অপেক্ষা.. ট্রেনটির জন্য। স্টেশনে এর আগেও অনেকবার এসেছি। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা হয়নি কখনো। আজ আমি অপেক্ষমান যাত্রীর কেউ নই। আমি শুধু তাঁর আগমনের অপেক্ষায়। আজ সাদা আসবে। দেখা হবে আজ প্রথমবারের মতো। আমাদের পরিচয় ফেসবুকে। ‘সাদা” তাঁর ছদ্মনাম। আজ আমাদের স্টেশনে সে যাত্রাবিরতি দিবে কয়েক মিনিটের। সত্যিই কী আজ দেখা হবে আমাদের! ট্রেনে উঠার আগে জানিয়েছিল তাঁর সিটটা চ নং বগিতে জানালার কাছে। আর আমি ভাবছি স্টেশনের কোথায় দাঁড়ালে ওর চ নং বগির কাছাকাছি থাকা যাবে? ট্রেনতো তিন মিনিটের বেশি অপেক্ষা করে না। মনে শঙ্কার পারদ তীব্রবেগে উঠানামা করছে। ভয়ও কাজ করছে, হবে তো দেখা? সময়টা অল্প হলেও আজ আমাদের কথাগুলো প্রাণ পাবে। ফেসবুকে আমাদের অনেক কথা হয়। টাইপ করা কথাতে কী কোনো রং থাকে? নিজের মতো রং মিশিয়ে নিতে হয়। কোন কথাটা রাগ করে বলছে, কোনটা হাসির, কোনটা যে অভিমানের সুর আবার কোনটা যে মন খারাপের তা বুঝে নিতে হয়। এসব বুঝতে চাইলে নানা রঙয়ের সঠিক ব্যবহার করতে হয়।
মাঝে মাঝে ভুল রঙয়ের আঁচরও লেগে যায় কথাতে। শব্দ, বাক্যের সাথে এসব যোগ করেই তো পথ হাঁটছি আমরা। সাদা যখন মন খারাপ করে থাকে তাঁর টাইপ করা বাংলিশ শব্দগুলো পড়ে যেনো দেখতে পাই সাদাকে। সে যখন হাসির ইমোটিকন পাঠায়, আমি যেনো ওর হাসিটাও শুনতে পাই। কখনো কখনো ভেংচি কাটার ইমোটিকন পাঠায়, তাও দেখতে পাই। আচ্ছা, ও যদি আজ কেনো কথায় ভেংচি কাটে তবে কী ঐ ইমুটিকনের মতোই দেখাবে ওর মুখ? হাহ হাহ হা হা। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ট্রেন স্টেশনে পৌঁছানোর কথা ছিল এখন ৬টা বেজে ২০ মিনিট। বাংলাদেশের ট্রেনের টাইমটেবল বলতে কিছু অাছে? স্টেশনে দিনের আলো ফুড়িয়ে নিয়ন আলোয় আলোকিত তখন। অপেক্ষা যেন ফুরোচ্ছেনা। হঠাৎ ট্রেনের সাইরেন শুনতে পেয়ে মনটা ভীষণ আনন্দে নেচে উঠল আর খাচাঁর ভিতর থাকা হৃদযন্ত্রের লম্ফঝম্ফের গতিটা বেড়ে গেল তাতে। অপেক্ষা শব্দটি চাকায় পিষ্ট করে দিয়ে স্টেশনে থামলো ট্রেনটি। আর আমি ছুটলাম চ নং বগির খোঁজে। অবশেষে পেয়েও গেলাম কাঙ্ক্ষিত চ নং। জানালার পাশেই সিটটা। আমি সাদা’র খুব কাছে দাঁড়ানো অথচ বন্দী আঁধারের হাতে আর ও জানালার অস্বচ্ছ কাঁচে। দূরত্ব বলতে এতটুকুই। আঁধারের হাতেবন্দী আমিকে ভীষণ অসহায় লাগছিল। এত কাছে থেকেও যেনো অনেক দূরে আমরা। অস্বচ্ছ কাঁচের ভীতর থেকে সাদা’র আবছা অবয়ব দেখতে পেলেও আমাকে আবছা আলো ও অস্বচ্ছ কাঁচ উপেক্ষা করে দেখতে পেলো না সে। কি রং মাখলে এ আঁধারেও সাদা আমাকে দেখতে পেতো? পৃথিবীতে তেমন কোনো রং আছে কী? আঁধারের রঙের কাছে হেরে গেলাম আমরা। দেখা হলো না আমার আর সাদা’র, কথাও হলোনা। হাসি ও ভেংচি কাটার সব ইমুটিকন বেঁচে রইল নিজস্ব রঙে। বিরতি শেষে ট্রেন ছুটে চলল সাথে চ নং বগিটিও।