
আমার তুমি,
কথার সময় বড্ড কম, তাই লিখেই ফেলি। বলতে পারো, ভালো লাগে নিজের স্বপ্নগুলো লিখতে।
আমি দেখি নীল আকাশ, সাদা পেজো তুলো তুলো মেঘ। তুমি-আমি পাশাপাশি হাঁটব দুজন তাদের সাথে সাথে। মাঝে মাঝে গায়ে মেখে নিয়ে, আবার বেরিয়ে পড়ব। স্বপ্ন তোমাকে ঘিরে আমাদের ছোট্ট সংসারের। যেখানে আসবাব বিহীন সাজানো একটা দুটো ঘর। সকাল- বিকাল টেবিলে সাজানো ভালোবাসা। প্রেমে পড়লে কি আর ক্ষিদে পায়, বলো?
রাতগুলো স্বপ্নময়; তোমার আমার টুকুর- টুকুর গল্প আর খুঁনসুটিতে ভরা। এলোচুলে তোমার বুকে নিশ্চিত ঘুমের পর একটা আবেশী সকাল। ঘুম ভেঙ্গে মনে হতে থাকা ঈশ্! কেন যে এত তারাতারী সকাল হয়? এক কাপ ব্ল্যাক কফি, স্বাদহীন অমৃত টোষ্ট আর তোমার মিষ্টি ‘গুড মর্নিং।’
সারাদিনের অফিসের ব্যস্ততার ফাঁকেও – বাবু কি কর? তুমি খাইছ? বাবু তারাতারি ফিরবে? মিস ইউ বাবু!
এসবের পর একটা স্বপ্নময় সন্ধ্যা! পাশাপাশি দুজন, আলো – আঁধারি ব্যালকনি আর হাতে স্বাদহীন চা। শেষ না হবার চরম প্রচেষ্টা কারণ মনের ভেতর লোভ শুধু তোমার সাথে বসে থাকা সুন্দর সময়। তোমার দুষ্টু চোখের চেনা চাহনীতে বুকের ভেতর টিপটিপ কাঁপুনী। একটা মধুর রাতের অপেক্ষা! দোকানের তাজা ফুলের বদলে আমার চাই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তোমার তুলে আনা ঘাসফুল। যেগুলো খোপায় গুঁজে রাখব না শুকানোর আগ পর্যন্ত। এই তো, ছোট্ট জীবন এর চেয়ে আর বেশি কিইবা চাই!
তোমার স্বপ্নের ধরন আবার অন্যরকম। নীল আকাশ, পেজো তুলো মেঘের বদলে তোমার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।কপালময় বিরক্তিকর ভাঁজ। যেন কিছু হারিয়ে ফেলেছ? তোমার কাছে পৃথিবীটা কম্পিটিশানের, যেখানে উপরে উঠতে পারাটাই মূখ্য। সস্তা আবেগ বড্ড বিরক্তিকর! শুধু শুধু কারও সাথে গল্প করার সময় কোথায়?
একটা স্বপ্নহীন অগোছালো ভালোবাসা-বাসী ছাড়া সংসার হলেই তোমার চলে। যার কোন প্রান্তেই প্রেমের গন্ধ থাক বা না থাক, শুধু টেবিলে সাজানো রসালো গন্ধযুক্ত নানা পদ চাই-ই চাই।
সকালটা তোমার বেশ তারাহুরোর। সবার আগে অফিস পৌঁছনোর মহা টেনশান। অবশ্য সিরিয়াস মানুষরা তাই করে। অফিসের ফাঁকে ফাঁকে কাজ বাদ দিয়ে ‘বাবু খাইছো’ টাইপ আলাপচারিতা তোমার একদমই পছন্দ না। তোমার শুধু ক্যারিয়ারটাই মোষ্ট ইমপরটেন্ট।
সন্ধ্যায় আলো-আধারী ব্যালকনির ঠান্ডা চা চরম বিরক্তিকর! তার বদলে প্রমোশনের ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি, কানে ফোন, অনবরত সবার সাথে সম্পর্কের তেল। অবশ্য এটা তুমি ভালো পার। তোমার যেহেতু ক্যারিয়ারই প্রেম, তেল দিতে সমস্যা কোথায়!
তেলের পরে কত কিছুর অপেক্ষা! যেখানে হাতছানি নতুন পরিবেশ, নতুন সহচর, নতুন ফ্যাসিলিটিজ আরও কত কিছু। আমার মত সামান্য মানুষের উপেক্ষিত প্রেম তার কাছে বড়ই তুচ্ছ।
তুমি বল, আমি শুধু স্বপ্ন দেখি রসুই ঘরের। ছোট চাকরীর, ছোট অফিসের বাইরে আমার দুটো প্রিয় কাজ- রসুই ঘর আর আমার নানা রঙ্গের আঁকিবুকি স্বপ্নগুলো। যেগুলো প্রতিদিন উল্টেপাল্টে দেখতে থাকাই আমার কাজ। এবং এও জানি যা কোনদিন পুরণ হবার নয়!
