
রিক্সা থেকে নেমে একটু হোঁচট মত খেলাম,খুব সাধারণ হোটেল জেনে-ই এসেছি,তা-ও,বন্ধুর (ছোট ভাইয়ের মত)সাথে। চো চো পেটে, দুপুরে। খুব-ই অপরিসর তবে পরিচ্ছন্ন, সাকুল্যে দু’টি প্লাস্টিকের টেবিলে মোট আট-টি চেয়ার নিয়ে এই ভাতের হোটেল। প্রায় মানবহীন গলিতে। অনেকটা হিন্দুস্তানি ধাবা স্টাইল। একটি টেবিল খালি হতেই দ্রুত জায়গা নিলাম, কিউ আছে যেহেতু। আমি, বন্ধুটি, আমাদের রিকশাওয়ালা আর গল্প।
হার হাইনেসের বাজখাঁই হুকুমে (তাঁকে খুপ ভয় পাই)বাজারে এসেছি। বাজার রেকি করে মুরগির বাজারে এসে জান-ই আত্মীয়ের সাথে শলা করছি কী কিনব বা কিনব-না, কতটুকু কিনব, বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে এই আত্মীয়েরা আছে শুধু গিয়ে দাঁড়ানোর অপেক্ষা, গেজ করে সমাধান দিয়ে দেবে, শুধু বলবে সাথে নিয়ে যাবেন নাকি বাসায় পাঠিয়ে দেব, সরি! ভেবে বসবেন-না যেন, কেউকেটা বা রাজা মজারাজা টাইপ কিছু একটা! তবে ভাব-সাব রকম-ফকম অনেকটা তাই।
এমন একটি পয়েন্টে বসে/দাঁড়িয়ে আছি, হাসি হাসি মুখ করে গল্প গা-ঘেঁসে দাঁড়ায়, অবাক হলেও অবাক না হওয়ার ভান করে মোটা ভারী গলায় অবজ্ঞার ভাব নিয়ে চোখে হাল্কা রাগ মেখে জানতে চাইলাম এখানে কী? খুব গোবেচারা ভাব নিয়ে নিম কণ্ঠে বিলে আমাকে অনুসরণ করে এ পর্যন্ত এসেছে, অনেক দিন দেখা হয় না তাই! কিছু ইন্দ্রিয় চালু করে সতর্ক প্রশ্ন করলাম, আসল কথা বল। ইলিশ মাছ কেন ডিম পাড়ে? আর যদি পাড়ে-ও, তবে এ-সময়ে কেন? যদি পাড়ে , পাড়ুক, তবে এই নদীতে কেন? সিক্স/সেভেন সেন্স চালু করে বলি, এখানে এই মাছ-বাজারে কোন ইলিশ-বিজ্ঞানী আছে বলে তো শুনিনি, গল্প মিনমিনে গলায় বলে, ইয়ে মানে যদি কেউ, কোন বিজ্ঞানী থাকে, থাকতে-ও তো পারে। ও আচ্ছা, গরম মেজাজ চেপে শুধু বললাম, আসল ইচ্ছের কথা বলে ফেল বাছা। অন্নেক দিন কোন ঘুরান্তিস হয়-নি। খুব নিচু গলায় বলে চুপ মেরে রইল।
দুপুরের দিকে অতটার সময়ে RYANS COUMPUTER এ থেক। শুনে বগল বাজাতে বাজাতে ভোঁ-দৌড়। বাজার শেষে গ্রাম্য শহর থেকে শহুরে শহরে যাওয়ার পরিকল্পনা করাই ছিল, গল্পকে ট্যাগ করে নিলাম, এতদিন পর এত করে বলছে যখন।
এলার্ট এলার্ট !!!
অতীব সইত্য ঘটনালম্বনে এই মহার্ঘ লেখাটি পড়ে আপনাদের মহা মূল্যবান/অ-মূল্যবান সময় ক্ষেপণ করা ঠিক হবে কী-না বারে বারে বা নুন্য পক্ষে একবার ভাবুন। সোনেলা অষ্টম বছরে পি পি/পই পই/পিল পিল করে পদার্পণ করেছে আপনাদের-ই একান্ত বদান্যতায়, থাকবে আরও, লেখাটি কিন্তু থাকছে/থেকেই-যাচ্ছে।
ধুর!! কিসের মধ্যে কী!
