
কলকাতায় আমি প্রতি বছর দুই থেকে তিন বার যাই নানান কাজে। অনেকদিন্ ধরেই ভাবছিলাম কলকাতা নিয়ে ভ্রমন কাহিনী লিখবো কিন্তু লিখা হচ্ছিলো না আবশেষে আজকে লিখেই ফেললাম। প্রতিদিন আমাদের দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক ভারতের কলকাতা ভ্রমন করে থাকেন যারা প্রথমবারের মত যাবেন তারা আমার এই লিখাটি পড়ে নিতে পারেন আশা করি কিছুটা হলেও কাজে লাগবে। আমাদের পুরানো ঢাকার আদতে কলকাতা শহরে কেনাকাটা ও খাবার খরচ ঢাকা থেকে অনেক কম। যদিও আমি আজকে সংক্ষিপ্তভাবে কলকাতার কিছু নান্দনিক পর্যটণ কেন্দ্র এবং ভ্রমন বিষয়ক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক কিছু গরুত্বপূর্ন তথ্য।
ভিসাঃ ভারতে যেতে হলে বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের ভিসা নিতে হবে। ভিসা নেওয়ার জন্য এখন কোন ই-টোকেন লাগে না শুধুমাত্র অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে অনলাইন সাবমিশনের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতীয় ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে জমা দিলে তিন ত্থেকে পাঁচ কর্ম দিবসে আপনি ভিসা পেয়ে যাবেন।
ট্রান্সপোর্টঃ বাংলাদেশ থেকে কলকাতা বিমান, ট্রেন অথবা বাসে যেতে পারেন। তবে বাসে গেলে অবশ্যই ভ্রমন খরচ হিসেবে ১০০-১৫০ ইউ,এস ডলার নিয়ে যাবেন তা না হলে বেনাপোলে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন এর পর চেকপোষ্টে বাংলাদেশ পুলিশ ১০০-৫০০ টাকা (যার কাছে যেমন নিতে পারে) এবং ভারতীয় কাস্টম আপনার কাছ থেকে ৫০০-১০০০ টাকা ঘুষ নিবে। বাইরোডে এটা একটা চরম বিড়ম্ভনা কিন্তু ইউ,এস ডলার থাকলে এই বিরম্ভনায় পরতে হয় না। তারপর চলে যাবেন ভারতের ইমিগ্রশনে সেখানে পাসপোর্ট স্ট্যাম্পিং শেষ করে চা নাস্তা করে নিতে পারেন। আপনার ব্যাগ কিংবা লাগেজ যদি নিজে টানাটানি না করতে চান তাহলে বর্ডারে বাংলাদেশ অংশ এবং ভারতের অংশে আলাদা ড্রেসকোডে অনেক কুলি পাবেন যাদেরকে ১০০-২০০ টাকার মত পারিশ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। বাইরোড ভ্রমনে “ট্রাভেল ট্যাক্স” আপনি চাইলে ভ্রমণ তারিখের আগে ঢাকায় সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে পারেন তাহলে আর বর্ডারে গিয়ে ট্যাক্স জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাড়াতে হবে না। বিমানে গেলে ট্রাভেল ট্যাক্স এয়ার টিকেটের সাথে দেওয়া হয়ে যায় তাই আলাদা করে দিতে হয় না।
বি, দ্রঃ বাসে ভ্রমনের ক্ষেত্রে সকল বাসই বাংলাদেশের ভিতর খাবার যাত্রা বিরতি দেয় তাদের পছন্দের রেস্তোরায় যদি এই সকল রেস্তোরায় খাবার খেতে চান তাহলে ভদ্রতাকে পকেটে ঢুকিয়ে খাবার আগে দাম জিজ্ঞেস করে নিবেন নয়ত গলা কাটা দাম নিবে এবং এই সকল রেস্তোরার ম্যানেজারের ব্যবহার সাধারণত যাচ্ছে তাই স্বভাবের । একই অবস্থা ভারতের ভিতরে, যাত্রা বিরতীর রেস্তোরা মানে গলাকাটা দাম, তাই চাইলে খেতে পারেন না চাইলে বাসের সিলেক্টেট রেস্তোরা থেকে না খেয়ে আশে পাশের দোকান থেকে কিছু কিনে খেতে পারেন।”চয়েজ ইজ ইউরস”।
