
এক শহরেই আছি, এক শহরেই থাকি ; তবুও তোর আমার দেখা হয়না বন্ধু কতদিন! শুনেছি তুই এখন বড় ডাক্তার হয়েছিস, স্বামী-সংসার আর ছোট্ট মামনি কে নিয়ে সুখেই আছিস। আমিও আছি তবে তোর মতো স্বামীর সংসার না থাকলেও আছে আমার ছোটখাটো সংসার; বাবা-মা আর আমি। অফুরন্ত সময় হাতে , ভাবছিস মহা-সুখেই আছি? না-রে ভালো নেই মোটেই। মনে পড়ে কেবলই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। কত ঘুরেছি, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ক্যান্টিনে জম্পেশ আড্ডা দিয়েছি । মনে পড়ে, ‘কফি হাউজের আড্ডাটা আজ আর নেই’ এ গানটি নিয়ে আমাদের কলেজের নাম জুড়িয়ে প্যারোডি করা গানটার কথা। ভেবেছিলি সময় স-ব ভুলিয়ে দিয়েছে? কিছুই ভুলিনি, ভোলা কি যায় বল?
তুই, আমি, সুহেলী, শিপু, তাম্মী ছিলাম পঞ্চ-পান্ডব। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী ছিল সুহেলী। তোর আর সুহেলীর চেহারার মধ্যে এতোটাই মিল ছিল যে কলেজের সবাই ভাবতাম তোরা বোন নয়তো কাজিন। সবারই কমবেশি ভালোলাগা বা সম্পর্ক ছিলো, শুধু তুই আর শিপু ছিলি এসব বাঁধা ধরার বাইরে । তোর আম্মা কত আফসোস করতো ,তোর একটা সম্পর্ক হবে। তোদের পরিবারটাকে আমার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে হতো। তোর ভাইয়ারা, ভাবীরা বান্ধবীর মতো আচরণ করতো, দুষ্টুমি করতো আমাদের সবার সাথে, যেন আমরা সবাই একই ক্লাসের ছাত্র- ছাত্রী। তোদের বাসার মতো এমন প্রাণচাঞ্চল্যতা, ভালোবাসা আর কোথাও পাইনি। তোদের বাসা ছিল পুরাতন ঢাকায় তবুও সপ্তাহে একবার না গেলে ভালোই লাগতো না । বান্ধবীরা একেক দিন একেক জন যাতায়াত খরচ দিয়ে চলে যেতাম। কলেজ থেকে সোজা চলে যেতাম, খাওয়া দাওয়া করে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতাম যার যার গন্তব্যে।
আজ সবাই ব্যস্ত , কতদিন তোদেরকে দেখিনা। তোর বিয়ের দাওয়াত দিতে আসলি সে-ই শেষ দেখা, কথা। বিয়েতে যাওয়া হয়নি বিশেষ কারণে। শিপুর সাথেও অনেকদিন যোগাযোগ ছিল দু’জনের বাসায় যাতায়াত থাকার জন্য। তাম্মীর সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছে ধানমন্ডি লেকে। শুধু সুহেলী কারো সাথেই যোগাযোগ রাখলোনা। তারপর ফেসবুক এ জয়েন করেই তোদের সবাইকে খুঁজেছি কিন্তু কাউকে পাইনি। হঠাৎ ছয় বছর আগে তোকে খুঁজে পেলাম। তোর বিয়েতে যেতে পারিনি সেই লজ্জায় তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না । তাই ফেসবুকে তোকে পেয়ে কি যে খুশি লেগেছিল বোঝাতে পারবো না। আমাদের সময় তো চিঠির স্বর্ণালী যুগ ছিল যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। একমাত্র তোদেরই ল্যান্ডফোন ছিলো। উফ্ ল্যান্ডফোনের কথা মনে পড়তেই মনে পড়লো আরো অনেক মজার ঘটনা, বন্ধু বাড়লো । তোর কন্ঠটা এতো মিষ্টি ছিল যে ক্রস কানেকশনে অনেকেই তোর প্রেমে পড়ে যেত। সেইসব ঘটনা নিয়ে কলেজের আড্ডা হতো আরো জমজমাট।
