#আত্নকথন
ছোট বেলা থেকেই আমি কেমন যেন ছিচ কাঁদুনে স্বভাবের। অল্পতেই কেঁদে ফেলি, অল্পতেই হাসি। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি, বাড়তে থাকে চেনা জানা মানুষের সংখ্যা, বড় হতে থাকে পরিচিত জগৎ। এভাবে চলতে চলতে একদিন সত্যিই বড় হয়ে যাই, অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হই। কিছু নতুন বান্ধবী পাই, মহিলা কলেজ হওয়ায় সেখানে শুধু মেয়েরাই ছিলো। তাদের নিয়ে মেতে থাকতেই বেলা কেটে যেত। সেখানেও ছাড়তে পারলাম না ঐ বাচ্চামী। হয়ত সবাই একসাথে হেঁটে যাচ্ছি, মাঝপথে আমি কোন কারনে দাঁড়ালাম, কিছু কেনার জন্য। কেউ আমার জন্য দাঁড়ালো, কেউ এগিয়ে গেলো সামনে। এতেও আমার সমস্যা! সবচেয়ে কাছের যারা বান্ধবী, তারা দুজনেই কেন দাঁড়ালো না আমার জন্য? এসব মনে পড়লে এখন একাই হাসি। এক বন্ধুর সাথে এসব ছোট ছোট ঘটনা শেয়ার করতাম। সে বলতো, ” নীরা খুব নরম মনের মানুষ, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এমন একটা দিন আসবে যখন নীরা খুব শক্তপোক্ত হয়ে যাবে। এসব ছোট ছোট বিষয় তখন আর তার গায়েই লাগবে না!” আমিও তার কথামত দিন গুনতে থাকলাম, কবে আসবে সেই দিন? কবে আমি অনেক শক্ত মনের অধিকারী হবো? ভাবতাম তার কথা একদিন সত্যি হবেই… কিন্তু কই? হলো না কিছুই।
যখন কোন একটা কাজে হাত দেই, সেই কাজে মন প্রাণ ঢেলে দেই; কী হবে তাতে, নিজের কতটা লাভ হবে, এসব ভাবি না। সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করি। তবে যদি কোন কারনে অপমানে, অসম্মানে মন বিষিয়ে যায়, তখন আর আগ্রহ ধরে রাখতে পারি না। নতুন কোন কাজের আহবান আসলেও আর মন দিতে পারি না। পারি না তিক্ততা ভুলে নতুনকে নতুন করে ভাবতে। পারিনা পুরোটা ঢেলে দিতে।
ফেসবুকে যখন প্রথম প্রথম আসি, রেডিও কান্না, রেডিও বিদেশ এরকম নামে কিছু টিভি রেডিও (!) ছিলো। সঙ্গত কারনেই মূল নাম উল্লেখ করলাম না। তো এগুলো ফেসবুকবাসীর কাছে তুমুল জনপ্রিয় ছিলো। আমিও নিয়মিত পাঠক ছিলাম। পাঠ করতে করতে কবে যে নিজের লেখার ইচ্ছে মনে জেগে উঠলো, কে জানে? লিখে ফেললাম মনের কিছু অগোছালো কথা। ভেবেছি ডিলিট করে দিবে। অতঃপর আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম, পেইজের ক্রিয়েটর নিজে এপ্রুভ করলেন সে লেখা। তারপর থেকে আমি লিখি এবং তিনি এপ্রুভ করেন। একদিন তারা অধিক লেখার চাপ সামলাতে না পেরে পোস্ট অপশন বন্ধ করে দিলেন এবং যথারীতি আমার মন খারপ হলো। তারপর গেলাম রেডিও বিদেশে! সেখানকার প্রধান এডমিন ভাইটিও লেখার বেশ কদর করলেন। কিন্তু একবার একটা ধর্মীয় পোস্টে রেফারেন্স দিতে না পারায় তাদের অন্যান্য এডমিনরা এত এত খারাপ আচরণ করলো যে এরপর থেকে অন্যের পেইজে লেখা বাদ দিয়েছি, বাদ দিয়েছি নিজের ধর্ম নিয়ে সাহিত্য রচনা করা। অনেকেই বলে আমার নিজ ধর্মের প্রতি আগ্রহ কম, অন্য ধর্মে আগ্রহ বেশি! আসলে আমার ধর্ম আমার মনে মনে…
সেদিনের পর আর ঐ পেজমুখো হইনি। চার বছর পর হঠাৎ একদিন মনে পরলো, “দেখিতো সেসব আহামরি পেইজ আর হম্বিতম্বি করা এডমিনদের কী খবর?” সার্চ করে দেখি পেইজ তো নেই ই… বরং পাবলিক অন্যান্য পেইজে এদের কপি পেস্ট মার্কা পোস্ট নিয়ে পচিয়ে রসিয়ে পুরো খিচুড়ি বানায় রাখছে! ঐসব এডমিনদের আইডিগুলাও বন্ধ! কীয়েক্টাবস্থা!
