
আচ্ছা, রাত নামে কেন? কারও কারও জন্য রাত অনেক অপেক্ষার, আনন্দের, শিহরণের। কারও কাছে জেগে থাকবার দুশ্চিন্তায়; কপালে জমা বিন্দু বিন্দু ঘামের। দিনতো যায় কাজে যেমন-তেমন। রাত অপেক্ষার; বড় কষ্টের, কখন ভোরের দেখা মিলবে এমন আশার!
দরজায় টোকা দিচ্ছে কেউ। এতরাতে কে? ফুটোতে চোখ লাগাতেই অবাক এতরাতে কেন? কি হয়েছে নবনী।
হাউমাউ করে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো মেয়েটি, “আমাকে বাঁচান আপু, আমাকে বাঁচান।ও আমাকে মেরে ফেলবে, আমি এমন জীবন চাইনা। আমি সুন্দর করে বাঁচতে চাই। আপনিই পারবেন। আমার তো কেউ নেই, আমাকে বাঁচান।”
-বাঁচাবো কেন? কি এমন হয়েছে?
-হারামজাদি, তুই এখানে। মধ্যরাতে স্বামীকে বেইজ্জত করতে এসেছিস, ঘরে চল! আর এই যে সমাজের স্মার্টনারী, ” আপনাকে সতর্ক করলাম। আমার বউ, আমার সংসার; আমার। আর আমার সমস্যার সমাধান আমিই করব। নিজের সংসার, চালচুলোর ঠি নেই অন্যের হিসেব নিয়ে পরেছে?”
হিরহির করে টেনে নিয়ে গেল নবনীকে। শুধু কানে বাজল “আমাকে বাঁচান আপু, আমাকে বাঁচান”!
সাতসকালে পুলিশ কেন? কি হয়েছে? নবনী সুইসাইড করেছে? সে কি সত্যি এটা করেছে নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। হায় আল্লাহ! কিচ্ছু করা হলোনা মেয়েটার জন্য। কতো আকুতি ছিল তার। লাশ মাটি দিতে নিয়ে যাচ্ছে বলতে বলতে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”। সামায়রা হক শুনছে, “আমাকে বাঁচান আপু, আমাকে বাঁচান”!
সামায়রা হক অল্পদিন এ বাসায় ভাড়া এসেছেন। ঘুমের সমস্যা তাই রাতে খুটখাট শব্দ করেন, হাঁটেন, কফি খান, লেখালেখি করেন। নবনী এসেছিল বাসায় ওঠার দুদিন পরেই। খুব গল্প জানে, হাসিখুশি মেয়েটা টুকটুক করে কথা বলে। কি সুন্দর মায়া মায়া শ্যামলা গড়নের মেয়ে।
তৃতীয়দিন সামায়রা জানতে চাইল তার পড়াশোনা, বর কি করে ইত্যাদি। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগেই বিয়ে হয়েছে। বেশ আমুদে মেয়েটি সারাক্ষন সামায়রাকে মাতিয়ে রেখেছে যেন। সেও সঙ্গ দোষে পরে গেছে। এখন সব মনের কথাই হয়।
নবনীর বর মাঝেমাঝে তাকে রুমে না পেয়ে ডেকে নিয়ে যায়। সামায়রা খেয়াল করে মেয়েটি মন খারাপ করে যায়। কেন? এ বয়সের মেয়েরা স্বামী ঘেঁসা হয়। স্বামী বাইরে থেকে এলে কোথায় উৎফুল্ল হবার কথা। অথচ সে মন খারাপ করে যায়।
এক বিকেলে নবনী হঠাৎই জডিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
-আমার ভালো লাগেনা কিছু। আপনি কত সুখী, নিজের মত থাকেন। ইশ্! আমি যদি পারতাম চাকরী করতে। নিজের মত থাকতাম। আমাকে একটা চাকরী নিয়ে দেবেন!
-তোমার বর ব্যাংকে জব করে। অনেক বেতন পায় তোমার দরকার কি? এখন লাইফ ইনজয় কর?
