সেই বসন্ত_এই বসন্ত

সায়মা নুর নাতাশা ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ০৪:১১:৪৭অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৪ মন্তব্য

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। শনিবার। ঘুম থেকে উঠি ফোন কলের রিংটোন এ। মুনু কল করেছে। জরুরী কাজে কলেজে যেতে বলা হয়। আমি উঠি। কেন যেন বসন্তের সাথে মিল রেখে কাপড় পরতে মন চাইলো। বেছে নিলাম প্রায় কড়া সবুজ রঙের একটা কাপড়। তবে সব রঙের উপস্থিতি ছিলো এ জামায়। কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিয়।
সেজেগুজে নিয়। ও…একটা লাল হিজাব ও পরেছিলাম। বের হই কলেজের উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন ফুলের দোকানপাট খুলতে দেখা যায়। তাজা সব ফুল। দেখেই মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। মিশে যেতে মন চাইছে। বসন্তের সাথে। ক্রেতারা ফুল নিচ্ছে। কেউ মায়ের, কেউ বাবার, কেউবা তাদের প্রিয় শিক্ষকদের জন্য, কেউ বন্ধুর জন্য আর কেউ নিচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটার জন্য…
আমি দেখি। দেখে ভাবি। কিঞ্চিৎ হাসির রেখা থাকে ঠোঁটের কোনে। ভেবে যাই। মাঝে মাঝে হালকা হাসি। ভালোবাসা দেখে হাস। ভালো লাগার হাসি। কেমন যেন শান্তি বিরাজ করছে সবদিকে। আমি চুপচাপ দেখে যাই……

আবার নিজের কথাও ভাবি। আমাকে দেয়ার কেউ নেই। এবার একটু বেরে যায় হাসির মাত্রা। কি আজব চিন্তা! তারপর আবার মানুষ দেখি। বারবার দেখি। দেখি তাদের ভালোবাসা…..।
কলেজে গিয়ে পৌঁছানো। কলেজে পূঁজোর অনুষ্ঠান হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পাহারা দিচ্ছেন। আবার মাঝেমধ্যে মেয়েদের দিকেও তাকায় 😃 বন্ধুরা না আসায় আমি অনুষ্ঠানে পাতা চেয়ারে বসি। কিন্তু আমি অনুষ্ঠান না দেখে পুলিশদের কান্ড দেখি। মাঝে মাঝে কলেজ প্রাঙ্গণে ঝাড়ু দেয়া এক ঝাড়ুদার কে দেখি। পরিবারকে সাহায্য করতে তিনি ছোটখাটো সব কাজই করছেন 😊 আবার গাছের নিচে বসে থাকা জুটির ভালোবাসা দেখি ☺ দেখে যাই…দেখতে ভালো লাগে…
এরই মাঝে দুই বন্ধুর আগমন। আমু আর মুনু। শর্টকাট নাম। ভালোবেসে দেয়া নাম। তারাও খুব সুন্দর জামা পরে সেজেগুজে আসে 😊 কিন্তু আমাদের আরেকজন কই 😲 তামু নেই! তাকে আনতে যেতে হবে 😞 তারপর আবার আমরা যাই তামুর বাসায়। খুব নাটকিয়ভাবে তাকে নিয়ে আসি 😃 আজ তামু পরেছে বাসন্তি রং এর জামা 😊 ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে আমাদের তামুকে
বের হই। ১০ নম্বর বাসে করে যাচ্ছি। কিন্তু এই পর্যন্ত আমার জানার বাইরে আমি কোথায় যাচ্ছি 😒 আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে :/ সেটা বলা হয়নি :/ ৬ টা মোড় পার হওয়ার পর আমাকে জানানো হয় আমরা সমুদ্রসৈকত দেখতে যাচ্ছি 😡 আগে বলে দিলে কি হতো!? ছারপারাইজ হুহ :/ বাসেই যতসব রাগারাগি। গজগজ করি >:O আবার মজাও করি।তারপর নামা হয়। কারণ গাড়ি আর সামনে যাবে না 😞 এবার একটা টেম্পোতে উঠি। তার আগে এক হাসির কান্ড হয় এক CNG চালক আর আমার মধ্যে 😃 কথা নিয়ে 😃 তারপর টেম্পোতে অনেক হাসাহাসি হয়। আমাদের কথা শুনে গাড়ির অন্যান্য যাত্রিরাও হাসি থামাতে পারছিলেন না 😃 মজা লাগে 😃😃😃 আবার মাঝেমধ্যে মলিন হয়ে যায় আমাদের মুখ 😔 এ রাইড টা আসোলেই আমাদের শেষ রাইড ছিলো 😞 খুব সিরিয়াস আলাপ চলছে মাঝেমাঝে। মুখ মন দুটোই ভারি হয়ে আসে ক্রমে আমাদের চারের 🙁 😔 আবার আমরা হাসিতে মেতে উঠি। এবার একেবারে বিচে এসে পরি।একে একে সব নামি। বিকেল চারটা নাগাদ থাকা হয় আমাদের। তারপর দিন ১৪ ফেব্রুয়ারির জন্য একটা টেলিফিল্ম এর শেষ কাজ চলছিলো। আমরা দেখি। আর ছোট ছোট পেঁয়াজু খাই 😊 উপভোগ করি।ছবি তুলি। আবার ছোটখাটো মান-অভিমান ও চলে আমাদের 😒 বেলা শেষে বাসায় ফিরি…
#আর_আমাদের_একসাথে_চারজনের_শেষ_বসন্ত……!!!!!!

