প্রবেশক (২): না গল্প অথবা অন্য কিছু
অনেকদিন মেইল চেক করা হয় না!
মেইল বক্সে দুইশ আটাত্তরটা মেইল!
বেশিরভাগই জাঙ্ক!
ফেসবুক টুইটার অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন!
আমার পশ্চাদপসরতার বিবরণ সদর্পে ঘোষণা করছে বার্তাগুলো!
বার্তা অপঠিত আকারে পুষে রাখা দীর্ঘদিনের অভ্যাস আমার!
অন্তর্জাল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার আগে হঠাৎ চোখে পড়লো সানা নূরের বার্তা!
কৌতূহলী হওয়া কী উচিত আমার?
নাকি ফিরে যাওয়া উচিত অনারোগ্য বিষাদ অক্ষত রেখে?
নাহ! কৌতূহল শেষ হাসি হাসলো অবশেষে!
ছোট্ট বার্তা!
অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। তোমার জন্য আমি আমার ভালোবাসা ফিরে পেয়েছি আবার।
পড়তে পড়তে কুঁচকে উঠলো ভ্রু!
মানে কী এই বার্তার?
কী ব্যাপার? কোথায় ছিলে এতোদিন? বলোতো? স্বভাবসুলভ চাঞ্চল্য সানা নূরের। দ্রুত গতির জিজ্ঞাসা।
ব্যস্ততা সানা! সামান্য সংকোচ স্থিত রইলো আমার উত্তরে।
তুমি ভীষণ ভীষণ ভালো।
তোমার কথায় আমার কী একটু লজ্জা পাওয়া উচিত নয়?
হ্যাঁ। অবশ্যই পাওয়া উচিত! একটু লজ্জা পাও তো দেখি! দেখি লজ্জা পেলে কেমন লাগে তোমাকে দেখতে! সকৌতুকে সানার বিরামহীন কথন।
হা হা হা হা। সানা নূরের সরল কথায় না হেসে পারলাম না আমি।
এই শোনো, আগামীকাল বিকেলে হাসান ইকবাল বাসায় আসবে আমাদের।
হাসান ইকবাল কী ফিরেছে মালয়েশিয়ায়? কণ্ঠে নিরুত্তাপ বজায় রেখে জানতে চাইলাম আমি।
হ্যাঁ পুরোনো কোম্পানিতেই। আমি কিন্তু জানতাম তুমি পারবে ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে।
আমি কিছুই করিনি সানা। ভাগ্যই হাসান ইকবালকে ফিরিয়ে এনেছে তোমাদের দেশে।
হাসান আমাকে আগের মতোই ভালোবাসে, জানো।
আমি একটু চুপ করে রইলাম। বিবেচনাবোধের সাথে সামান্য সময় বোঝাপড়া করলাম মনে মনে। তারপর জানতে চাইলাম সসংকোচে, হাসান কী তোমাকে আয়েশা নামের কোন মেয়ের কথা বলেছে?
হ্যাঁ বলেছে। হাসান আমার কাছে কিছুই লুকায় না।
কী বলেছে সে আয়েশা সম্পর্কে?
বলেছে, বাড়ির সবাই হাসানের অমতে আয়েশার সাথে বিয়ে দিয়েছে ওর।
বিয়েটা কিন্তু ধর্মসম্মত এবং আমাদের দেশে প্রচলিত আইনসম্মতভাবে সম্পন্ন হয়েছে সানা।
কিন্তু জবরদস্তি যে! হাসান বলেছে সে আমাকেই ভালোবাসে। সে বিয়ে করবে আমাকে।
সানার কণ্ঠের দৃঢ়তা বিচলিত করে আমাকে! আমি আতঙ্কিত হই আয়েশার কথা ভেবে! ঘটনাপ্রবাহের বিরূপ গতিপ্রকৃতি যে তছনছ করে দিতে পারে সহজ সরল একটি গ্রাম্য মেয়ের জীবন!
আমি প্রাণপণে বোঝানোর চেষ্টা করি, শোনো সানা, বিয়েটা কোন ছেলেখেলা নয়।
আমি জানি সেটা। নির্বিকার উত্তর সানার।
আয়েশা অনেক সাদাসিধে সাধারণ পরিবারের নিরক্ষর একটা মেয়ে! ওকে আমি দেখেছি সানা!