কারেন্সী এক্সচেঞ্জঃ বাইরোডে কিংবা ট্রেনে গেলে ভারতের ইমিগ্রেশন শেষ করে যেকোন মানি এক্সচেঞ্জ থেকে বাংলাদেশী টাকা বা ইউ,এস ডলার এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারেন। এক্সেচেঞ্জের পর মানি রিসিপ্ট নিয়ে নিবেন। রিসিপ্ট যদিও কোথাও দেখাতে হয় না কিন্তু নেওয়া ভালো। কারন আপনার কাছে থাকা রুপিগুলা যে একটা বৈধ সোর্স থেকে এসেছে এই রিসিপ্ট তার একটা প্রমাণ।
হোটেলঃ কলকাতায় বাজেট হোটেলে থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল সবই আছে যদি আপনি বাজেট হোটেলে থাকতে চান তাহলে মার্কোইস স্ট্রিট বা নিউ মার্কেট এরিয়াতে অনেক হোটেল পাবেন যেখানে আপনি ৫০০ রুপি থেকে ১০০০ রুপির মধ্যে নন এসি, এবং ১২০০-২০০০ রুপির মধ্যে এসি রুম নিতে পারবেন। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মার্কোইস স্ট্রীটের হোটেল আনোয়ারা তে থাকি ১০০০ টাকা নন এসি, ১৫০০ রুপি এসি। তাদের রুমগুলি তুলনামূলক ছোট কিন্তু প্রতি রুমে বড় জানালা আছে তাই পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাওয়া যায় আর বাথরুম অনেকটা ঝকঝকা। নোংরা বাথরুমের হোটেল রুম যতই পরিষ্কার থাকুক আমার কাছে সেটা চরম অস্থিকর লাগে। যদিও বাংলাদেশ থেকে বুকিং দিয়ে না গেলে হোটেল আনোয়ারায় রুম খালি পাওয়াই দুষ্কর।
কেনাকাটাঃ কলকাতার নিউ মার্কেট কিংবা বড়াবাজার (Bara Bazar) থেকে শাড়ি চুড়ি, চকলেট থেকে শুরু করে যে কোন কসমেটিক কিনে নিতে পারবেন তবে আপনাকে প্রফেশনালি দামা দামি করা জানতে হবে নয়ত পদে পদে ঠকে যাবেন। আর যদি একদামে কিনতে চান তাহলে বিগ বাজারের যে কোন শোরুমে চলে যেতে পারেন। তবে হ্যা শ্রী লেদার থেকে জুতা কিনতে ভুলবেন না। আমার কাছে একটু অবাকই লাগে কি করে নিত্য নতুন ডিজাইনের জেনুইন লেদারের সহ আধুনিক সকল জুতা শ্রী লেদার শোরুমে খুবই কম দামে (ফিক্সড প্রাইজ) বিক্রি করে।
খাবার দাবারঃ মার্কোইস স্ট্রিটের প্রতিটা খাবার হোটেল দাম রাখে অনেক চড়া। যেহেতু বাংলাদেশী পর্যটকরা এইদিকেই বেশী থাকে তাই এই দিকে খাবারের দাম খুব বেশি। নিউ মার্কেট কিংবা মার্কোইস স্ট্রীটের আশে পাশে অনেক হোটেল আছে যার খাবারের মান খুব ভালো এবং দাম ও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। পিতজা হাট, কে,এফ,সি পাবেন নিউ মার্কেটের পাশেই। এছাড়াও অনেক লোকাল ফাস্ট ফুডের দোকান পাবেন যেখানে খাবারের স্বাদে পাবেন বৈচিত্রতা।
এবার চলুন কলকাতার বিখ্যাত কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেই।
