মেয়েরা নিজেদের সৃজনশীল বিকাশে কতোটা অবদমিত থাকে শুধুমাত্র সংসারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, বাস্তব জীবনে খুব খুব কাছে থেকে একজন মানুষকে না দেখলে নিজেও অনুভব করতে পারতাম না।
আমি যখন তাঁর সাথে পরিচিত হই, তখন সে নিতান্তই একজন সাধারন হাউজ ওয়াইফ। দুটো সন্তান মানুষ করা আর সংসার যাপনই তাঁর মূখ্য কাজ। বাসায় শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় পরিজনকে আদর-আপ্যায়নে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখতাম। পরিচয় পর্বেই জেনেছিলাম, আগে জব করলেও বাচ্চাদের প্রয়োজনে ছেড়ে দিয়েছে।
জানি না আমি মানুষটা কেমন! ছাত্রজীবন থেকেই কোন না কোন কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পছন্দ করতাম। অযথা আড্ডা/গসিপ আমাকে টানতো না। সে সময় খুব সেলাই/ডিজাইনিং এগুলোর নেশা ছিলো। পড়াশুনা যখন প্রায় শেষের পথে, ঢুকে পড়লাম এক কোচিং সেন্টারে পড়াতে। এরপর চাকুরী। যাহোক, ধান ভানতে শীবের গীত গেয়ে লাভ নেই।
২০০৩ এ যখন বাড়ি পরিবর্তন করে আমি নতুন বাড়িতে উঠি, অখানেই সমবয়সী এক ভদ্রমহিলার সাথে আমার পরিচয়। প্রায় ১১ বছর সে বাসায় আমি ছিলাম। ৬০ টি ফ্ল্যাট নিয়ে বিশাল এপার্টমেন্টে একমাত্র তাঁর সাথেই ছিলো আমার গভীর আত্মীক সম্পর্ক। অন্যদের সাথে হাই-হ্যালো, সামাজিক যোগাযোগ থাকলেও অজানা কারনে সুযোগ পেলেই একটু সময় কাটানোর মন চাইলে আমি প্রথমে তাঁর ফ্ল্যাটেই ছুটে যেতাম। সেও আসতো।
গত ২০১৪ সালের কোন একসময় জানতে পারি তাঁর দাম্পত্যজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এর কিছুদিন পর আমি সে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে আসি। অনেক ঘনিষ্ঠতা থাকলেও দাম্পত্য কোন ব্যাপার নিয়ে আমাদের কখনো আলাপ হতো না। সেকারনেই হয়তো ব্যাপারটা জানার পর তাঁর সাথে আমার দু-একবার দেখা হলেও আমি এ আলোচনায় যাইনি।
অথচ, আজ সে নারীকেই দেখি কি সাহিত্যাঙ্গন, কি সংস্কৃতি অঙ্গন সব জায়গাতেই সে দৃপ্ত পদচারণায় মুখর!
আমি বলছি না যে, দাম্পত্যই তাঁর সৃজনশীল প্রকাশের একমাত্র অন্তরায় বরং আমি বলতে চাইছি দাম্পত্য টানাপোড়নজনিত সমস্যাই হয়তো তাঁকে তাঁর নিজেকে প্রকাশ করা থেকে বিরত রেখেছে। আজকের তাঁকে আমি অতীতের তাঁর সাথে মেলাতে পারি না। কেবলই ভাবি, এতো কাছে থেকে দেখা মানুষটি এতোটা সমৃদ্ধ!
আর যদি এমনই হয়, তো বলবো এই টানাপোড়নই হয় নারীকে অবদমন করে রাখে আর নাহয় বাধা অতিক্রম করতে সম্পর্কের সুতো ছিঁড়তে বাধ্য করে।
সে ছাড়াও, আরো একজন নারীকে খুব কাছে থেকে দেখছি দাম্পত্য টিকিয়ে রাখার জন্য কতো রকমের কম্প্রোমাইজ করে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে কতো অসহনীয় সময় সে পার করছে।
কাজেই, অবদমন নয়, পারস্পারিক সহযোগিতাই সুন্দর দাম্পত্যের চাবিকাঠি।
২০টি মন্তব্য
হতভাগ্য কবি
পারস্পারিক সহযোগিতাই সুন্দর দাম্পত্যের চাবিকাঠি সম্পূর্ণ সহমত জানালাম আপনার কথার সাথে, পুতুল বানিয়ে সেই পুতুল নিয়ে মনের মতন করে খেলা যায়, সংসার তো আর পুতুল খেলা নয় ।
বিশ্বাস করি সময় বদলাবেই -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
😮 সময় বদলাচ্ছে কিন্তু তার সাথে পাল্লা দিয়ে বুঝাপড়ার অভাবে ঘরও ভাঙছে!