কিন্তু হাসান আমাকে ভালোবাসে।
তুমি হাসানকে ভুলে যাও সানা, প্লীজ!
এই! তুমি কী জেলাস! তুমি কী আমাকে ভালোবাসো? সানার কৌতুক।
দেখো সানা আমি তোমাকে যে কথাটা বলতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে হাসান বিবাহিত! ওর স্ত্রী আয়েশা খুব সাধারণ একটা মেয়ে। খুব ভালো একটা মেয়ে। তুমি যদি হাসানকে প্রশ্রয় দাও, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আয়েশার দাঁড়াবার কোন জায়গা থাকবে না! তুমি দয়া করে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করো!
আমি কেন বুঝতে যাবো আয়েশার ব্যাপার?
বুঝতে যাবে কারণ, আয়েশা একজন মেয়ে। একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের অবস্থান নিরাপদ রাখা তোমার দায়িত্ব!
আর আমার দায়িত্ব তাহলে কে নেবে?
তোমাদের দেশে অনেক ভালো ছেলে আছে সানা! পরিবারের ওপর ভরসা রাখো। মায়ের সাথে আলোচনা করো পুরো বিষয়টি নিয়ে। বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নাও।
আয়েশা তোমার দেশের মেয়ে বলে তুমি আয়েশার পক্ষ নিচ্ছো! সানার অভিমানী কণ্ঠে তর্কের প্রবণতা।
যেটা ঠিক হিসেবে বিবেচনা করছে আমার বিবেক, আমি তার পক্ষ নিচ্ছি সানা।
তুমি আমার বন্ধু নও? সানার দ্বিধান্বিত জিজ্ঞাসা!
আমি জানিনা আমি কার বন্ধু সানা! তবে জেনো যে হাসানের জন্য তুমি আয়েশার চোখ জলে ভরিয়ে তুলবে, সেই হাসানের জন্য একদিন তোমার চোখও ভরে উঠবে জলে!
তুমি কী আমাকে অভিশাপ দিচ্ছো?
না, আমি তোমার শুভকামনা করছি সানা।
যদি প্রশ্ন করি আমার কী অপরাধ এক্ষেত্রে, কী উত্তর দেবে তুমি?
অপরাধ নয় সানা, দুর্ভাগ্য! তোমার ভালোবাসা সম্ভবত ঠিক মানুষটিকে বেছে নিতে ব্যর্থ হয়েছে!
আয়েশার ভালোবাসা বুঝি বেছে নিয়েছে ঠিক মানুষটিকে?
ঠিক জানিনা আমি। সম্ভবত আয়েশাও দুর্ভাগ্যের শিকার সানা।
সানা নূরের দুচোখে জল! দ্বিধাগ্রস্ত! ভীষণ দ্বিধাগ্রস্ত সে! আমি জানিনা কীভাবে সান্তনা দেয়া যায় সানাকে! সত্যিকার অর্থেই কোন সান্তনাবাক্য জানা নেই আমার! আমি একজন ব্যর্থ মানুষ, ভীষণ ব্যর্থ মানুষ!
সানা নূর কাঁদছে! অপ্রাকৃত অশ্রুজলে ভেসে যাচ্ছে ওর মায়াবতী স্নেহবতী চোখের কাজল!
কাঁদতে কাঁদতে সানা নূর বললো, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে! ভীষণ কষ্ট! তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আর! বিদায়।
কখনও বিদায় বলো না সানা। আবার দেখা হবার প্রত্যাশাটুকু না হয় বেঁচে থাক মনে।
সানা কোন কথা বললো না। ওয়েব ক্যাম বন্ধ হয়ে গেলো। সানার মুখের পরিবর্তে একরাশ অন্ধকার উড়ে এসে জুড়ে বসলো এলসিডি স্ক্রিনে।
অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে বললাম, শুভকামনা সানা। অনিঃশেষ। সবসময়।
ছবি: সংগৃহীত।
১৬টি মন্তব্য
অরুনি মায়া
আবারো মন খারাপ হয়ে গেল। হাসানের এই প্রতারণার কোন নাম আমি দিতে পারলামনা।
ভাল লেগেছে লেখাটি।
দীপংকর চন্দ
অনেক অনেক দুঃখপ্রকাশ অরুনি মায়া।
আমার কেবলই দেরি হয়ে যায়!!
