ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা শেষ করে আজ ব্যাংকে চাকরি করছে সাচ্চু। বেশ ভালো বেতনও পাচ্ছে, ছেলের চাকরি হওয়ায় বাবা মা স্বস্তিতে। এখন বিয়ে দিয়ে ঘরে একটা সুন্দর বউ আনবেন এমটাই আশা করছেন। আর সেই কারণেই ছুটিতে বাড়িতে এসেছে সাচ্চু। বাড়িতে পৌছেই বাল্য বন্ধুদের সাথে দ্যাখা করতে পুরাতন আস্তানায় হাজির।
কিরে দোস্ত তোরা কেমন আছিস? আম বাগান এখনো ছাড়তে পারলি না?
বন্ধুদের সাথে বুকে বুক রেখে বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে ব্যস্ত সাচ্চুর বন্ধুদ্বয় রাশেদ ও জুয়েল। এতোদিন পর বন্ধুকে কাছে পেয়ে খুব উল্লাসিত রাশেদ ও জুয়েল। হাসিমুখে রাশেদ সাচ্চুকে জিজ্ঞেস করলো —
– তা তুই কোনদিন বাড়িতে আসছিস? জানতেও পারলাম না।
রাশেদের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল বলে উঠলো –
— আরে তুই খবর জানিস না, সাচ্চুর নতুন জীবন শুরু হতে যাচ্ছে, কোরবানি হবে অতিশীঘ্রই। তখন দেখবি ভুলে যাবে আম বাগান, আঁচল বাগান পেয়ে আমাদেরও ভুলে যেতে পারে। আর তাই তো ছুটিতে এসেছে।
রাশেদ- কি বলিস? জানতে পারলাম না, এই তাহলে বন্ধুত্ব? মানুষ স্বাবলম্বী হলে আর ভালো চাকরি করলে এমনি হয়ে যায়।
সাচ্চু – আমি না হয় দূরে থাকি, স্বার্থপর হয়ে গেছি তা তোদের কাছে তো আরেক বন্ধু থাকে, তাকে তো দেখছি না। ওর কথা শুনে তো অবাক হয়েছি বিসিএস এ টিকেও নাকি চাকরি করছে না।
রাশেদ–তুই কার কথা বলছিস, আমাদের রুদ্রের কথা?
সাচ্চু – হু রুদ্র, ও তো বাড়িতেই থাকে শুনলাম।
রাশেদ- হু, ওর থাকা আর না থাকা, শিক্ষিত হয়ে কৃষক হয়ে গেছে, দেশকে বদলাতে চায়, গ্রামকে আলোকিত গ্রাম বানাতে চায়। জমি, গ্রামের মানুষ আর কৃষক এখন তার বন্ধু। কি আর বলবো, শিক্ষিত পোলা তুই ভালো চাকরি করবি, ভালোভাবে থাকবি এমনটাই তো চাই। হাজার হলেও আমরা সবাই বাল্যকালের বন্ধু। বন্ধুদের কেউ ভালো পজিশনে থাকলে বন্ধুদেরই তো ভালো লাগার কথা। কিন্তু না তিনি যে বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করেছেন সে বিষয়ে চাকরি না হলে অন্য বিষয় নিয়ে চাকরি করবে না, তুই বল — বিসিএস-এ টেকা কি সহজ কথা? হাতে সে সেই সোনার ডিম পারা হাঁস পেয়েও তিনি করবেন না; তাকে কৃষিকর্মকর্তা বানাতে হবে। বল এটা কোনো যুক্তির কথা হলো। তোর কথাই বলি মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করে তুই ব্যাংকে চাকরি করছিস, কি সমস্যা। হয়তো তুই কোনো বিসিএস ক্যাডার হতে পারিসনি তাই বলে পাওয়া চাকরি কেউ হারায়?