কিভাবে যে দুইটা বছর কেটে গেলো এক নিমিষেই , ভাবতেই অবাক লাগে। খুব কষ্ট হয়, মন খারাপ হয়ে যায় সেইসব স্মৃতি বিজড়িত ঘটনার কথা মনে হলেই। কখনো ভুলতে পারিনি তোদেরকে। কিন্তু বিধিবাম , ফেসবুকে তুই আমাকে রেসপন্স করলিনা। খুব খারাপ লাগলো, তোর বরকে নক করলাম তোর সাড়া না পেয়ে। দেখি ও ব্যাটাও আরেক কাঠখোট্টা। তোরা দুজনেই ম্যাসেজ সিন করিসনি, আবার রিকোয়েস্ট অপশন সেটাও ডিজেবল করা। যাইহোক কয়েকটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে প্রত্যুত্তর না পেয়ে তোর আশা ছেড়ে দিলাম । হঠাৎ সেদিন তোর ম্যাসেজ পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। জানলাম তোর ভাতিজি আমার ম্যাসেজ দেখে তোকে জানালো। তুই জানতি না ফেসবুকে আনফ্রেন্ডদের ম্যাসেজের কথা। তো ডাক্তার সাহেবা এমন সময় আপনি যোগাযোগ করলেন যে তখন দেশ, পুরো বিশ্ব এক মহা ক্রান্তিলগ্নে আবদ্ধ। চাইলেও আমরা একই শহরে থেকেও কারো সাথে দেখা করতে পারছিনা।
কত কত কথা, স্মৃতি জমা হয়ে আছে তোকে বলবো বলে। শুধু হাঁসফাঁস করছি দু’জনেই। জানলাম তোর সাথে শুধূ তাম্মী ফেসবুকে এ্যাড আছে, যোগাযোগ আছে। তোর মাধ্যমে ওকেও পেয়ে গেলাম নতুন করে। ওর সাথে ও কথা বললাম। কিযে ভালো লাগছিলো তোদের কে পেয়ে। শুনেছি শিপু গ্রামে শিক্ষকতা করে। শিপু আর সুহেলী এদের পেলে আমরা পঞ্চ-পান্ডব আবার জম্পেশ একটা আড্ডা দিতে পারতাম । তাম্মী যদিও খুলনা থাকে তবুও যোগাযোগ তো হলো, কথাও হলো, দেখাও হবে ঈশ্বর চায় তো। করোনা আজ আমাদের দেখা করতে দিচ্ছে না, গৃহবন্দী করে রেখেছে। তোর উপর খুব রাগ হচ্ছে কেন আগে ম্যাসেজ দেখলিনা। আর সবচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে করোনার উপর। আমরা দু’বান্ধবী তানা হলে এতোদিনে কয়েকবার দেখা করে উসুল করে নিতাম এতো দিনের না-পাওয়ার কষ্ট, দূরত্বটাকে। দোয়া কর , যেন এই দুর্বিষহ সময়টা তাড়াতাড়ি শেষ হয়, পঞ্চ-পান্ডব না হোক অন্তত ত্রিরত্ন একত্রিত হবার সুযোগটা হয়ে যাক। পুরাতন বন্ধুত্ব টাকে নতুন রূপে, নতুন ধাঁচে উপভোগ করবো। ভালো থাকিস, সাবধানে থাকিস । করোনা নিপাত যাক, বন্ধুত্ব টিকে থাক ।
২৩টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
ঠিক বলেছেন দিদি। এক শহরে আছি
অথচ কেউ কারও সাথে দেখা করতে পারছি না
এই অভিসপ্ত করোনায়।
ভার্চুয়াল জগতে। দুধের স্বাধ ঘোলে মিটাই।
তাও মিটে না স্বাধ আর ঝাল।
ঐ করোনা নিপাক যাক
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা দাদা। একদম ঠিক বলেছেন, দুধের সাধ ঘোলে মিটাচ্ছি ভার্চুয়াল জগত দিয়ে। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রথম মন্তব্য করার জন্য শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ. 🙂 🙂
বন্যা লিপি
হাজিরা দিয়ে গেলাম ছোটদি, আসছি পরে পুরোটা পড়ে মন্তব্য করবো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অপেক্ষায় রইলাম
কামাল উদ্দিন
আমিও আমার এক পুরোনো বন্ধুকে অনেক খুঁজে বেড়াই। জানিনা আপনার মতো আমিও ওকে পেয়ে যাবো কিনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আশা করি পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
সঞ্জয় মালাকার
একদম সত্যি বলেছেন দিদি, একশহরে থেকেও কেউ কারো সাথে দেখা করতে পারছিনা।
একান্ত অনুভূতি পড়ে ভালো লাগলো দিদি, ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা । ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। শুভ কামনা রইলো