১৩’ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সোমবার। হোয়াট আ কো-ইন্সিডেন্ট!!!! আজও আমার ঘুম ভাঙে মুনুর ফোন কলে!!!!
তবে আজ কেমন যেন 😞 মনটা ভালো লাগা না লাগার মাঝামাঝি ছিলো 😞
এগারোটার দিকে বের হই। এ বছরেত বসন্তের কাপড় টা সেলানো হয়নি। সামনে অনেক কাপড়। কিন্তু কোনটা পরি!?
কেন যেন আমি সেই বসন্তের জামাটাই বেছে নিলাম! বের হই। মোড়ে এসে মুনু দাঁড়িয়ে আছে ১৫ মিনিট ধরে। রাগে ফাটছে সে 👿 তারপর কলেজের কাজের জন্য কিছু ফটোকপি করাতে হয়। তারপর মুনুর রাগ ভাঙে আস্তে আস্তে। আমার এক কথায় 😃 হেসে ফেলে সে 😃 দেখে খুব ভালো লাগে আমার 🙂 ফটোকপি করে টাকা না দিয়েই আমি বেরিয়ে পরেছিলাম 😰 দোকানি ভাই একটা ডাক দেয়….”আপা আমার টাকাটা”? 😰
আমি আসলে ভুলে গিয়েছিলাম। লজ্জায় পরে যাই 😰
তারপর টাকা দিয়ে আমি আরর মুনি বের হই কলেজের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় অনেক কথা বলি আমরা। কলেজে নাচের আর খেলার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কিন্তু আমরা কিছু দেখিনা। ZERO POINT এর সিঁড়িতে গিয়ে বসি। একটু পরেই আমার এক বন্দুর সাথে দেখা। বহুদিন পর। মনিকা 🙂
দেখে ভালো লাগে। কপালে টিপ পড়েছে আজ সে। হলুদ টিপ। পড়নে নীল আর হলুদের কম্বিনেশনে এক কুর্তি।সব মিলিয়ে বেশ মানিয়েছে তাকে 😊 আর শেষমেশ মুনুকে আমার একগাদা নালিশ করে যায় 😭 তবে সবই আমার ভালোর জন্যই বলা। তেঁতো লাগলেও কঠিন সত্য 😰 😭
তারপর আমি তাদের ট্রিট দিয়। চটপটি খাই আমরা সবাই মিলে। তারপর দুজন দুজন করে মনিকা আর ওর বন্ধু চলে যায় তাদের গন্তব্যে। আমি আর মুনু কলেজের ভেতরে ঢুকে পরি। কাজ শেষ হতে প্রায় বেশখানেক সময় লাগে। কাজ শেষে মুনু তার শপিং সেরে নিতে একটা শপিং মলে যায়। কিছু স্যান্ডেল দেখে আর নিলো কি একটা ব্যাগ :/ আবার বের হই আমরা। একটা রেস্টুরেন্ট এর উদ্দেশ্যে। আজ মুনু খাওয়াবে 😃 আমি তো এক পায়ে খাঁড়া ✌ 😃 গিয়ে পৌঁছুলাম। আজ আমরা একটু গোয়েন্দাগিরিও করে ফেললাম 😃 আমি গোয়েন্দাগিরি করতে বেশ ভালোবাসি। তারপর আসি সেই রেস্টুরন্টে। যাওয়ার সময় মুনু বলে তুই এই জামাটা কেন পড়লি 😲 মানে কি!!!!!! আমি বলেছি জানিনা। আসোলেই জানিনা 😒 আজ মুনুও সেই বসন্তের কাপড়টাই পড়লো 😃😃😃 কি আজব! কিন্তু আজ #আমু আর #তামু সাথে ছিলো না 😞 😖 মিস করেছি তাদের। আচ্ছা..আজ তারা কি সেই জামাটাই পড়েছে? দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। কিন্তু কোন ভাবেই সম্ভব নয় 😫😞
তারা দুজন দুই নতুন দুনিয়ায়। তাদের সাংসারিক জীবনে। কবে দেখা হবে!!!!!!
খেয়ে দেয়ে ছবি তুলে আমরা যে যার ঘরে।

#বড়_বেশী_পার্থক্য_ছিলো_সেই_বসন্ত_আর_এই_আর_এই_বসন্ত_তে…..!

ভালোবাসায় পূর্ণ আমাদের জীবন। ভালোবাসা আসে না। খুঁজে নিতে হয়। যেমন আমাদের চারের ভালোবাসা 🙂
ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে 🙂
ভালো থাকবেন সবাই। ভালোবাসায় রাখবেন সবাইকে…❤

১জন ১জন
0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