অফিস ছুটি হতে না হতেই দৌড় বাড়িতে। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঈদের আগের দিন। সব ভাইবোন মিলে জড়ো হলাম আমদের আদি অকৃত্তিম সোনার পাতায় ছাওয়া বাড়িতে। বাসায় এসেই সবার মুখেই কথা এখনই গরু কিনতে যেতে হবে। চলো চলো। ^:^
দুপুর ২টা নাগাদ তিন ভাই ও এক জামাই চারজনই বেড় হয়ে গেলাম গরু কিনতে। প্রথম গন্তব্য বলদিপুকুর হাট(এখানে আমি আমারদের বাড়ির আশেপাশের হাটগুলির কথা বলছি)। সেখানে যেয়ে দেখা গেল মাত্র তিনটা গরু আমাদের চারজনের দিকে তাচ্ছিলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি আর করা, চারজন এদিক ওদিক ঘুরে সিদ্ধান্ত নিলাম লালবাগের হাটেই যাওয়া যাক। ;(
লালবাগের হাট। বিশাল দামী হাট। অর্থাৎ ধনীদের হাট। হাটে বেশ গরু ছাগল দেখা যাচ্ছে। চারজনই বেশ খুশি মনে এগিয়ে গেলাম হাটের ভিতরে। এই গরু দেখি, ওই গরু শুঁখি। পছন্দের কথা কাকে বলব- ভেবতেই দেখি আমার মনের কথা বুঝেই তিন/চার গরু ধরে, একজন পিঠ চাপড়ায় তো অন্যজন লেজ মোচড়ায়। যেটা পছন্দ হয় তার দাম শুনে পিছু হাঁটি। যেটা পছন্দ হয় না সেটারও দাম শুনে আকাশের দিকে তাকাই। মেজ ভাই বলল– এটা কেমন কথা? রাম ছাগল সাইজের গরুর দামইতো দেখি আমাদের বাজেটের বাইরে। সারা হাট ঘুরে আবার সিদ্ধান্ত নেয়া হল ঢেলাপীরের (আমার ফেসবুকে পাবেন ঢেলাপীরের হাটে গরুর সাথে আমার ফুটোক)হাটেই যাওয়া ভাল। 😀
ঢেলাপীরেরহাট তো হাটই। এখানে সারাবছর হাটে অসংখ্য গরু বেচাকেনা হয়,আর এখনতো আমরা এসে পড়লাম গরুর মহাসাগরে। চারিদিকে দালালেরা শুধু টানাটানি করে। টানাটানির চোটে চারজনই বারবার আলাদা হয়ে যাচ্ছি। আবার চারজন নিজেদের খুঁজে নিয়ে একত্রিত হচ্ছি।
— এখানে এসে তো আরও বিপদে পরলামরে ছোট?- বললেন বড় ভাই। কি করা যায়? ভাবতে ভাবতেই সামনে পড়ে গেল মেজ ভাইয়ের এক মামা শ্বশুর। তিনি নাকি গরু বিশেষজ্ঞ।! তার হাতে সমস্ত দায়িত্ব ন্যাস্ত করে দিয়ে চারজন মামার পিছু পিছু পরম নিশ্চিন্তে ঘুরতে লাগলাম।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
্
,
বিশাল গ্যাপ দিলাম। এই গ্যাপে যারা যারা হাটে যেয়ে গরু কেনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তারা তাদের বর্ননা দেবেন। আমারও কাহিনী আপনাদের মতই।
