একত্রিশ – তিরির প্রতি
“মারকাট” বসটা আমাকে বড়ো জ্বালায় । দিল্লীর কাজ শেষ হতেই বললাম আমি বাংলাদেশে যেতে চাই , দেবে কয়েকদিনের ছুটি ? বললো দেখার মতো কি আছে ওখানে ? বললাম সারা পৃথিবীতে একমাত্র ম্যানগ্রোভ অঞ্চল সুন্দরবন , দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আছে । আমি তো জানি তার প্রিয় কি ! ব্যাটা সমুদ্র-স্নান পছন্দ করে । বললো ঠিক আছে আমিও যাবো । ভালো কথা তুই যাবি , যা । আমায় বলে “অহাম তুমিও যাবে ।” কি যে করি ! অবশেষে বুদ্ধি এমন অসুস্থতার ভাণ ধরলাম ঢাকায় এসেই । তোর জন্যে এতো মিথ্যে বলতে হলো আমাকে । প্রিয়কে বললাম তোর জন্মদিনের ভোরে আমাকে নিতে আসতে । তুই বদলাসনি । রিনীর বাসায় সেদিন বেশ মজা হয়েছিলো , তাই না ? আমি দেশে , এই খবর শুনে উচ্ছ্বাস ফোনও দিয়েছিলো , তোকে বলিনি । ওই যে বেশ জমজমাট আড্ডা ঘরোয়া রেষ্টুরেন্টে , একটা ফোন এলো । আমি উঠে বাইরে গেলাম । উচ্ছ্বাস এসে দেখা করলো । আমায় বললো ওর বাসায় যেতে । যদিও ভালো করেই জানে কোনোদিনও যাবোনা । তারপর জিজ্ঞাসা করলো তুই সুখী তো ? বললাম ভাগ্য ভালো প্রিয়’র সাথে তিরির বিয়ে হয়েছিলো । তা নইলে আজ ওর হাসি খুঁজতে যেতে হতো অতীতের ভেতরে । চলে গেলো । মন খারাপ করিয়ে দিলাম বুঝি তোর ? প্রথম প্রেম বলে কথা !
তোর অহম
বত্রিশ – অহমের প্রতি
শোন তুই না বললেও আমি তোকে বুঝি । এতোদিনেও আমাকে চিনলিনা ? ধুর মন খারাপ হবে তাও ওই কুকুরটার জন্যে ? কাল জানিস প্রিয় কি করলো ? একটা ফোন এলো , কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো কথা নেই । ফাজিলটা এসে বললো কার ফোন ? আমি বললাম কেউ কথা তো বলছেনা । দেখো তো ! বলে কোনো নতূন প্রেমিক নাকি ? এরপর তো হা-হুতাশ বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো । “আমার কি হবে গো ? ও বৌ তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেওনা । আমি বিধব হয়ে যাবো”, কথা বলে বলে একেবারে আমার কোলে উঠে বসে । উফ ! মেজাজ চরমে উঠলো । ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দোতলায় গিয়ে দেখি বেডরুম থেকে ইন্টারকমে ফোন দিয়ে রেখেছিলো । চিন্তা কর কি শয়তান ! অহম সত্যি বলছি রে খুব কম মেয়ে এতো সুন্দর জীবন পায় । প্রিয় আর তুই আমার জীবনটাকে শূণ্য হতে দিসনি । অনেক ভালোবাসি তোদের ।
তোর তিরি
তেত্রিশ – তিরির প্রতি
হাসতে হাসতে পেটে তো খিল ধরিয়ে দিলি । “মারকাট” আমার হাসি শুনে দৌঁড়ে এলো । সে তো অবাক আমি কি পাগল হয়ে গেলাম ? জানতে চাইলো কি ঘটনা । লোকটাকে আমি হাসতে খুব কমই দেখেছি । সাক্ষাৎ “রামগরুড়ের ছানা” ব্যাটা । বললাম ওটাকে , শুনে এমন হাসলো । অফিসের সকলেই ছুটে এলো । সঙ্গে সঙ্গে হাসি গায়েব । আর সকলেই যার যার ডেস্কে । প্রিয়কে বলিস “মারকাটে”র কথা । ও দেখেছে , জানেও তাকে । এমন আরোও কিছু ঘটনা যেনো ঘটায় , যাতে “রামগরুড়ের ছানা” হাসতে পারে ।
