রাত ফুরোলেই দিন। আচ্ছা এমন যদি হয় রাতের পর রাত, শুধুই রাত! কেমন হবে? ওই যে উত্তর-দক্ষিণ মেরু; ছয় মাস রাত আর ছয় মাস দিন। আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে ওই দৃশ্য। জীবনে অদ্ভূত কিছু দেখার আগ্রহ নিয়ে বয়সটাকে বাড়তে দিচ্ছি। তবে দেখার পাল্লাটা ভারী আদৌ হবে কিনা সেটা জানিনা। ভাগ্যিস স্বপ্ন দেখার জন্য ট্যাক্স দিতে হয়না, তার জন্য ভাগ্যর প্রতি কৃতজ্ঞ।

স্পেস থেকে দেখার ইচ্ছে পৃথিবীর বুকে সূর্যটা কিভাবে আলো ছড়ায়। মাধ্যাকর্ষণজনিত কারণে মানুষ কিভাবে ঝুলে আছে, স্পেসে বসে ভেসে ভেসে সেসব যদি দেখতে পেতাম,আহা!আটলন্টিকের একদিকে দিন, অন্যদিকে রাত; কিন্তু একটা তো জায়গা আছে, যেখানে দিন আর রাত মিলিত হয়? বেলজিয়াম থেকে যখন কানাডা আসি, একটুকুও চোখ বন্ধ করিনি, শুধু ওই দৃশ্যটা দেখার জন্য। নাহ হলোনা দেখা। মেঘের অনেক অনেক উপর দিয়ে উড়োজাহাজটা ভাসছিলো। গভীর জলের নীচে এখনও টাইটানিক জাহাজটির ভগ্নস্তূপ ডুবে আছে। ছুঁয়ে আসতে ইচ্ছে করে। আমার তালিকায় আরোও কয়েকটি ইচ্ছে আছে। অগ্রহায়ণ মাসে ধানগাছের সবুজ পাতায় শিশির বিন্দু ঝিলিক দিয়ে উঠছে আর সূর্য সোনালী রং ছড়াচ্ছে। গ্রামের অমন দৃশ্য, পৌষ সংক্রান্তিতে শীতের বুড়ীর ঘরে আগুণ লাগানো। কই পাবো অমন দিন আর?

ইচ্ছেগুলো সাঁতার কাটছে, কিন্তু পাড়ে পৌঁছাতে পারছেনা কিছুতেই। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান সেটা নাকি আর নেই! সেই ছোট থেকে মাথার ভেতর একইভাবে স্থির হয়ে আছে ভাসমান অবস্থায় কি করে উদ্যানের জন্ম হতে পারে! বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে সাদা-কালো টিভিতে সিনেমাটা দেখেছিলাম। বালিশে মুখ চেপে কেঁদেছিও। সেই ১৯৮৬ সালে সিনেমাটি দেখার পর থেকে মনে মনে বিজ্ঞানী হবার জন্য মনস্থির করলাম। আমি আবিষ্কার করবো কেন এখানে সব জাহাজ-প্লেন সবকিছু গায়েব হয়ে যায়? জানলাম ম্যাগনেটিক ফিল্ড ওখানে। এতোকিছু করতে পারছে মানুষ তারপরেও কেন এই বারমুডা রহস্যর উদঘাটন করছে না? এর কি কোনো সমাধানই নেই? যাক বিজ্ঞানী হইনি ভালোই হয়েছে। কিন্তু আমার যে বারমুডা দেখার ইচ্ছা, সেটা কি হবে? সাগরও মৃত হয়, কি অদ্ভুত! লাখো চেষ্টা করলেও মরণ তো দূরের কথা, ডুব দেয়াই যাবেনা। সেই সমুদ্রের নামই ডেড সি। ওখানে একটি বার নূপুর পায়ে জলে তরঙ্গ তোলার ইচ্ছে। শান্ত নগরী রোমের পথে ভরা দুপুর বেলায় নিরোর বাঁশী শুনবার ইচ্ছে। কতো কতো ইচ্ছে নিয়ে আরোও একটি বছর পাড়ি দিতে যাচ্ছি।

