
আমরা যাত্রা শুরু করলাম রাজস্থানের বিখ্যাত শহর জয়পুর দ্যা পিংক সিটির উদ্দেশ্যে, আজ রাতটা আমরা ওখানেই থাকবো, ট্রাভেল এজেন্ট আমার জন্য ওখানকার এক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছে।
ভারতের আয়তনে সবচেয়ে বড় রাজ্য রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর, রাজস্থান ভারতের পর্যটন স্থানগুলির একটিতে যুক্ত হয়েছে ভারতীয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের তৃতীয় কোণ হিসেবে, জয়পুর দিল্লীর দক্ষিণ-পশ্চিমে ৩০০ কি.মি. দুরে, তাজমহল খ্যাত আগ্রা থেকে পশ্চিমে ২০০ কি.মি. দুরে অবস্থিত।
রাজস্থানের হিন্দু রাজাদের সাথে মোঘল সম্রাটদের অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল, রাজস্থানের রাজপুত যোদ্ধারা মোঘলদের জন্য জীবন উৎসর্গ করে যুদ্ধ করতো এবং রাজপুতরা তাদের যুদ্ধ বীরত্ব এবং সাহসিকতার জন্য পরিচিত ছিল, যে সম্পর্ক আকবরের সময় সবচেয়ে জোরালো ছিল ।
কিন্তু ভারতবর্ষের ষষ্ঠ মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমল থেকে এই সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে, কারণ তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বৈরী ভাব বজায় রেখেছিলেন, তিনি রাজপুত রাজা জয় সিংহকে মোগলদের শত্রু বিবেচনা করে তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন, যোদ্ধা ও জ্যোতির্বিদ মহারাজা জয়সিংস দ্বিতীয় ১৭২৭ সালে তাঁর রাজধানী আমের থেকে সমতলভূমি জয়পুরে সরিয়ে নিয়ে আসেন।
বিদ্যাধর ভট্টাচার্য নামের একজন বাঙ্গালী স্থপতি জয়পুর শহরের ডিজাইন তৈরী করেন প্রচীন হিন্দু স্থাপত্য ও শিল্প-শাস্ত্রের অবলম্বনে, তাঁর স্থাপত্য বিদ্যার বলে নগর প্রাসাদ এবং পৃথিবীর বৃহত্তম পাথরের মানমন্দির নির্মিত হয়, এটি ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন পরিকল্পিত নগরী ।
১৮৭৬ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস এবং রানী ভিক্টোরিয়া একটি সফরে ভারত সফর করেন, গোলাপীকে আতিথেয়তার রঙ বিবেচনা করে জয়পুরের মহারাজা রাম সিং পুরো শহরের বাড়িঘর গোলাপী রং করে অতিথিদের স্বাগত জানান, একারনেই জয়পুরকে পিংক সিটি বলা হয়, জয়পুর শহরের পুরাতন আংশের প্রতিটি ঘরবাড়ি এখনো গোলাপি। – সূত্রঃ গুগল।
সন্ধ্যার আগে আগে আমরা জয়পুর শহরে পোঁছে গেলাম, শহর একটু গিঞ্জি ধরণের, যেন পুরান ঢাকার অলিগলি।
আমার গাড়ী এগিয়ে চলেছে শহরের ভিতর দিয়ে, যেদিকে দেখি সব গোলাপি রঙের বাড়ী ঘর, বেশিরভাগ পুরাতন বিল্ডিং যা রাজারাজরাদের বানানো।
ড্রাইবার বললো, জনাব সামনে দেখুন।
আমি সামনে তাকিয়েই হা হয়ে গেলাম, সামনে এ মাথা থেকে ও মাথা (ডানে বামে) দেখায় যায়না, এ এক বিশাল বিল্ডিং, ছয় সাত তলা হবে হয়ত, এর নিচ এবং মাঝ বরাবর রাস্তা চলে গিয়েছে, সেই পথ দিয়ে আমরা বিল্ডিংটা পেরিয়ে এলাম।
ড্রাইভার বললো, এই বিল্ডিংটার নাম হাওয়া মহল, এইখানে মহারানি থাকতেন তার সখি ও দাসীদের নিয়ে, যে রাস্তা দিয়ে আমরা হাওয়া মহল পেরিয়ে এলাম, সেই রাস্তায় এক সময় সম্রাট আসা যাওয়া করতেন হাওয়া মহলে।
