ছোটবেলায় মা একটি গল্প বলেছিলেন। গল্পটি হচ্ছে,

এক গ্রামে বিশুদ্ধ খাবার পানির কোন ব্যবস্থা ছিল না। এক দুষ্ট ধনী লোক ফায়দা লুটার জন্য একটি গভীর নলকূপ বসালো। এরপর সেই লোক শর্ত দিল যারা পানি নিতে আসবে সবাইকে প্রতি কলস পানির জন্য পাঁচ টাকা করে দিতে হবে। যেহেতু আর কোন উপায় ছিল না তাই মানুষ প্রতি কলসি পাঁচ টাকা করে দিয়েই পানি সংগ্রহ করে। একদিন সেই মানুষটি মারা গেল। এইবার লোকে কানাঘুষা শুরু করল, ব্যাটা খারাপ লোক ছিল একটা। পানি খাওয়াতো একটু তার জন্যও টাকা নিত। বদের হাড্ডি!
এভাবে লোকটির একমাত্র ছেলের কানে গেল এই কথা। মৃত বাবার বদনাম করছে মানুষ। বাবার আত্মা নিশ্চয় অশান্তিতে থাকবে। ছেলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল যেভাবেই হোক বাবার বদনাম মুছে দিতে হবে। এইবার ছেলেটি পানি নেওয়া ফ্রী করে দিল। তখন গ্রামের লোকেরা ফ্রী পানি নিতে লাগল। এইবার গ্রামবাসী আবার বলতে শুরু করল কি মানুষের কি ছেলে! পুরাই জালিমের ঘরে আলিম। বাব ছিল কত খারাপ আর ছেলে কতই না ভালো।
ছেলে তো শুনে রেগে আগুন। কাজের কাজ কিছুই হলো না। বাবার নামে অভিশম্পাত করা চলছেই। এইবার সে ঘোষণা দিল যারা পানি নিতে আসবে তাদের প্রতি কলসি পাঁচ টাকা করে দিতে হবে এবং সাথে তিনটি করে বেতের বাড়ি খেতে হবে। এইবার বুদ্ধি কাজ দিল।
গ্রামের লোকেরা বলতে লাগলো, বাপ অনেক ভালো ছিল। শুধু টাকা নিত। ছেলে আস্ত শয়তান একটি। টাকা তো নেয়ই আবার মারেও।

মোরাল- এই গল্পের মোরাল তখন বুঝি নাই, এখন বুঝি। কারো জন্য শুধু ভালো করে যাওয়া ঠিক নয়। মাঝে মাঝে কিছু খারাপও করতে হয়। নয়তো একটি খারাপের জন্য মানুষ আপনার আগের সব ভালো কাজ ভুলে যাবে।
আমার মা’কে ধন্যবাদ। আমি মায়ের সাথে সাথে একজন দার্শনিকও পেয়েছি কপালগুণে।
শেক্সপিয়ারের জুলিয়াস সিজারে একটি সুন্দর কথা আছে।
“মানুষের খারাপ কাজগুলো শুধু বেঁচে থাকে। খারাপ কাজগুলো হাড়গোড়ের সাথে মাটির নিচে কবরে চাপা পড়ে যায়। মানুষ খারাপটাই মনে রাখে।”
চরম সত্য কথা।

৭২১জন ৭২১জন
0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