গত দশদিন যাবদ ভুগলাম সর্দি, হাঁচি, জ্বরও কাশিতে। সেই ছোট্টবেলায় পড়েছিলাম সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ভবঘুরে ও অন্যান্য বইটিতে — সর্দিকাশি ঔষধ খেলে একসপ্তাহ না খেলে সাত দিন। — এই কথাকে বিশ্বাস করে আশায় বুক বেঁধে রেখেছিলাম সাতদিন, মাত্র সাতদিন। আজ দশদিন পর কিছুটা কম তবে পুরো ভাল হতে অনেক সময়ই লাগবে। এই সর্দিগর্মি খুব সাধারণ খুব সামান্য রোগ হিসেবে পরিচিত। এটা এত্ত সাধারন যে কাউকে বলতে লজ্জা লাগে। চারিদিকে কত বড় বড় রোগ, তাদের গালভরা নাম। তাদের কি দাপট? ডাক্তারদের নামের পাশের টাইটেল দেখে ডাক্তার নির্ধারণ করা হয়। যে ডাক্তারের নামের ল্যাঞ্জা বড় সেই ডাক্তারের ভিজিট তত বড়, তার রুগীও লম্বা, তার দেখা পাবার সময়ও লম্বা, যদিওবা পেলেন তবে ডাক্তারের কৃপা দৃষ্টি আপনার প্রতি পাঁচ সেকেন্ডের বেশী হলেই আপনি কৃতার্থ। আপনার রোগের বিররণ কয়েকটি প্রশ্নে জেনে নেন ছোট ডাক্তার (অনেক ক্ষেত্রে কম্পাউন্ডার) এবং তারপর শত আবেগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে আপনার কথা বলতে না পেরে চিপসা বেলুনের মত ফিরে আসেন। অনেক সময় নিজে বোঝার আগেই নিজেকে অপারেশন টেবিলে আবিষ্কার করেন। আপনার ব্যাথা যুক্ত অঙ্গটির যত কাজই থাক তা ঔষধে ভাল হবার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যেহেতু ডাক্তার তার রুগী কমাতে চান তাই কেটে বাদ। কিন্তু আমি এমন এক রোগে পর্যদুস্ত যে রোগের কথা কাউকে বলা যায় না, ডাক্তারের কাছে যাওয়াতো দূরের কথা। নিদেনপক্ষে পাড়ার ঔষধের দোকানের পিচ্চি ছোকরাকেও বলাটা লজ্জাস্কর।
চারিদিকে প্রচন্ড গরম, সেই গরমে আপনি ঘামছেন কিন্তু ফ্যানের নিচে দু মিনিট থাকলেই নাকের ভিতর ঠান্ডা হতে হতে ব্যাথা শুরু, নাকের ক্রমাগত জল সেই ঠান্ডা বাড়িয়ে দিচ্ছে, সেই সাথে চোখের নোনা জল অবিরাম দৃষ্টি ঝাপসা করে দিয়ে ঝড়ে চলছে। চোখের কোনা ও কানের ভিতরের চুলকানির সীমাহীন নির্লজ্জতায় দাপাদাপি করছে। কোন কারন ছাড়াই প্রতি ছয় মিনিট পরপর বিরতিহীন ভাবে দেড়ডজন হাঁচি। নাকের পানি মুছতে মুছতে নাকের চামড়া স্থানচ্যুত হবার জলুনি আর চোখ চুলকাতে চুলকাতে রক্তবর্ণ আঁখির খুনি দৃষ্টি নিয়ে ঝপসা চোখের আস্ফলন। কর্ণকুহরে যে জোড়া শালিকের কৃত্তন চলছে তা থামাতে তর্জনির বারবার সঘন উপস্থিতির প্রমান সরূপ শালিকের অবস্থানের অনেক দুরেই কর্ণদুয়ারেই ক্ষত সৃষ্টিকরণ প্রক্রিয়া সমাধা।
আমি নিজেই এসি বা ফ্যান বন্ধ রাখতে নারাজ কারণ নাক ছাড়া সর্বোত্র দাবদাহ বিরাজমান এবং গৃহ শান্তির লক্ষ্যে ফ্যান ও এসি বন্ধের নিরুপায়ত্ব অনুধাবন। যদিও ঠান্ডা পানি থেকে নিজেকে বিরত রাখার সচেষ্ট ছিলাম তবুও সারাদিনের রোজার পর একটু শীতল জল সবারই কাম্য। থাক তবে এবারে সর্দিকাশির সাতকাহন।
সেই সাত বছর আগে এক গভীর রাত। রাত দুটো আড়াইটে। চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। সেই শব্দের সাথে মিশে আসছে শিয়াল বাগডাসার সতর্ক পদস্থাপন। হঠাৎ বালিশের পাশে রাখা ট্যাবে ম্যাসেজ সংকেত। খুলে দেখি এক প্রিয় ব্লগারের ম্যাসেজ জ্বলজ্বল করছে। তার সাথে কথোপকথন কখনই হয়নি। যা হয়েছে তা ব্লগে মন্তব্যের ঘরে।
আপনি ব্লগার রুনা?