আমাদের গাড়ী এক রাজবাড়ির গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে ড্রাইভার বললো৷ এইটা আপনার হোটেল।
আমি প্রথম দেখাতেই না করলাম, এই পুরানো রাজারাজদের বিল্ডিংয়ে আমি থাকতে রাজি নই।
ড্রাইভার বললো, এইটা তিন স্টার মার্কা হোটেল।
আমার এক কথা, আমি এই হোটেলে থাকবোনা, অন্য ভালো হোটেল দাও, দরকার হলে ফাইভ স্টারে থাকবো।
ড্রাইভার বাধ্য হয়ে দিল্লি ট্রাভেল এজেন্টের সাথে কথা বলে নিয়ে আমাকে বললো, জনাব আপনাকে ফাইভ স্টার হোটেলে নিয়ে যাবো কিন্তু বারতি ২০০০ রুপি আপনাকে দিতে হবে।
আমি রাজি হয়ে গেলে আমাকে নিয়ে চললো ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে।
…….. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
২৭টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
একজন বাঙালি স্থপতি ঐ সময়ে এটি তৈরি করেছেন জেনে ভালই
লাগল। আমার তো মনে হয় প্রাসাদ হোটেলে থাকলেই মজা হতো, না জেনেই বলছি যদিও।
ইঞ্জা
সত্যি এ অনেক বড় বিষয় ভাইজান, এই স্থাপত্যশিল্পে একজন বাঙ্গালি জড়িত যেন ভালো লাগারই কথা।
রাজারাজরাদের হোটেলে থাকা মানেই ভূতের কবলে পড়া যা আমি ভয় পাই। 😜
এইজন্যই থাকি নাই ভাইজান। 😂
মনির হোসেন মমি
ভাইজান মনে হয় এই হোটেল দেইখা ভয় পাইছিলেন। রাজস্থানের অনেক কিছুই জানা হল।পিংক সিটি সম্পর্কেও জানলাম। চলুক।
ইঞ্জা
হাঁ একদম ঠিক ধরেছেন ভাই, ভূতের ভয়েই থাকিনি আমি। 😂
মনির হোসেন মমি
হা হা হা
নিতাই বাবু
অনেককিছু জানা হলো, শ্রদ্ধেয় দাদা। চলুক! সাথে আছি।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অহর্নিশ দাদা। 😊
তৌহিদ
সেখানেও হাওয়া মহল!! তাও আবার গোলাপী রঙ!! তবে পিংক সিটির কেন বলা হয় তা কিন্তু আজই জানলাম আপনার লেখার মাধ্যমে দাদা।
ভালো লাগছে ভ্রমন গল্পটি।
ইঞ্জা
প্রতিটি রাজরানীদের জন্যই এক সময় হাওয়া মহল থাকতো, যা জয়পুরেও আছে ভাই।
পাশে থাকুন, আরও অনেক চমকপ্রদ বিষয় জানতে পারবেন।
ছাইরাছ হেলাল
এবারের লেখাটির বিশেষত্ব হলো একটু ইতিহাস তুলে ধরেছেন,
যা আমাদের জানার জন্য অনেক সহায়ক, আবার এমন হয়নি যে ইতিহাসের ভারে
ভ্রমন কাহিনীটি থমকে গেছে। এখন ঘোড়া ঘুড়ি কমালেও বিখ্যাত লিখিয়েদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত এখন ও পড়ি।
বিশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।
ইঞ্জা
ধন্যবাস ভাইজান, এই জয়পুর হলো ঐতিহাসিক এলাকা, এইটাতে কিছু ইতিহাস না দিলে এই লেখাটি অধরা হয়ে যেত ভাইজান।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
রাজস্থানের কাহিনী পড়ে খুব ভালো লেগেছে। লেখা আরো লম্বা কেন হয়নি আফসোস লাগছে…
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি।
ইঞ্জা
দ্রুতই পাবেন ভাই। 😊
সাবিনা ইয়াসমিন
আমার প্রাচীন ইতিহাস, শহর-জনপদ আর বাড়িঘর দেখতে খুব ভালো লাগে, আর তা যদি হয় রাজ-রাজরাদের আমলের তাহলেতো কথাই নেই।
ভাইজান, আপনি শুধু এই বিল্ডিং টার বাইরে ছবি কেন দিলেন? ভিতরের একট-দুটো ছবি দিতেন, তাহলে আমারও রাজস্থান ঘোরার শখ একটু পুরো হতো 🙁
বাকিটা কখন পাবো??????