স্টেশনে পড়ে রইলাম আমি, শূণ্যতা আর পিষ্ট হওয়া অপেক্ষা। কে জানতো, আমাদের অপেক্ষা ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়েও মূমুর্ষূ অবস্থায় এভাবে বেঁচে থাকবে? তবু অপেক্ষাকে সযত্নে তুলে নিলাম আর অপেক্ষায় রইলাম সে দিনটির, যে দিন থাকবেনা আলো- অাঁধারির এ ভয়ংকর খেলা ও অস্বচ্ছ কাঁচের জানালা।
ইকরাম
টাংগাইল
২৩টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
ইকরাম মাহমুদ আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি সোনেলায়।
আপনার মতো আমারও একই হয়েছিলো। তবে আমাদের দুই বন্ধুর দেখা হয়েছিলো। ফোনে কথা, চ্যাটিং, ম্যাসেজ, ওয়েব ক্যাম। অথচ সরাসরি দেখা হলো পরিচয়ের দু’ বছর পর। এই বন্ধুটি জীবনে এসেছিলো বলেই আজও জীবনে পিছিয়ে পড়িনি। আশা করি একদিন আপনাদেরও দেখা হবে। কথা হবে। আত্মিক বন্ধুত্ত্ব হয়ে গেলে জীবনের সব স্বপ্ন পূরণ হয়-ই হয়।
ইকরাম মাহমুদ
ধন্যবাদ আপু। অপেক্ষায় আছি আবার ভয়ও ভর করেছে। কি জানি? হবে হয়তো অথবা…. তবে আমরা জানি, কোনো প্রতিকূলতা আমাদের বন্ধুত্বকে লাইনচ্যুত করতে পারবে না।সোনেলাতে আমার প্রথম লেখা এটি। দোয়া করবেন আমার জন্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
বন্ধুত্ত্বের মতো সুন্দর সম্পর্ক এ পৃথিবীতে নেই। বন্ধুত্ত্ব ভয় রাখবেন না।
সবার লেখা পড়ুন, নিজেও লিখুন এবং সকলের লেখায় মন্তব্য করুন।
ইকরাম মাহমুদ
আছি, থাকব ইনশাআল্লাহ।
জিসান শা ইকরাম
স্বাগতম সোনেলায় -{@
প্রথম লেখায় প্রমাণ করলেন যে আপনি যথেষ্ট ভাল লেখিয়ে।
ছোট গল্প এমনই হতে হয়,
পাঠককে আচমকা ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়া, এটিই গল্পকারের স্বার্থকতা।
ভেবেছিলাম সাদার সাথে দেখা হবে প্রথম স্টেশনে, তা আর হলোনা।
অস্বচ্ছতা একদিন দূর হবেই………
” মাঝে মাঝে ভুল রঙয়ের আঁচরও লেগে যায় কথাতে। শব্দ, বাক্যের সাথে এসব যোগ করেই তো পথ হাঁটছি আমরা। ” — ভাল লেগেছে এটুকু খুব।
লেখুন নিয়মিত।
শুভ কামনা, শুভ ব্লগিং।
ইকরাম মাহমুদ
মাঝে মাঝে কিছু বর্ণ ও শব্দের রং এ আঁকিবুকি করতে চেষ্টা করি। জানিনা ক্যানভাসটা কেমন সাঁজে তাতে। চেষ্টা করব সঠিক রঙয়ে রাঙাতে। আপনার এ মন্তব্য নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
