
স্নিগ্ধার বাসায় যাওয়ার সময় আলমারি খুললেই নীল শাড়িতেই হাতটা যায়। আমিও হয়ে যাই নস্টালজিক। স্নিগ্ধা, আমার বান্ধবী। যার সাথে আজও দুঃখ শেয়ার করতে যাই।
বাবা যখন সরকারি চাকরী করতো, তখন আমরা একই কোয়ার্টার এ থাকতাম। ওর বড় ভাই এর বন্ধু জামির সাথে এভাবেই পরিচয়।
ভার্সিটির শেষ ক্লাসের পর জামি বায়না ধরলো, নিউ মার্কেট যেতে হবে। না না করার পরও জোর করেই শাড়ির দোকানে ঢুকে শাড়ি পছন্দ করতে বললো। শাড়ি পছন্দ করি আর দাম জিজ্ঞেস করি। আমি তো জানি ওর পকেটের অবস্থা। শেষমেশ চোখ আটকে গেলো নীল শাড়িতে। জামি প্যাকেট করতে বললো। আমি বললাম,” ঐটা নিও না। অনেক দাম।”
বলে, ” চুপ করো তো। তিন বছর ধরে প্রেম করছি। তোমাকে কিছু দিয়েছি। ”
আমার বারণ না শুনে, দাম মিটিয়ে দিলো। আমি বলি, টিউশনি করে কয় টাকা পাও? নিজের খরচ। বোনের আবদার।
বোকা মেয়ে। আজই তো লেখাপড়া শেষ। এরপর ফাইনাল পরীক্ষা।
লেখা পড়া শেষ কী ? তোমার না এম, ফিল করার কথা ! কি বলো এসব ?
বাবার শরীর ভালো না। হয়তো সংসারের চাবি হাতে নিতে হবে।
তাহলে, শাড়িটা নিতে গেলে কেনো?
পরে যদি সুযোগ না পাই !
তোমার মুখে এরকম কথা শুনলেই রাগ ওঠে।
” কি দেখে যে, এই গাধাটার প্রেমে পরছো? শুধু গাধা না। অকর্মণ্যও বটে। কতো কিছুই রাতে ভাবি। এই দিবো, সেই দিবো। দিনে জেগেই সব পাল্টে যায়। তখন সংসারের চাকা চোখে ভাসে। যাই হোক, কাল নীল শাড়িটা পরে আসবে। ”
জামি, আমাদের কি আর দেখা হবে না?
জানি না। বাড়ির অবস্থা ভালো না। অনেক হলো পড়াশোনা। এবার চাকরী। সংসারের হাল ধরতে হবে। আল্লাহ চাইলে দেখা হবে।
আর তোমার এম, ফিল ? তোমার স্বপ্ন ?
“এখন আর এসব নিয়ে ভাবছিনা।”
কীরে তুই আজও জামাই এর সাথে ঝগড়া করে আসছিস?
