ডান হাতের মধ্যমা কিছুটা কেটে যায় একসময়। খাওয়াসহ যে কোনও কাজেই ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হই। মনে হতে থাকে, মধ্যমা না কেটে যদি তর্জনী কাটতো, তাহলে বোধহয় এতটা সমস্যা হত না। দিব্যি তর্জনী উঁচিয়ে অনায়াসে করে ফেলতাম সব কাজ। কিন্তু আমার সে ধারণা ভুল। কোনও এক সময় যখন তর্জনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সমস্যার পরিমাণের বিন্দুমাত্র হেরফের হয়েছিল বলে মনে হয়নি। আসলে, আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সবগুলো যতক্ষণ ঠিক থাকে, বুঝি না। ক্ষুদ্র কোনও একটাতে সামান্য গড়বড় হলেই বুঝতে পারি সেটার গুরুত্ব। বুঝতে পারি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সেই ক্ষুদ্র অঙ্গটিই কী বিরাট ভূমিকা পালন করে চলে সর্বক্ষণ।
পার্থিব জীবন থেকে যখন হঠাৎই চলে যায় কেউ, শূন্য হয়ে যায় একটি জায়গা। সে যে ছিল, এবং প্রতিনিয়ত তার উপস্থিতি কতরকম ভাবে ভরিয়ে রেখেছিল , সেই বোধটা অনুভবে আসে তার প্রস্থানের পরেই। অনতিক্রম্য দূরত্বে চলে যাই একসময় আমরা সবাই। জীবন সাজাতে সাজাতেই চলে যাই। আমরা চলে যাই, কিন্তু থেকে যায় আমাদের সাজানো ভুবন। থেকে যায় আমাদের কর্মগুলো। থেকে যায় আমাদের কর্মের সুন্দর অসুন্দর।
যে যেমনভাবেই বেঁচে থাকি না কেন, বেঁচে থাকাই মোক্ষ। বাঁচবো বলেই ছায়ার আশায় বটের চারা লাগাই, কেটে যাওয়া হাতের আঙুলে জীবাণুনাশক লাগিয়ে বেঁধে রাখি যত্ন করে। ‘মৃত্যু’ র জন্য শূন্যতাবোধের হাহাকারগুলো রেখে সমস্ত সৌন্দর্যটুকু নিয়ে নিয়েছে “বেঁচে থাকা”— এ তো আমরা জানিই। তবু তো মৃত্যু অমোঘ। এই যে বেঁচে আছি, পথ চলছি সমুখের পানে , কিন্তু কতদূর? একসময় হয়তো আয়োজন করে নয়তো হঠাৎই থেমে যাবে এ পথ চলা, এ-ও তো আমাদের জানা।
তবে যে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করি প্রতিনিয়ত! তবে কি —-
“জন্মের পর থেকেই নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করতে থাকি মৃত্যুর জন্যেই” — এই গূঢ় সত্যটা এড়িয়ে যাই আমরা? চাই এ অসহনীয় সত্যটা কখনোই সামনে না আসুক?
