
কাল সারারাত কেমন দুঃস্বপ্নের রাত ছিলো। গভীর ঘুম যাকে বলে তা হয়নি। একটি স্বপ্নই বারবার হানা দিচ্ছিলো, লিকলিকে চিকন একটি সাপ কখনো বালিশের নীচে আসে, কখনো কানের মধ্যে ঢুকে যায়। একবার তো নাকের মধ্যে দিয়ে পেটেই ঢুকে যাচ্ছিলো, লেজ টেনে বেড় করেছি। এই সাপ সাপ স্বপ্ন কাটিয়ে আজানের পরে কখন যেন ঘুমিয়ে গিয়েছি।
নয়টার পরে ঘুম থেকে জেগে ফ্রেস হয়ে নাস্তার পরে ব্লগে। তখন পর্যন্ত কেউ মোবাইলে কল দেয়নি, মনে মনে খুশি। ব্লগার সুরাইয়া পারভিনের “হঠাৎ পাওয়া সারপ্রাইজ” পড়তে পড়তে থমকে গেলাম মোবাইল এরোপ্লেন মোডে রাখা! সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ দিনটি একান্তই নিজের মতো বানাবো।
মোবাইল এরোপ্লেন মোড করলাম তখনই, মোবাইলের নেটও অফ করে দিলাম। চেক করলাম সিগারেট এর অবস্থা। হু প্রায় এক প্যাকেট আছে। বাইরে বেড় হতে হবে না আজ আর। সোনেলা ব্লগে অনেকের লেখা পড়ে মন্তব্য দিলাম, শেয়ারও দিলাম ফেসবুক পেজে।আজকের মত কাজ এবং কর্তব্য শেষ।
সিনেমা দেখতে হবে আজ। কিছু হিন্দি সিনেমা ডাউনলোড করা আছে, তা দেখবো। আজ যে ফান টাইম দিবস। ছেলেদের মা এর তীব্র বাঁধাকে পাত্তা না দিয়ে বেড-রুমকে সিনেমা হলে রুপান্তর করলাম।দরজা জানালা সব বন্ধ, অন্ধকার বেড-রুম- মোটামুটি একটা সিনেমা হলের আবহ তৈরী হলো।
প্রজেক্টর, হ্যান্ড মাইক ( তীব্র সাউন্ড এর জন্য , ল্যাপটপ সহযোগে আমার সিনেমা হলের মেশিনারি কিন্তু খারাপ না।
Haseen Dillrubaঃ
কয়েকটি রিভিউ পড়া ব্যতীত এমনিতেই Haseen Dillruba সিনেমটি আমি দেখতাম। কারণ এই সিনেমায় বর্তমানে আমার সবচেয়ে প্রিয় অভিনেত্রী Taapsee Pannu আছেন। তিনি এই সময়ে হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে ভালো অভিনেত্রী বলে আমার মনে হয়।
সিনেমার IMDB রেটিং 6.9/10
নায়ক রিষু তার বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। রিষুর স্ত্রী রানীকে পুলিশ সন্দেহ করে এবং বিভিন্ন ভাবে জেরা করে। পুলিশের জেরার মুখে ফ্লাস ব্যাকে রানী তাঁর বিয়ে এবং বিয়ে পরবর্তী কাহিনী পুলিশকে জানায়। অত্যন্ত উৎফুল্ল এবং আনন্দময়ী রানীর সাথে রিষুর বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পরে তাঁদের সম্পর্কটা স্বামী স্ত্রীর মত হয়নি কখনো। স্ত্রীর সাথে কেমন অপরিচিতজনের মত আচরন করে রিষু। রানীর শাশুড়িও চাননি রিষু আর রানীর মধ্যে সুসম্পর্ক হোক। এরপরে একটি দূরত্ব তৈরী হয় এবং বিয়ের এক মাস অতিক্রম করলেও তাঁদের মধ্যে মিলন হয়নি। রানী এজন্য যথেষ্ট চেষ্টাও করেছিলো।
হঠাৎ একদিন রিষুর চাচাতো ভাই নীল আসে কয়েকদিনের জন্য এ বাড়ীতে। একাকী বিষন্ন জীবনের রানি মোহাবিষ্ট হয়ে নীলের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পরে। এবং প্রেমের এক পর্যায়ে রানী নীলের শারিরিক সম্পর্কও হয়। এই সম্পর্ক স্থায়ী করার জন্য রানী নীলকে বিয়ে করতে চায়, কিন্তু নীল পরদিন পালিয়ে যায়।
রিষু রানী এবং নীলের সম্পর্ক সম্পর্ক জেনে যায়। তারপরেও বিভিন্ন ঘটনার পরে স্ত্রীকে কাছে টেনে নেয় এবং রানীও স্বামীকে প্রেমিক, কেয়ারিং হিসেবে দিন কাটাতে থাকে।
পুলিশ একসময় স্বামীকে হত্যা করার প্রমাণের অভাবে রানীকে মুক্ত করে দেয়।পাঁচ বছর পরে দেখা যায় রিষু এবং রানী অত্যন্ত আনন্দ নিয়ে একে অপরের হাত ধরে অন্য এক জায়গায় ঘোরাফেরা করছে।