ইঞ্জা
আপু সময়ের অভাবে আমার এইসব দেখা হয়নি ভিতর থেকে, আবার বেশিরভাগ জায়গাতে ভিতরে যাওয়াও নিষেধ থাকে, আর যা আমি দেখিনি তার বর্ণনা আমি দেওয়াটা উচিত মনে করিনা। 😊
সাবিনা ইয়াসমিন
তাতো বটেই, যার ভেতরটা দেখা হয়না, তার বর্ননা দিতেও হয়না। 🙂
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিন ভাইজান, এক জায়গায় আর কত ঘুরবো 😉
ইঞ্জা
দিয়েছি আজ এর শেষ পর্ব। 😊
মোহাম্মদ দিদার
শুধু ভালো লাগা ব্যাক্ত করলেই শেষ হবেনা, অনেক কিছু জানতে ও পারলাম।।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, ভ্রমণ কাহিনীর অর্থই হলো অজানাকে জানা।
নীরা সাদীয়া
যতটুকু না ভ্রমণকাহিনী পড়লাম, তারচেয়ে বেশি পড়লাম সাধারণ জ্ঞান। অনেক উপকৃত হলাম জেনে:
রাজস্থান ভারতের আয়তনে সবচেয়ে বড় রাজ্য।
জয়পুরকে কেন পিংক সিটি বলা হয়।
ইত্যাদিসহ আর বেশ কিছু টুকিটাকি তথ্য।
এই তথ্যবহুল পোস্ট পড়ে অনেকটা তৃপ্ত হলাম।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, আসলে ইতিহাস জানা না থাকলে এইসব জায়গায় যাওয়াটাই বোকামি মনে করি আমি, কারণ এইসব জায়গার পরতে পরতে ইতিহাস রয়ে গেছে।
জিসান শা ইকরাম
পিংক সিটি নামকরণের ইতিহাস জেনে সমৃদ্ধ হলাম,
রাজপুতদের বিভিন্ন যোদ্ধার বীরত্বগাথা ইতিহাসে পাওয়া যায়, কেন যে সম্রাট আওরঙ্গজেব রাজপুতদের শত্রু ভাবলেন তা এক রহস্য আসলে।
ভারতে ভ্রমনে গেলে আপনার দেখা এই সমস্ত স্থান অবশ্যই দেখবো।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ভাইজান, আমি অনুরোধ করবো কমছে কম তিন দিনের ভ্রমণ রাখবেন জয়পুরে, নাহলে আমার মতো আফসোস করবেন।
রেজওয়ান
রাজবাড়ির মত হোটেলটা কি ভৌতিক ছিলো ভাই?🤔
ইঞ্জা
ছিলোনা কিন্তু যদি থাকে এই ভয়েই পালিয়েছি। 😂
রেজওয়ান
সরাসরি ভুত দেখতে ইচ্ছা করে আমার😄
ইঞ্জা
ওরে বাবারে…..