মন্ত্যবের উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রেও সেই একই চিত্র!!
বিলম্ব ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
জানবেন শুভকামনা। অনেক।
ভালো থাকবেন। অনেক্। সবসময়।
অনিকেত নন্দিনী
হাসান না হয় দ্বিধান্বিত, না হয় সে লোভীই কিন্তু সানা? সে তো পরিণত ও শিক্ষিতা। একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের অবস্থান নিরাপদ রাখা তার দায়িত্ব – এইটা বলে দেয়ার পরেও সে কেনো অমন করে অবুঝ হবে?
হাসানেরা কখনোই কারো হয়না। এরা ফুলে ফুলে উড়ে মধু খেয়ে বেড়ায়। তারপরেও এই হাসানদের জন্যেই আয়েশা আর সানারা ভালোবাসা উজার করে দেয়, চোখের পানি ফেলে।
হায়রে ভালোবাসা!
অবাক ভালোবাসা, অবোধ ভালোবাসা। 🙁
দীপংকর চন্দ
//অবাক ভালোবাসা, অবোধ ভালোবাসা।//
ভালোবাসা সম্ভবত অবাক অবোধ অবুঝ হয় অনেক ক্ষেত্রেই!!
সম্পর্কের সততা মানুষের জীবনকে সুন্দর সৌন্দর্যময় করুক।
অনিঃশেষ শুভকামনা অনিকেত নন্দিনী।
ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন উত্তর প্রদানের দীর্ঘ বিলম্ব।
ভালো থাকবেন। অনেক ভালো। সবসময়।
অনিকেত নন্দিনী
তাই বলে সাড়ে তিন মাসের বিলম্বিত উত্তর! কী বুঝেছিলাম আর কী ভেবে মন্তব্য করেছিলাম, খেই হারিয়ে ফেলেছি।
দীপংকর চন্দ
হা হা হা হা
প্রতিমন্তব্যের দীর্ঘ বিলম্ব সম্ভবত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে!!
কিন্তু বারবার ক্ষমাপ্রার্থণা ছাড়া আপাতত কিছুই করার নেই যে আমার মতো একজন সামান্য মানুষের!
সুতরাং, ক্ষমাপ্রার্থণা এবং ক্ষমাপ্রার্থণা পুনরায়।
অপার্থিব
তুলনামুলক উন্নত ও শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থায় বেড়ে উঠার পরও মেয়েটির এমন নির্বোধ আচরন হতাশাজনক। মেয়েটি আবেগ প্রবণ, সম্ভবত একা , পরিবার বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে কতটুকু সম্পর্ক আছে কে জানে ? মেয়েটির দ্রুত মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
দীপংকর চন্দ
কৃতজ্ঞতা ভাই উপস্থিতিতে।
আপনার পর্যবেক্ষণ বাস্তবানুগ অনেকাংশে!!
তবে মানুষের মনের গতিপ্রকৃতি বহুবিচিত্র!!
মানুষ সম্ভবত ভাসমান হিমশৈলের মতো অনেকটা, যার সামান্যই দৃশ্যমান এবং সিংহভাগ অতল জলের অবগুণ্ঠনে ঢাকা!!
