আমি কেবলই মেঘ ছু’তে গিয়েছিলাম (৩য় পর্ব)

আর্বনীল ৩১ জুলাই ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:১৯:৩৫অপরাহ্ন গল্প ২ মন্তব্য

১ম পর্ব – http://sonelablog.com/archives/18256

২য় পর্ব – http://sonelablog.com/archives/18303

 

এ কেমন যাদু ছিল তোমার কোকিল কন্ঠি গলা?

শুনে; আমি যে পাগল হলাম নিজের অবহেলা

 

ভাইয়া ফুপি তোমাকে ডাকছে।

মা আমাকে ডাকছে! কেন বলতো?

নাফিজা আপু ফোন করেছিল। তুমি নাকি কিসব বলে এসেছো।

ওহ তাই বল। আমি এখন খুব জটিল একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত। সো এই মুহুর্তে মা’র বকা-ঝকা শুনতে পারব না। তুই এক কাজ করতো টুনু। মা’কে গিয়ে বল আমি ঘুমিয়ে পরেছি।

আমি মিথ্যে বলতে পারব না।

গিয়ে বলনা প্লিজ…

বলতে পারি। তবে আমার একটা শর্ত আছে।

কি শর্ত?

ঐদিন একটা বার-বি ডল দেখেছিলাম মনে আছে? আমাকে ঐটা কিনে দিতে হবে।

ব্ল্যাকমেইল করছিস? অন্য কিছু দিলে হবে না? ধর কোন দামী চকলেট।

উফ! ভাইয়া না দিলে বল পারব না। আমি চলে যাই। ফুপিকে গিয়ে বলি তুমি ঘরেই আছো। তারপর ফুপি তোমাকে মারুক কাটুক সেসব আমি জানিনা।

ঠিক আছে মা যা চাস তাই দেব। এবার আমাকে উদ্ধার কর।

এইতো গুড বয়। তোমার আর………

 

রুপক …।।

ভাইয়া ফুপি আসছে। তুমি তারাতারি শুয়ে পর।

 

টুনি তোকে পাঠালাম ওকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর তুই এখানে বসে আছিস?

ফুপি দেখনা ভাইয়াতো ঘুমে। আমি এতক্ষন ধরে ডাকছি। কিন্তু ভাইয়াতো কিছুতেই ঘুম থেকে উঠছে না।

ফাজিলটা এল কখন আর ঘুমালই বা কখন?

ফুপি ভাইয়া মনে হয় এসেই ঘুমিয়ে পরেছে।

তাহলে থাক আর ডাকিস না।

ঠিক আছে ফুপি।

 

রুপক চোখ বন্ধ রেখেই বলল টুনু মা কি চলে গেছে?

হ্যা। টুনি মুখ টিপে টিপে হাসছে।

আহ! বড় বাচা বেচে গেলাম।

ভাইয়া এখন বলতো তুমি কি নিয়ে চিন্তা করছিলে? রুপন্তি মেয়েটাকে নিয়ে নাতো?

তুই কি করে বুঝলি?

অনুমান করলাম।

তোর অনুমান শক্তি খারাপ না। ভালোই। আমি রুপন্তিকে নিয়েই ভাবছিলাম। জানিস ওর সাথে কথা বলার পর থেকে কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। বুকের ভেতরটা শুরু ধড়ফড় ধড়ফড় করছে।

ভাইয়া এইটা এমন কি! প্রথম প্রথম এমন হয়। তারপর যখন দেখবে তখন শুধু দেখতেই ইচ্ছে করবে। হি হি হি…

এবার হাসিটা থামিয়ে একটা বুদ্ধি বের কর। কিভাবে মেয়েটাকে দেখা যায়।

ভাইয়া কাজটা খুবই সিম্পল। দুইয়ের সাথে দুই যোগ করলে যেমন চার হয় ঠিক তেমন।

পরিস্কার করে বলনারে বোন।

ভাইয়া বাংলা ছবিতে যা হয় আর কি! তোমাকে এখন রুপন্তি মেয়েটা কোথায় থাকে তার ঠিকানা বের করতে হবে।

এটাইতো সমস্যারে। ঠিকানাটা বের করব কোত্থেকে? চিঠিতে তো কিছুই লেখা নেই।

ভাইয়া চিঠিতে ফোন নাম্বার দেয়া আছে না? ঐ নাম্বারে ফোন করে জিজ্ঞেস করো।

গাধী কোথাকার! আমাকে চিনেনা জানেনা। ফোন করে জিজ্ঞেস করলেই ওরা ঠিকানা দিয়ে দিবে?

গাধী বলনাতো ভাইয়া! তুমি এখনি ফোন কর। ফোন করে হেমন্তিকে চাও।

হেমন্তিকে চাইলে কি হবে?

হেমন্তিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ঠিকানাটা জেনে নিবে। নাকি তাও পারবে না?

তা না হয় নিলাম। কিন্তু তারপর কি হবে?

তারপর তুমি সোজা ঐ ঠিকানায় চলে যাবে।

বোকার মত কথা বলিস না! তোর কথামত গেলাম। কিন্তু ওরা যখন জানতে চাইবে আমি কে, কি চাই, তখন কি বলব?

ভাইয়া বলবে যে তুমি হেমন্তির স্কুলের একজন টিচার। এবং হেমন্তির ব্যাপারে ওদের সাথে কথা বলতে চাও।

গুড আইডিয়া। এই নে চকলেট। খেতে খেতে পড়তে বস গিয়ে যা।

এখন আমার বুদ্ধি নেয়া শেষ। তাই তাড়িয়ে দিচ্ছ?

