হঠাৎ বৃষ্টি

আরজু মুক্তা ৩১ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:২০:৩৯পূর্বাহ্ন ছোটগল্প ৩১ মন্তব্য

 

স্নিগ্ধার বাসায় যাওয়ার সময় আলমারি খুললেই নীল শাড়িতেই হাতটা যায়। আমিও হয়ে যাই নস্টালজিক। স্নিগ্ধা,  আমার বান্ধবী। যার সাথে আজও দুঃখ শেয়ার করতে যাই।

বাবা যখন সরকারি চাকরী করতো, তখন আমরা একই কোয়ার্টার এ থাকতাম। ওর বড় ভাই এর বন্ধু জামির সাথে এভাবেই পরিচয়।

ভার্সিটির শেষ ক্লাসের পর জামি বায়না ধরলো, নিউ মার্কেট যেতে হবে। না না করার পরও জোর করেই শাড়ির দোকানে ঢুকে শাড়ি পছন্দ করতে বললো। শাড়ি পছন্দ করি আর দাম জিজ্ঞেস করি। আমি তো জানি ওর পকেটের অবস্থা। শেষমেশ চোখ আটকে গেলো নীল শাড়িতে। জামি প্যাকেট করতে বললো। আমি বললাম,” ঐটা নিও না। অনেক দাম।”
বলে, ” চুপ করো তো। তিন বছর ধরে প্রেম করছি। তোমাকে কিছু দিয়েছি। ”
আমার বারণ না শুনে, দাম মিটিয়ে দিলো। আমি বলি, টিউশনি করে কয় টাকা পাও? নিজের খরচ। বোনের আবদার।
বোকা মেয়ে। আজই তো লেখাপড়া শেষ। এরপর ফাইনাল পরীক্ষা।
লেখা পড়া শেষ কী ? তোমার না এম, ফিল করার কথা !  কি বলো এসব ?
বাবার শরীর ভালো না। হয়তো সংসারের চাবি হাতে নিতে হবে।
তাহলে, শাড়িটা নিতে গেলে কেনো?
পরে যদি সুযোগ না পাই !
তোমার মুখে এরকম কথা শুনলেই রাগ ওঠে।

” কি দেখে যে, এই গাধাটার প্রেমে পরছো?  শুধু গাধা না। অকর্মণ্যও বটে। কতো কিছুই রাতে ভাবি। এই দিবো, সেই দিবো। দিনে জেগেই সব পাল্টে যায়। তখন সংসারের চাকা চোখে ভাসে। যাই হোক, কাল নীল শাড়িটা পরে আসবে। ”
জামি, আমাদের কি আর দেখা হবে না?
জানি না। বাড়ির অবস্থা ভালো না। অনেক হলো পড়াশোনা। এবার চাকরী। সংসারের হাল ধরতে হবে। আল্লাহ চাইলে দেখা হবে।
আর তোমার এম, ফিল ?  তোমার স্বপ্ন ?
“এখন আর এসব নিয়ে ভাবছিনা।”

কীরে তুই আজও জামাই এর সাথে ঝগড়া করে আসছিস?

স্নিগ্ধার কথা শুনে আবার অন্যমনস্ক হলাম। সৌরভের সাথে বিয়ের পর বুঝেছিলাম, প্রেমিক হওয়ার যোগ্য সবাই না। তবুও এই অপ্রেমিকের সাথেই সংসার করতে যেতে  হচ্ছে। এক সন্তানের মা। যার সঙ্গে ভেবেছিলাম সারাজীবন কাটাবো। এক ঝড়ে সব ওলটপালট হয়ে যায়। বৃষ্টি ছিলো না। ছিলো রুক্ষ বাতাস। পুরানো সবকিছু চড়চড়িয়ে পরে যায়।

সেদিন আমরা দেখা করবো রেস্টুরেন্টে। সেলিব্রেট করবো প্রেমের ৩য় বর্ষ। প্রতীক্ষা চলছে। জামি আর আসে না। এর কিছুদিন পর সে ফোন দেয়। বলে, “সেদিন বাবা অসুস্থ হওয়াতে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিলো। বাবা নেই। আর আমার সব শেষ। তুমি ভুলে যাও আমায়। যোগাযোগ রেখো না। আমি তোমার যোগ্য না। ভালো থেকো।”
কিন্তু এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না।
“উপায় নেই। আমি চাই না, তোমাকে আমার এই সমস্যাপূর্ণ জীবনের সাথে যুক্ত রাখতে। তবে, কখনো জীবনকে গোছাতে পারলে, চলে আসবো।”

তারপর তারা ঐ বাড়ি ছেড়ে কোথায় যে যায়। কেউ জানে না। কেটে যায় ৪ টি বছর। বাধ্য মেয়ের মতো সৌরভকে বিয়ে। মন খারাপ হলেই নীল শাড়িটা পরে স্নিগ্ধার বাসায় আসি।
মা মা ! ছেলে দৌড়ে এসে বলে, বাড়ি চলো। আর ভালো লাগছে না। বিদায় নিয়ে বের হতেই নামলো বৃষ্টি। ছেলে বলে, মা নীল শাড়ি পরলেই কী বৃষ্টি নামে ?
তুমি তো ভালো খেয়াল করো। অনেক বড় হয়ে গেছো.

এমন সময় একটা ট্যাক্সি ক্যাব এসে পাশে দাঁড়ায়। জামাল খান যাবেন? এই কথা বলে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে অবাক হই। বৃষ্টি ভারি হয়ে আসে। নিরুপায় হয়ে ক্যাবে উঠে পরি।

আচ্ছা, মা। নীল শাড়ি কি তোমার খুব পছন্দ? নীল শাড়িটা কি নানু কিনে দিয়েছিলো?
বেশি কথা বলো না। লুকিং গ্লাসে দেখি, ড্রাইভারও আমার দিকে তাকিয়ে।

বিরহ কাব্য ছেড়ে কাছে আসার গল্প লেখার কথা ছিলো মেয়েটির। অথচ বিকেলের ট্রেনে চড়ে যাওয়া ছেলেটি কখনোই আর ফিরে আসে নি।

আপনারা, কোথায় নামবেন?
এলিমেন্টারি স্কুলের বিপরীতে।
গাড়ি সঠিক জায়গায় এসে থামলো। আমি পার্স বের করে ভাড়া দেয়ার আগেই গাড়ি স্টার্ট নিয়ে বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে গেলো।

দূরে চলে গেলেই কি সব পরিচিতরা অপরিচিত হয়ে ওঠে ? বৃষ্টিও কি বুঝে যায় জমানো কান্না কেমনে লুকাতে হয় ?

১৭৬৮জন ৭৭৯জন
0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