মানুষ কখন জীবনের মানে খোঁজে? যখন তার মন আহত হয়, তখন? নাকি যখন তার শরীর অক্ষম হয় তখন? এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া সহজ নয়, নয় কঠিনও। উত্তরণের জন্য বহু পথ খোলা আছে, যা চোখে দেখা যায়না। সবচেয়ে যা কঠিন যে কোনো সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা।
আমরা যখনই কোনো বিপদে পড়ি, খুঁজি সেই মানুষটিকেই যে আমাদের মনটা বোঝে। তেমন মানুষ ক’জন পায়? বরং সেই সময়ে যারা কাছে আসে, দেখা যায় আরোও জটিলতার সৃষ্টি হয়। তখন মনে হয় তার চেয়ে বরং একা থাকাই ভালো। আদতে দুঃসময়ে কাউকেই আশা করতে নেই।
তবুও কি পারা যায়? আমরা তো মানুষ! আশা করি, জানি শূন্য হয়েই ফিরে আসতে হবে, তাও হাত বাড়াই। বারবার ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া, আবার উঠে দাঁড়ানো পৃথিবীতে বহু মানুষই এমন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে প্রতিমুহুর্তেই। যারা পারেনি, তারা কেউ আত্মহত্যা করেছে আর কেউবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ততার মধ্যে চলে গিয়েছে। সহজভাবে বললে একেই বলে স্ট্রেস। কেউ বোঝেনা, কাউকে বোঝানো যায়না। এতোটাই ভয়ঙ্করতম মুহূর্ত।
এতো না-পাওয়া কেন? এর উত্তরে বলবো অভাববোধ। যতোদিন আমাদের অভাব থাকবে, দুঃখও থাকবে। আচ্ছা জীবনে কোন জিনিসগুলো সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন; স্বাস্থ্য, খাদ্য, আশ্রয় নাকি অর্থ? সবগুলোই, তাই না? পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের ওসবের সব আছে, তবুও তারা ভালো নেই। আবার কারো খাদ্য, আশ্রয়, অর্থ আছে, কিন্তু স্বাস্থ্য ভালো নেই। প্রবাদ আছে, “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।” আবার কারোর অর্থের অভাব। যদি অর্থের অভাব থাকে, হিসেব করে চালাতে হবে। আর ভাবতে হবে এমন অনেক মানুষ আছে যারা একবেলা খেয়ে কাটায়, আবার কেউ সারাদিনেও একগ্লাস জলপান করেই বাঁচিয়ে রাখে নিজেকে।
তবে এতোকিছুর ভেতর সবচেয়ে সুন্দরতম হলো আমাদের এই জীবন। অনেক না-পাওয়ার ভীড়ে এক/আধটু পাওয়া, আবার অনেক কষ্টের ভেতরও একটা ছোট্ট শিশুর হাসি জীবন আছে বলেই তো! কতো সুন্দর সুন্দর দৃশ্য আছে এ পৃথিবীর চারপাশে ছড়ানো! ফুল যখন ফোঁটে, তখন তার পাঁপড়ি অল্প অল্প করে মেলে ধরে নিজেকে। আবার পাখী ঠোঁটে খাবার নিয়ে এসে তার বাচ্চাকে খাওয়ায়, একজন গর্ভবতী মহিলা কিভাবে তার গর্ভকে হাত দিয়ে আগলে রাখে কিংবা একজন মা তার শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে স্তন্যপান করায়, এসব দৃশ্য কি চোখে পড়েছে? দেখে কি মনে হয়না জীবন অনেক সুন্দর!