হ্যা দিচ্ছি। যা পড়তে বস।

যাচ্ছি। হুহ…

 

 

রাত খুব বেশি কিছু হয়নি। মাত্র ৮টা ৭ মিনিট। তার মানে এখন ফোন করে হেমন্তিকে চাইলে তেমন কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। রুপক নাম্বার টিপে কল করল। এখন রেসিভারটা যে তুলল সে রুপন্তি না। কন্ঠটা ছোট বাচ্ছাদের মত। তার মানে এটাই হেমন্তি। কিন্তু রুপক আশা করেছিল এবারও রুপন্তিই ফোনটা ধরবে। রুপন্তির কন্ঠ শুনতে বড্ড ইচ্ছে করছে।

–         হ্যালো

–         তুমি হেমন্তি তাইনা?

–         হ্যা। কিন্তু তুমি কে?

–         বলতো কে আমি?

–         তুমি চিঠির বন্ধু। হয়েছে?

–         হুম। কি করে বুঝলে?

–         আমি বুঝতে পারি। আমার অনেক বুদ্ধি।

–         তাই?

–         হ্যা। আচ্ছা আমার চিঠিতে কোন বানান ভুল ছিল?

–         হয়তো ছিল। কিন্তু আমি ধরতে পারিনি। আমি ভুল বানানেই চিঠিটা পড়ে ফেলেছি। আর আমার নিজের বানানেও প্রচুর ভুল থাকে। এটা কোন সমস্যা না। যা লিখব তা বুঝাতে পারলেই হল। আচ্ছা তোমার আপু কোথায়?

–         আপুতো ছাদে আব্বুর সাথে বসে গল্প করছে। তুমি আপুকে বকার জন্য ফোন করেছ?

–         হ্যা। তবে এখন বকব না। তোমার আপুকে তোমাদের বাসায় গিয়ে বকে আসতে হবে।

–         কিন্তু কিভাবে? (হেমন্তি কার সাথে কথা বলছিস?)

–         হেমন্তি কার গলা শুনা যাচ্ছে? তোমার আপু নাতো?

–         হ্যা। আপু আসছে। তুমি আপুর সাথে কথা বল। আমি যাই।

 

আপু তোমার ফোন।

কে নিলি ফোন করেছে?

নিলি আপু না। অন্য একজন। মনে হয় তোমাকে বকবে।

আমাকে বকবে! আমাকে বকবে কেন? সরতো দেখি। রুপন্তি এসে ফোন ধরল। রুপক মনে মনে বলল, ধুর শালা! রুপন্তি আসার আর সময় পেল না… আবার মনে মনে সে খানিকটা খুশিও হল।

রুপন্তি ফোন ধরে বলল…

–         হ্যালো।

–         হ্যালো রুপন্তি। কেমন আছেন?

–         আপনি সেই লোকটা না? হেমন্ত না কি যেন নাম?

–         আপনার স্মৃতি শক্তি খুবই ভাল।

–         আপনি নাকি আমাকে বকবেন বলেছেন?

–         হ্যা বকবতো। আপনি বাচ্ছাদের সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন সে জন্য বকব।

–         আপনি কে সত্যি করে বলুন তো?

–         ভয় পাচ্ছেন? এখনই ভয় পাবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে এখনই বকব না। আমি আপনাদের বাড়িতে গিয়ে আপনাকে বকে আসব।

–         আপনার এত বড় সাহস! আপনি আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে বকে যাবেন?

–         অবশ্যই বকব। আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস না হলে বাসার ঠিকানাটা দিন। আমি এক্ষুনি গিয়ে বকে আসব আপনাকে।

–         সত্যি এখনই আসবেন?

–         হুম।

–         তাহলে আসুন দেখি আপনার কত বড় সাহস। ১৬৬/৪৬, মিরপুর-৬।

–         ঠিকানাটা ঠিকতো? নাকি ভয়ে ভুল ঠিকানা দিয়েছেন?

–         আমি আপনার মত একটা চামচিকাকে ভয় পাইনা। আপনি জানেন না কার সাথে কি করছেন। একবার শুধু আসুন তারপর বুঝিয়ে দেব কত ধানে কত চাল।

–         আম্মু… শুনে যাও ঐ মেয়েটা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে।

–         মিষ্টার হেমন্ত বাবু এখনই আম্মুকে ডাকছেন? হি হি হি হি…

–         মন ভুলানো হাসি হাসবেন না প্লিজ…। একেবারে উন্মাদ হয়ে যাব।

–         হুহ! আমার বয়েই গেছে আপনার মন ভুলাতে।

–         তাহলে আপনি মানুষিক ভাবে প্রস্থুত হোন আমি যেকোন সময় চলে আসতে পারি।

–         হ্যা হ্যা আসুন…একবার শুধু এসেই দেখুন না কি হাল করি আপনার।

–         যাবতো অবশ্যই। রুপন্তি আপনার হাসিটা খুব সুন্দর ছিল।

–         কি!

–         না কিছু না। আমি ফোনটা রাখি।

 

রুপক ফোন নামিয়ে রাখল। কাল সকালেই সে রুপন্তিদের বাসায় যাবে। এর জন্য একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। খুব সাজানো গুছানো সুন্দর একটা বুদ্ধি।

 

** ১৬৬/৪৬, মিরপুর-৬। এই ঠিকানাটা কোন ভাবে মিলে গেলে। লেখক দায়ী নয়।

 

(গল্পটা ১০ পর্ব পর্যন্ত যাবে)

 

#১৮

৭৩৯জন ৭৩৮জন
0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