তারপরও দেখি কেন জানো? ‘ শুধু কিছু সুন্দর স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে! স্বপ্নেই আমি অনুসন্ধান করি আমার আপনজনের, অতি প্রিয়জনের যে আমার থেকেও প্রিয়!
“আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
খুঁজি তারে আমি আপনায়;
আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
আমারও পিয়াসী বাসনায়,,,,” তোমার শুভ কামনায়- কুনোব্যাঙ
ছবি- নেট থেকে।
১৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এক দম ঝেড়ে দিলেন চিঠিতে!!
শেষে এসে আশাই জীবন এ থমকে গেলেন!!
ভাগ্যিস বিদ্রোহ-টিদ্রোহের লাইনে পৌছান নি, চিঠিতে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা নজরুল সংগীত এটি আমার ভীষন পছন্দের গান।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
খাদিজাতুল কুবরা
এ যে রঙিন মোড়কে আমাদের সাদাকালো /বিবর্ণ গল্প। যুগে যুগে লিখে গেছেন শরৎচন্দ্রের মতো গুণিজনেরা বিষয়ি লোকের সবকিছুই বাটখারা মেপে চলে। আসলে জিনের প্রভাবে এরা ছিল আছে থাকবে।
চুলচেরা বিচারে না আবার বেচারা শেষটায় নাকাল হয়।
ভালো থাকুক ভালোবাসা।
বাস্তব চিত্র এঁকেছো চিঠিতে।
মজা করলাম তোমার সাথে
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভালো থাকুক ভালোবাসারা। শুভ কামনা ও ভালোবাসা রইল।
হালিমা আক্তার
ফিরে গেলাম সেই চিঠির যুগে | শেষে প্রিয় কবির প্রিয় গান | মনের মাধুরী মিশানো কী অনাবিল ভালোবাসা |
রোকসানা খন্দকার রুকু
চিঠি যেন হারিয়ে না যায় তাই এই প্রচেষ্টা।
শুভ কামনা ও ভালোবাসা রইল।
আরজু মুক্তা
ক্ল্যসিক আর রোমান্টিক পাশাপাশি থাকাই ভালো। এক ঘেঁয়েমি দূর হয়। কুনো ব্যাঙ হয়েই থাকো। বিচরণ দু দিকে হবে।
শুভ কামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা মজার কমেন্ট। ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইল।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
আশায় বাঁচে মন
নইলে তো হাহাকার আজীবন।
কর্ম ও প্রেম হলে পাশাপাশি চলা
তবেই জীবনে জাগে আবেশের দোলা।
সুন্দর হৃদয়গ্রাহী নিবেদনে মুগ্ধতা চিরন্তন।
আন্তরিক শুভ কামনা রেখে গেলাম পাতায়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার সুন্দর মন্তব্যে সবসময় কৃতজ্ঞ ভাইয়া।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দুটোই খুঁজে পেলাম আবেগপূর্ণ চিঠিতে। কেউ স্বপ্নে, ভালোবাসার খুনসুটিতে বেঁচে থাকতে চায় আর অপরজন কর্পোরেট ভালোবাসা বেছে নেয়। উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু নিয়েই আমাদের পরিবার গড়ে ওঠে , নিজেকে এভাবেই মানিয়ে নিতে হয় 😭😭। খুব ভালো লিখেছেন আপু। অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল দুই মেরুর মানুষরা। ধন্যবাদ ও ভালোবাসা নেবেন দিদি ভাই।
পপি তালুকদার
কারো কারো কাছে আবেগ সে আবার কি জিনিস! ভালোবাসা পাওয়া কিংবা দিতে পারার মধ্যে অসম্ভব এক ভালো লাগা আছে যেটা স্বার্থপর মানুষ গুলো বুঝে-না।চিঠির কথা গুলো মাঝে মাঝে নিজের কথা মনে হয়েছে।
পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকে স্বপ্ন নিয়ে। হোকনা সেটা অলীক তবুও তো স্বপ্ন…
রোকসানা খন্দকার রুকু
আবেগ ছাড়া জীবন অচল আমার তো তাই মনে হয়।
শুভ কামনা ও ভালোবাসা নেবেন আপু।
তৌহিদুল ইসলাম
প্রিয়জনের উপরে যতই মান অভিমান হোক দিনশেষে তারাই আপন। আর তাই চাওয়াপাওয়ার হিসেবনিকেষটাও কড়ায়গণ্ডায় বুঝে নিতে চায় আমাদের মন।
ভালো থাকুন আপনিও। লেখা ভালো লেগেছে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তাই তো তার মাঝেই নিজেকে খোঁজ । ধন্যবাদ ভাই।