যখন কোন অসাধু জন ব্যাবসার সূচনা করে, এবং যখন সে হয় অনেক ধুরন্ধর বুদ্ধিমান। তখন সে কিন্তু আটঘাট বেঁধেই নামে। মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপন করে খুব কৌশলে এবং বুদ্ধি খাটিয়ে। এদের বুদ্ধির প্রশংসা দিয়েই শুরু করি।

”কার্নিভাল” কুষ্টিয়ার একটি ইভেন্ট মেনেজমেন্ট কোঃ এর নাম। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তাদের দিকে আংগুল উঠেছে এবং বারবারই তারা বুদ্ধির ঝলক দেখিয়ে পার পেয়ে গেছে। শুরুটা হয় কুষ্টিয়া সদর থানা থেকে… পুলিশদের সাথে ছবি তুলে, তাদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা কাগজ দিয়ে ফটোশেসন করে পুলিশদের ইমোশনের জায়গাটা হাতিয়ে নেয়া। শুরুর জায়গাটা দেখুন আইনের প্রাথমিক বারান্দা। সেগুলো ফেসবুক এ আপলোড দিয়ে তারা আস্তে আস্তে জনমত এবং সাপোর্ট এর জায়গা তৈরী করা শুরু করে।
১২/১২/২০১২ এই তারিখে তাদের যাত্রা শুরু একটি ফ্রি মেহেদি প্রোগ্রাম দিয়ে। কথায় আছে না?? বাংগালী ফ্রি পেলে আলকাতরাও খায়… তো প্রথমেই তারা ফ্রি আলকাতরা খাইয়ে দিলো। কুষ্টিয়ার কিছু তরুন ছেলেমেদের হাতধরে।

ফেসবুক এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিকে তারা হাতিয়ার করে নিলো। তাদের ব্যানারে শুরু হলো বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম। রক্তদান এবং কুষ্টিয়াতে ডোনারদের লিস্ট, শীতবস্ত্র বিতরণ,সাভার ট্রাজেডিকে কেন্দ্র করে সাহায্য অর্থ উত্তলন, ঈদে পথশিশুদের নতুন জামা সেমাই চিনি উপহার। এই সবগুলো কাজই প্রশংসার দাবীদার।

কার্নিভালের কর্ণধার লিমা কবির এবং তার স্বামী বাহারুল করিম (যিনি ফটোগ্রাফি করেন বি করিম নামে এবং তার ফেসবুকের আইডির নাম যথাক্রমে কুষ্টিয়ান ধূলাবালি, দ্বিতীয় অধ্যায়, কার্নিভাল কুষ্টিয়া ইত্যাদি)। এই সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য, তারা তরুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটা দল গঠন করে কাজ শুরু করে। ফেসবুকে একটি হৃদয়বিদারক ছবি ও পোস্ট দিয়ে সাহায্য প্রার্থনা সহ বক্সের গায়ে কার্নিভাল লিখে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে টাকা উত্তোলন সবই তারা করেছে। যতজন ছেলেমেয়ে তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, যারা সত্যিকার পরিশ্রম করেছে। তারা অবশ্যই চাইবে টাকাগুলো সঠিক হাতে যাক এবং সঠিক কাজে লাগুক। যখনই তারা হিসাব চেয়েছে, বিনিময়ে পেয়েছে কুটুকথা, দুঃব্যাবহার। লিমা কবিরের সাথে সবাই কম বেশি আন্তরিক থাকায় তিনি ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের ভিলেনের মতো এর সাথে ওর, ওর সাথে এর.. ব্যাক্তিগত ক্যাচাল বাঁধিয়ে দিতেন কৌশলে। তাতে করে  ধামাচাপা পড়ে যেত জবাবদিহিতার অধ্যায়। যারা রক্ত নিয়ে কাজ করেছে, তারা হরহামেশাই বিপাকে পড়তে শুরু করলো।

তারপর একদিন যখন তারা সবাই রুখে এলো, তখন বি করিম এবং লিমা কবির তাদের ফোন কলের জবাব দেয়া বন্ধ করে দিল। ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিল। এতোদিন যারা তাদের সংগঠনের জন্য এতো পরিশ্রম করে গেল কোন রকম পারিশ্রমিক ছাড়া, শুধুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। তাদের সবাইকে কাঁচকলা দেখিয়ে দিল এই কুচক্রী প্রতিষ্ঠান। এখানেই শেষ নয়, বি করিম হতে চাইলেন ফেসবুকের হিরো… গরীবদের হাতে কম্বল দিয়ে ছবি তুলে সেগুলো কেড়ে নেবার মতো নীচ কাজটি করতেও তাদের বাঁধেনি। তাদের আশ্বাস দিয়েছিল, “এই কম্বলগুলো দাও..তোমাদের দামী চাদর দেবো ” আফসোস সেই দামী চাদরের মুখ তারা আজও দেখেনি। গরীব মহিলাগুলো তার বাড়ি পর্যন্ত গেলে, তাদের নামে কেস করা হবে বলে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।