জোড়াসাকু ঠাকুরবাড়িঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি কোলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। বর্তমানে অবশ্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাড়িটি আমার কাছে চমৎকার লেগেছে আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে। ১৮ শতকে নির্মিত এই বাড়ি নির্মাণের জন্য জমিটি কলকাতার বড়াবাজার এর বিখ্যাত শেট (Sett ) পরিবার থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। এই বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের জন্ম গ্রহন করেন এবং ১৯৪১ সালে মৃত্যুবরন করেন। মূল বাড়িটি দোতলায় (রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম) প্রবেশ করতে হলে আপনাকে জুতা খুলে রেখে টোকেন নিতে হবে। দোতলায় রবীন্দ্রনাথ যে রুমে থাকতেন এবং মৃত্যু বরন করেছেন সেই রুমটি আজ আবধি তেমনই রাখা হয়েছে যেমনটি ওনার মৃত্যুদিনে ছিল তবে এই রুমে আপনি কোন ছবি তুলতে পারবেন না। তাছাড়া তাঁর করা নিজস্ব পেইন্টিং এবং ব্যবহার করা নানান সামগ্রী আপনাকে বিমোহিত করবে। দোতালার বারান্দার রেলিং ধরে দারিয়ে আপনি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতে পারেন যে এই রেরিং ধরে দারিয়ে বিশ্বকবি হয়তো কোন একটি কবিতার কিংবা গানের ছন্দ খুজে বেড়াচ্ছিলেন।
যেভাবে যাবেনঃ কলকাতার যে কোন মেট্রোরেল ষ্টেশন থেকে আপনি সরাসরি চলে যাবেন গিরিস পার্ক ষ্টেশনে সেখান থেকে পায়ে হেটে চলে যেতে পারবেন বিখ্যাত এই বাড়িটিতে।
টিকেটমূল্যঃ বিদেশীদের জন্য ৫০ রুপি, সার্কভূক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০ রুপি
সপ্তাহিক বন্ধঃ সোমাবার ও সরকারি অন্যান্য ছুটির দিন।
ক্যামেরা চার্জঃ ক্যামেরা প্রতি ৫০ রুপি। ছবি তোলার টোকেন যত্নসহকারে রাখবেন কারন ছবি তোলার সময় অনেক ক্ষেত্রে সিকিঊরিটি গার্ড এই টোকেন দেখতে চায়।
হাওরা ব্রীজঃ পশ্চিম বঙ্গের কলকাতা শহরের হুগলী নদীর উপর নির্মিত প্রায় ২৬ হাজার টন স্টিলের এই দানবীয় ব্রীজটি নিঃসন্দেহে আপনার ভালো লাগার জায়গা দখল করে নিবে। এটি বিশ্বের ৬ষ্ট ঝুলন্ত স্প্যান ক্যান্টিলিভার ব্রিজ। এই ব্রীজটিতে পায়ে হেটে পারাপারের জন্য আলাদা লেন আছে। পুরো ব্রীজের ছবি তুলতে চাইলে চলে যেতে পারেন হাওরা ষ্টেশনের পাশে লঞ্চ টার্মিনালে (দয়া করে কেঊ ব্রীজের মাঝখানে গিয়ে ছবি তুলবেন না কারন নিজের দেশের আইন মেনে চলা যেমন জরুরী অন্য দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোও তেমনই জরুরী)। এই ব্রীজ থেকে খুব সহজেই কলকাতার ‘’বড়াবাজার’’ নামক পাইকারি মার্কেটে কেনাকাটা করতে যেতে পারেন। তাছাড়া ব্রিজের খুব কাছেই আছে মল্লিকঘাট ফুলের বাজার। এই ব্রীজটি পারাপারের জন্য আপনাকে কোন টোল ফ দিতে হবে না। যদিও ১৯৬৫ সালের ব্রীজটির নাম করন করা হয়েছে রবীন্দ্র সেতু কিন্তু সবার কাছে এখনো হাওড়া ব্রিজ নামেই জনপ্রিয় এই স্টিলের দানব।