ব্যথা, যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট আছে বলেই স্বস্তি, আনন্দ, সুখ, হাসি আছে। অন্ধকারের ভেতর আকাশের চাঁদ-তারা দেখা যায়, আর আলোতে দেখা যায় মেঘ। সকল সময় যদি সুখ-ই থাকতো, একঘেয়েমি চলে আসতো। এই যে বছরে একবার উৎসব আসে, যদি রোজ এমন হতো, তাহলে কেমন হতো? আনন্দ সবকিছুর ভেতরেই আছে, খুঁজে নিতে হয়। খুঁজে না পেলে থেমে না গিয়ে খুঁজে যেতে হয়। একদিন ঠিক পাওয়া হয়ে যাবে আসলে যা আমার পাবার কথা ছিলো। টিনের চালে বৃষ্টি পড়লে রিদম পাওয়া যায়। একটা বৃষ্টির নিজস্ব ছন্দ আরেকটা টিনের চালের উপর পড়ার। আবার একই বৃষ্টি বিল্ডিং-এর ছাদে পড়লে শুধু বৃষ্টির শব্দটাই কানে আসে। ভালো লাগে কোনটা? এর উত্তর আমি বলবোনা।
সবাইকে শারদ শুভেচ্ছা।🌹 🌺 🌼💐
হ্যামিল্টন, কানাডা
১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ইং।
★Neera Sadeea আপুনি বলেছিলো প্রেরণাদায়ক লেখা লিখতে। কিছুটা ব্যস্ত আছি। আশা করি সোমবার থেকে নিয়মিত হবো। তার আগ পর্যন্ত ক্ষমা চাইছি এভাবে অনিয়মিতভাবে আছি বলে। আজ লেখাটা দিলাম, কারণ এ মাসেরই ১১ তারিখ ব্লগে প্রথম পোস্ট দিয়েছিলাম ছয় বছর আগে। সবাই ভালো থাকুন। অফুরান ভালোবাসা।
১৮টি মন্তব্য
মাহমুদ আল মেহেদী
প্রতিটা কথাই যেন জীবনের ।
নীলাঞ্জনা নীলা
জীবনেরই তো কথা!
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে যে, আমার প্রতিটি লেখাতেই আপনার মন্তব্য পাই।
শুন্য শুন্যালয়
আমার পুরো দেয়াল জোড়া জানলার কাঁচে যখন বৃষ্টি পড়ে তখনো আমার ভালো লাগে। অই যে বললে দেখতে জানা, খুঁজতে জানা। সবকিছুর মধ্যেই খুঁজে নিতে হয়। গত কএকদিন ধরে একটা কথা মনে আসছিল। ঠিক তোমার এই লেখার সাথে মিলে যায়। নিজেকে আমার বিশ্বের সবচাইতে পজিটিভ মানুষ মনে হয় যে সবকিছুর মধ্যে আনন্দ বের করবার চেষ্টা করে। খুনীর ভেতরেও খুনের কারণ।
ভালো লিখেছ নীলাপু। ভালো থেকো। শারদীয়ার শুভেচ্ছা তোমাকে। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
শুন্য আপু কতোদিন তোমার সুন্দর মন্তব্য পেলাম!
পজিটিভ মনের মানুষকে আমি সম্মান করি। খুব ভালোবাসি। চেষ্টা করি সবসময়ই সব অবস্থায় নিজেকে পজিটিভ রাখার। এবং রাখিও।
বহুদিন তোমার লেখা দিচ্ছোনা ব্লগে। দাও না আপু।
জিসান শা ইকরাম
আমার চারদিকে আমি যে মানুষ দেখি, তাতে তারা জীবনের মানে খুঁজে শরীর অক্ষম হলেই, আর আমি জীবনের অর্থ খুঁজি ইন্টার জীবন হতেই।
জীবন অনেক সুন্দর, সুন্দরকে খুঁজে নিতে জানতে হয়।
লেখাটা বেশ ভাল,
শুভ কামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা তোমার এই মন্তব্যে (“আমার চারদিকে আমি যে মানুষ দেখি, তাতে তারা জীবনের মানে খুঁজে শরীর অক্ষম হলেই…) কষ্ট পেলাম। নানা এভাবে বললে যারা পঙ্গু তাদের মনে আঘাত লাগে। কারণ সুস্থ পজিটিভ মানুষ আর অসুস্থ থেকে পজিটিভ থাকাটা অনেক কঠিন। তোমার চোখে সমস্যা হয়েছিলো, তার সাথে কি তুলনা চলে যারা অন্ধ?
সুস্থ থাকো নানা।
মোঃ মজিবর রহমান
জিবনের সকল বয়সেই জীবন নিয়ে ভাবাটাই উত্তম।
সুন্দর লেখা।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই দারুণ একটা কথা বললেন তো!
