গল্পটি লিখছি আমার এক ছোট বেলার প্রয়াত বন্ধু রুমেলের স্বরনে সে আজ প্রায় বারো বছর হবে,কেউ বলে রোড অ্যাকসিডেন্টস,কেউ বলে পরিকপ্লিত হত্যা কিন্তু কি ভাবে কেনো সে পৃথিবীর বুক হতে অকালে চলে গেল সেই রহস্য আজও অজানা। সে দিন তার বাসায় গিয়ে হতভম্ভ হই তার মা, বাবা ,স্ত্রী এবং ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের দেখে।কেমন যেন অসহায়ের মত তার বৃদ্ধ বাবা চেয়ে রইল আমার দিকে এবং অকপটে চোখের কোণ বেয়ে পড়ে কষ্টের জল।বাচ্চা ছেলের মত এক সময় হাউ মাউ করে কেদেঁ উঠে সেদিন তাকে শান্তনা দেয়ার ভাষা আমার জানা ছিল না আমিও যেন থ’ খেয়ে যাই।কি শক্তই না ছিল তার বাবা আজ বয়সের ভারে অকালে ছেলে হারানোর বেদনায় তিন হাটু এক হয়ে যাবার পথে।গল্পটার কাহিনী অধিকাংশই বাস্তব এবং যৌবনের চলার পথে খন্ড খন্ড চিত্রের সমাহার।কিছুটা চরিত্রের প্রয়োজনে অপ্রিতীকর কিছু ঘটনা যোগ করতে হয়েছে তবে বাস্তবতার ছোয়া একশ ভাগ।আশা করি পাঠকগণ ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
গভীর অন্ধকার রাত প্রায় দুটো।ঢাকা শহরে এত রাতে সাধারনতঃ তেমন কর্মব্যাস্ত লোকজনের বিচরন তেমন একটা থাকেনা।মাঝে মাঝে কিছু দল বেধে তরুন তরুনীদের হাটতে দেখা গেলেও সাধারনতঃ প্রকাশ্যে কোন রাস্তার কিনারায় আড্ডা মারতে দেখা যায় না।বহু আগে দেখা গেলেও এখন আর তেমন দেখা যায়না কারন রাজনৈতিক অস্হিরতা ঢাকা শহরের প্রতিটি কংক্রিটেও আতংঙ্কের ফাটল দেখা যায়।ঢাকা শহরের এক নামকরা বস্তি ।রেল লাইনের পাশে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ঘরের সমন্নয়ে গড়ে উঠে বিশাল বস্তির রাজ্য।সেখানেই থাকে এক বাপ মা হীন এক বস্তির রাজপুত্র।কেউ ডাকে ছোটন,কেউ পিচ্চি ছোটন,কেউ বা আদর করে ডাকে ছোটন রাজা।সেখানে কি না আছে মেয়ে মানুষ থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব রঙ্গীন বস্তুই পাওয়া যায় অনায়াসে।ট্রেন যখন না আসে তখন সেখানে নেশার হাট বসে ট্রেনের সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার মত সব হাওয়া হয়ে যেত।নেশা বিক্রয় স্হান হতে প্রায় কোয়টার মাইল সিরিয়ালে আছে সব কোর্ট টাই পড়ুয়া ভদ্রলোকের ভদ্র ছেলেরা।প্রায় সবাই শহরের বড় বড় শিক্ষিত কর্পোরেট কিংবা বানিজ্যিক অফিসের কর্মকরতা কিংবা কর্মচারী।অবাক করার বিষয় হলো ঐ সকল তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত কোর্ট টাই পড়ুয়া ভদ্রলোকগুলোর লাইন যাতে সিরিয়াল মত থাকে সে জন্য নিয়োগ দেয়া আছে একজন পঙ্গু ছেলেকে সে মাটির সাথে চার পা দিয়ে চলে হাতে থাকে একটি লাঠি যা দিয়ে সে লাইন ঠিক রাখে।বিষয়টা ভাবলে শিক্ষিত লোকের জন্য অনেক লজ্জাকর, না ভাবলে কিছুই না।প্রশাসনের নাকের টগায় চলে রমরমা ব্যাবসা।বস্তায় বস্তায় থাকে ঔষধের বোতল মদ গাজার স্তুব জমিয়ে রাখে মাত্র দু’ঘন্টার জন্য।দুঘন্টায় সব শেষ।সেখানে গল্পের হিরো ছোটনের আনাগুনা থাকে বেশ দাপটের সাথে।ছোটনের নামে মার্ডার কেইস সহ অনেক মামলা আছে যা জামিনে হাজিরা দিচ্ছে।হঠাৎ পুলিশের রেইট পড়ে সেখানে আর যায় কোথায় ,যে যেখান দিয়ে পারে দে দৌড়।ছোটনও দিলো দৌড় তার পিছু নিয়েছে বেশ কয়েক জন পুলিশ ।ছোটন বস্তির ভিতর দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে যখন আর কোন পথ পেলোনা তখন সে হঠাৎ ঝাপ দেয় বস্তির খোলা টয়লেটে।