যেভাবে যাবেনঃ কলকাতার যে কোন প্রান্ত থেকে টেক্সি কিংবা বাসে চলে আসতে পারেন এই ব্রীজে।
টিকেট মূল্যঃ নেই
সপ্তাহিক বন্ধঃ নেই
ক্যামেরা চার্জঃ নেই।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালঃ দুটি বৃহদাকার সিংহ আপনাকে কলকাতার যেই প্রসাদে স্বাগত জানাবে সেটা হচ্ছে এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। তবে আপনার ভয় পাবার কোন কারন নেই, সিংহ দুটি পাথরের। আসলে সিংহ দুটি ক্ষমতার প্রতিচ্ছবি হিসেবেই ব্যবহার করা হয়েছে। প্রবেশ দ্বারের একটু ভিতরেই বৃহৎ ব্রোঞ্জের রাণী মূর্তি আপনাকে স্বাগত জানবে। কলকাতার সবচেয়ে বেশী পর্যটক আকর্ষন করে এই জায়গাটি। সাদা মার্বেলের এই প্রাসাদটি শুধুই বিশালতার নিখুত প্রতিনিধিত্বই করে না ববং পর্যটকদের কিছুটা অবাকও করে দেয়। বৃটিশ ভারতের প্রথম সম্রাজ্ঞী মহারাণী ভিক্টোরিয়ার (১৮১৯-১৯০১) স্মৃতিকে প্রজ্জ্বলিত করার উদ্যেশে লর্ড জর্জ কার্জন এই বিশালাকার মেমোরিয়াল স্থাপনের সিদ্ধন্ত নেন যা স্থাপিত হয়েছিল ১৯০৬ সাল থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে। জানুয়ারী ১৯০১ সালের মহারানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর লর্ড কার্জন বলেছিলেন “আমাদের এমন একটি স্থাপনা থাকুক যা বিশালাকার, মহিমান্বিত, বিস্ময়কর, মহীয়ান যেখানে কলকাতার প্রতিটি আগন্তুক বার বার ফিরে আসবে, যেখানে শুধু কলকাতার বাসিন্দাই নয় বরং ইউরোপীয় এবং স্থানীয় সকলেই দল বেধে আসবে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে এবং অতীতের বিস্ময়কর স্মৃতিগুলি তাদের চোখে বাচিয়ে রাখবে”। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গার্ডেনের আয়তন প্রায় ৬৪ একর যার মধ্যে পুকুর, ফুলের বাগান ও ফাউন্টেনস দিয়ে সজ্জিত করা আছে।
যেভাবে যাবেনঃ কলকাতার যে জায়গা থেকে বাস কিংবা টেক্সিতে যেতে পারবেন আর মেট্রোরেলে গেলে ময়দান স্টেশনে নেমে পায়ে হেটে যেতে পারবেন।
সপ্তাহিক বন্ধঃ ভিক্তোরিয়া মেমোরিয়াল শুধু গার্ডেন ঘুরতে চাইলে সপ্তাহিক কোন বন্ধ নেই কিন্তু গ্যালারী প্রতি সোমবার বন্ধ থাকে। গার্ডেন খোলা থেকে প্রতিদিন সকাল ৫ টা থেকে বিকেল ৬ টা ১৫। আর গ্যালারী সোমবার সপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা।
টিকেট মূল্যঃ বিদেশীদের জন্য ২০০ রুপি আর ইন্ডিয়ানদের জন্য ২০ রুপি মাত্র।
ক্যামেরা চার্জঃ নেই।