অবশেষে রাত ১১টার দিকে একটি গরু কেনা হল। সব কাজ শেষ হতে হতে রাত ১২টা। এবার গরু নিয়ে বাড়ি আসতে হবে। গরুর সাথে কে কে আসবে? সাব্যস্ত হল, ছোট দুইজন গরু নিয়ে ভ্যানে করে আসবে। আর বড় দুই ভাই আগেই বাড়ি চলে যাবে। ছোট দুইজনের একজন হলেন জামাই ও অন্যজন এই অধম। রফিক হল জামাই। যেহেতু ছোট – তাই গরু কেনার ব্যাপারে আমাদের কোন দায়িত্ব না থাকতে পারে, কিন্তু গরু বাড়ি নিয়ে যাবার গুরু দায়িত্ব মাথা পেতে নিতেই হল। এখানে বলে রাখা ভালো যে আমি প্রায় চল্লিশের :p কাছাকাছি বয়সের একজন যুবক ও রফিকও তেমনি আমার কাছাকাছি।
গরু তোলা হল ভ্যানে। এর কৃতিত্ব সম্পূর্নটাই ভ্যানওয়ালার। গরুর পাশে সামনের দিকে বসলাম আমি। আর পিছন দিকে বসল রফিক। ভ্যান চলছে তার আপন গতিতে, মধ্যরাতে সৈয়দপুর শহরের মধ্যদিয়ে। ভ্যান যাবে রংপুরের তাজনগর গ্রামে। আমি আর রফিক আমাদের ছাত্র জীবনের স্মৃতি রমন্থন করতে করতে চলছি। সেই সাথে ছোটবেলায় বাবার সাথে গরু কেনা, ঈদের কাপড় কেনা আরও কত মজার স্মৃতি। কতদিন গভীর রাতে গ্রামের রাস্তায় হাঁটিনি। ছাত্রজীবনে কতই না ঘুরেছি। গরুর সাথে গভীর রাতে রাস্তা ভ্রমন এইপ্রথম। সেই কথা স্মরন করেই হয়তো আমি একটা দীর্ঘশ্বাঃস ফেললাম। আর গরুও আমার প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে সমর্থন জানাতে চাইল। আর কোথায় যাই, এমন চমকে উঠেছি যে মুহূর্তেই রফিক আমাকে আবিষ্কার করল রাস্তায়, একেবারে চিৎপটাং। ভ্যান থেকে লাফিয়ে নেমে রফিক তাড়াতাড়ি আমাকে ধরে তুলল। গা ঝেরে দিল। কোথায় কোথায় ব্যাথা পেয়েছি দেখল। জিন্স ছিল বলে রক্ষা কিন্ত হাতের কনুই দুটোই যে গেল।
রফিক বলল– ছোটভাই, আপনি তো গরু ভয় পান, আপনি পিছনে বসেন, আমি সামনে বসি। যদিও আমার প্রচন্ড আপত্তি ছিল –গরু ভয় পাই :@ এই কথাতে। তবুও আর একবার ভ্যান থেকে পরার চেয়ে পিছনেই বসা ভাল মনে করে পিছনেই বসলাম।
কিছুক্ষন পরে আমার মুখের মাছি তাড়াতে শুরু করলো গরু লেজ দিয়ে। কি আর করা ,অগ্যতা গরুর দিকে পিঠ দিয়ে বসলাম।
আসল সমস্যাটা কোথায়? আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না!