স্নিগ্ধার কথা শুনে আবার অন্যমনস্ক হলাম। সৌরভের সাথে বিয়ের পর বুঝেছিলাম, প্রেমিক হওয়ার যোগ্য সবাই না। তবুও এই অপ্রেমিকের সাথেই সংসার করতে যেতে হচ্ছে। এক সন্তানের মা। যার সঙ্গে ভেবেছিলাম সারাজীবন কাটাবো। এক ঝড়ে সব ওলটপালট হয়ে যায়। বৃষ্টি ছিলো না। ছিলো রুক্ষ বাতাস। পুরানো সবকিছু চড়চড়িয়ে পরে যায়।
সেদিন আমরা দেখা করবো রেস্টুরেন্টে। সেলিব্রেট করবো প্রেমের ৩য় বর্ষ। প্রতীক্ষা চলছে। জামি আর আসে না। এর কিছুদিন পর সে ফোন দেয়। বলে, “সেদিন বাবা অসুস্থ হওয়াতে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিলো। বাবা নেই। আর আমার সব শেষ। তুমি ভুলে যাও আমায়। যোগাযোগ রেখো না। আমি তোমার যোগ্য না। ভালো থেকো।”
কিন্তু এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না।
“উপায় নেই। আমি চাই না, তোমাকে আমার এই সমস্যাপূর্ণ জীবনের সাথে যুক্ত রাখতে। তবে, কখনো জীবনকে গোছাতে পারলে, চলে আসবো।”
তারপর তারা ঐ বাড়ি ছেড়ে কোথায় যে যায়। কেউ জানে না। কেটে যায় ৪ টি বছর। বাধ্য মেয়ের মতো সৌরভকে বিয়ে। মন খারাপ হলেই নীল শাড়িটা পরে স্নিগ্ধার বাসায় আসি।
মা মা ! ছেলে দৌড়ে এসে বলে, বাড়ি চলো। আর ভালো লাগছে না। বিদায় নিয়ে বের হতেই নামলো বৃষ্টি। ছেলে বলে, মা নীল শাড়ি পরলেই কী বৃষ্টি নামে ?
তুমি তো ভালো খেয়াল করো। অনেক বড় হয়ে গেছো.
এমন সময় একটা ট্যাক্সি ক্যাব এসে পাশে দাঁড়ায়। জামাল খান যাবেন? এই কথা বলে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে অবাক হই। বৃষ্টি ভারি হয়ে আসে। নিরুপায় হয়ে ক্যাবে উঠে পরি।
আচ্ছা, মা। নীল শাড়ি কি তোমার খুব পছন্দ? নীল শাড়িটা কি নানু কিনে দিয়েছিলো?
বেশি কথা বলো না। লুকিং গ্লাসে দেখি, ড্রাইভারও আমার দিকে তাকিয়ে।
বিরহ কাব্য ছেড়ে কাছে আসার গল্প লেখার কথা ছিলো মেয়েটির। অথচ বিকেলের ট্রেনে চড়ে যাওয়া ছেলেটি কখনোই আর ফিরে আসে নি।
আপনারা, কোথায় নামবেন?
এলিমেন্টারি স্কুলের বিপরীতে।
গাড়ি সঠিক জায়গায় এসে থামলো। আমি পার্স বের করে ভাড়া দেয়ার আগেই গাড়ি স্টার্ট নিয়ে বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে গেলো।
দূরে চলে গেলেই কি সব পরিচিতরা অপরিচিত হয়ে ওঠে ? বৃষ্টিও কি বুঝে যায় জমানো কান্না কেমনে লুকাতে হয় ?
৩১টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
শেষটা ভালো লাগল,,, হয়তো অনেক কথা বলার ছিল, বলা হয়ে উঠলো না নাকি কে জানে!!!!গাড়ীতো চলে গেলো, আর বলা হলো না। অপ্রেমিকের সাথে তবুও সংসার এটাই ছিল নিয়তি। শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
জীবনটা কখনো কখনো এমনি।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য
ছাইরাছ হেলাল
ছোটগল্পের সুন্দর সমাপ্তি।
কিছু দূর, দূর-ই, কিছু দূরের কাছ বা দূর বলে কিচ্ছু নেই।
চলুন গান শোনা যাক এ দিনে, জাঁক করে।
https://www.youtube.com/watch?v=UaNGtgYwSsU
আরজু মুক্তা
গানটা সুন্দর।
দূর দূরেই থাক। ঝামেলা বাড়ার কি দরকার?