ভারতীয় সংগ্রাহালয় বা ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম কলকাতাঃ ১৮১৪ সালে স্থাপিত এই জাদুঘরটি বিশ্বের নবম প্রাচীনতম এবং ভারতের বৃহত্তম মিউজিয়াম। বিখ্যাত এই মিউজিয়ামটির ৩৫ টি গ্যালারি ৬ টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটগরিতে ভাগ করা আছে যথাক্রমে নৃতত্ব, শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণীবিদ্যা এবং অর্থনৈতিক উদ্ভিদবিদ্যা। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর পূর্বের কয়েন এবং ভাস্কর্যগুলির মধ্যে একটি অনন্য সমাবেশ রয়েছে বলে গর্বিত এই মিউজিয়াম। ফেব্রুয়ারী ২০১৪ সালে মিউজিয়ামটি দ্বিশততমবর্ষীয় উৎযাপন করে। বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য আরেকটি মজার তথ্য দেই। ঢাকাই মসলিনের অন্যতম সংগ্রহ আপনি ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে খুজে পাবেন। তাহলে আর দেরি কেন আপনিও দেখে আসুন বিশ্বের প্রাচীন সংগ্রহশার অন্যতম একটি নিদর্শন। তবে হ্যা যাবার আগে অবশ্যই মাথায় রাখবেন হাতে প্রচুর সময় নিয়ে যাবেন কারন তাড়াহুড়া করে মিউজিয়ামে যাওয়ার চেয়ে না যাওয়াই ভালো।
যেভাবে যাবেনঃ কলকাতার যে জায়গা থেকে বাস কিংবা টেক্সিতে যেতে পারবেন আর মেট্রোরেলে গেলে পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে নেমে পায়ে হেটে যেতে পারবেন।
সপ্তাহিক বন্ধঃ সোমাবার ও সরকারি অন্যান্য ছুটির দিন।
টিকেট মূল্যঃ বিদেশীদের জন্য ৫০০ রুপি আর ইন্ডিয়ানদের জন্য ৫০ রুপি মাত্র।
ক্যামেরা চার্জঃ মোবাইল ক্যামেরা ৫০ রুপি। স্টিল ক্যামেরা ১০০ রুপি, ছোট ভিডিও ক্যমেরা ২,০০০ রুপি এবং স্ট্যান্ডসহ বড় ভিডিও ক্যামেরা ৫,০০০ রুপি।
সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালঃ উপনিবেশিক সময়ের সমৃদ্ধ গৌরবময় আর্কিটেকচারের পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি গির্জা হচ্ছে সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল। গ্রেট ব্রিটেনের বাইরে ব্রিটিশ ভূখণ্ডের মধ্যে প্রথম অ্যাংলিকান গির্জাও হচ্ছে এই ঐতিহাসিক গির্জা। এশিয়ার প্রথম বিশপশাসিত এই গির্জার মন মাতানো স্থাপথ্যশৈলি পলকেই আপনার চোখে সৃষ্টিশীলতার মুগ্ধতা এনে দিবে। সাদা রঙের বিশাল অট্রালিকাটির কেন্দ্রীয় মিনার ক্যানটারবেরি ক্যাথেড্রালের ‘বেল হ্যারি’ টাওয়ারের আদতে করা হয়েছে যা এক অনাবদ্য স্থাপথ্যশৈলির নিদর্শন। ভিক্তোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে আপনি পায়ে হেটে এই গির্জায় যেতে পারবেন।
যেভাবে যাবেনঃ কলকাতার যে জায়গা থেকে বাস কিংবা টেক্সিতে যেতে পারবেন আর মেট্রোরেলে গেলে ময়দান স্টেশনে নেমে পায়ে হেটে যেতে পারবেন।
সপ্তাহিক বন্ধঃ নেই।
টিকেট মূল্যঃ নেই।
ক্যামেরা চার্জঃ নেই।
সায়েন্স সিটিঃ কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র এবং এটি বিশ্বের অন্যতম একটি বিজ্ঞান যাদুঘর যেখানে বিনোদনের মাধ্যমে নানান কিছু শেখা যায়। জুলাই ১৯৯৭ সালে খোলা দেওয়া হয়েছিল এই বিজ্ঞান যাদুঘর। এটি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের আওতায় একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং জাতীয় বিজ্ঞান যাদুঘরগুলির (এনসিএসএম) একটি