সাচ্চু – ওসব কথা বাদ দেয় তো, বন্ধু যদি বাল্যকালের বন্ধুদের ভুলো যায় তাহলে তার থেকে দূরে থাকাই ভালো। হয়তো ভালো ছাত্র বলে নিজেকে নিয়ে গর্ব করে আর ভাব ধরে চলে এমনটাই হবে। বাদ দে ওর কথা।
জুয়েল- বন্ধু তোরা দু’জন কিন্তু একটু বেশি বলে ফেলছিস, রুদ্রের গর্ব নেই যদি গর্ব থাকতো তাহলে চাকরিই করতো, কৃষক হতো না কিংবা গ্রামের মানুষের জন্য ঝাপিয়ে পড়তো না। গ্রামের মানুষ বিপদে পড়লে ওর কাছেই আগে যায় পরামর্শ নিতে।
রাশেদ – এসব কথা বাদ দে, ভালো লাগে না। সাচ্চু অনেকদিন পর এসেছে ওর সাথে একটু সুখ দুখের কথা বলি। দোস্ত এনে বসতো, তোকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করি। তা মেয়েটি দেখতে ক্যামন, কোথায় বাড়ি, পড়ালেখা কতদূর, বর হিসেবে কি কি পাচ্ছিস?
২০টি মন্তব্য
তৌহিদ
রুদ্র আমীন ভাই দীর্ঘদিন পরে সুন্দর একটি লেখা নিয়ে এলেন। ভালো লাগছে সত্যি। আসলে আমরা সবাই পড়ালেখা করে চাকুরী করতে চাই। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। নিজে উদ্যোক্তা হবার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তবে আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থান অনেকাংশেই বাঁধা হিসেবে কাজ করে। সরকারের উচিত যারা টেকনিকাল দিকগুলি আরও সাবলীল করা।
আমরা পড়াশুনা করি এক বিষয়ে চাকুরী হয় অন্য খাতে। এটাও একজন মেধাবীরর মেধায় অপচয় বলে মনে করি। গল্পে সুন্দর কিছু ম্যাসেজ আসবে আশাকরি।
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিন দাদা। অপেক্ষায় রইলাম।
রুদ্র আমিন
আমাদের দেশ দিনে দিনে পিছেয়ে পড়ছে শুধু একটাই কারণ, তা হলো বিষয়ভিক্তিক পড়ালেখার অপব্যবহার চাকির ক্ষেত্রে। কৃষি নিয়ে পড়ালেখা করে আমাকে দেয়া হচ্ছে আইন বিভাগে। একজন মেধাবী সে কোন বিষয়ে মেধাবী সেটার কোনো লক্ষ্যই নেই আমাদের।
মনির হোসেন মমি
গল্পের কথায় পরে আসছি।আগে আপনাকে সোনেলায় আবারো আসার জন্য,সোনেলা পরিবারকে মনে রাখার জন্য খুব করে অভিনন্দন ও শুধ কামনা জানিয়ে নেই। অভিনন্দন ও শুভ কামনা।
এক সময় সোনেলা আপনাদের নিয়েই ছিলো সাহিত্যে আড্ডায় মুখরিত।ব্যাস্ততায় আজ আপনাদের মত আরো অনেককে হয়তো তেমন ঘটা করে পাবো না কিন্তু মাঝে মাঝে এমন লেখা দিয়ে আর্শীবাদ যেন থাকে সব সময় এটাই আমাদের কামনা। শুভ ব্লগিং।
“কৃষি ও কৃষকের গল্প”
শুরুটা পাঠককে অনেক ভাবিয়ে তুলবে নিশ্চিত।দেশের মায়ায় একজন বিসিএস চান্স পাওয়া যুবক চাকুরী না করে গ্রামেে থেকে যাওয়া এটা এ সময়ের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।যেখানে একটু সূখের আশায় শহরমূখী হয় আর গল্পের হিরো কিনা গ্রামমূখী গ্রামের কাদামাটিতে জীবন যাবনে প্রতিজ্ঞ।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।