যাক যে গপ্পো বলছিলাম, আমার পৌঁছানোর আগেই গল্প সেখানে গ্যাঁট হয়ে বসে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর চালাচ্ছে, যেন মহা কাল ধরে একে অন্যের আত্মীয়, আমায় দেখা মাত্র কিচ্ছুটি জানে না। আগে থেকে বলে রাখা এইচ পি ২৪ ইঞ্চি মনিটরের (প্রকার/প্রকরণ ও হাদিয়া জিজ্ঞেস করলে করতে পারেন, তবে বলা নিষেধ আছে, অবশ্যই ভাব নিচ্ছি ভাবলে দোষ দেব না) গ্যারান্টি কার্ড নিতে নিতে শুনি আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে, দুন্নাইতে হগল মানষে মোপাইল দিয়া সব কাম করে উনি আইছে ২৪ ইঞ্চি নেতে! যত্তসব! আকাম! না শোনার ভাব নিলাম দ্রুত (বুঝতে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা)।
অবাক-হোটেলে ঢুকে রান্না ঘরে উঁকি দিলাম, চাচা মিয়া গন গনে চুলা থেকে গরুর মাংস ভুনা করে নামাচ্ছে, চাচা-চুচা বলে ভাব করে (আমার বয়স আশি, সুঠাম দেহি কাঁচাপাকা দাড়ির অমায়িক চাচার বয়স টেনে টুনে পঞ্চাশ) তার হোটেল-সংগ্রামের ইতিহাস ও আজকের সাফল্য শুনছি শুনছি, মাংসের গন্ধ নাকে টানতে টানতে শ্যেন দৃষ্টিতে মাংসের দিকে তাকিয়ে থেকে গল্প বলে ওঠে মাংস খাব, সব মাংস আমার!খাব খাব, চোখ গোল গোল করে আগুনের দিকে তাকাচ্ছে আর বলছে আগুন খাব আগুন খাব, উপায় অন্ত না পেয়ে বুট দিয়ে জোরছে পা পিষে দিলাম, কাজ হয়েছে ঔষধে। চুপ করেছে সে। চাচা অবাক চোখে আমার দিকে তাকেলে, ও কিছু না টাইপ লুক দিয়ে এ যাত্রা রক্ষা পেলাম।
টেবিলে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঝরঝরা তক তকা ভাপ ওঠা ভাত আর করল্লা ভাজি এলো। গল্প ভাতের প্লেট ঠেলে দিয়ে বলে ভাত খাব না, মাংস খাব। চাচি আস্তে করে বলে দুপাইররা বেলা ভাত খাইবে না! এ্যা কয় কি! আমি বলি ওকে এক প্লেট মাংস এনে দেন, গল্প চিল্লাইয়া কয় এক না, দুই প্লেট চাই। আমি তাই-ই দিতে বললাম। এক কথায় চমৎকার রান্না, পণ করে ফেললাম দুপুরে একটু দূরে থাকলেও এ শহরে যখন-ই আসব এই হোটেলে আসব। ভিড় বাড়ছে আর বাড়ছে,জবরদস্ত যুবকেরা বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, আমাদের খাবার প্রায় শেষ, গল্প হাঁক দিচ্ছে চাচি আর এক প্লেট দেও। চাচি ছনাবড়া চোখ আমার দিকে তাকাচ্ছে, ইঙ্গিতে দিতে বললাম।
খাবার শেষ করে বাইরে দাঁড়িয়ে আবার সব কিছু পরখ করে নিচ্ছিলাম, তাদের ত্যাগ/শ্রম পরিচ্ছন্নতা তদুপরি সাফল্য। কর্মচারিহীন হোটেলে চাচির ক্লান্ত শরীর ঘুমহীন চোখ অনেক কিছুর জবাব দিচ্ছিল। গুটি গুটি করে গল্প কাছে এসে বলে চাচি কিন্তু চাচার তৃতীয় পক্ষ না হলে দ্বিতীয় অবশ্যই, লাগবা বাজি! মাথায় রক্ত ওঠার অবস্থা, মনে হচ্ছে গল্পের মাথায় চেয়ার ভাঙ্গি!চাচি শুনে ফেলেছে, আমি ইশারায় বোঝালাম গল্পের মাথা নষ্ট, চাচি হাসে আর বলে আগেই বুচ্ছিলাম, হ্যায় আগুন খাইতে চায়!
গল্প আমায় ফেলে জোর-দৌড়ে পালিয়ে গেল।
২০টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
মাংসের দিকে তাকিয়ে থেকে গল্প বলে ওঠে মাংস খাব, সব মাংস আমার!খাব খাব, চোখ গোল গোল করে আগুনের দিকে তাকাচ্ছে আর বলছে আগুন খাব আগুন খাব,,,,,গরুর মাংসের গন্ধ পেলে আমার হয় এই অবস্থা,,,,ভালো লিখেছেন
ছাইরাছ হেলাল
বাহ্ খুব সুন্দর করে বলেছেন তো।
আসলে এটি প্রতীক ধর্মী লেখা মজার ছলে।
হোটেলের রান্না সত্যি চমৎকৃত হওয়ার মত ছিল।
প্রথমে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
তৌহিদ
হার হাইনেসের যেকোন বাক্যকে মাটিতে ফেলা বিপদজনক কিন্তু!! মাছ ডিম কখন দেয়!! আসলেইতো একেক মাছ একেক সময় ডিম দেয়, আমি কিন্তু মাছ দেখে আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনা এর ডিম আছে কি নেই!!