আমি কিন্তু আমার বৃত্তে ভালোভাবেই রয়ে গেছি।এরপর অনেক পেইজ থেকে লেখার আহবান এসেছে, অনেকে চেয়ে লেখা নিয়েছে। ইংরেজি, বাংলা দৈনিক, ম্যাগাজিন, বই, বইমেলা এসবে ছাপা অক্ষরে নিজের নাম দেখে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি। ভুলেই গেছিলাম এদের চ্যাটাং চ্যাটাং কথা, অহংকারী,দাম্ভিক আচরণ।
যাই হোক, আমি যেমন তেমনটাই থাকতে চাই। সেই বন্ধুটিকে আজ বলতে ইচ্ছে করে, ” নীরা এখন আর ইন্টারে পড়ে না, অনার্স প্রথম বর্ষেও পড়ে না। তার ভবিষ্যত বানীও সত্যি হয়নি৷ তবু, যেমন আছি ভালো আছি। কারো প্রয়োজনে নিজেকে বদলে ফেললে নিজেরই স্বত্বাটা খোয়া যায়। আর কারো কিছু যায় আসে না…”
২৩টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
দারুন আত্বকথন। ইচ্ছে করলেই সব পালটানো যাই আপু! যাইনা।
দেখুন না ডেভেপলারের বিজ্ঞাপন্টা। রড পাল্টাতে পেরেছে? পারেনি।
আমি যেমন আছি তেমনউ থাকি।
যেমন আমি বাচাল হোয়ার চেস্টা করে পারিনি।
মোঃ মজিবর রহমান
অ সরি। যদি থাকে চান্দি, আসবে কত বান্দি।
ব্যাখ্যা কইরা লয়েন
নীরা সাদীয়া
আপনার প্রবাদ আমি বুঝতে পেরে। অনেক ধন্যবাদ আপনা।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনাকেউ ধন্যবাদ আপু
নাজমুল হুদা
পরিবর্তন হয় আবার হয় না ।
যদি না পরিবেশ আর প্রেক্ষাপট ভূমিকা না রাখতে পারে ।
আত্মকথনে নিজেকে জানা সহজ উপায়
নীরা সাদীয়া
হয়তো তাই। কেউ কেউ আছে, পরিবর্তনহতে পারেই না।
শুভ কামনা জানবেন।
বন্যা লিপি
ছোট ছোট মনের জিদগুলো একদিন প্রচন্ড শক্তিতে পরিনত হয়।নিজের লক্ষ্যে অটল থাকলে লক্ষ্য ধর্ দেবেই। শিক্ষনীয় হয়ে যায় অন্যের জন্য তখন। যেটা করলে মনে তৃপ্তি আসবেনা সেটা কেউ জোড় করেও করাতে পারবেনা, এটাই তো আত্মপরিচয়ের আপন স্বত্তা। চমৎকার ভাবে লিখে ফেলেছেন আত্মকথন।
অনেক অনেকদিন পরে এলেন। এবার আর লেখা দিতে কিপ্টেমী করবেননা যেন!!
ভালো থাকুন সবসময়🌷🌷
নীরা সাদীয়া
অনেকদিন পর আসতে পেরে আমারও ভালো লাগছে। তবে নিয়মিত হতে পারব কিনা তা জানি না।
শবনম মোস্তারী
“কারো প্রয়োজনে নিজেকে বদলে ফেললে নিজেরই স্বত্বাটা খোয়া যায়।”ভালো বলেছেন।
অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করলেন নিজের আত্মকথা। ভালো লাগলো।।
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ ভাবী। শুভ কামনা জানবেন।
তৌহিদ
নিজের জায়গায় নিজের অবিচলতাই প্রমান করে আমি ঠিক। আপনার অনুভূতি বাহবা পাবার যোগ্য। লোকেতো কত কিছুই বলে। তার ভয়ে পিছিয়ে আসাটা মোটেই উচিত নয়।
অনেকদিন পরে এলেন আপু। আশাকরি নিয়মিত আপনার এমন লেখা পাবো। শুভকামনা রইলো।
নীরা সাদীয়া
নিয়মিত হতে পারব কিনা তা জানি না। তবে আসতে পেরে আমার নিজেরও ভালো লাগছে।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো।
শাহরিন
কান্না করা একটি মানবীয় গুন। যারা মন থেকে কিছু অনুভব করে তারাই এটা পারে। রোবট হওয়ার দরকার কি!!!
ভালো কাজের ফল এক সময় ভালো পরিনতি নিয়ে আসে। আপনার লেখার প্রতিভা আরও বিস্তার করুক এই কামনা করি।
নীরা সাদীয়া
রোবট হতে চাই না মোটে। ঠিক বলেছেন আপনি।
শুভ কামনা রইলো।
নিতাই বাবু
যে যা-ই বলুক, নিজের মতো করে চলুন! আর হ্যাঁ, বেশি নরম হলে কিন্তু চলে না। একটু গরম গরম ভাবও রাখতে হয়। যেমন: আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটু ফলো করতে পারেন। উনি নরমের ভক্ত, শক্তের যম। বুঝে নিবেন আশা করি। সাথে এক নদী ভালোবাসা রেখে গেলাম।
নীরা সাদীয়া
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। আপনি সুন্দরএকটা উদাহরণ টেনেছে। ভালো লাগলো সেটা। ধন্যবাদ আপনাকে।
মনির হোসেন মমি
নিজেকে নিজে যিনি না চিনতে পারেন তার মত অজ্ঞ আর কেউ নয়। নিজের বিবেক বুদ্ধি চিন্তা শক্তি দিয়ে চলাই শ্রেয়। বহু দিন পর এলেন।খুব ভাল লাগল লেখাটি।
নীরা সাদীয়া
আমারও ভালো লাগছে আপনাদেরকে দেখে। শুভ প্রত্যাশা রইলো।
ইঞ্জা
চমৎকার আত্মকথন, এইভাবেই এগুতে হবে আপু।
লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ আবার শুরু করার জন্য। 😊
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ ইঞ্জা ভাই।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা প্রিয় বোন
আরজু মুক্তা
কারও প্রয়োজনে না নিজের জন্য বদলাবো।
নীরা সাদীয়া
ভালো বলেছে। শুভ কামনা রইলো।