শুভ কামনা
কাজি রাশেদ
মিষ্টি অথচ ব্যথাতুর এক গল্পে মনটা ভার হয়ে গেলো। খুব দরদ দিয়ে লেখা গল্প টা মন ছুঁয়ে দিয়েছে।
আরজু মুক্তা
গল্প টক ঝাল মিষ্টি হলেই ভালো লাগে।
ধন্যবাদ আপনাকে
রোকসানা খন্দকার রুকু
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। শেষটা আসলে এমনই হয়। তবুও আমরা বিরহ চাই না মন খারাপ হয়ে যায়। অপ্রেমিকের সাথে সংসার করা কষ্টকর তবুও শুভ কামনা সবার জন্য।
আরজু মুক্তা
গল্প হচ্ছে জূবনের প্রতিচ্ছবি।
এমন বিরহ কেউ চায়না। জীবন তবুও চকে তার গতিতে।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কিছু দূরত্ব কখনোই আর ঘুচে যায় না অথবা সেটা ঠিক ও হয়না। সুন্দর গল্প। অফুরন্ত শুভকামনা রইলো
আরজু মুক্তা
কিছু দূর দূরই। ভালোবাসা কিন্তু হারায় না।
শুভ কামনা সবসময়
হালিমা আক্তার
নীল শাড়িতে ভালোবাসা বেঁচে থাকুক। না বলা কথা গুলো বৃষ্টির ফোঁটায় ঝরে পড়ে যাবে। ভালোবাসার অনুপম প্রকাশ। শুভ কামনা অবিরাম।
আরজু মুক্তা
ঝরে কি যায়? না, আরও শক্ত হয়ে আসন নেয় হৃদয়ে?
বোরহানুল ইসলাম লিটন
মেঘ ও প্রকৃতির দূরত্ব লক্ষ যোজন হলেও
রুক্ষতার অনুভবে ঠিকই বৃষ্টি বইয়ে দেয়
কারণ মেঘ প্রকৃতিরই অংশ।
সুন্দর অনুভবে অনন্য সৃজন আর অতুলণীয় সমাপ্তি।
আন্তরিক শুভ কামনা জানবেন সতত্
আরজু মুক্তা
প্রকৃতি আসলেই বুঝে যায় মনের খবর।
শুভ কামনা
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার গল্প পড়লাম আপু
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
এভাবেই চলে জীবন!
দূর থেকেই দূরে থাকে হৃদয়ে.
আরজু মুক্তা
একদম। দূরত্ব ই বুঝিয়ে দেয় ভালোবাসা
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ।
নার্গিস রশিদ
মিষ্টি একটা গল্প।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
উর্বশী
কিছু দূর — দূরত্বেই অবস্থান করে, তবুও দূর ঘুরেফিরে দমকা হাওয়ার মাঝে কাছে আসে। তাইতো ভুলে যেতে চাইলেও সেই দূর ভুলিনা।মনে রাখতে না চাইলেও মনেই রাখি।
সুন্দর উপস্থাপন করেছেন আপু।ভালোবাসা অবিরাম।
একটি নাম দিয়েছিলাম মনে হয় আপনাকে।
আরজু মুক্তা
হয়তো তাই। ভুলে যেতে চাইলেও ভোলা হয় না।
আমি সামিয়া।
ভালো আছেন?
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপা সমাপ্তিটা খুব সুন্দরভাবে শেষ করেছেন — ‘দূরে চলে গেলেই কি সব পরিচিতরা অপরিচিত হয়ে ওঠে ? বৃষ্টিও কি বুঝে যায় জমানো কান্না কেমনে লুকাতে হয়’ ?
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
শুভ কামনা রইলো আপা।
ফারজানা আক্তার
খুব সুন্দর
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ। এবং ভালোবাসা সবসময়
সাবিনা ইয়াসমিন
কিছু স্বপ্ন অধরা, আর কিছু সম্পর্কে দূরত্ব থাকলে হয়তো ভালো। ভালোবাসায় মনের দূরত্ব না থাকলেই হয়।
ভালো লেগেছে গল্পটি।
ভালো থাকুন, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।
শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
মনেই বাঁচুক ভালোবাসাগুলো।
শুভ কামনা সবসময়
নাজমুল আহসান
আহা! আজ অনেকদিন পর আপনার ব্লগে এসে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল!