পানি সিদ্ধ করা খুব সহজ মনে হলেও আসলে মোটেই তা নয়। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে,
* কেন আপনি পানি সিদ্ধ করবেন?
* পানি ফুটিয়ে পান করেন আপনি? এই পানিতে আপনি কি টি ব্যাগ দিয়ে চা বানাবেন?
* কী পানি সিদ্ধ করবেন? পুকুর,নদী,সাপ্লাই,টিউব ওয়েলের?
* কোন চুলায় সিদ্ধ করবেন? কাঠের চুলায়,গ্যাসের চুলায়? [এখানে আবার প্রশ্ন- কোন গ্যাস? * সিলিন্ডারের গ্যাস নাকি তিতাস   গ্যাস? সিলিন্ডারের আবার বিভিন্ন কোম্পানি আছে, কোনটার  দাম বেশী/কম আছে],কয়লার চুলায়?
* কী পাত্রে সিদ্ধ করবেন? পাতিলের সাইজ এর প্রশ্ন চলে আসতে পারে। অল্প পরিমানে পানি সিদ্ধ করার জন্য ঠিক কোন সাইজের পাতিল ব্যবহার করবেন। এক গ্লাস পানি সিদ্ধ করার জন্য আপনি বিশাল ৫ কেজি চালের পাতিলে সিদ্ধ করতে পারেন, কিন্তু তা কি ভালো দেখাবে?
এমনি আরো প্রশ্ন এসে ভীর করতে পারে। আর কী প্রশ্ন থাকতে পারে সে প্রশ্ন না হয় করলাম না।

পাত্রে পানি দিয়ে আপনি চুলার উপর দিলেন। হবে সিদ্ধ? হবে না। কী করতে হবে? আগুন জ্বালাতে হবে। আবার এখানে প্রশ্নঃ কীভাবে আগুন জ্বালাবেন?
* আপনি কি গ্যাসের চুলায় অটো যে লাইটার আছে তা দিয়ে চুলা জ্বালাবেন?
* অটো লাইটার নেই? তাহলে লম্বা নল ওয়ালা গ্যাসের লাইটার দিয়ে জ্বালাবেন?
* নাকি দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালাবেন।

আচ্ছা দিয়াশলাই এবং আগুনের ইতিহাস কি আপনার জানা আছে ? আপনার হয়ত মনে পরে যাবে এখনঃ
আমাদের সভ্যতাকে আজকের পর্যায়ে পৌঁছে দিতে আগুনের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কখন থেকে আগুনের ব্যবহার শুরু হয়েছে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ নিয়ে অনেক গল্প এবং উপকথাও প্রচলিত আছে।
প্রাচীন গ্রিক পুরাণের গল্প কাহিনীতে আগুনঃ মানুষের ব্যবহারের জন্য প্রমিথিউস প্রথম স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে এনেছিলেন। দেবতাদের অগোচরে আগুন আনার অপরাধে স্বর্গের দেবতা জিউস অভিশাপ দেন প্রমিথিউসকে। সেই অভিশাপে ককেশাস পর্বতে বন্দি হয়েছিলেন প্রমিথিউস।
আগুনকে দিয়াশলাইয়ের মাথায় বন্দি করে পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ইতিহাস তেমন প্রাচীন নয়। দিয়াশলাই শব্দের উত্পত্তি সংস্কৃত দীপশলাকা—হিন্দি দিয়াশলাই থেকে। দিয়াশলাই তৈরির চেষ্টা শুরু হয় ১৬৮০ সালে। হামবুর্গের হেজিস ব্র্যান্ড সাদা ফসফরাস আবিষ্কারের পর আয়ারল্যান্ডের রবার্ট বয়েল দেখতে পান যে, সাদা ফসফরাসের সঙ্গে গন্ধক মিশালে মিশ্রণটি জ্বলে উঠে আগুনের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এতে রাসায়নিক বিক্রিয়া তীব্র হয়। আগুনও নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হয়। এ কারণে এ পদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়।