তোর অহম
চৌত্রিশ – অহমের প্রতি
আকাশের কলসী ভেঙ্গে ঝড়ছে জল
নাম যে তার বৃষ্টি
রোদ্দুর আজ মেঘের বুকে
ক্লান্তির ঘুম ভিঁজছে কেবল মাটি ।
অহম তোকে একটা খবর দেবো । কিন্তু কি করে যে বলি ! বহু বছর পরে লিখলাম এই চারটি লাইন । বুঝে নিস ।
তোর তিরি
ক্রমশ প্রকাশ্য
হ্যামিল্টন , কানাডা
৯ আগষ্ট , ২০১৩ ইং ।
২০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
পড়ি আর পড়ি , আরও পড়তে ইচ্ছে করে ।
নীলাঞ্জনা নীলা
সবই প্রকাশ্য হবে । তবে কিছু মতামত চাই , এই সম্পর্কটাকে কোথায় , কিভাবে এবং কেমন দেখতে চায় মন ? জানতে পারলে ভালো লাগতো আমার… 🙂
স্বপ্ন
মুগ্ধ হয়ে পড়ছি দুজনের চিঠি ।
নীলাঞ্জনা নীলা
ইস আমার ভাগ্যে এমন অহম বন্ধু যদি থাকতো ! 🙁
স্বপ্ন নামটা আমার খুব প্রিয় এক বন্ধুর…যে আমার আত্মা…
স্বপ্ন
হয়ত আমিই আপনার সে বন্ধু , যে আপনার আত্মা 🙂
স্বপ্ন
আমরা আপনার আত্মার কথা জানতে চাই ।
নীলাঞ্জনা নীলা
এই রে…আত্মার কথা আত্মাতেই থাকুক…
নীলাঞ্জনা নীলা
🙂
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
নীলাদি, এত সুন্দর করে উপস্থাপন কিভাবে করেন?
নীলাঞ্জনা নীলা
সুন্দর করে উপস্থাপন কোথায়…আসলে যে চোখ এই লেখাটি পড়ছে , আর যে সুন্দর মন লেখাটিকে আপন করে নিয়েছে , তার কারণেই তো সবকিছুকে সুন্দর লাগছে… -{@ 🙂
জিসান শা ইকরাম
চিঠির মাঝেই প্রকাশ পাচ্ছে, অহম আর তিরির সুন্দর সম্পর্ক। আলাদা কোন বর্ননা বাদেই এমন প্রকাশ আসলেই কঠিন।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা চলো তুমি আর আমি অহম আর তিরি হয়ে যাই…কি রাজী ? তবে একটা কথা তিরির থেকেও বিশাল শয়তান আর পাজি আমি কিন্তু… 😀 \|/
শুন্য শুন্যালয়
আমার শুধু হিংসেই হয়, কেমন করে যে এমন লেখে কেউ ? আবার কবে আসবেন?
নীলাঞ্জনা নীলা
হায় হায় হিংসে ! তাও এমন লেখাকে !! ডাকলেই চলে আসবো…আমি কাউকে আমার অভাব পেতে দেইনা যে…এই যে চলে এলাম অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও… 🙂
মা মাটি দেশ
অহমকে নিয়ে ভালই লিখছেন যতই অহমের পর্ব হচ্ছে ততই এর গুরুত্ত্ব বারে।
নীলাঞ্জনা নীলা
হুম আরোও আসবে সামনে বিশাল চমক… 🙂
লীলাবতী
নীলাদি , আপনার প্রতিটি লেখাই অফ লাইনে পড়েছি । বন্ধুত্বের বন্ধন এবং সুন্দর সম্পর্ককে দেখিয়ে দিচ্ছেন দুজনের চিঠির মাঝে । (y) (y) অহন তিরি ভালো থাকুক ।
নীলাঞ্জনা নীলা
অহন তিরি ভালো থাকুক 🙂 অহনটা আবার কে ? :Angry: অহম অহম :Happy: ধন্যবাদ …………লীলাবতী
সীমান্ত উন্মাদ
চমৎকার চিঠিতে নিদারুন ভাললাগা। শুভকামনা নিরন্তর।
নীলাঞ্জনা নীলা
চিঠিটা থেমে গেলো । নাহ থামিয়ে দিতে চাইনি । লেখার পুরো ফাইলটা মুঁছে গেছে ল্যাপটপ থেকে । জানিনা কিভাবে লিখবো , আর লেখা আসবে কিনা । যাক অশেষ ধন্যবাদ ।