জ্বী।
কেমন আছেন?
ভাল আছি, আপনি কেমন আছেন? আশ্চর্য আপনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ? আমি জানিই না—————-_—
-আমার ব্লগে লিখবে রুনা, একটা ব্লগ খুলবো।
– অবশ্যই
– তবে একটু অপেক্ষা কর ব্লগটা তৈরি করি। একটা নাম দেই, একটা নাম দাও তুমিও—_—
শুরু হলো আমার সোনেলায় থাকা। আমি আর কি নাম দেব? কিন্তু সোনেলা আমাকে নিজের করে নিল।আমি সোনেলায় থাকলাম নিজস্ব আসনে। সেখানে বসে থাকলেও আমি আছি না থাকলেও আমি আছি। এ আমার সদম্ভ উচ্চারণ #সোনেলা-আমার।
এই সোনেলায় এটি আমার পঞ্চাশতম পোস্ট। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। আর সোনেলার জন্য একবুক ভালবাসা।
১৬টি মন্তব্য
ইঞ্জা
পঞ্চাশতম পোস্টের জন্য অভিনন্দন আপু, দ্রুত সুস্থ হিয়ে উঠুন।
খসড়া
সুস্থ হতে সময় লাগছে, একবার রান্নাঘর একবার বাজার একবার এসির মধ্যে — কেমনে সুস্থ হই
ইঞ্জা
আল্লাহ্ ভরসা আপু
মোঃ মজিবর রহমান
দ্রত আরোগ্য লাভ করুন। শুভেচ্ছা রইলো হাফ সেঞ্চুরীর জন্য।
\|/
খসড়া
ধন্যবাদ
মোঃ মজিবর রহমান
(y)
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
অবশ্য রসিকতাও কম হয়নি আপনার এই খসড়া নামটি নিয়ে।ভাইয়া আপু সমান তালেই চলেছিল।অভিনন্দন ফিফটির জন্য। -{@ ভাল থাকবেন সব সময়।
খসড়া
আসলে সবই মজা করবার জন্য, মজাই জীবনের অন্যতম রসদ।
জিসান শা ইকরাম
সর্দি জ্বর কমে যাক, সামান্য এক অসুখে চরম অবস্থা হয় সবার।
অল্প কথায় আমাদের চিকিৎসার অবস্থাও বুঝিয়ে দিলেন ফান এর মাধ্যমে।
কাছের কিছু লোকের বিশ্বাসঘাতকতা, মিথ্যে অপবাদে যখন অতিষ্ঠ, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঐ ব্লগে আর নয়, নিজস্ব একটি লেখার স্থান তৈরী করবো, যে স্থানটি হবে সবার। যে স্থানটির মালিক সবাই। সবাই যেন বলতে পারে এটিই আমার ব্লগ যেমন আপনি বললেন ‘ সোনেলা আমার।’
কিছুটা স্মৃতি কাতর হয়ে পড়েছি আপনার এই কথা গুলো পড়ে। আমাকে যখন অপমানিত করা হচ্ছিল, মিথ্যে অপবাদ দেয়া হচ্ছিল, চলে এলাম সেই ব্লগ থেকে। আরো অনেকের মত আপনিও চলে এলেন, আমার প্রতি যে আস্থা তা প্রমান করেই চলে এলেন।
সোনেলা প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে আপনি আছেন এর সাথে। মাঝে মাঝে হতাশ হতাম প্রথম দিকে। উৎসাহ দিতেন এই বলে, একদিন আমাদের এই সোনেলা অনেক বড় হবে, মাত্র কয়েকজন সোনেলাকে লালন করে সন্তানের মত শিশু থেকে ধীরে ধীরে বড় করলেন। আপনার আস্থা, উৎসাহ, জেদ না থাকলে সোনেলা এই অবস্থায় আসতে পারতো না।
সোনেলার যে কোনো প্রগ্রাম নিজের মত করেই আপনি সাজিয়েছেন, জানি যে ভবিষ্যতেও আপনি সোনেলার যে কোন দায়িত্ব নিজের ভেবেই কাঁধে তুলে নিবেন।
আপনার ৫০ তম পোষ্টের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন -{@
আমরা যেন ভবিষ্যতেও একসাথে চলতে পারি- সত্য সুন্দর নির্মলতাকে সাথে নিয়ে।
খসড়া
আপনার মন্তব্যের পর আর কিছু বলার নেই। ধন্যবাদ ভাই।
মৌনতা রিতু
তোমার নাকের এই অবস্থা!