মন ভরে গেলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
একটিইতো জিবন।জিবনের সুখটুকু ,ভালো লাগা,ভালোবাসা টুকু জিবন থেকেই খুজে নিতে হয়।চমৎকার লিখেছেন।ভাল লাগলো।শুভকামনা রইলো।
নীলাঞ্জনা নীলা
ঠিক বলেছেন আপনি। অন্ধকার থেকে যেমন আলো খুঁজে নিতে হয়, তেমনি যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই আনন্দ তৈরী করে নেয়া শিখতে হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
মায়াবতী
নীলা আপু , জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে যে রিদম আছে যা বেঁচে থাকার জন্য অনুপ্রেরণায় টইটুম্বুর তা কিন্ত খুঁজে খুঁজে বের করে স্বচ্ছ কাঁচের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয় । পজিটিভ নেগেটিভ জীবনের নেগেটিভিটি কে পাশ কাটিয়ে পজিটিভ হয়ে হয়ে বীরের মত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ক জন ই বা পারে আসলে। শারদিয় এই সময়টা তে আপনার এমন পজিটিভ লেখা টা খুব মন ছুঁয়ে গেলো । ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি সবসময়ই খুব পজিটিভ ছিলাম। ঝড় এসেছে, চলেও গেছে। আমি জানি বৃষ্টি থেমে যাবার পর সবসময় রঙধনু না উঠলেও, মাটির সোঁদা গন্ধ ঠিকই পাওয়া যায়। অল্পতে সন্তুষ্ট থাকলে কষ্ট আটকে রাখতে পারেনা।
শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা আপনাকে মায়াবতী।
সুস্থ থাকুন। বাঁচুন, হাসি রেখে ঠোঁটে।
ছাইরাছ হেলাল
আপনাকে আগাম কালীময় শুভেচ্ছা।
দেখুন শুধু বিপদে-আপদে না, আনন্দেও আমরা প্রিয় মানুষ খুঁজি!
আপনিও তেমন ই খুঁজে ফেরেন!!
তবে আপনি আপন-জন খুঁজেও পেয়েছেন!!
আমি-ই আপনার সুখ সুখ দুঃখের সঙ্গী!!!
হেঁয়ালি না করে আসল কথাটি বলেই ফেলুন! এত্তদিন পরে এলেন!!
আবার আসবেন!!
ভ্রমণের গপ্পো না নিয়ে এলে খবর আছে কিন্তু!
নীলাঞ্জনা নীলা
হায়রে লক্ষ্মীপূজোই গেলো না। আর আপনি কিনা কালীপূজোর শুভেচ্ছা দিচ্ছেন?
ও কুবিরাজ ভাই, আপনারে সুখ-দুঃখের সঙ্গী পোস্ট থেকে আপনারে নমষ্কার, সালাম, আদাব, পেন্নাম সক্কল কিছু জানাইয়া আপাতত বিরতি দিতাছি। অনেক কষ্ট করছেন আপ্নে আমারে ভালু রাখতে। কিন্তু আমি ভালু থাকতে চাইনাআআআআআআআ ;(
বলতে গিয়ে থেমেই গেলাম
কী জানি বলছিলাম!?
মাথার ভেতর থেমে আছে
একশ আটটা ঘোড়া;
বোধ হয় এই-ই বলছিলাম। \|/
ভ্রমণ কাহিনী তো অনেক অনেক। কোনটা দিমু? জাপানের ঘটনা শুনবেন? 😀
ছাইরাছ হেলাল
নগদের যা কিছু দেবেন তাই নেব
দু’হাতে!!
মাত্র শতেক আটটি ঘোড়া!!
দিতে চাই সহস্রাধীকের ও কিছু বেশি!!
ছাইরাছ হেলাল
আপনি ভাল থাকতে না চাইলে তো হবে না!
আপনাকে সেটি দিচ্ছি না,
ভালু আপনাকে যে থাকতেই হবে!!
মা-কালীর দিব্বি!!
নীলাঞ্জনা নীলা
ধুত্তোর মরণ! আমি ভালু থাকতে চাইনা, আর আপ্নে…উফ বড়োই জ্বালাইতাছেন দেখি!
আমার কিছুই চাইবার নেই।
হাতের মুঠোয় আস্ত পৃথিবী, আর কী চাই আমার! —বুজছেননি কিতা কইবার চাইছি? 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
ঘোড়ার বদলে কি ঘোড়ার ডিম দেয়ার চিন্তা করছেন? 😀