-আর ইনজয়! খুব বাজে জীবন।
বাবামারা যাবার পর মামা-চাচাদের দারস্থ হয়েই তারা বড় হয়েছে। নবনী দেখতে সুন্দর হওয়ায় ভালো সম্মোন্ধ আসে। ছেলেপক্ষের তেমন কোন চাওয়া- পাওয়া নেই, তাই খুব দ্রুত বিয়ে হয়ে যায়। তাছাড়া ছেলে ব্যাংকে জব করে। ভালো মাইনে পায়। কিন্তু এমন জীবন হবে এটা কারই বা প্রত্যাশা থাকে।
চোখে মুখে তারও স্বপ্ন ছিল বিয়ে,বাসর এসব ঘিরে। কিন্তু বাসর কি এমন হয়? হয়তবা হয়!
-এত তারাহুরো করছেন কেন?
-আরে সময় নাই, সব খুলে ফেল তারাতারি। অতঃপর পাথরসম কিছু একটা কলিজায় গিয়ে লাগলো বোধহয়। নবনীর চিৎকারে বাতাস ভারী হতে পারত কিন্তু হলনা।কারন একফাঁকে তার মুখ বেঁধে ফেলেছে। বর বলেছিল, প্রথম দিন তাই এমন হলো, পরে ঠিক হবে।
নবনী তো জানেনা। টুকটাক গল্প শুনেছে সেসব তো এমন নয়। সে কিছুই বলেনি। কিন্তু অনেক রক্ত পরেছে। ব্যাথায় সে হাঁটতে পারছেনা। শরীর, মন জুড়ে অদ্ভুত খারাপ লাগা, কিছুতেই কাটছে না।
স্বামী নামের স্বপ্নের মানুষটি সারাদিন ভালো ছিল। কত গল্প হলো দুজনের। বিয়ের পর কাল থেকে ব্যাংকে জয়েন করবে। একচোট ঘুরেও বেডিয়েছে দুজনে। মায়াবী পুরুষ, চোখ ফেরানো যায় না। দুদিনেই প্রেমে পরেছে নবনী। কিন্তু রাতে?
নবনী নিজেকে বোঝাল ঠিক হবে একদিন ঠিক হবে কিংবা নতুন বলে হয়ত এমন। সকালে মানুষটা চুপচাপ নাস্তা সেরে অফিসে গেল। দুবার ফোনও দিয়েছে, সরিও বলেছে। সন্ধ্যায় ফুল হাতে ফিরে এল। নবনী আবার প্রেমে পড়ে গেল। তার কখোনোই মনে হয়নি তার স্বামী অসুস্থ, বিকৃত মানসিকতার একটা মানুষ। যে প্রতিরাতে নিজেকে পুরুষ প্রমাণ করার শারীরিক খেলায় মেতে ওঠে। ওষুধ খায় কিংবা কিছুএকটা পরে নেয়। তারপর পায়ুপথ কিংবা নিম্নাঙ্গ কোনটাই সঠিক ব্যবহার করেনা।
আজ লোকটা স্বাভাবিক ভাবেই নবনীর পাশে এসে বসল। হয়ত কিছু বলবে। তেমন কিছুই বললনা। শুধু বলল, “নবনী আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কোনদিন আমাকে ছেড়ে যেওনা”।
গভীর মমতায় নবনী মানুষটাকে জড়িয়ে ধরল?
-এ কেমন কথা। ছেড়ে যাব কেন? তুমি তো আমার সব। কালকের কষ্ট আমি সব ভুলে গেছি।
দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরল। নবনীর অষ্টাদশী শরীর ভালোবাসায়; ভালোলাগায় পূর্ণ হতে চাচ্ছে। প্রিয় মানুষটির স্পর্শ মধুর হয়। সে তাকে বুকে টেনে নিল। আদরে আদরে ভরিয়ে দিল। তারপর সেই অমানুষ জানোয়ার এসে মানুষটাতে ভর করল। সে অন্যরকম হয়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকল। এ যেন দাঁতাল শুয়োরের কামড়।
-আহ্ এরকম করছ কেন?
