে সহজ সরল একটি গ্রাম্য মেয়ের জীবন!
আমি প্রাণপণে বোঝানোর চেষ্টা করি, শোনো সানা, বিয়েটা কোন ছেলেখেলা নয়।
আমি জানি সেটা। নির্বিকার উত্তর সানার।
আয়েশা অনেক সাদাসিধে সাধারণ পরিবারের নিরক্ষর একটা মেয়ে! ওকে আমি দেখেছি সানা!
কিন্তু হাসান আমাকে ভালোবাসে।
তুমি হাসানকে ভুলে যাও সানা, প্লীজ!
এই! তুমি কী জেলাস! তুমি কী আমাকে ভালোবাসো? সানার কৌতুক।
দেখো সানা আমি তোমাকে যে কথাটা বলতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে হাসান বিবাহিত! ওর স্ত্রী আয়েশা খুব সাধারণ একটা মেয়ে। খুব ভালো একটা মেয়ে। তুমি যদি হাসানকে প্রশ্রয় দাও, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আয়েশার দাঁড়াবার কোন জায়গা থাকবে না! তুমি দয়া করে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করো!
আমি কেন বুঝতে যাবো আয়েশার ব্যাপার?
বুঝতে যাবে কারণ, আয়েশা একজন মেয়ে। একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের অবস্থান নিরাপদ রাখা তোমার দায়িত্ব!
আর আমার দায়িত্ব তাহলে কে নেবে?
তোমাদের দেশে অনেক ভালো ছেলে আছে সানা! পরিবারের ওপর ভরসা রাখো। মায়ের সাথে আলোচনা করো পুরো বিষয়টি নিয়ে। বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নাও।
আয়েশা তোমার দেশের মেয়ে বলে তুমি আয়েশার পক্ষ নিচ্ছো! সানার অভিমানী কণ্ঠে তর্কের প্রবণতা।
যেটা ঠিক হিসেবে বিবেচনা করছে আমার বিবেক, আমি তার পক্ষ নিচ্ছি সানা।
তুমি আমার বন্ধু নও? সানার দ্বিধান্বিত জিজ্ঞাসা!
আমি জানিনা আমি কার বন্ধু সানা! তবে জেনো যে হাসানের জন্য তুমি আয়েশার চোখ জলে ভরিয়ে তুলবে, সেই হাসানের জন্য একদিন তোমার চোখও ভরে উঠবে জলে!
তুমি কী আমাকে অভিশাপ দিচ্ছো?
না, আমি তোমার শুভকামনা করছি সানা।
যদি প্রশ্ন করি আমার কী অপরাধ এক্ষেত্রে, কী উত্তর দেবে তুমি?
অপরাধ নয় সানা, দুর্ভাগ্য! তোমার ভালোবাসা সম্ভবত ঠিক মানুষটিকে বেছে নিতে ব্যর্থ হয়েছে!
আয়েশার ভালোবাসা বুঝি বেছে নিয়েছে ঠিক মানুষটিকে?
ঠিক জানিনা আমি। সম্ভবত আয়েশাও দুর্ভাগ্যের শিকার সানা।

সানা নূরের দুচোখে জল! দ্বিধাগ্রস্ত! ভীষণ দ্বিধাগ্রস্ত সে! আমি জানিনা কীভাবে সান্তনা দেয়া যায় সানাকে! সত্যিকার অর্থেই কোন সান্তনাবাক্য জানা নেই আমার! আমি একজন ব্যর্থ মানুষ, ভীষণ ব্যর্থ মানুষ!

সানা নূর কাঁদছে! অপ্রাকৃত অশ্রুজলে ভেসে যাচ্ছে ওর মায়াবতী স্নেহবতী চোখের কাজল!
কাঁদতে কাঁদতে সানা নূর বললো, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে! ভীষণ কষ্ট! তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আর! বিদায়।
কখনও বিদায় বলো না সানা। আবার দেখা হবার প্রত্যাশাটুকু না হয় বেঁচে থাক মনে।
সানা কোন কথা বললো না। ওয়েব ক্যাম বন্ধ হয়ে গেলো। সানার মুখের পরিবর্তে একরাশ অন্ধকার উড়ে এসে জুড়ে বসলো এলসিডি স্ক্রিনে।
অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে বললাম, শুভকামনা সানা। অনিঃশেষ। সবসময়।

ছবি: সংগৃহীত।

৫৩৭জন ৫৩৭জন

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