১৮২৮ সালে লন্ডনের স্যামুয়েল জোম্বা ক্লোরো পটাশ নামে গাঢ় সালফিউরিফ এসিডের বিক্রিয়া ঘটিয়ে দিয়াশলাই তৈরি করেন। প্রমিথিউসের স্মরণে নাম রাখেন প্রমিথিয়াল ম্যাচ। স্যামুয়েলের দিয়াশলাইতে ছোট কাচের বিডে আলাদা-আলাদা খোপে এসিড আর রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত কাগজ থাকত। আগুন জ্বালানোর প্রয়োজন হলে ওই বিডটি ভাঙতে হতো। এতে মিশ্রণটিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া হতো। ফলে কাগজে আগুন ধরে যেত।
একই সময়ে ইংল্যান্ডের জন ওয়াকার পটাশিয়াম ক্লোরেট এবং অ্যান্টিমনি সালফাইডের মিশ্রণে ঘষে ব্যবহারের উপযোগী প্রথম দিয়াশলাই লুসিফার তৈরি করেন। এরপর ১৮৩০ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী শার্শ সোটিয়া সাদা ফসফরাস দিয়ে তৈরি করেন ঘর্ষণ দিয়াশলাই। এ দিয়াশলাইয়ের সুবিধা এবং অসুবিধা দুটিই ছিলো। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াতে এ দিয়াশলাই জ্বালানো গেলেও পকেটে রাখা যেত না। একটু বেশি তাপ মাত্রাতেই (৩৫হ্ন সে.) নিজে নিজে জ্বলে উঠত এ দিয়াশলাই। এর ধোঁয়া ছিলো বিষাক্ত। এরপর ১৮৪৫ সালে আন্তনভন স্ক্রুটারের ‘লাল’ ফসফরাস আবিষ্কার করেন। এটি ছিলো এক যুগান্তকারী ঘটনা। কারণ এটি দাহ্য হলেও বাতাসে জ্বলে উঠত না। আর এর বিষক্রিয়াও ছিলো কম। লাল ফসফরাস ব্যবহার করার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় সাদা ফসফরাসের দিয়াশলাই। এর প্রধান কারণ সাদা ফসফরাসের দিয়াশলাই ব্যবহারে কারখানা কর্মীরা দাঁতের ও চোয়ালের রোগে আক্রান্ত হতো। ১৮৫৫ সালে নিরাপদ দিয়াশলাইয়ের প্রচলন করেন সুইডেনের জে.ই.লুন্ডস্ট্রম।

মানুষের হরেকরকম শখের মধ্য দিয়াশলাইয়ের বাক্স ও মার্কা জমানো অন্যতম একটি শখ। ১৯৯২ সালে জাপানের তেইচি ইয়েসি জাওয়া ৭৫ বছর ধরে ১৫০টি দেশের ৭ লাখ দিয়াশলাই মার্কা জমিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লিখিয়েছেন। দিয়াশলাইয়ের বক্স ও মার্কা জমানোর শখকে বলা হয় ‘ফিলুমেরি’। যারা এগুলো সংগ্রহ করেন তাদের বলা হয় ফিলুমেনিস্ট।

দিয়াশলাই ও আগুন নিয়ে কত কিছু মনে পরে গেল আপনার। ক্লান্তির ছাপ আপনার চোখে মুখে। আরে আপনি এখন ল্যাপটপ অন করলেন? গান শুনাবেন? ক্লান্তি দূর করাবেন আমাদের? আচ্ছা শুনি গান…… আমরাও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি —
আরে এইডা কি গান শুনাইতেছেন?
আমি দিয়াশেলাই ,ছুইলে আগুন হয়ে যাই
ছুইয়ো না ছুইয়ো না ছুইও না — ছুলে পুড়ে হবে ছাই

* একটা দিয়াশেলাই কাঠি জ্বালাও … তাতে আগুন পাবে … আহ হাক আহ হাক
এটি অবশ্য আশা অত্যন্ত জনপ্রিয় গান 🙂

একটা দিয়াশেলাই কাঠি জ্বালাও– তাতে আগুন পাবে —আহ হাক আহ হাক —
পাবেনা পাবেনা তুমি আমায় আর পাবেনা
আশার গানটিই হাবিব ফিট নির্ঝরের মাঝে একটু ভিন্ন ভাবে।

আচ্ছা কি নিয়ে জানি এই পোষ্ট? ভুলে গিয়েছি আসলে। দেখি মনে পরলে আগামী পর্বে লিখবো আবার। ততক্ষনে একটু ব্রেক 🙂

 

 

 

৯৮৮জন ৯৮৮জন
0 Shares

৪৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