-আমার এমনি ভালো লাগে। চুপ কর কথা না। আমি পশু হয়ে গেছি। হা হা হা হা হি হি হি হি।
অন্যসবার মত নবনীও চেয়েছিল বর্ষায় প্রথম বৃষ্টিতে তাকে নিয়ে ভিজবে। ভরা জোছনায় সারারাত জেগে গল্প করবে। কিন্তু এসবের কিছুই হয়না। ভালো পরিবার, ভালো চাকুরী, সমাজে প্রতিষ্ঠিত, শিক্ষিত মানুষের তকমা নিয়ে লোকটি দিনের পর দিন নবনীর উপর বিকৃত যৌনাচার করে।
এভাবে চলতেই থাকল। দিনের সারাবেলা কাজে কাটে। রাতে সে মানুষটা অমানুষ হয়ে ওঠে। কোনদিন ওষুধ খায় বেশি পাওয়ারের জন্য তারপর নবনীর নরমাংস চিবায়। আর কোনদিন সারাশরীর একটা লাশ বানিয়ে নিজের অসুস্থতাকে , দূর্বলতাকে ব্যবহার করতে না পেরে হাত-পা, দাত-নখ চালিয়ে খ্যান্ত হয়।
এটাই নাকি সংসার ও দাম্পত্য। নাকি পেটের দায়। মাকে বলেছে। মা বলেছে, “মেয়েদের শরীর, তার কি কোন মূল্য আছে। স্বামীর হক সে যেমন চায় ব্যবহার করবে! তাতে কি? তোমার সূখ তো আছে, টাকা তো আছে, ঠাই তো আছে। বাকি দুটোকে নিয়ে পারিনা। তোমাকে কোথায় জায়গা দেব। শরীরকে অভ্যাস করাও। এমনিতেই ঠিক হবে।
-মা কষ্ট হয়, খারাপ লাগে ,অস্বস্তি হয়, ঘেন্না হয়, কাটা মুরগীর মত ছটফট করি। আর সে বেঘোরে নাক ডেকে ঘুমোয়। তুমি কেন বোঝনা?
-আমি বুঝেই বা কি করব? আমার কিছু করার নেই।
(ভাইয়েরা নারীকে “সম্পত্তি নয়, সম্পদ ভাবুন” ভেবে সেভাবেই তাদের সাথে আচরন করুন। জীবন অনেক সুন্দর হবে। নারীরাও আপনার মতই একটা অংশ।সম্প্রতি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে এক তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তার অতি রক্তক্ষরণ হওয়ার পেছনে কারন ছিল যৌনাঙ্গ অতিক্ষত হওয়া। যাতে মনে হয়েছে তাকে গ্যাং রেপ করা হয়েছে। আসলে তা নয়, সুপুরুষ নিজের লালসা চরিতার্থ করার জন্য ফরেন বডি ব্যবহার করেছে। এবং পায়ু পথেও যৌনসঙ্গম করার কারনে সেখানেও অতি রক্তপাত হয়েছে। নারী পুরুষের এই শারীরিক হওয়া স্বাভাবিক ও আল্লাহ প্রদত্ত। কারও যদি না থাকে বা কম থাকে, কিংবা বিকৃত যৌনাচার তার কাছে আনন্দের হয় কিংবা নিজের বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ করতে চায় নারীদের উচিত মেনে না নেয়া। সে আপনি ঘরের বৌ হন কিংবা গার্লফ্রেন্ড যেটাই। নারীরা সাথে সাথেই প্রতিবাদ করবেন, বিরোধীতা করবেন। অন্যকে সুখী করতে নিজের জীবন বিলিয়ে দেবেন না। কারন নারী সঙ্গমের আগে ওষুধ সেবন কিংবা ফরেন আধুনিকতার বদৌলতে কৃত্তিম বডি বা কোনকিছু ব্যবহার চরম অন্যায়)।
ছবি- নেট থেকে নেয়া।
১৫টি মন্তব্য
বোরহানুল ইসলাম লিটন
নির্মম এক অধ্যায় তুলে ধরেছেন।
এমন বিকৃত মনের মানুষ সমাজে দু’একটা থাকে বৈকি
যাদের অত্যাচারে অসহায়ীর আর ভোরের আলো ফুটতে চায় না।
মুগ্ধতায় আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম অন্তহীণ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা সবসময়।🌹🌹
পপি তালুকদার
আসলে সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানের যেন কোন পথ নেই!!! সবাই আলোচনা করি আর সেটা সেখানেই সমাপ্ত।নৈতিকতার অনুশীলনের অভাব আমাদের! আশাবাদী হয়তো সব সমস্যার সমাধান হবে।ধন্যবাদ সামসময়িক বিষয়ে লেখার জন্য।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা রইলো।🥰🥰
বন্যা লিপি
কালে কালে কলিযুগ ভাঙারও গুণতে হয় প্রমাদ। সাম্প্রতিক ঘটনা তারই প্রমান।আমি এত সোজাসাপ্টা ভাষায় লিখলেন কি করে ভাবছি…….