তাহলে পুলিশ কার পোড়া দেহকে রিষু বলে সনাক্ত করেছিলো? বদলি হয়ে যাওয়া পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা একটি থ্রিলার উপন্যাস পড়ে যা রানীর খুব প্রিয় ছিলো। উপন্যাসেই বর্ণনা করা আছে ঐ খুনের আদলে একটি কাহিনী। নীল এসেছিলো রীনার কাছে ব্লাক মেইলিং করার জন্য। বাসার ভিতরে নিয়ে যায় রিষু এবং রানী নীলকে। ডিপ ফ্রিজে রাখা খাসির বড় একটি রান দিয়ে রানী নীলের মাথায় আঘাত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নীলের মৃত্যু হয়।স্ত্রী রানীকে বাঁচানোর জন্য রিষু তাঁর বাম হাতের অর্ধেক কেটে ফেলে। এরপর নীলেরও বাম হাতের অর্ধেক কেটে ফেলে। রিষুর বাম হাতে রানীর নাম লেখা ছিলো।দুজনে মিলে গ্যাস সিলিন্ডার অন করে দেয়, এবং একটি বই আগুন দিয়ে দেয়। এরপর রানী সামনের দরজা দিয়ে বাইরে যায়, আর রিষু পিছনের দরজা দিয়ে নদীতে নেমে যায়। সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে আগুনে মুখ ঝলসে যাওয়ার কারণে হাত দেখে সনাক্ত করা হয় যে মৃতদেহ রিষুর।
সাধারণ একটি কাহিনী। তবে Taapsee Pannu তাঁর অভিনয় দিয়ে দর্শকদের কাছে আরো গ্রহনযোগ্য হবেন এটি নিশ্চিত।
সিনেমাটি ইউটিউবে খুঁজে পেলাম না, ইচ্ছে করলে ট্রেলার দেখতে পারেন।
Radhe:
প্রথম সিনেমা শেষ। এরপরে দেখলাম সালমান খান অভিনীত Radhe.
মূলত রাধে দেখলাম কেবল মাত্র আমার প্রিয় অভিনেতা Randeep Singh Hooda র অভিনয় দেখার জন্য। এই সিনেমায় তিনি ভিলেন। একজন ভিলেনের অভিনয় দেখার জন্য সিনেমা দেখা! প্রিয় মানুষের সব কিছুই যে ভালো লাগে 🙂 রনদীপ হুদার সিনেমা দু একটি দেখুন, তাঁকে আপনাদেরও ভালো লাগবে। এই সিনেমায় তিনি আমার প্রত্যাশা পুরন করেছেন। আর সিনেমা হিসেবে এর IMDB রেটিং যাচ্ছে তাই।
সিনেমা টাইম শেষ। এবার ক্রিকেট খেলা। বাংলাদেশের আজ T20 খেলা ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে।
এর পূর্বে টেস্ট এবং ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে। T20 তে আছে আমার প্রিয় খেলোয়ার সৌম্য। কেন যা তাঁকে ওয়ানডে খেলায় ওপেনিং জুটিতে রাখা হয় না তা আমার মাথায় আসে না। আমার প্রিয় খেলোয়ারটি আজ হাফ সেঞ্চুরী করেছে। এবং বাংলাদেশ জয়ী হয়েছে খেলায়।
ভালো একটি দিন কাটালাম আজ। কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই, কারো সাথে মোবাইলে কথা বলিনি।মোবাইলে অনেকবার কল দিয়ে আমাকে না পেয়ে এক দেনাদার বাসায় এসে বেশ বড় অংকের টাকা পরিশোধ করে গেলো। মোবাইল বন্ধ রাখার সবচেয়ে বড় সুফলটি পেলাম আজই :), দরজা খুলে বাইরেই বেড় হয়নি।
টুইস্টঃ এই লেখা লিখতে বসার পর হঠাৎ বড় ছেলে পাপ্পার চিৎকার ‘ সাপ সাপ সাপ।’ দৌড়ে নিচ তলার রান্না ঘরে গেলাম। দরজার কব্জায় পেঁচিয়ে আছে একটি সাপ। লাঠি খুঁজে লাঠি দিয়ে শক্ত হাতে মাথা চেপে ধরলাম সাপের। মাথা থেতলে গিয়ে মরে গেলো সাপটি। স্বপ্নে দেখা হুবহু একই লিকলিকে চিকন সাপটি।
ছবিঃ
ফিচার ছবি গুগল থেকে নেয়া।
অন্য সব আমার হোম সিনেমার পর্দা থেকে নেয়া।
১৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ধুর! এগুলাইন কুন মুভি হলো!! বড় জোর ছেনেমা।
হাপ খ্যালার টুইস্ট ভাল ছিল, ল্যাহা বরাবরের মতই পচা পচা !!