পুলিশ তাকে এ অবস্হা দেখে শুধু…..হারাম জাদা!আর যায়গা পেলি না।ছোটনে শরীরে যখন ময়লার আবরন তখন তাকে চেনা বড় দায় আর তার দুগন্ধে পুলিশে দু’টাকা ইনকামের ধান্দা শেষ।তাকে ধরলে প্রথমে তাকে গোছল করাতে হবে কয়েক ডজন লাক্স সাবান দিয়ে।শেষ পর্যন্ত পুলিশ ফিরে যায়।ছোটন এবার ধীরে ধীরে উপরে উঠে শিউলি…..এই শিউলী বলে ডাকতে থাকে, এরই মধ্যে বস্তির আরো অনেকে এসে ছোটনকে ধরে গোছল করায় লাক্স সাবন দিয়ে।ছোটনের বাসা সেখানে না হলে সেখানকার লোকেরা তাকে খুব আদর করত।ভয়ে হউক আর নির্ভয়ে হউক তার কথা মত বিভিন্ন অপারসনে কাজ করত।ছোটনের সাথে পরিচয় হয় শিউলী নামের আর এক এতিমের।শিউলীকে সে খুব পছন্দ করে কিন্তু শিউলী তাকে এড়িয়ে চলে।শিউলির কথা সে, যেদিন ঐ সব ছাই পাছ খাওয়া বন্ধ করবে সে দিনই তাকে মেনে নেবে।ছোটনের ভাষ্য সে যে কাজ করে সেখানে ছাইপাছ না হলে চলে না।একজন মানুষ আর একজন মানুষকে হত্যা করবে তাতে সুস্হ ব্রেনে সম্ভব নয়।তাছাড়া বাপ মা হীন এতিম সে কখনও মায়ের স্নেহ বাবার শাসন-আদর কাকে বলে,সে পায়নি ,পায়নি তার জম্ম পরিচয়।শুধু এ টুকু শুনেছে তার মায়ের সাথে গ্রামের বাড়ীতে এক দেশ প্রেমিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার এঙ্গেজ ম্যান্টস হয়েছিল।যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়াতে বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে দেয়নি তার বাবা।তার বাবা বলেছিল…দেশে শত্রুমুক্ত না করতে পারলে,বাংলাকে পরাধীনের শিকল হতে মুক্ত করতে না পারলে কিসের সংসার।দেশ স্বাধীন করে যদি জীবিত আসতে পারি তাহলে তোমাকে(ছোটনের মাকে) ঘরে তুলব।ছোটনের মায়েরও একই মত ছিল সেও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তাদের আপ্যায়নে ব্যাবস্হা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের রক্ষনা বেক্ষন করতেন।মা বাবার এমন প্রতিজ্ঞায় তার জম্মের কোন চিহৃ পাওয়া যায়নি কিন্তু তার প্রশ্ন তাহলে সে কার সন্তান?কি তার পিতৃ পরিচয়।তাহলে সে কি স্বাধীনতা অর্জনের মুলধন?প্রশ্ন করে শিউলীকে,প্রশ্ন করে মানুষের বিবেক কে,এর কোন উত্তর সে পায়নি,কেউ কোন উত্তর দিতে পারেনি।স্বাধীনের ৪২টি বছরেও সে উত্তর খুজেঁ পায়নি এমন কি তার মা বাবার মুক্তিযুদ্ধের এমন ইতিহাসও কেউ জানে না।আজকাল মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট যার নেই তাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধা বলি না কিন্তু যারা ‘৭১ দেশ মাতৃর টানে যে যুদ্ধ করেছিল সেখানে কোন কিছু পাওয়ার আশা ছিলনা,সার্টিফিকেটের জন্য তারা যুদ্ধ করেনি।অথচ আজ এত বছর পর এখনও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা নীরবে চোখের জল ফেলে।মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট ঝুলে রাজাকারের গলায়।রাজাকাররা বহন করে ত্রিশ লক্ষ্য প্রানের বিনিময়ে কেনা স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকা।ছোটনের তখন মনে প্রচন্ড রাগ, হয় ইচ্ছে করে যদি পেতাম এক বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দেখিয়ে দিতাম কতটা দাম দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল তার মা বাবা এ দেশের স্বাধীনতা।ছোটনের ছোট বড় সব দুঃখই শিউলীকে বলত।শিউলীও বুঝে তাকে একবার এড়িয়ে গেলেও আবার তার কাছেই ছুটে আসত।
-তুই কি আর ভাল হবি না?