আজকের অসম্পূর্ণ কাজ ফেলে রাখি আগামীকালের জন্য, কারণ আমরা ধরেই নিই, আজ যে সময়টুকু জোটাতে পারিনি, আগামীকাল তা হয়তো পারবো। আর এই “হয়তো” টাই অনিশ্চয়তা। ওটুকুর মধ্যেই শূন্যতার বসবাস। একটা অদেখা খাদ, অচেনা ভুবন…..নিঃসীম। কে যে কখন হারাবো সেই নিঃসীম শূন্যতায়, কেউ-ই জানি না, এড়াতে চাই আর না চাই।
২৪টি মন্তব্য
কামাল উদ্দিন
ব্লগিং করার জন্য আজকের কিছু হাতের কাজ কালকের জন্য আমি ফেলে রেখেছি, এমটা উচিৎ হয়নি। আপনার পোপষ্টে মন্তব্য করার পরই সেগুলো সেরে নিচ্ছি।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ।
শুভকামনা।
অনন্য অর্ণব
কত সংক্ষেপে জীবনের চিত্রায়ন করলেন। বাহ কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে গেলাম অদৃশ্য সময়ের গভীরে। চমৎকার জীবনবোধ।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা।
তৌহিদ
যেকোন অপূর্ণ স্থান সময়ের প্রয়োজনে আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে স্মৃতিতে মলিন থাকে চিরকাল। মৃত্যু অসম্ভাবী জেনেও যারা বড়াই করে আমার মতে তারা মুর্খতার পরিচয় দেয়।
অনিশ্চয়তার মাঝেও আমরা স্বপ্ন দেখি বেঁচে থাকার, এটাইতো জীবন। ভালো থাকবেন আপু।
রেহানা বীথি
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই।
আরজু মুক্তা
জীবন অনিশ্চিত তবুও সবাই যার যার অবস্থান থেকে ভালো কাজ করব। নতুন করে স্বপ্ন দেখবো।
রেহানা বীথি
একদম।
ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
আমরা আমাদের অজান্তে বা জেনে আমাদের নির্দিষ্ট পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
আর জীবনের কোন কিছুই ফেলনা নয়।
রেহানা বীথি
অনেক শুভকামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
মুহুর্ত সময় কারো জন্য এই ধরনী না।
নিশ্বাস বন্ধ দেহ রহিবে পড়িয়া। আমরা নাই তো নাইইই। সুন্দর লেখা।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
স্বপ্ন দেখা সহজ কিন্তু তা পূরণ করা কঠিন।
স্বপ্নের মাধ্যমে আমরা বেঁচে থাকি।
আমাদের অনিশ্চয়ত জীবনে ঠিকে থাকার একমাত্র পথ স্বপ্নকে পূরণ করে তা কাজে লাগানো।
ভালো লেখনী দিদি।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
“জন্মের পর থেকেই নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করতে থাকি মৃত্যুর জন্যেই” — এই গূঢ় সত্যটা এড়িয়ে যাই আমরা?….. আমরা এড়িয়ে যাই, এটাই নির্মম সত্যি।
শুভ কামনা 🌹🌹
রেহানা বীথি
এড়িয়ে যাওয়ার ভাণ করি। মনের মধ্যে কিন্তু
রয়েই যায় অস্থিরতা।
ভালো থাকবেন।
এস.জেড বাবু
আসলে, আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সবগুলো যতক্ষণ ঠিক থাকে, বুঝি না।
——-
সে যে ছিল, এবং প্রতিনিয়ত তার উপস্থিতি কতরকম ভাবে ভরিয়ে রেখেছিল , সেই বোধটা অনুভবে আসে তার প্রস্থানের পরেই।
চমৎকার বাস্তব উদাহরনের সাথে মনুষত্বের বোধ জাগ্রত করার মত শিক্ষা রেখে গেলেন।
——-
হয়ত টাই অনিশ্চয়তা। ওইটুকুর মধ্যেই শূণ্যতার বসবাস।
মেনে নিলাম।
মুগ্ধ হলাম।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
একান্ত অনুভুতিতে চরম সত্যিটা তুলে ধরেছেন আপু।
আপনার এই লেখা পড়ে জীবনকে নিয়ে ভাববে অনেকেই।
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
নিতাই বাবু
আপনার লেখা পড়ে আমার একজনের কথা মনে পড়ে গেল। সে আর কেউ নয়, আমার একমাত্র ছেলে। যে এখন পরলোকে।
রেহানা বীথি
জেনে মর্মাহত হলাম দাদা।
এ এক দুঃসহ বেদনা। সন্তান হারানোর বেদনার চেয়ে বড় বেদনা আর নেই। ভালো থাকবেন দাদা।
সুরাইয়া পারভিন
জন্মের পর থেকেই নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করতে থাকি মৃত্যুর জন্যেই
অথচ এই সহজ সরল সত্য ভুলে যাই অনায়াসে
চমৎকার উপস্থাপন
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালোবাসা জানবেন ।