অনেক্ষন বসে থাকতে থাকতে বোধ হয়, গরুর পা ধরে আসছিল, তাই বিনা বাক্যে গরু তার পিছনের ডান পাটা একটু ঝেড়ে নিল। আর গরুর পায়ের চাটী না খেয়েই আমি আবারও রাস্তায়। রফিক খুব মেজাজ দেখিয়ে :@ গরুকে বলল –এই ব্যাটা গরু, পা ঝাড়বিতো একটু জানান দিবি না। :@
গরু এখন কি ভাবে বলে—-” ;( আমি যদি জানান দিতাম তা হলে যে আপনেও ভ্যানের উপরে থাকতেন না, মাটিতে থাকতেন । আপনাকেও রাস্তায় খুঁজে পাওয়া যাইত। 😛 একবার তো মাথা নাড়ায় সালাম করতে চাইছিলাম তাতেই যে অবস্থা।
এবারে ভ্যানওয়ালা ভ্যান থামিয়ে গরু দড়ি দিয়ে ভ্যানের সাথে কষে বাঁধলো । যেন আর কেউ ভ্যান থেকে না পড়ে। এর পরের রাস্তাটুকু পরম আনন্দে আমরা পার হইলাম।
রাত ৩টার সময় বাসার গেটে মহা হইচই। বাচ্চারা বুড়ারা সব গরু দেখতে এল। ভ্যানচালকসহ সবাই মিলে চেষ্টা করেও গরুকে বসা অবস্থা থেকে দাঁড় করানো গেল না। ভ্যানচালক ও গ্রামের লোকজন মিলে ভ্যান কাত করে গরু মাটিতে ফেলে দিল। গরু ফেলে দিয়ে ভ্যানওয়ালা ভ্যান নিয়ে চলে গেল।
গরু আর দাড়াঁয় না। আমার মেয়ে বলল- ^:^ বাবা তুমি ও ফুপা হেঁটে হেঁটেই আসতে, তাই বলে গরুকে বাঁধতে গেছ কেন?? -:- গরুটা যে রাগ করেছে। :@
সবাই বেশ চিন্তিত হয়েই পরলো –কী গরু কিনলাম? অসুস্থ্য নাকি!
শরীর আর চলছে না, ভিতরে শুতে চলে গেলাম। বউ হাতে পায়ের ক্ষততে মলম লাগিয়ে ভালই সেবা করলো। সব শুনে হাসি/গম্ভীর সব হয়েই সমবেদনা জানালো। ঈদ শুভ হচ্ছে এই পরমানন্দে ঘুমিয়েই পড়লাম।
সকালে নামাজ পড়তে যাবার সময় দেখা গেল গরু বেশ প্রফুল্ল চিত্তে খাওয়া দাওয়া করছে আর আমাকে আড় চোখে দেখছে। :p
মাংস আয়েশ করে খেতে খেতে আমি ও রফিক কালকের গরু বাড়িতে আনার কাহিনী যতদূর সম্ভব সরেস করে বর্ননা করলাম। সবাই হেসে কুটিকুটি।
শুধু বউ একটু ঢঙ্গি গলায় আহ্ললাদের সুরে বলল– সবই তো বুঝলাম, কিন্তু তোমারা গরুকে ভ্যানের সাথে বাঁধলা কেন? গরু তো ভ্যান থেকে পড়ে নাই। যে পড়ছে তারে বাঁধা লাগতো। :p বেচারা গরু। 🙁
আমি — :@ :@ :@ ভাষা খুজেঁ পাইলাম না। ^:^ এই মহিলা আমার সারাটা জীবন ভাঁজা ভাঁজা করে ছাড়লো। কাল কিছুই বললো না আর আজ জনসম্মুখে এই অপমান। (-3
২৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
আমি প্রথম।
খসড়া
জি আপনিই ফার্স্ট
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল লাগলো ।
আমার মেয়ে বলল- বাবা তুমি ও ফুপা হেঁটে হেঁটেই আসতে, তাই বলে গরুকে বাঁধতে গেছ কেন?? গরুটা যে রাগ করেছে।
খসড়া
গরুতো রাগ করেছেই সেই সাথে আমিও রাগ করেছি :@
লীলাবতী
হাসতে হাসতে গাড়াগড়ি ভাইয়া। কুরবানীর গরু ভ্যানে নেয়ার কাহিনী এই প্রথম শুনলাম। গরুর সাথে আপনার তো পুড়ানো শত্রুতা আছে 😛 আপনার ফেইসবুক আইডি পাবো কিভাবে ভাইয়া ? এড আছি নাকি আমি ? থাকলে ইনবক্স দিয়েন পিলিগ লাগে 😛
খসড়া
খুঁজে নে রে পাগলা জীবনে কিছুই হারায় না। সবই আছে।
ছাইরাছ হেলাল
বেশ সরস বর্ণনা দিলেন। গরুর পেছনে বসলেন শুধুই পা ঝেড়েছে ! জল বিয়োগ করেনি ?