-শিউলী বলে কি,আমি কি খারাপী করলাম।
-ঐ যে পায়খানায় ঝাপ দিলি…আর কোন যায়গা পেলি না?
-ওটাই ছিল উত্তম যায়গা তা না হলে হারাম জাদা পুলিশদের মিনিমাম ৫০/৬০ হাজার টাকা দিয়ে ছুটে আসতে হত।ওরা যা করছে,মনে হয় যেন দেশটাকে স্বাধীন করেছিল ওদের জন্যই।অপরাধীর অপরাধের বিচার না করে ব্যাবসা করে।তারপর মহাজন আইছিল?
-হ্..তয় কইছে যত তাড়াতারি সম্ভব কাজটা শেষ করতে।
কাজটা কি?কাজ হলো সারা ঢাকা শহরের কোনায় কোনায় ইট ভাঙ্গার গুড়া আর কিছু লাঠি যায়গায় যায়গায় জমিয় রাখা কাল বিরোধীদলের সমাবেশ সেখানে বাধা আসতে পারে তাই যাতে বাধার জবাব দিতে এই ব্যাবস্হা আর এর জন্য ছোটন অগ্রিম নিয়েছেন পঞ্চাশ হাজার টাকা কন্টাক এক লক্ষ টাকার।
১০টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
প্রথমত চখের নোনা জলের জন্য কষ্ট পেলাম,
দ্বিতীয়ত বাস্তব কাহিনী তুলে ধরার জন্য সাধুবাদ।
আমি মুক্তিযদ্বা বলি তাকেই যার নাই সরকারের অনুদানের খাতায় নাই নাম,
আমি মুক্তিযদ্বা বলি তাকেই যার নাই এখন যে গাই বাঙ্গলার দলের চামচিকা না,
আমি মুক্তিযদ্বা বলি তাকেই যার নাই যে মুক্তিযদ্বা পাই নাই পাই নাই করে না।
আমি মুক্তিযদ্বা বলি তাকেই যার নাই যে দেশের নিকট হতে এর বিনিময়ে কিছুই চাইনা।
মা মাটি দেশ
ভাইজান এটি একটি বাস্তব চিত্রে গল্পের রূপ যা আমার সারা জীবনে দেখে যাওয়া কিছু খন্ড চিত্রের একত্রে একটি রূপ।ভাইয়া সোনেলায় বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি আপনি বেশ সচল ধন্যবাদ আপনাকে সোনেলাকে সঙ্গ দেয়ায় (y)
হলুদ পরী সাদা নাকফুল
কষ্টের তবে ভালো লাগল পড়ে ………………।।
মা মাটি দেশ
আপু ঘটনা কেবল শুরু আশা অন্য সব লেখার মত এই সিরিজেও সাথে থাকবেন।জানতে পারবেন অনেক অজানা কথার ভিন্নধর্মী গল্প। ধন্যবাদ
নীলকন্ঠ জয়
আসলেই ভিন্নধর্মী গল্প। সাহসী লেখা।
শুভেচ্ছা -{@
মা মাটি দেশ
আশা করি এই লেখায় ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করব বাংলাদেশের অপরাধ জগতের বাস্তবতাকে।ধন্যবাদ ভাই -{@
জিসান শা ইকরাম
‘ কিন্তু যারা ‘৭১ দেশ মাতৃর টানে যে যুদ্ধ করেছিল সেখানে কোন কিছু পাওয়ার আশা ছিলনা ,সার্টিফিকেটের জন্য তারা যুদ্ধ করেনি। ‘ — একমত আপনার সাথে ।শুধু দেশকে স্বাধীন করার প্রেরনায় যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা ।
পরের পর্বের অপেক্ষায়
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ ভাই (y)
খসড়া
ভাল লাগলো চলুক।
মা মাটি দেশ
সাথে থাকায় শুভেচ্ছা -{@