আমারও এমন হতো। ফ্যান ছাড়লে নাক শিরশির করে আর একটার পর একটা হাঁচি। সে কি হাঁচি! গগনও ফেঁটে যাবে এমন অবস্থা।
আজ তোমার পঞ্চাশতম পোষ্ট!
তোমার আর জিসান ভাইয়ার হাত ধরে আমার ব্লগে আসা। শুধু বললে,”তুমি পারবে লিখতে, মনের সবকথা গুছিয়ে লিখে ফেলো।” সেই থেকে এই সোনেলার বুকে আমার লেখার চেষ্টা।
তুমি একটা কথা জানো? যখন কাউকে খুব উদাস উদাস কথা বলতে শুনি, চিন্তা করি তোমার সংস্পর্শে আসলে প্রাণফিরে পেতো মানুষটি।
কতো সুন্দরকরে তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে পারো। এই আমি জীবনকে নতুনকরে ভাবতে শিখেছি।
অনেক ভালবাসি তোমাকে, তার থেকে বেশি শ্রদ্ধা করি।
ভালো থেকো, ভালো রেখো আমাদের এমনকরে।
খসড়া
তোর তো রোজা রেখে ১২টা বেজে গেছে। কয়টা স্যালাইন নিলি।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এ পোষ্টে বুঝতে পারলাম সোনেলা জন্মের না বলা আরেক অজানা ইতিহাস।সোনেলাতে যেদিন লেখা শুরু করি আপনার মতন আরো বেশ কজন মানুষের আন্তরিকতায় আমি আজ লিখছি বা লিখতে পারছি।বলতে পারি জানা থাকলেই লেখা যায় না লিখতে কৌশল লাগে লাগে ভাষাগত জ্ঞান যা আমি এ ব্লগ হতেই পেয়েছি বলা যায় আমার লেখার গুরু এই সোনেলার আপনারা।
এক সময় কোন মানুষের মৃত্যু হলে আমার চোখ দিয়ে আমার অজান্তেই টপ টপ করে জল পড়ে,,,,অতি সুখে কাতর হয়ে এখন কারো মৃত্যু হলে চোখের টপ টপ করে মাটিতে পড়ে না ভাবি এটাই স্বাভাবিক এটাই নিয়ম,তাই আমার মন এখন আর কষ্টের সাগরে ভাসে না কিন্তু যদি কখনো এ সোলেনা দরজা বন্ধ হবার কথা শুনি তখন মন ফিরে যায় পূর্বাবস্থায়।
আশা করব কেউ না কেউ এ সোনেলাকে বাচিয়ে রাখবে আমার মৃত্যুর পরও।কবর হতেও যেনো বলতে পারি এ সংসার আমার আমাদের …মন খুলে কথা বলার খসড়া খাতা।
সবার মঙ্গল কামনা
-{@
খসড়া
অপূর্ব লেখনি। এমন হৃদয় ছোঁয়া মন্তব্য আবেগতারিত করে।
তৌহিদ ইসলাম
অভিনন্দন আপু, অনেক শুভকামনা রইলো। সুন্দর প্রকাশ।
খসড়া
ধন্যবাদ