রোকসানা খন্দকার রুকু
সোজাসাপ্টা ভাষা আর প্রকাশ না থাকায় আমাদের এত হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ🥰🥰
রেজওয়ানা কবির
লেখাটি পড়েছি রাত ৯ টায় কমেন্ট করতে আসলাম কেবল, কারন বলি আমার পিচ্চি ভাই রাহী আমার কাছে তোমার লেখা গল্প শুনবে,,,পিপিপি গল্পটা পড়,,,
এবার আসি,আমাদের সমাজে এরকম অনেক বিকৃত রুচির মানুষ আছে যারা হায়েনার মত নারী শরীর দেখলেই উপচে পরে । তারা বোঝেই না যে তারা মানুষরুপী পশু। তখনই সেটা হয় ধর্ষন। লেখাটি পড়ছিলাম আর গা শিহরন দিচ্ছিল যে আজ কতটা অসহায় আমরা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সমস্যা নেই চাচাতো ভাইবোনদের সময় দিতে খালাতদের ভুলে যেও না। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো🥰🥰
তৌহিদ
নারী হয়ে জন্মেছি আমি পাইনি সম্মান।
পুরুষ সেতো পুরুষ নয় এ যেন নেকড়ের আহ্বান। নারীদের খুবলে খাওয়া পুরুষ হতে রক্ষা পাওয়া সকল নারীর অধিকার।
সমাজের নারী পুরুষ সকলেরই এরকম চাপা কান্না থাকে। এর দায়মুক্তি সহজ নয়।
চমৎকার লিখেছেন আপু। শুভকামনা জানবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার মন্তব্যে বরাবরই অনপ্রাণিত হই। লিখতে ইচ্ছে করে। দেরীতে হলেও মন্তব্য করেন।সেজন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা🌹🌹
তৌহিদ
আসলে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে দিন পার হচ্ছে আপু। এরমাঝে ব্লগে না আসলে ভালো লাগেনা তাই কিছুটা সময় লাগে। মন্তব্য দেয়া ছাড়াও অনলাইনে কিছু কাজও করতে হয় যে!!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
নারী মানেই প্রতিবাদহীন, নারী মানেই পবিত্র, নারী মানেই পর্দা, নারী মানেই অবুঝ, নারী মানেই নীরবে সয়ে যাওয়া, নারী মানেই ঠিকানা বদল হওয়া পুরুষের ছায়ায়। দিনশেষে এই গৎবাঁধা তত্ত্বের ভিত্তিতেই আবদ্ধ নারী সমাজ। এদেশে পুরুষরা ও নির্যাতিত হচ্ছে ঘরের মধ্যে কিন্তু তারা তো মেয়েদের মতো সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে ভীত থাকে না । নিরন্তর শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ দিদিভাই। আপনার মন্তব্যে বরাবরই অনপ্রাণিত হই॥ ভালোবাসা রইলো🥰🥰
আরজু মুক্তা
যতক্ষণ একটা পরিবার একটা ছেলেকে শিখাবে না, নারীও একজন মানুষ তাকেও সম্মান করতে হবে, ততক্ষণ এই অত্যাচার চলবে। কাউন্সিলিং পরিবার স্কুল সবখানে জরুরি। সর্বোপরি ধর্মীয় বোধ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম সেটাই। কাউন্সিলিং খুব জরুরি।
শুভ কামনা রইলো। ভালোবাসা রইলো🥰🥰