শঙ্কা কিন্তু এখানেই। জরিপ করলে দেখা যাবে এখন ডিভোর্স মেয়েদের দ্বারা বেশি ঘটছে!
অনেকেই, কারন হিসাবে টেনে আনেন অর্থনৈতিক টানাপোড়ন এবং পরকীয়া। কিন্তু আসলে কি শুধুই এ দুটি কারন দায়ী?
হতভাগ্য কবি
আমার কেন যেন মনে হয় এর জন্য মনস্তাত্ত্বিক দূরত্বটাই বেশী দায়ী, বিশ্বাস করি সময় এইটাও ঠিক করে দিবে। আর সময়ের সাথে সাথে পারিবারিক শিক্ষার ধরণও বদলানো উচিত।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y) ঠিক।
হতভাগ্য কবি
😀
অরুনি মায়া
চমৎকার একটা পোস্ট দিয়েছেন আপু | পারস্পারিক সহযোগিতা না থাকলে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হবেই | সংসার জীবনে নারীরাই সবচেয়ে বেশি আবদ্ধ হয়ে পড়ে | যে নারী পারিবারিক সহযোগিতা পায় সে এগিয়ে যেতে পারে ,তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে | আর যে সেটুকু পায়না অথচ পেতে চায়,এগিয়ে যেতে চায় কিন্তু থেমে যায় ,তখনই পথ খুঁজতে থাকে খাঁচা ভাঙার |
পারস্পারিক সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর দাম্পত্য অসম্ভব |
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বেশিরভাগ দাম্পত্যেই অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণের কারনে টানাপোড়ন তৈরি হয়।
আর এই টানাপোড়নে ৯০% মেয়েরা, ১০% ছেলেরা ভুক্তভোগী।
জিসান শা ইকরাম
খুবই ভাল একটি লেখা।
আপনার লেখার বক্তব্যের সাথে একমত।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ।
অপার্থিব
বেঁচে থাকার জন্য মানুষ মানূষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে ,সেই সম্পর্কে টানা পোড়ন তৈরী হয় তখন তার সৃজন শীল কাজ কর্ম বাধা প্রাপ্ত হতে পারে। এটা দাম্পত্য কিংবা অন্য কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও হতে পারে। মানুষের প্রেরণার উৎস মূলত আত্ন নির্ভরশীলতা । একজন নারী যখন আত্ন নির্ভরশীল হবে , যখন তার কাছে আর্থিক , সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার মালিকানা থাকবে তখন সে আরো বেশি করে শুধু সৃজনশীল নয় উৎপাদনশীল কাজেও অনেক বেশি সফলতা অর্জন করবে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y) একমত আপনার সাথে।
অর্থনৈতিক মুক্তি নারীকে আত্মনির্ভরশীল হতে শক্তি জোগালেও অনেক নারীকেই দেখেছি অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনের মাধ্যমে আত্ননির্ভরশীল হওয়ার পরও তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। প্রতি পদেপদে তাঁকে অবদমিত করে রাখার কৌশল অবলম্বন করা হয়। আর একসময় যখন সে খাঁচা ভেঙে বের হয়, তখন তো নারীর প্রতি আঘাত আনার মোক্ষম একটি অস্ত্র আছেই। তার চরিত্র(!!!!) সমাজে দলবেধে কিছু কুরুচির মানুষ মুখিয়েই থাকে সুযোগমতো সে অস্ত্রের ব্যবহার করতে।
কাজেই নারীকে বাধা ডিঙাতে হলে তাকে অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনের পাশাপাশি আত্মশক্তিও অর্জন করতে হবে প্রতিকূল পরিবেশকে মোকাবেলা করার জন্য।
কিন্তু বেশিরভাগ মেয়েরাই তা পেরে উঠে না। এই না পারাটা সবসময় যে আত্মশক্তির অভাবে তা নয়, সন্তানের ভবিষ্যৎ মঙ্গল কামনাও মেয়ে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে দাঁড়ানোর পথে অন্তরায়। এই সুযোগটাও তথাকথিত পুরুষতন্ত্র নেয়।
সর্বশেষ দু’লাইনে যে মেয়েটির কথা বললাম, সে তেমনই একজন।
তবে সময় বদলাচ্ছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে ঘর ভাঙার হারও বাড়ছে!