সেই ১৯৮৬ সাল থেকে দেখে আসছি সিডনি-মেলবোর্নের নতূন বছরের ফায়ার ওয়ার্কস, কই দেখা হলো স্ক্রিন ছাড়া? আরে এতো কাছে থেকেও নায়াগ্রার নতূন বছরের আলো ঝলমলে আকাশটাকে দেখতে পারছি না। এমনই হয়।

তারপরেও এ জীবনে অনেক কিছু দেখেছি। রাতের অন্ধকারে গ্রামের বাড়ীতে সারারাত জেগেছি উপচে পড়া চাঁদের আলোয়, ভিঁজিয়েছি পা হেমন্তের শিশিরে। মাঘের কুয়াশায় হারিয়ে যেতে দিয়েছি নিজেকে আর অনেক আনন্দ জমিয়েছি। এতো সুন্দর দৃশ্য এ চোখ দেখেছে, আহ মনের ভেতর কেমন একটা আলতো কোমল ছোঁয়া জানি এখন। উড়িষ্যায় বেড়াতে গিয়েছি। অনেক ভোরে কটক থেকে পুরী যাবার পথে সেই অসাধারণ সৌন্দর্য এ জীবনে অনেক না-পাওয়াকে ম্লান করে দেবে এমনই শক্তি ওই অতুলনীয় স্মৃতির। অমন সূর্যোদয়ের কথা আজ মনের ভেতর যেই জেগে উঠলো বিশটি বছর পরে, নিজের গন্তব্য পার করে অনেক দূরে চলে কখন যে চলে গেলাম! এসব পাওয়া বেখেয়ালি করেই সবার জীবনকেই। স্বপ্নের নায়াগ্রা দেখেছি। টাইটানিকের ভগ্নস্তূপ দেখিনি,কিন্তু যেখানে ডুবেছে সেই জায়গা ঘুরে এসেছি। আটলান্টিকের জলে পা ডুবিয়ে বসে মনের গভীরতম জায়গাটিকে আজকের জন্যে সাজিয়েছি। রোমের রাস্তায় নিরোর বাঁশী না শুনলে কি হবে, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে রৌদ্র ছাতার নীচে বসে একজন বাঁশীওয়ালার যে বাঁশী শুনেছি তার কোনো তুলনাই হয়না।

অনেক কিছু পেয়েছি জীবনের ফেলে আসা বছরগুলোতে। প্রাণ খোলা হাসি পেয়েছি, যা ছাড়া আমি একটা মূহুর্তও ভাবতে পারিনা। এসব তো কেবলই দৃশ্য, আরোও তো আছে। সেসবের গল্প নয় আরেকদিন হবে। তবে এটুকু না বললে আমার ২০১৫ সালের আনন্দ অপূর্ণই থেকে যাবে। ২০১৪ সালের শেষ দিনে ছুটির চিঠি পেয়েছি, অনেক কালের পরে প্রিয় দুজন মানুষের বুকে মাথা রাখবো। আর আমার বদলে যাওয়া শমশেরনগর চা’বাগানের মাঠের মাটিটাকে ছুঁয়ে আসবো। পাওয়ার ঝোলায় আরোও কিছু সুন্দর স্মৃতি জমাতে, স্বপ্নবৎ লাগছে এসব ভাবতেই।

হয়তো চলবে,
নয়তো না।
কি হবে,
তা জানিনা….

ছবি(আকাশের চারটে রূপ) ——–

দুই জানুয়ারি, দু’হাজার পনেরো সাল সকাল দশটা
আটাস ডিসেম্বর, দু’হাজার চৌদ্দ সাল ভোরের বেলায়
ছাব্বিশ ডিসেম্বর, দু’হাজার চৌদ্দ সাল বেলাশেষে
পাঁচ সেপ্টেম্বর, দু’হাজার চৌদ্দ সাল, রজনীযোগ

হ্যামিল্টন, কানাডা
২জানুয়ারি, ২০১৫ সাল।

১০১৪জন ১০১৪জন
0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