অন্যতম ইউনিট । বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার একক লক্ষ্য নিয়ে বিজ্ঞান শহরটি সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান কেন্দ্র হিসেব পর্যটকদের অন্যতম একটি আকর্ষন কেন্দ্র। এই বিনোদন কেন্দ্রটি মূলত কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা তা হলো আর্থ এক্সপ্লোরেশন হল, স্পেস ওডিসি, ডায়নামোশন হল, মেরিটাইম সেন্টার, আউটডোর সায়েন্স পার্ক, বিজ্ঞান এক্সপ্লোরেশন হল।
যেভাবে যাবেনঃ কলকাতার যে জায়গা থেকে বাস কিংবা টেক্সিতে যেতে পারবেন আর মেট্রোরেলে গেলে রবিদ্র সদন স্টেশনে নেমে টেক্সি কিংবা বাস নিতে পারেন। কারন রবিদ্র সদন স্টেশন থেকে সাইন্স সিটি প্রায় ৬.৫ কিলোমিটার।
সপ্তাহিক বন্ধঃ নেই।
টিকেট মূল্যঃ এন্ট্রি ফি ৬০ রুপি।
#জীবনের বিবর্তন- একটি অন্ধকার যাত্রা ৪০ রুপি।
# মানব বিবর্তনের উপর পরিদৃশ্য ৬০ রুপি।
#কম্বাইন প্যাকেজ (অন্ধকার যাত্রা + মানব বিবর্তন) ৮০ রুপি।
# বিজ্ঞান একটি গোলকের উপর ৪০ রুপি।
#থ্রীডি থিয়েটার ৩০ রুপি।
#স্পেস থিয়েটার ৬০ রুপি।
#রোড ট্রেন ২০ রুপি।
# ক্যাবল কার ৪৮ রুপি।
ক্যামেরা চার্জঃ নেই।
সময় নিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ তবে অবশ্যই কলকাতার ওয়ান টাইম ইউজ মাটির কাপে চা খেতে ভূলবেন না।
২৫টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
এই পোস্ট কলকাতা ভ্রমনে ইচ্ছুক মানুষের খুব কাজে দেবে,
এমন পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকেও মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন সব সময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
সুন্দর তো ?
সবই ধরলেন তুলে।
শুভ কামনা।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য খুব কাজের পোস্ট।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ওখানকার যাতায়াত খরচ অনেক কম। কলকাতা শহর টা অনেক পরিষ্কার , গুছানো আর যানজট বিহীন বলে মনে হয়েছে আমাদের ঢাকার তুলনায়। খুব ভালো লাগলো সুন্দর করে সবকিছু তুলে ধরার জন্য। শুভ কামনা
ইকবাল কবীর
যানজট ঢাকার তুলনায় কম। আর পরিষ্কারের ব্যাপারটা আমাদের দেশের গুলশান, বনানী কিংবা যেকোন ডি,ও,এইচ,এস এরিয়া একরকম আর গুলিস্থান, যাত্রাবাড়ী আরেক রকম। কলকাতার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
কামাল উদ্দিন
ঠাকুর বাড়ি আর ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম ছাড়া বাকিগুলো দেখা আছে। চমৎকার করে যাতায়াত পথ বাতলে দিয়েছেন বলে ধন্যবাদ আপনাকে।
ইকবাল কবীর
সময় পেলে ঠাকুরবাড়ি ঘুড়ে আসবেন। নস্টালজিক কিছু স্মৃতি পাবেন সেখানে।
কামাল উদ্দিন
ইচ্ছে আছে এসব ছুয়ে ছুয়ে দেখার
সাবিনা ইয়াসমিন
