বর্তমানে সারাবিশ্বে এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। সংক্ষেপে যার নাম কেভিড-১৯। শোনা যায়, দেখাও যায় যে এটি একটি প্রাণঘাতী মরণব্যাধি ছোঁয়াচে রোগ। মানুষ থেকে মানুষে, একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায়। এটি এখন সারাবিশ্বে মহামারি আকারে ছাড়িয়ে পড়েছে। এরকম ছোঁয়াচে রোগ গুটিবসন্ত, কলেরা এর আগেও এদেশে হয়েছিল, দেখা দিয়েছিল। তবে এই রোগের মতো এমন ভয়াবহ রূপধারণ কখনো করেনি। যদিও এখনকার মতো তখন ঘরেঘরে ডাক্তার, রোগ বিশেষজ্ঞ ছিল না, তবুও সেসময় ঐসব ছোঁয়াচে রোগে দেশের মানুষকে এতো কাবু করতে পারেনি। যা এখনকার নভেল করোনাভাইরাস কেভিড-১৯ রোগে পুরো বিশ্ববাসীকে কাবু করে ফেলছে।

এপর্যন্ত এই প্রাণঘাতী কেভিড-১৯ রোগ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ১৩,০০০ (দশ হাজার)’র উপরে। আক্রান্ত করে ফেলেছে তিন লক্ষাধিক। ঘরবন্দী করে রেখেছে বিশ্বের ১৭০টি দেশের কয়েক কোটি মানুষকে। তারপরও এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পারছে না, বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। এই রেগের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা নিজ দেশের জনগণকে বাঁচতে বিভিন্নরকম কঠিন পদক্ষেপ হাতে নিয়ে ফেলেছে। কোনও দেশে লকডাউন, কোনও দেশে শাটডাউন, কোনও দেশে কারফিউ।

আবার এক দেশ থেকে আরেকটা দেশের আকাশপথ, স্থলপথ তো অনেক আগে থেকেই বন্ধ করে দিয়েছিল বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা। তারপরও কোনোমতে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে বাঁচতে পারছে না। হুহ্ করে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আক্রান্তও হচ্ছে সমানতালে। শুরু থেকে এই ভাইরাস সারা পৃথিবীর অর্ধশতাধিক দেশ ঘুরেফিরে শেষাবধি আমাদের বাংলাদেশেও এসে পড়েছে। আমাদের দেশে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস এসেছে হয়তো বিদেশফেরত কিছু মানুষের কাঁধে ভর করে।

বর্তমানে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস আমাদের দেশেও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এরইমধ্যে অনেক মানুষকে আক্রান্ত করে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে দুই জনের। এখন এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে জনগণকে বাঁচাতে আমাদের দেশের সরকারও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বিভিন্নরকম কঠিন কঠিন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। কোথাও লকডাউন। কোথাও শাটডাউন। দেশের সবস্থানে জনসমাগম সীমিত করার পরামর্শ। আবার ধর্মীয় উপাসনালয়ে লোকসমাগম কমাতেও বলা হচ্ছে। পাশাপাশি রোগ বিশেষজ্ঞরাও জনগণকে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে নানারকম দিকনির্দেশনাও দিচ্ছে।

এমতাবস্থায় সবচেয়ে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি, এদেশে আমার মতো নিন্ম আয়ের অসংখ্য মানুষ। আমরা যাঁরা দিনমজুর এবং দিনে আনে দিনে খাই, তাঁরা। আমরা খেটে-খুটে খাওয়া মানুষগুলো কোনো অবস্থাতেই এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসকে ভয় করছি না। বরং আতঙ্কের মধ্যে আছি প্রতিদিনের রোজগার নিয়ে; আর নিজের সামান্যতম বেতনের চাকরি নিয়ে। তাই আমার মতো অনেকেই মানছে না রোগ বিশেষজ্ঞদের নানারকম কঠিন কঠিন পরামর্শগুলো! যেই পরামর্শগুলো বর্তমান সময়ের মরণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে বাঁচতে অধিকতর সাহায্য করছে। কিন্তু আমরা ক’জন গরিব মানুষই-বা এসব পরামর্শগুলো মেনে চলছি? হয়তো হাতেগোনা গুটিকয়েক মানুষ। আর যাঁরা এসব পরামর্শগুলো মেনে চলতে দ্বিধাবোধ করছে, তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকলো, যথাশীঘ্র বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শগুলো মেনে চলার। বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শগুলো নিম্নরূপ:

১। সাবান দিয়ে বারেবারে হাত ধোঁয়া।
২। মুখে মাস্ক পড়া।
৩। সাথে অন্তত গুটিকয়েক রুমাল রাখা, নাহয় টিস্যু পেপার রাখা।
৪। সবসময় নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
৫। হাঁচি-কাশি দেয়, এমন মানুষ থেকে অন্তত তিনফুট দূরে থাকা।
৬। দরকার হলে প্লাস্টিকের গ্লাভস পরিধান করা।
৭। প্রতিদিনের ব্যবহার করা কাপড়চোপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলা।
৮। ঘরদোর সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
৯। যেখানে সেখানে কফ, থু থু না ফেলা।
১০। যদি সর্দি কাশি, জ্বর এবং সাথে হাঁপানির মতো অনুভূত হয়, তাহলে দ্রুত স্থানীয় আইসিসিডিআর বির হাসপাতাল, অথবা সরকারের নির্ধারিত হাসপাতালে গিয়ে নিজের চিকিৎসা নেওয়া।
১১। যেসব স্থানে অনেক লোকের সমাগম, যেমন বিয়েসাদী, জন্মদিন, লোক মেলা এমন লোকসমাগম স্থানে না যাওয়া বা এড়িয়ে চলা।

জানি এসব কঠিন নিয়মকানুনগুলো আমাদের গরিব মানুষদের জন্য খুবই অসম্ভব! তারপরও এই সময়ে অতি কষ্টে থাকার পরও যে মেনে চলতে হয়। তবে এসব নিয়মকানুন পরামর্শগুলো আমাদের জন্য আরও সহজ হতো, যদি পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশেগুলোর মতো আমদের দেশের সরকার নভেল করোনাভাইরাস প্রতিহত করার এসব প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো বিনামূল্যে বিলি করতো। কিন্তু তা কি আমাদের দেশের বর্তমান সরকার করবে? মনে হয় না। যেখানে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগির চিকিৎসকদেরই সুরক্ষিত পোশাক নেই! সেখানে আমাদের মতন গরিবদুঃখীদের সুরক্ষিত রাখার উপকরণ   সরকার কি করে দিবে? দিবে না! দিতে পারবেও না।

তাই আমরা এদেশের গরিব মানুষেরা এসব সুরক্ষা জিনিসপত্র বা উপকরণগুলো   ব্যবহারও করতে পারছি না। মরতে হলে এসব ছাড়াই মরবো। আর মানুষের যখন মরণ আসবে, তখন আরও কিছু দিয়েও কেউ কারোর মৃত্যুকে ঠেকাতে পারবে না। আর এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের চিন্তাও আমার মতন গরিবদুঃখীরা কেউ করেও না। চিন্তা শুধু একটাই, তা-হলো, রাত পোহালে খাবো কী? শুনছি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দেশের সব শপিংমল, মার্কেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। আর যা আছে, সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দেশের জেলাশহরগুলোতে লোকের সমাগম কমে যাচ্ছে। সব মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ছে। জনশূন্য হয়ে পড়ছে সহরের রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার।

আমরা কেউ রিকশাচালক। রাস্তা-ঘাটে লোক নেই তো উপার্জন নেই! কেউ রাজমিস্ত্রী। কেউ রাজমিস্ত্রীর যোগালি। সব বন্ধ তো সবকিছুই বন্ধ! কাজ করলে মজুরি, কাজ না করলে মজুরি নেই। মজুরি নেই তো ঘরে খাবার নেই। ছোটো ছেলে-মেয়েদের জন্য দুধ নেই! এভাবে ক’দিন অচলাবস্থা থাকে, তারও কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। বলা হচ্ছে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত সময়! আচ্ছা, যদি এরচেয়েও বেশি সময় পর্যন্ত এইরকম অচলাবস্থা থাকে? তাহলে দেশে আমার মতো গরিব মানুষগুলোর অবস্থা কী হবে?

আমি নিজে যেই চাকরিটা করি, সেটা একটা বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এলাকায় থাকা মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাথে আমদানি রপ্তানি। মার্কেট বন্ধ তো আমাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বন্ধ! ব্যবসা বন্ধ হলে, আমাকেই-বা ক’দিন কাজ ছাড়া মায়না দিয়ে রাখবো? হয়তো মানবতার খাতিরে চার-পাঁচ দিন দিতে পারে। এরপর মালিকেরা বলবে, “আর তো কুলাতে পারছি না! আপাতত মাসখানেক ঘরে থাকুন!” তখন আমি নিজেই বেকার হয়ে যাচ্ছি! তাই এখন নিজের মনের ভেতরে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবো, সেই চিন্তা নেই! আমার চিন্তা শুধু খাবারের। এই সময়ে মহান স্রষ্টা আমাদের সহায় হবে কিনা, তাও আমার জানা নেই!

৯১২জন ৫৮১জন

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