ছাইরাছ হেলাল
এ সব বন্ধুত্ব চাইলেও মিটিয়ে ফেলা যায় না,
তাও ভাল, সবাইকে খুঁজে পেয়েছেন, দাঁত কিড়মিড়িয়ে একটু অপেক্ষায় থাকুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আসলেই তাই। এমন সময় পেলাম যখন দাঁত কিরমিড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন। শুভ সন্ধ্যা
মাহবুবুল আলম
স্মৃতিজাগানিয়া আপনার একান্ত অনুভূতি ভাল লেগেছে।
আমাদের এ যান্ত্রিক সময় সব কিছু ভুলিয়ে দিতে চাইলেও ভুলিয়ে দিতে পারে না।
সময়ের সে ক্ষমতাও নেই।
ভাল থাকবেন শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য। সত্যিই তাই সময়ের ও সে ক্ষমতা নেই এসব স্মৃতিজাগানিয়া ভোলাবার। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
জিসান শা ইকরাম
প্রানের, কাছের বন্ধুদের অনেক দিন পরে খুজে পাওয়া অত্যন্ত আনন্দের। স্কুল, কলেজের বন্ধুদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন অনেক বেশি থাকে। তাদের কখনো ভুলা যায় না।
এতদিন পরে খুজে পেলেও করোনার কারনে দেখা হচ্ছে না। এটা অসহ্য।
চিঠির মত করে আন্তরিক পোস্ট খুবই ভালো হয়েছে।
বন্ধুত্ব অমর হোক।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দাদা ভাই কি আর বলবো এযে কতটা অসহ্য আর বেদনার! দোয়া করবেন যেন আমাদের মিলনমেলা টা হয়। খুব উদগ্রীব হয়ে আছি। স্কুল কলেজের বন্ধুত্ব টা সত্যিই অন্যরকম ভালোলাগার, ভালোবাসার। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
প্রদীপ চক্রবর্তী
শৈশব থেকে ছাত্রজীবনের অনেক বন্ধুর সাথে স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে।
একেকজন একেক জায়গায়।
আর তাদেরকে খুঁজে পাওয়া ও একসাথে আড্ডায় যোগ দেওয়া সে তো এক আনন্দের বিষয়।
কখনো তাদের ভুলে থাকা কখনোই যায়না।
অমর হোক বন্ধুত্ব।
শুভকামনা দিদি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম কখনো ই ভোলা যায় না আর তাদের সাথে পুনর্মিলন সেতো স্বর্গ হাতে পাবার মতো। ধন্যবাদ দাদা অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
ফয়জুল মহী
আসলে এইটাই মানবতা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঠিক ভাইয়া। ধন্যবাদ ভাইয়া ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো।
শামীম চৌধুরী
দিদিভাই বরাবরের মতন এবারও ভাল লাগলো। শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।এমন করে বললে আর কি লাগে ! আপনাদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হই বারবার। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। শুভ কামনা রইলো
হালিম নজরুল
আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু এই শহরেই থাকে। অথচ গত এক বছরেও সাক্ষাৎ হয়নি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এমন বন্ধু আমার একজন আছে যার সাথে বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে বা অন্যসময় সময় দেখা করি , আমাদের একটা গ্রুপ আছে তাদের সাথে গেট টুগেদার করি বাইরে যাই। প্রায় একবছর হলো ওর সাথে দেখা হয়না, কোনো প্রোগাম ও হয়নি। ধন্যবাদ ভাইয়া শুভ কামনা রইলো