বাস ষ্টেসনে এসে অপেক্ষা করাটা ভীষণ বোরিং লাগে। বার বার ঘড়ি দেখা। কতক্ষন পরপর যাত্রী ছাউনীর ওপারে রাস্তায় নজর চলে যায়। এই বুঝি এলো পথের বাঁক ঘেসে চাকার কর্কশ শব্দ আর ভেঁপু বাজিয়ে। ১০ মিনিটের যাত্রাবিরতির ফাঁকে এই ষ্টেসনের জনা বিশেক যাত্রী নিয়ে বাস ছুটবে ঢাকা ছেড়ে দক্ষিনাচঞ্চলের পথে। এবার একাই যাচ্ছি বরিশাল। সঙ্গী সাথীরা আগেই চলে গেছে। এনজিওর কাজে মাঠ পর্যায়ের কাজে এবার যেতে হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামে। একটা ছোটখাটো দুঃশ্চিন্তা ছাড়া আর কোনো অস্বস্তিবোধ হচ্ছেনা এই একা যাত্রায়। পাশের সিটে কোনো বিরক্তিকর যাত্রী না উঠলেই দীর্ঘ পথ নির্বিঘ্নে পার হওয়া যাবে। সাড়ে ন’টায় বাস এসে ৯:৫০এ যাত্রা শুরু । জানলার কাছেই সিট পাওয়াতে খুশিতে চনমন করে দুলাইন মনে মনে রবীন্দ্রনাথের গীত গেয়ে উঠলাম। আব্দুল্লাহ্পুর পর্যন্ত পাশের সিট খালি। ১০ মিনিটের যাত্রাবিরতি এখানেও। নেমে শুকনো কিছু খাবার আর কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে নিলাম। বাস এবার বিরতিছাড়াই চলবে আরিচা পর্যন্ত। কানে হেডফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে গানে ডুবে গেলাম হইহট্টগোলের হাত থেকে কান শব্দ দূষনের রক্ষার্থে। কিছুক্ষনের মধ্যে চলতে শুরু করলো বাস।
টের পাচ্ছি পাশের সিট কারো দখলদারিত্বে চলে গেছে। ভ্রুক্ষেপ ছাড়াই নির্বিকার রইছি।
হঠাৎ অকারনে অস্বস্তি ফিল করছি, কারন বুঝতে পারছি না।
চলতি পথে এরকম এর আগেও হয়েছে, একজোড়া চোখ যখন সেঁটে থাকে আমার দিকে, না তাকিয়েও বোঝা যায়- কেউ আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। সেরকম অনুভূতি বন্ধ চোখে দেখতে পাচ্ছি। গানে আর মন নেই,
কান নেই। হেডফোনের বাটন চেপে অফ করে রাখলাম গান। মাথা পেছনের সিটে এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি চুপচাপ নির্বিকার।
: আমি কিন্তু আপনাকে দেখতে পাচ্ছি…
– তো?
: আমরা সহযাত্রী
– তো? পরিচিত হবার কোনো দরকার দেখিনা।
: আপনি এখনো চোখ বন্ধ করেই কথা বলছেন।
– আপনিও চোখ বন্ধ রেখে গান শুনুন বা নিজের ভাবনায় ডুব দেন।
: আপনি কী এভাবেই কথা বলেন কোনো অপরিচিতের সাথে?
– আমিও আপনাকে একই প্রশ্ন করতে পারি!
: করো, চোখটা খুলে প্রশ্নটা করতে পারো কিনা দেখো!
আপনা থেকেই চোখ খুলে গেলো।
— কতটা সময় মাঝখান থেকে নাই হয়ে গেছে গুণে বলতে পারবে?
: তবুও নদী আজো নদীই রয়ে গেছে, যেমন বদলে যায়নি আকাশ!
— কিন্তু…..
: এবার মাঝখান থেকে সরে যাবার সময় হয়েছে এই ‘কিন্তু’ নামক যুক্তাক্ষরের।এসো তুমি- আমি দুজনেই সরিয়ে দেই এই ‘কিন্ত’ টাকে।
বাস ছুটছে একটা দীর্ঘ পথের শেষে গন্তব্যে পৌঁছুবে বলে…..।
৩৬টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
প্রথম হলাম। বোধগম্য হতে একটু সময় নেবে। কাল আবার পড়ব।
বন্যা লিপি
প্রথম হবার জন্য মেডেলটা খুঁজে পাচ্ছিনা…..🌹🌹🌹 এ ফুলগুলো আপনার জন্য। আপনার বোধগম্যের অপেক্ষায় থাকলাম কিন্তু!!!