জিসান শা ইকরাম
কি করুম? এরা দুজন যে আমার প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রী 🙂
ল্যাহা এমনই পচা পচা হইবো, কিছু করার নাই।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
মুভির রিভিউ দেখলাম। আমি মুভি খুব একটা দেখি না হিন্দি তো নয়ই। ভালো লাগলো রিভিউ পড়ে।
যাক আমার আইডিয়ার জন্য সুফল পেয়েছেন
কিন্তু স্বপ্নে দেখা সাপ সত্যি সত্যিই ঘরে দেখা গেলো!!
ব্যাপারটা অদ্ভুত বটে।
নিরাপদে থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
জিসান শা ইকরাম
আজকের দিনলিপির সাথে দেখা সিনেমার কাহিনী বললাম একটু।
সাপের বিষয়টা আমার কাছেও অদ্ভুত লেগেছে।
শুভ কামনা আপনার জন্য।
তৌহিদুল ইসলাম
তাপসি পান্নুর অভিনয় আমারও ভালো লাগে। আমি মুভিটি দেখিনি। আজ আপনার রিভিউ পড়ে দেখার ইচ্ছে হলো। পরের মুভিটি রাধে এটি দেখেছি।
বাসায় এরকম থিয়েটার বানিয়ে মুভি দেখা এক্সাইটিং অবশ্যই। মোবাইল মাঝেমধ্যে যন্ত্রণাদায়ক। স্বেচ্ছায় মুক্তি নিতে হবে আমারও। তবে অফিস আওয়ারে চালু রাখতেই হবে এটাই সমস্যা।
ভালো থাকুন ভাই।
জিসান শা ইকরাম
জীবনের জটিলতা দিন দিন কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। অনেকটাই সফল বলা যায়।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তাপসী পান্নু মানেই অন্যরকম কিছু। আমার কাছে মনে হচ্ছে কোন কারনে আপনার অনেক মন খারাপ ছিলো। কারন আমরা অন্যকিছু এড়ানোর জন্যই এসব করি, আমি করি। ধারনা সঠিক নাও হতে পারে। তবে আপনার হোম সিনেমার আয়োজন দারুন!! ভালোমন্দ মিলিয়ে কাটুক সবার জীবন,, শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
মন খারাপ থাকলে আমি ঘুমাই 🙂
বড় পর্দায় সিনেমা দেখার আনন্দই অন্য রকম, তাই এই প্রজেক্টরটি কিনেছিলাম চার বছর আগে।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা,
আরজু মুক্তা
রাধে ভালো লাগেেনি। তবে হাসিন দিলরুবা দেখবো। আমি বাহিরে বেড়াতে গেলে মোবাইল সাথে নেইনা। নিজেকে কিছুটা সময় দেয়া উচিত। তাহলে নতুন করে ফেরা যায়।
শুভ কামনা
নিতাই বাবু
এ দেশ থেকে যখন সিনেমা ছায়ায় মিশে গেলো, তখন থেকে অন্যদেশের মুভু বা সিনেমাও দেখা বাদ দিয়েছি। কারণ আজও মনে পড়ে সেসময়কার সেই এতটুকু আশা ছায়াছবির দৃশ্য!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সিনেমা দেখার আয়োজন টি বেশ ভালো লাগলো। এমন করে নিজের মতো করে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা। দুজনের অভিনয় আমার ও কেন জানি ভালো লাগে।তবে মুভি দুটি দেখা হয়নি, ইদানিং মুভি দেখা হচ্ছে না। সাপের বিষয়টি কাকতালীয় ভাবে সত্যি হলো। মোবাইলের বিষয়টি আমার ও একরকম লাগে। শুধু অফিস আর বাবা-মায়ের জন্য খোলা রাখতে হয়। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন
হালিমা আক্তার
সিনেমা দেখার জন্য সুন্দর আয়োজন। ভাষা বুঝি না তাই খুব একটা হিন্দি ছবি দেখা হয়না। মুভি রিভিউ ভালো লাগলো। শুভকামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
মাঝে মাঝে এমন করে নিজেকে সময় দিতে হয়। চলমান ব্যস্ততার ভেতর নিজেকে খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। সব ছেড়েছুড়ে কিছু সময় শুধু নিজের জন্য রাখতে পারলে মন্দ হয় না। কেউ কাউকে বুঝবে/ সঙ্গ দিবে, সেই আশায় না থেকে নিজেই যদি নিজের সঙ্গী হতে পারা যায় তাহলে এর থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না।
আমি মুভি/ নাটক দেখার খুব একটা সময় পাই না। কেন জানি অনেকক্ষণ সময় লাগিয়ে একটা আস্ত মুভি দেখার ধৈর্য্য হয়ে উঠে না। তবে গান শুনি। কান দিয়ে গান শুনতে শুনতে নিজের অন্যসব কাজ দ্রুত করে ফেলি।
মুভি রিভিউ গুলো পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে এটা ভালোই। পুরো মুভি দেখার চাইতে খুব সহজে একেকটা মুভির সব জানা যাচ্ছে/ দেখাও হয়ে যাচ্ছে 🙂
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