ভ্রমণ পিপাসুদের জন্যে চমৎকার পোস্ট। কলকাতা ভ্রমণে যাদের আগ্রহ আছে তাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য সহ এই লেখাটি অত্যন্ত সমাদৃত হবে বলে আশা করছি।
এই পোস্টে সংযুক্ত করা ছবিগুলো নিয়ে কিছু আপত্তি প্রকাশ করতে হচ্ছে। কিছু কিছু ছবির সাইজ খুবই বড়। এটা দৃষ্টিকটু লেগেছে। পোস্টের প্রয়োজনে ছবি যুক্ত করা আবশ্যক হলেও কিছু ছবি বাদ দেয়া যেত। পোস্টের মুল আকর্ষণ লেখা+ তথ্য। ছবি বাড়তি ভালোলাগা আনে। কিন্তু অতিরিক্ত ছবি লেখার প্রতি মনোযোগ নস্ট করে দেয়।
শুভ কামনা 🌹🌹
ইকবাল কবীর
ছবিগুলা ১০০ কিবিতে আনার জন্য ছোট বড় হয়ে গেছে। ভ্রমণ পোস্ট বিধায় ছবি বেশী দেওয়া হয়েছে যাতে পর্যটনকেন্দ্রগুলি সম্পর্কে ধারনাটা একটু বেশী নিতে পারে।
মনির হোসেন মমি
ভ্রমণ বিষয়ে লেখা বেশ ভাল উপস্থাপনা। ভিসা প্রসেস থেকে শুরু করে যাওয়া থাকা ঘুরা সব দারুণ ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।একজন ভ্রমণ পিয়াসীর জন্য বেশ উপকারী পোষ্ট। ধন্যবাদ আপনাকে। সাথে ভিসা প্রসেসের লিংকটি দিয়ে দিলে আরো ভাল হত।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভিসা বিষয়ে আরেকটি পোস্ট করবো পরবর্তীতে সেখানে অনেক কিছু বিস্তারিত বর্ননা থাকবে।
নিতাই বাবু
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে আমার এক বন্ধুর সাথে পাসপোর্ট বিহীন বেনাপোল হয়ে ভারত গিয়েছিলাম। সেখানে প্রায় দেড় বছর অবস্থান করে অবশেষে একাই ভুরিমারা বর্ডার হয়ে ফিরে এসেছি। কোলকাতার অনেককিছু আমি দেখেছি, খেয়েছি, অনেক জায়গায় ঘুরেছি। তবে পাসপোর্টে যেতে হলে আপনার এই পোস্টে দেওয়া তথ্যগুলো নতুনদের খুবই উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি। আর হ্যাঁ, পোস্টে এতো বড় ছবি আপনি কী করে আপলোড করলেন, তা আমার মাথায় খেলছে না। যাইহোক, আপনার জন্য শুভকামনা সবসময়।
ইকবাল কবীর
ছবি বড় হলেও সাইজে ১০০ কে,বি র কম। ধন্যবাদ
তৌহিদ
কলকাতা ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অত্যন্ত দরকারি একটি পোস্ট। ধন্যবাদ আপনাকে এমন পোস্টের জন্য।
ইকবাল কবীর
মন্তব্যের জন্য ধন্যবা।
রেজিনা আহমেদ
অসাধারণ ,অসাধারণ, অসাধারণ
খুব সুন্দর লিখেছেন
সবচেয়ে বড় কথা আমার কলকাতা শহর আপনার ভালো লেগেছে এটা দেখেও ভাল লাগছে,
আমি কলকাতার বাসিন্দা, কখনো এলে আমাকে নক দিয়েন , যদিও অফিসের কাজে জানিনা কতটুকু সময় দিতে পারব তবুও এলে অবশ্যই জানাবেন,
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে। পরের আসলে অবশ্যই জানাবো। ভালো থাকবেন। শুভকামনা জানবে।
ইকবাল কবীর
শুভকামনা জানবেন।
সঞ্জয় মালাকার
এই পোস্ট কলকাতা ভ্রমনে ইচ্ছুক মানুষের খুব কাজে দেবে,
চমৎকার রচনাশৈলী, ছবি গুলো ও দারুণ তুলেছে।
শুভ কামনা দাদা।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
সৈকত দে
কলকাতা ভ্রমণে অনেক কাছে দিবে। হাওড়া ব্রিজ ঘুরে দেখার খুব আগ্রহ আছে!