আপনি আমাদের বলতে পারেন।আম্রা তো আমরাই।
খসড়া
জি আমরা তো আমরাই কিন্তু ভাই গরুটা বিশিষ্ট ভদ্রলোক, কত সেবা করলো সারা পথ সে তো হাম্বা স্বরেও শব্দ দুষণ করেনি তবে কেন পরিবেশ নষ্ট করবে। আমরাই দু জায়গায় থেমে দুই জনে জল বিয়োগ করেছি। 😀
জিসান শা ইকরাম
রম্য লেখায় আপনি খুবই পাকা একজন লেখক।
দারুন ভাবে সাধারন ঘটনাকেও অসাধারন বানিয়ে ফেলতে পারেন।
দুই দুইবার রাস্তায় পতন , এরপর থেকে ক্রিকেটের গার্ড নিয়ে যাবেন গরু কিনতে 🙂
গরু রচনায় এই লেখাটি দিলে, পরীক্ষক হার্ট ফেল করবে মাষ্ট 🙂
খসড়া
তাইলে তো ভাই খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হবে 🙁 । অনেক মজার লেখা লিখলাম এবারে বিরতি দিতে হবে। না হলে সবাই আমাকে ক্লাউন ভাববে। ভাবছি কঠিন লেখা দেব কিন্তু মাথায় ঘুরছে আর একটা হাসির গপ্প। :p
রিমি রুম্মান
হা হা হা … অনেকদিন পর একটা হাসির লেখা পড়লাম … শুভকামনা রইলো …
খসড়া
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। এর আগের পোস্টটা পড়েছেন কি?
আজিম
হাসিরই লেখা বটে।
খসড়া
এটা বাস্তব অভিজ্ঞতা। হাসিত শুধু লেখা নয় হাসির ঘটনাও বটে।
ব্লগার সজীব
কিভাবে এত মজার করে লেখেন ভাইয়া ?
খসড়া
মজার ঘটনা ঘটলে আমি কি করবো? 🙁
ব্লগার সজীব
গ্যাপে লিখবো কিভাবে আমরা ? আপনার আইডি আর পাসওয়ার্ড দিন, লিখে ফেলি ঝটপট 😛
মরুভূমির জলদস্যু
প্রতি বছর প্রতিটি কোরবানিতে প্রতিটি লোকের একটা করে স্মৃতি জমা হয়।
খসড়া
ঠিক বলেছেন, ঈদ বিষেষ করে কোরবানীর ঈদ গরু ছাগল নিয়ে মজাই হয়।
নুসরাত মৌরিন
হাহাহা।
গরু কাহিনী খুবই ভাল লাগলো।কোরবানীর ঈদে মনে হয় সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট এই গরু কেনার হ্যাপা।
দারুন লিখেছেন ভাইয়া…
খসড়া
ঠিকই বলেছেন গরু ছাগল কেনা হাটে যাওয়া গরুর দাবরানি খাওয়া খুব মজার মজার ঘটনা ঘটে।
নীলাঞ্জনা নীলা
এমন ফান কিভাবে লেখেন ভাই ?
খসড়া
ভাল আছেন নীলা? আমি লিখি কি? আমি শুধু ঘটনা বর্ননা করি।
খসড়া
ব্লগার সজীব তুমি আমার পাসওয়ার্ড চাও? কি ভয়াবহ দুঃসাহস!
এই কে আছিস ব্লগার সজীবকে আমার আইডি সহ পাসওয়ার্ড দিয়ে দে। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
এida তো আমারও কথা গরু না বাইন্ধা মানুষ আই মিন মানুষ না বাইন্ধা গরু বানছে ক্যান??? ঘটনা সব দেখি আপনার সাথেই ঘটছেে। আরো বেশি বেশি ঘটুক এই দোয়া করছি।
খসড়া
আপনের দোয়ায় দেখি বুড়া গরুগুলি সব মরল