এই কার্নিভালের জন্য সবচেয়ে ফলদায়ক হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। এখানে একজন তার ওয়ালে পোস্ট দিয়ে হিরো হতে পারে সহজেই। কিন্তু সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা এড়ানো যায় না। যখন আপনি কোন সামাজিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হবেন তখন অবশ্যই আপনার সরকারী অনুমোদন পত্রের দরকার হবে যা তাদের নেই। তারা শুধু অসাধু উপায়ে টাকা আত্মসাৎ এর খেলায় মেতেছিল। একজন ফটোগ্রাফার তার সার্টিফিকেট ছাড়া নিজের কোন ছবিতে কপিরাইট দাবী করতে পারে না। তিনি সবাইকে অন্ধকারে রেখে এই কাজটিও করে গেছেন।

এই বার যখন তারা আবার নতুন করে প্রশ্নের সম্মুখীন হলো, তখন তারা বাধ্যহলো ফেসবুকে একটা গদবাধা হিসেব দিতে। হিসেবটি খেয়াল করে পড়বার অনুরোধ থাকলো। তারা শুধু একটি পোস্ট লিখেই হাজার হাজার টাকার দায়মুক্তি চায়। বিষয়টা হাস্যকর নয় কি?? আদালতে এগুলোর কোনই গ্রহনযোগ্যতা নেই। তাদের লিখিত কোনই প্রমান বা ছবি নেই। যে বি করিম কাউকে এক গ্লাস পানি খাওয়ালেও সেটার ছবি তুলে রাখতো!! আর সে এতোটাকা কোন রকম প্রমান ছাড়াই কাউকে দিয়ে দিল?? আসলে সে নিশ্চিন্ত হয়ে গিয়েছিল, এতোদিনের ফেসবুক জীবনে সে বড় বড় ফেসবুক সেলিব্রেটিদের সাথে সখ্যতা গড়ে নিয়েছিল। তাদেরই ঢাল বানিয়ে এবারও তারা প্রতিবাদ মুখর ছেলেমেয়েদের দমাতে ফেসবুকে বাজে ভাষা আর ব্যাক্তিগত আক্রমনের বন্যা বইয়ে দিল।

সব কিছুরই একটা শেষ থাকে… আমরা চাই এই অসাধু ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানটি যেন আর কখনোই মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলার সুযোগ যেন আর কখনোই মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলার সুযোগ না পায়। আপনার কষ্টের টাকা যা আপনি দান স্বরুপ দিয়েছিলেন তা দিয়ে যেন আর কেউ সীতাহার বা এ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার মতো দুঃসাহস না দেখায়। আসুন সকলে মিলে রুখে দাড়াই… নির্মূল করি এইসব ভন্ড আর প্রতারকদের।

বিঃ দ্রঃ আসুন এই লিখিত হিসাব মেনে নিয়েই বিষয়টিকে উপস্থাপন করি, তবুও কিছু প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। সাভার ভিক্টিমদের জন্য মোট টাকা উঠেছিল ৯২হাজার। সেই হিসাবটি খুব ভালো করে খেয়াল করুন। কুষ্টিয়ার যে ২জন ভিক্টিম ছিল তাদের মাত্র ১হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। আর নিজের বাড়ির বুয়ার ঔষধের দামও এর মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে… আত্মীয়কে সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছে, খুচরা দান করেছে। আশাকরি আর কিছু বোঝার আর বাকি রইলো না।
আসুন পথশিশুদের হিসেবে…
ঘরতোলায় সাহায্য ১৫হাজার আর অন্যান্য খুচরা দান ৪৬৭৫ টাকা। যে পথশিশুদের জন্য টাকাগুলো একত্রিত করা হয়েছিল, চাইলে তাদের উন্নতমানের পোশাক দেয়া যেত।
এই লোকদেখানো হিসেব চাইলে আপনারাও লিখে দিতে পারবেন। কি তাই তো???
ধন্যবাদ।

কম্বল হাতে দিয়ে আবার কম্বল ফেরত নেয়ার ঘটনার প্রমান দেখুন।আবার কম্বল চাইতে গেলে কেস করার হুমকি দিয়েছে। যাঁদের সাথে এমন প্রতারন করা হয়েছে,তাদের কথা শুনুন এই ভিডিওতে (ক্লিক)

হিসেবের কিছু নমুনাঃ  ছবির উপর ক্লিক করে বড় করে দেখুন।


*************************************************************

*************************************************************


এই প্রতারকদের সম্পর্কে আরো জানুন এখানে ক্লিক করে।  এই লেখায় আরো কিছু লিংক আছে। প্রতারনা সম্পর্কে জানুন এবং বলুন সবাইকে।

৬৩৬জন ৬৩৬জন
0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