রোকসানা খন্দকার রুকু
মেডেল খুঁজুন। আমার চাই সেটা যেভাবেই হোক। না হলে দুষ্টুমি করতেই থাকব।
আপনিটা যখন তুমি হয় তখন সে মানুষটা একসময়ের খুব কাছের। হঠাৎ কিছু একটা দুজনকে দুদিকে নিয়ে গেছে। হয়ত এভাবে পাশাপাশি সিটে বসার প্রত্যাশা ছিলনা। তারপরও বসে অনেক পুরোনো ভালোবাসা বা ভালোলাগা যেটাই বলি ফিরে আসতে চাইছে।
সেটা সম্ভব নয় সময় যে গড়িয়ে গেছে। আর কিন্তু তো বর্তমান।
হাপায় গেলাম। এর চেয়ে আর ভালো পারিনা॥
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জানতে ইচ্ছে করছে মেডেলটা কি বাঁশের তৈরি? তাহলে ভালো লাগতো বেশি।
বন্যা লিপি
আপনার বোধ একটুখানি পিছলে গ্যাছে। বাকি সবটুকু ঠিকঠাক আছে। মেডেলটা আমি দিতে চাই প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে। লেখা পড়ে কি বুঝলেন / আর কি মন্তব্য করলেন? সে বিষয়ে মেডে / কাপ ভবিষ্যতের জন্য তোলা রইল।
বন্যা লিপি
রুকু আপু, এত বাঁশ বাঁশ আর কইরেন না। আমি বাঁশগাছ পছন্দ করি ঠিকই। কাউরে দেবার জন্য নয়, নিজের যোগাড়ে রাখার জন্য😊
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপু কষ্ট পেলেন? সরি আর বলব না। দুর মজা করেছি তো! আপনাকে অনেক রেসপেক্ট করি, ভালোবাসি। সরি, মাফ করবেন। আমি কাউকে কষ্ট দেইনা বা দেবার জন্য কিছু বলিনা। মজা করি, হাসাই এই আর কি!
আরজু মুক্তা
এভাবেই খোঁজ নেয়া হয়না পাশের জনের। অপরিচিতই থেকে যায়।
অথবা বলা যায়, বিবেক আর এই আমাদের অনেক তফাত। ভালো মন্দ নিয়েই পথ চলতে হয়। কিন্তু আর সরে না।
বন্যা লিপি
অন্যভাবেও বলা যায়। কিন্তু….এখন বললাম না।
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার কিন্তু বাদ দেওয়া যাবে না লিপি আপু
বন্যা লিপি
কেন বাদ দেয়া যাবে না? এমন কোনো ‘কিন্তু’ নেই যা বাদ দেয়া যায় না। লেখার গভীরতায় না পৌঁছানোর দায় পাঠকের। লেখকের না।
সুরাইয়া পারভীন
দীর্ঘ দিন পর পুরোনো কেউ নতুন করে কিন্তুটা সরাতে চাইছে। এই কিন্তুটাকে সরালেই যদি সবটা আগের মতো হয়ে যেতো তবে সবার আগে আমিই সরিয়ে দিতাম। চোখ বন্ধ করে কথা বলাটা দারুণ লেগেছে।
বন্যা লিপি
কিন্তুটা এখানে সরানো যোগ্য বলেই — শেষ লাইনটা কীভাবে টেনেছি তা লক্ষনীয়। বাকিটুকু তমি ঠিকঠাক অনুধাবন করেছ। নদী এভাবেই নিজেকে নিজে প্রতিষ্ঠা করেছে, যা কথোপকথনে লক্ষ করার বিষয়। ভালবাসা রইল❤
মোঃ মজিবর রহমান
কি ঘ্রান শক্তি রে বাবা, না তাকিয়েও বলতে পারে কে কোন দিকে তাকিয়ে আছে???
মানুষকে ভালো বাসুন পাশে বসে গল্প করুণ এতো বিরক্তি!!! না মোটেই ভালো না।
শুভেচ্ছা রইল আপি।
বন্যা লিপি
ঘ্রাণ শক্তি, অনুভূতির শক্তিকেই চলতে হয় যখন কোনো নারী একা জীবন কাটায় দীর্ঘসময়।শুভেচ্ছা দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
অনু গল্প আমার কাছে এখন ও কিছুটা ধাঁধা!!
সব কিছুই শেষে পৌঁছায়, আমাদের সাথে নিয়ে বা আমাদের ছাড়াই।
বন্যা লিপি
ভাবছি এই গল্পের ব্যাবচ্ছেদীয় পর্ব লিখে ফেললে কেমন হয়? তাহলে আর ধাঁধা লাগবে না। আমি তো আরজু মুক্তার মুক্তার অণুগল্প ধাঁধা মনে করতাম। সেখানে আপনি তো আমার অনুগল্পরে বদনাম দিয়ে দিলেন। কী যে করি??
ছাইরাছ হেলাল
নাম নেবেন, বদনামটুকু বাদ দিয়ে সেটি একটু কেমন যেন হয়ে যায় না!!