নিতাই বাবু
ভালো লাগলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
রুদ্র আমিন
অবশ্যই প্রকাশিত হবে, আজ প্রকাশ করেছি ২য় পর্ব।
নিতাই বাবু
মন্তব্যের রিপ্লাই কিন্তু অনেক দেরিতে দিলেন। আমাদের সকলেরই জানা উচিৎ, ব্লগে, ফেসবুকে কেউ কারোর পোস্টে মন্তব্য করে পোস্টদাতার রিপ্লাইয়ের অপেক্ষায় থাকে। রিপ্লাই দিতে যদি দেরি হয় বা রিপ্লাই না করে তো মন্তব্যদানকারীর মনঃকষ্ট হয়। বিষয়টি আমাদের সকলের ভেবে দেখা উচিৎ বলে আমি মনে করি। আবার এতে আমার ভুলও হতে পারে। ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
রুদ্র আমিন
এটা ঠিক কথা বলেছেন দাদা। পোস্ট করে তড়িৎ মন্তব্য পাওয়া যায় না তাই চলে যেতে হয়, ফিরে এসে মন্তব্য পেলে সেই মন্তব্য মন্তব্য করি। আসল কথা হলো সবাই তো পেটের চিন্তায় দৌড়ের উপর থাকি।
ইঞ্জা
লেখাটি বেশ এগুচ্ছিলো, নিশ্চয় এর পরবর্তী পর্ব আছে, অপেক্ষাতে রইলাম।
রুদ্র আমিন
হু, ৬ পর্বে প্রকাশিত হবে।
ইঞ্জা
আজ দেখলাম আরেক পর্ব দিয়েছেন, সময় করে পড়বো।
সাবিনা ইয়াসমিন
২০১৫ইং এর পর ব্লগে ফিরলেন! সুস্বাগতম আপনাকে রুদ্র। শত ব্যাস্ততার মাঝে থেকেও ভুলেননি সোনেলাকে, ফিরেছেন। আমাদের জন্যে লিখেছেন, এটা আমাদের যারপরনাই উৎসাহিত করেছে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
রুদ্র আমিন
সবটাই ভালোবাসা, আপনাদের ভালোবাসাতেই ফিরে আসা। ভালোবাসাকেই আমি অক্সিজেন বলে মানি।
সাবিনা ইয়াসমিন
বাহ! দারুন বললেন। ভালোবাসা অক্সিজেন এর বিকল্পই হবে। ভালোবাসা হীন পৃথিবী কবরস্থান ছাড়া আর কিছু নয়। নেক্সট পর্ব গুলো পড়বো। 🙂
আরজু মুক্তা
যে যার অবস্থান থেকে ভালো কিছু করলেই হলো। ভালো চিন্তা জাগ্রত হোক সবার মনে!
রুদ্র আমিন
ঠিক তাই
শাহরিন
মনোবিজ্ঞান পড়ে ব্যাংকে চাকরি পাওয়া কঠিন ব্যাপার স্যাপার। গল্পের বিষয়বস্তু ভালো লেগেছে। নতুন পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ।
রুদ্র আমিন
বর্তমানে কঠিন নয়, প্রথম মার্কেটিং এ চাকরি হবে এর লোন বিভাগে…. কিন্তু সেই ছাত্রটি কি তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে? আমার মনে হয় না।
মোঃ মজিবর রহমান
হায়! আমিন ভাই, আছেন কেমন? এতো সুন্দর লেখা আমাদের বঞ্চিত করেন কেন? পরের পরবে কথা হবে।
রুদ্র আমিন
বঞ্চিত করিনি তো ভাই, বঞ্চিত করলে তো এখানে পড়তে পারতেন না। যাই হোক, আমি ভালো আছি। আপনি ভালো তো..
মোঃ মজিবর রহমান
আমার বরতমানে চাকরি নাই। গ্রামে অসহায় হয়ে ব্বকার আছি