আমার শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন।
ক্ষমাপ্রার্থণা উত্তর প্রদানে দীর্ঘ বিলম্বের জন্য।
ভালো থাকবেন। সবসময়। অনেক ভালো।
ভোরের শিশির
খুব সম্ভবত এটাই বিবেচক সিদ্ধান্ত ছিল যা লেখক চরিত্রের মাধ্যমে জানিয়েছেন।
কথায় আছে ‘যে মেয়ে নিজের স্বার্থে অন্য মেয়ের ঘর ভাঙতে রাজী সেই মেয়েকে দিয়ে আর যাই হোক শান্তিতে ঘর করা হয় না।’ হয়তো সানা নিজেও অসহায় হয়েই এমন সিদ্ধান্তে এসেছে, হয়তো স্বার্থের বেড়াজালে ঠকতে ঠকতে এমন মানসিক স্থিতিতে এসেছে। তবে লেখক চরিত্রের মাধ্যমে দেখিয়েছেন কি হলে ভাল হয়।
প্রিয়তে নিলাম। এই ঘটনার তিনটি প্রকাশই প্রিয় তালিকায় রাখা হল।
শুভেচ্ছা জানবেন দাদা। -{@
দীপংকর চন্দ
//হয়তো সানা নিজেও অসহায় হয়েই এমন সিদ্ধান্তে এসেছে, হয়তো স্বার্থের বেড়াজালে ঠকতে ঠকতে এমন মানসিক স্থিতিতে এসেছে।//
আপনার চিন্তার গতিপ্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা অনেক!!
যে কোন পরিস্থিতির বিশ্লেষণে যিনি নিজস্ব বিচারবুদ্ধি, বিবেকের প্রতি সত্যনিষ্ঠ থাকেন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি হয় স্বাভাবিকভাবেই।
আমার শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন দাদা’।
ভালো থাকবেন, এবং ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন উত্তর প্রদানের দীর্ঘ বিলম্ব।
শুন্য শুন্যালয়
ভালোবাসা একটি মোহ, ঘোর। এতে কিন্তু কোন যুক্তিবিদ্যা চলেনা। জেনেশুনে কথায় প্ররোচিত হয়ে কত মেয়েরাই তো নিজেদের ক্ষতি করছে। কে কার কথাই বা ভাবছে? সানার জন্য কষ্ট হচ্ছে।
আপনার লেখার হাত অসাধারন দীপংকর, একটি কাল্পনিক গল্পকে এভাবে বাস্তবতায় ফুটিয়ে তোলা কঠিন, যদিও জানি এটা একটি বাস্তবতাই।
লেখকের কথা শুনে সানার মনের যে দ্বিধা আপনি ফুটিয়ে তুলেছেন, তাতে মনটা মমতায় ভরে গেলো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে তিনটি পর্বের জন্যই।
দীপংকর চন্দ
এটি কোন গল্প নয়
কিংবা গল্পই হয়তো!! ঠিক জানি না আমি!!!
আমার কষ্ট দুটি মেয়ের জন্যই যুগপৎ। তবে পক্ষপাত রয়েছে আয়েশার প্রতি অনেকটাই সামগ্রিক আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায়।
অত্যন্ত মনোযোগী পঠনে কৃতজ্ঞতা অনেক।
অনিঃশেষ শুভকামনা জানবেন।
উত্তর প্রদানে দীর্ঘ বিলম্ব ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন। অনেক অনেক ভালো। সবসময়।
আবু খায়ের আনিছ
শুধু নিরবে পড়ে গেলাম, শিখার এখনো অনেক বাকী আমার। ধন্যবাদ ভাইয়া।
দীপংকর চন্দ
সহমত ভাই।
জীবন আমাদের প্রত্যেককে প্রতিনিয়ত পরিচয় করিয়ে দেয় অপঠিত কতো অধ্যায়ের সাথে!!
শ্রদ্ধা জানবেন।
জানবেন শুভকামনা। অনেক।
ভালো থাকবেন। এবং ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন উত্তর প্রদানের দীর্ঘ বিলম্ব।
মৌনতা রিতু
হাসান এক নির্লজ্জ কাপুরুষের উদাহরন। সে এক নষ্ট মানুষ। সে ভালোবাসার মানেই জানে না।
সানার জন্য দুঃখ না, করুনা হয়, কারণ সে শিক্ষিত, সব বুঝেও অবুঝ। সে বুঝে শুনেই আয়শার মতো মেয়েদের ঠকাতে চেয়ে মূলত নিজেই ঠকছে।
দীপংকর চন্দ
ধন্যবাদ। অনেক।
সম্ভবত বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের অর্থ বহন করে জীবন!! কে যে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক, কিংবা বেঠিক, বুঝে ওঠা মুশকিল খুব!!
আমার শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন।
কৃতজ্ঞতা জানবেন উপস্থিতিতে।
ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।