প্রথম লেখায় ক্যানভাস ভালোই সাঁজিয়েছেন।
আশাকরি ভাল পাঠক পাবেন এখানে।
ইকরাম মাহমুদ
(3
গাজী বুরহান
এই অবেলায়
মন যে হারায়।
সোনেলায় স্বাগতম ভাইয়া।
ইকরাম মাহমুদ
ধন্যবাদ ভাই। -{@
অয়োময় অবান্তর
প্রথম লেখায় বুম্বাস্টিং। শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার বেশ লাগল। সোনেলায় স্বাগত। ভাল লিখেছেন।
ইকরাম মাহমুদ
বুম্বাস্টিং! আজকের জন্য শব্দটি আমার। ধন্যবাদ ভাই। আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করছে। -{@
ইঞ্জা
অতুলনীয় লেখার ছায়ায় মন ছুঁয়ে গেলেন, সোনেলায় স্বাগতম। 🙂
ইকরাম মাহমুদ
ধন্যবাদ অসংখ্য। মন ছুয়ে যাওয়া ছায়াটা যেন ফেলতে পারি সবার মনে। দোয়া করবেন।
অপার্থিব
ভাল লিখেছেন। লেখা চালিয়ে যান নিয়মিত।
ইকরাম মাহমুদ
মন্তব্যই লেখায় প্রেরণা জোগায়। ধন্যবাদ অপার্থিব।
শুন্য শুন্যালয়
অদ্ভূত তো লেখাটা!! দৃশ্যটা দেখছি, আবছা কাঁচের ভেতর একটা মেয়ে ছটফট করে তাকাচ্ছে বাইরে প্রিয় একজন কে দেখবে বলে। দেখা হলোই না 🙁
ভীষন সুন্দর। এটা আপনার প্রথম লেখা সোনেলায়। কেউ একজন আমাকে মন্তব্য করেছিল, প্রথম লেখা কখনো শেষ হয়না, আর প্রথম লেখার মতো নাকি আর কোন লেখা এত ভালোও হয়না। লেখাটা পড়ে এমনটাই মনে আসছে।
স্বাগতম আপনাকে সোনেলায়। আমরা প্রথম লেখায় সবাইকে গোলাপ দেই 🙂 -{@
ইকরাম মাহমুদ
ধন্যবাদ আপু, দোয়া করবেন যেন সব সময় পাশে থাকতে পারি।
আবু খায়ের আনিছ
অবশেষে আগমন। স্বাগতম সোনেলায়, লেখা নিয়ে কথা হবে আরো অনেক অনেক। শুভ কামনা বন্ধু। -{@ -{@ -{@
ইকরাম মাহমুদ
দুদিন গত হল, সোনেলায় পা দিয়েছি। ফেসবুকে নেই, এখানেও নেই। তোমার পরিচয় সবাই জানে,এতদিনে নিজের যথার্থ পরিচয় দিয়েছ লেখনীর মাধ্যমে। আমিও যে লেখার প্রেরণা পেয়েছি তোমার থেকেই। অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য। (3 (3 (3
আবু খায়ের আনিছ
দেখতেই পাবে সব কিছু নিজের চোখে। আমার অনেক লেখার পিছনের গল্প কিন্তু অনেকেই জানেনা, তবে অনেকেই আবার জানে। তুমি ছিলে না কিন্তু তোমার নাম কিন্তু সোনেলায় আগেও এসেছে। সুতরাং কি বলতে চাইছি বুঝে নিয়েছো নিশ্চয়। শুভ কামনা বন্ধু।
মৌনতা রিতু
প্রথমেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সোনেলায় স্বাগতম।
প্রথম পোষ্টেই একান্ত অনুভূতির চমৎকার প্রকাশ।
মুখ ভেংচি দেখতে অপেক্ষা করুন অন্য কোনো বগির জন্য। ‘ ক’ বগি মন্দ না।
লিখুন, লেখা চালিয়ে জান। শুভকামনা রইল।
ইকরাম মাহমুদ
দেখা যাক কি হয় ভবিষ্যতে, সময় বলে দিবে।
শুভ কামনা, ধন্যবাদ।