হোটেলের খানাপিনা তাহলে ভালই হলো দেখছি, এরপরে বাসায় গিয়ে কি আবার পেটপুজা করেছিলেন মহারাজ?
ছাইরাছ হেলাল
এমন খানাপিনার পর আর খাওয়া যায় নাকি!
আপনি তো বীর! আপনার আবার ভয় কিসের! আমি ভীষন ডরাই!
মাছ/ডিম এ সব প্রতীকী বিষয়।
তৌহিদ
খাইতে বসলে আমার তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন বেশি খাচ্ছি কিনা!! এইবার বোঝেন বীরের কি অবস্থা।
ছাইরাছ হেলাল
আহা বীর, ওহো বীর!
মাহবুবুল আলম
ছাইরাস হেলাল ভাই!
পুরোটাই পড়লাম। মজাও পাইলাম আপনার জুড়ে দেয়া এ অংশটি পড়ে“ইলিশ মাছ কেন ডিম পাড়ে? আর যদি পাড়ে-ও, তবে এ-সময়ে কেন? যদি পাড়ে , পাড়ুক, তবে এই নদীতে কেন? সিক্স/সেভেন সেন্স চালু করে বলি, এখানে এই মাছ-বাজারে কোন ইলিশ-বিজ্ঞানী আছে বলে তো শুনিনি, ইয়ে মানে যদি কেউ থাকে, থাকতে-ও তো পারে।”
ভাল থাকবেন সব সময়!!
ছাইরাছ হেলাল
আপনার পড়ে ভাল লেগেছে জেনে সত্যি ই আনন্দিত।
আপনি ও ভাল থাকবেন সারাক্ষণ।
নিতাই বাবু
দেশে বর্তমানে ইলিশ ধরা তো নিষেধ! তারপরও ইলিশ সম্পর্কে আর কর্মচারিহীন হোটেলের গুনগান শুনে ভালোই লেগেছে, দাদা। এই হোটে যেতে ইচ্ছে করছে। দয়াপূর্বক যদি ঠিকানাটা দিতেন, তাহলে একদিন সময় করে গিয়ে পেট ভরে খেয়ে আসতাম।
ছাইরাছ হেলাল
ইলিশ ধরা নিষেধ এটি মেনে এখন গবেষণায় মন দিয়েছি!
আপনাকেই নিয়েই খেয়ে আসব একদিন।
ধন্যবাদ দিলাম।
নিতাই বাবু
শুভসকালে শুভেচ্ছা রইল দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।
মোহাম্মদ দিদার
পুরোটা পরতে পারলাম না।
ছাইরাছ হেলাল
এ এমন কোন লেখা না, যা পরেছেন সেটাই অনেক।
ধন্যবাদ।
এস.জেড বাবু
ধাবা স্টাইলে খাওয়া হয়না অনেকদিন,
আপনার গল্প শুনে খাওয়ার ইচ্ছে জেগে উঠেছে,
সর্বোপরি, গরুর মাংসে আমার ভিষন লোভ।
ভালো লাগলো একবেলার গল্প।
ছাইরাছ হেলাল
কত ইচ্ছেই তো অপূর্ণতায় থেকে যায়!
ভুনা গরুর মাংশ সত্যি মজাদার।
ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল।
আরজু মুক্তা
খাইলেন না খাওয়ালেন? মজার ছিলো। গল্প কি আছে না দৌড় দিছে? হোটেলের রান্না হাইজিনিক নয়। বাসায় দাওয়াত রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
খেয়েছি, খাওয়াছিও।
এমুন কাগুজে দাওয়াত দিয়ে লোভ উস্কান্নো ঠিক না।
দুষ্ট গল্প কেমনে বুঝলো চাচার এই স্ত্রী দ্বিতীয় বা তৃতীয়, তা জানতে পারিনি।
অনেক ধন্যবাদ।
শাহরিন
ধাবায় খাওয়া আর নতুন কি আপনার কাছে। গল্প মাংস খায়!!! এত্ত কঠিন গল্প??
ছাইরাছ হেলাল
অনেক কাল খাই না, তাই ধাবার কথা মনে পড়ে।
গল্প এই লেখার একটি চরিত্র মাত্র, সে একটু দুষ্ট, তার তো খিদে লাগতে পারে!