বন্যা লিপি
এবার বুঝছি…..তবে জাফর ইকবালের মতো গাইতে ইচ্ছা করে’ হয় যদি বদনাম হোক আরো…..আমি তো এখন আর নই কারো’…. নাম- বদনাম দুটো নিয়েই চলি তাহলে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমরা কিন্তু সবসময় একটা কিন্তু নিয়েই পথ চলি , বলা যায় সাথেই ছায়ার মতো লেপ্টে থাকে । চাইলে সেটাকে এড়ানো সম্ভব তারজন্য মনোবল টা শক্ত হওয়া জরুরি। দূরের যাত্রায় একলা পথ চলতে এমনটা আমিও ভাবি কেউ যেন পাশের সিটে না বসে কিন্তু ঠিকই বসে যায় , আমাদের জীবনটাও এমন না চাইলেও কাউকে না কাউকে পাশে নিয়ে চলতে হয় হোক সে পছন্দের অথবা অপছন্দের। গন্তব্য সবার একই । শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা রইলো 🌹🌹।
বন্যা লিপি
ভেবে নিয়েেছি, সিক্যুয়েল নিয়ে আসব অতঃপর ….. কিন্তুু সরে গেলো 😊 কেমন হবে দিদি? শারদ শুভেচ্ছা। ভীষণ আনন্দে কাটুক সময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
লিখুন। তাতে করে মাথা ডারে খাটানোর সুযোগ পামু। শুভ কামনা রইলো অহর্নিশি
ফয়জুল মহী
ভীষণ ভালো লাগল লেখাটি।
বন্যা লিপি
ধন্যবাদ মহী ভাই। ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
শেষটায় এসে ভুল ভাঙলো। চলতে চলতেই যেন নিজেকে খুঁজে পাওয়া একেক সময়। হঠাৎ করে এমন ভাবে আমার আমিটা এমনি করে পাশে বসে, তাকিয়ে থাকে, অপরিচিত সম্বোধনে চমকে দেয়! বদলায় না নদী, বদল হয়নি আকাশেরও তবুও কিন্তু এসে যায়। সব কিন্তু সরে যায় না।
বন্যা লিপি
আকাশ নেমে এসে নদীর বুক থেকে সরিয়ে দিয়েছে কিন্ত নামক দ্বিধা। শেষটায় এটাই বোঝাতে চেয়েছি।ভালবাসা তোমাকে❤❤❤❤
প্রদীপ চক্রবর্তী
এসো তুমি- আমি দুজনেই সরিয়ে দেই এই ‘কিন্ত’ টাকে।
সরিয়ে দেওয়ার ঠিক পরক্ষণে কিন্তু টা আবার চলে আছে।
তবে চাইলেই না কি পারা যায়।
ভালো লিখেছেন, দিদি।
বন্যা লিপি
ধন্যবাদ দাদাভাই।
রেহানা বীথি
এই এক ‘কিন্তু’ কতটা দেয়াল তুলতে পারে, সে শুধু কিন্তু’র গতিপথই বাৎলে দেয়। যদি দেয়াল ভেঙে ফেলার উপায় পাওয়া যায়, আর যদি তা হৃদয়পুরের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দেয়, ভাঙুক দেয়াল।
দারুণ অণুগল্প প্রিয় আপু।
জিসান শা ইকরাম
একটা সময় আমাদের আমিত্ব আমাদের সামনে এসে বসে। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে চায় কতটা বদলে গেছি। ফিরে আসতে চায় অতীত ছেড়ে বর্তমানে। ভবিষ্যৎ অব্দি। কিন্তু! ছেড়ে যাওয়া আমিটাকে কখনোই আর আমাতে নেয়া হয় না। ক্রমশ অপরিচিত হতে থাকে।
চমৎকার লেখা।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানবেন।
খাদিজাতুল কুবরা
আমার মনে হয় ট্রেনে বসে মানুষ কিছুটা নষ্টালজিক হয়ে যায়। আমি বরাবরই দূরপাল্লার ট্রেনে বসে কেমন যেন হয়ে যাই। একঝলকে যেন ছবির মতো ভেসে উঠে পুরো জীবন!
ভালোই লিখেছেন আপু ট্রেনযাত্রায় ‘কিন্তু ‘।
বন্যা লিপি
ট্রেন পড়লেন কীভাবে? লিখলাম বাস, পড়লেন ট্রেন, কেমনে কী? মন্তব্যে ধন্যবাদ
খাদিজাতুল কুবরা
আপু গত সপ্তাহে ট্রেন জার্নি করে ফিরলাম। পড়ছি বাস কিন্তু মাথায় ট্রেন ঝকঝকা ঝক চলছে। এ হচ্ছে ‘কিন্তু’ বিভ্রাট।
হা হা হা।
তৌহিদ
অতীত আর বর্তমানকে আলাদা করে একটি কিন্তু। কেউ সরিয়ে দিয়ে আমিত্বকে ধরে রাখে আর কেউ এই কিন্তুর ফাঁদে পড়ে সিদ্বান্তহীনতায় ভোগে।
ভালো থাকুন আপু।
সাখাওয়াত হোসেন
মাঝখান থেকে অনেকটা সময় হারিয়ে গেলেও নদী ও আকাশ কিন্তু একটুও বদলায়নি। আসলে ভালোবাসা এমনই হয় ‘কিন্তু’ কোনো ব্যাপার না।
আপু আমি আবার চোখ বন্ধ করে কথা বলতে পারিনা, তাই যা বলি চোখে চোখ রেখেই বলি।
ভালো থাকবেন আপু।