অনিকেত নন্দিনী
অবদমন নয়, পারস্পারিক সহযোগিতাই সুন্দর দাম্পত্যের চাবিকাঠি। (y)
একটা দাম্পত্য সম্পর্কের মাঝে যদি ভালো বন্ধুত্ব আর বোঝাপড়াই না থাকে, জোর করে একজন আরেকজনকে দমিয়ে রাখে, সেখানে সম্পর্কটা কখনোই সহজ ও সাবলীলভাবে এগিয়ে যায়না।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
যথার্থই বলেছেন। (y)
ছাইরাছ হেলাল
‘কাজেই, অবদমন নয়, পারস্পারিক সহযোগিতাই সুন্দর দাম্পত্যের চাবিকাঠি’
আমরা এটা ভাবী, বলি এবং তা মনে প্রাণে চাই ও।
কিন্তু যোজন যোজন দূরেই তা থাকে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
পারস্পারিক সহযোগিতার মাঝেই কম্প্রোমাইজ নিহিত। কম্প্রোমাইজ ছাড়া কোন দাম্পত্যই সুন্দর এবং সাবলীল হয় না।
রিমি রুম্মান
অবদমন নয়, পারস্পারিক সহযোগিতাই সুন্দর দাম্পত্যের চাবিকাঠি__ সহমত আপু। কিন্তু কেন যেন এই সহযোগিতাটুকুই সোনার হরিণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কারন আছে, মনোজগতে যে পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান-ধারনা বাসা বেধে আছে, সেখান থেকেই অবচেতন মনেই অবদমন করে রাখার প্রবণতা কাজ করে।
সচেতনতা আর অধিকারের প্রতি ন্যায়বোধ সম্পর্ককে পারস্পারিক বুঝাপড়ার মাঝে দিয়ে টেনে নিয়ে যায়।
ইলিয়াস মাসুদ
এ যেমন একজন মেয়ের গল্প তেমনই হাজারো ছেলের গল্প আছে একই সুতোই গাঁথা, মেয়েরা ইচ্ছে করলেই কাঁদতে পারে, বলতে পারে ভাই বোনদের কাছে আত্মিয় স্বজনদের কাছে ছেলেরা সেটাও পারেনা…. পারস্পারিক সহযোগিতাই সুন্দর দাম্পত্যের চাবিকাঠি এখান টাই প্রচন্ড ভাবে সহমত আপা
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আপনার কথাটাকে গুরুত্বের সাথেই গ্রহণ করেছি কারন ছেলেদেরও একই টাইপ সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। তবে আনুপাতিক হারে কম।
আমি আলোকপাত করেছি সেই দিকটাতে, যেখানে অবদমন করে রাখা হয়। আমি একজন পুরুষ মানুষকেও অনেক কাছে থেকে দেখেছি, যিনি বউয়ের চোখ রাঙানিতে সর্বদা তটস্থ থাকেন। উনার হয়ে বউয়ের সাথে কতো ঝগড়া করেছি!
দাম্পত্য মানেই সঙ্গীর ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়, আবার স্বাধীনতা মানেই সেচ্চাচারিতা নয়।
শুন্য শুন্যালয়
এক কাছের বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেলো। শেয়ার না করে পারলাম না। প্রায় ১৪ বছরের বিবাহিত জীবন তাদের। আমার বন্ধুটি অনলাইনে একটিভ বেশ, লেখালেখি, গান, কবিতা, ছবি আঁকা, ছবি তোলা, সবকিছুতেই তার আগ্রহ সীমাহীন। সবকিছুতেই তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছে সে। তার হাজব্যান্ডের কিছুই তার জানা নেই। কোন একদিন ফেসবুকের একটা সুন্দর স্ট্যাটাস দেখে তার হাজব্যান্ড তাকে জিজ্ঞেস করলো, লেখাটি তোমাকে কে লিখে দিয়েছে? বন্ধুটি আহত হয়ে জানালো আমাকে। ১৪ বছর কাউকে জানার জন্যেও হয়তো বেশি সময় নয়। তার হাজব্যান্ড যদি তাকে সহযোগিতা করতো, আজ সে কোথায় যেত ভাবি আমি।
এমন সংখ্যাটি হয়তো বেশি আপু। একজন বন্ধুর মত লাইফ পার্টনার না পেয়ে কত প্রতিভা নষ্ট হয়!! 🙁