সাজেদা খাতুন এখন কেমন আছে, তার মনের অবস্থা কেমন, কিছুই জানিনা। তার সাথে আমার একবারই দেখা হয়েছিল। দুই হাজার সতের সালের উনত্রিশ জানুয়ারিতে। সেদিন দেখা হওয়ার পর তাকে নিয়ে কয়েকটা লাইন লিখেছিলাম। সেগুলো আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। —-
সাজেদা খাতুন সকাল থেকেই খুব চিন্তিত। দৈনন্দিন রুটিন অনুযায়ী, ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করার কথা থাকলেও, আজ সকাল এগারটা পর্যন্ত এক ফোঁটা পানিও পান করেননি। শুধু সোফায় হেলান দিয়ে বসে একেরপর এক টিভির চ্যানেল বদলিয়ে যাচ্ছে। আর মিনিট পাঁচেক পর পর টয়লেটে যাওয়া আসা চলছে। কোপালেও ভয়ানক চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। মাথার উপরে ফ্যান চলছে, তবুও সাজেদা খাতুনের নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে ।
সকাল পেরিয়ে দুপুর হলো। হঠাৎ সাজেদা খাতুন চিৎকার করে উঠলেন। পরীক্ষার রেজাল্ট শোনার পর স্কুল পড়ুয়া ছেলে যেভাবে আনন্দে ইয়েস ইয়েস বলে চিৎকার করে উঠে, অনেকটা সেভাবে ইয়েস ইয়েস বলে চিৎকার করতে লাগলেন।
চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে তার নাতি এসে জিজ্ঞেস করলো,“কি হয়েছে দাদু আপু?”
“জিতে গেলামরে দাদু ভাই জিতে গেলাম”
“কি জিতে গেছেন?”
“ স্টার প্লাস, স্টার জলসা ও জি বাংলা বন্ধ চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট”
“ ওহ্ শিট! ”
২৩টি মন্তব্য
নিতাই বাবু
সব মাথা খারাপের দল! এসব দলের সদস্য আমার ঘরেও একজন আছে। স্টার জলসা নামের চ্যানেলটি যেদিন ক্লিয়ার না দেখতে পারবে, সেদিন রাতে আমার নিজেরই রান্না করে খেতে হবে। হায়রে জলসা আর রঙ তামাশা! সয়ে গেলাম দাদা নিরুপায় হয়ে!
আকবর হোসেন রবিন
হা হা হা…. দাদা আপনার জন্য সমবেদনা।
এই সিরিয়াল গুলো বন্ধ হবেনা। বন্ধ করলে ঘরে ঘরে অশান্তি বেড়ে যাবে। যদিও বড় পরিবারে অশান্তি সৃষ্টির পিছনে বেশি প্রভাব থাকে এসব সিরিয়ালের।
নিতাই বাবু
আরে দাদা, এই নিয়ে আমার ঘরেই তো বড় অশান্তি। এসব সিরিয়ালের জ্বালায় বর্তমানে আমি আমার ঘরে টেলিভিশন গোপনে নষ্ট করে রেখেছি। আমি যে টেলিভিশন নষ্ট করেছি, তা ঘরের গিন্নি এখনও টের পায়নি। টের পেলেই হবে মহাবিপদ।
আকবর হোসেন রবিন
হা হা ….
ইঞ্জা
😃😃😃😃😃😃😃😃
কই যামু? 😂😂
আকবর হোসেন রবিন
আপনি কই যাবেন! আপনি কোথাও চলে গেলে আমার লেখা পড়বে কে?
ইঞ্জা
আছি ভাই আছি।
সাবিনা ইয়াসমিন
যার যেটায় আসক্তি, সে সেটা না পেলেতো অসুস্থ হয়ে পড়বেই। তবে এই সিরিয়াল আসক্তি রীতিমত পীড়াদায়ক 🙁
কোথাও গিয়ে শান্তি পাইনারে ভাই 🙁
আত্মীয়ের বাসায়, প্রতিবেশির বাসায়, ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে থাকাবস্থায় চেম্বারের বাইরে, আরো যে কত জায়গায় এগুলো দেখতে হয়….. 🙁
আকবর হোসেন রবিন
‘যার যেটায় আসক্তি, সে সেটা না পেলেতো অসুস্থ হয়ে পড়বেই’ এটা ঠিক বলেছেন। মস্তিষ্ক অলস হয়ে গেলে মানুষের আয়ু শেষ হয়ে যায়।
তৌহিদ
হাসতে হাসতে জান বেড়িয়ে গেলো। আমাদের পারিবারিক জীবনে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম এসব চ্যানেলের সিরিয়ালগুলি। যার ইফেক্ট পড়ছে দৈনন্দিন জীবনে। এ গল্পটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
দারুন লেখা ভাই।
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
অবাস্তব সিরিয়াল গুলো আমাদের মন মানসিকতা পাল্টে দিয়েছে।
নারীদের মধ্যেই এই আসক্তি প্রবল।
উপস্থাপনার গুনে খুব হাসলাম 🙂
শুভ কামনা।
আকবর হোসেন রবিন
‘উপস্থাপনার গুনে খুব হাসলাম’ এমন মন্তব্য পেয়ে স্বস্তি বোধ হচ্ছে। কারণ, এই লেখার ক্যাটাগরি রম্য দেওয়ার পর খুবই দ্বিধায় ছিলাম আসলে, লেখাটা পাঠককে হাসাতে পারবে কি-না।
সুরাইয়া পারভিন
হা হা হা,,,, ভাগ্যিস সিরিয়াল নেশা আমার নেই
আকবর হোসেন রবিন
আপনার সিরিয়াল নেশা নেই, তাইতো এতো সুন্দর লিখতে পারেন।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এই সিরিয়াল নেশা বাংলাদেশকে সিরিয়াসলি গ্রাস করে ফেলেছে।
আকবর হোসেন রবিন
শহর থেকে গ্রামেও চলে গেছে। যেসব গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, ওখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখে। আমি একটা গ্রামে দেখেছি, মোবাইলের দোকানে সাইনবোর্ড লাগানো, ‘এখানে সিরিয়াল লোড করা হয়’
ছাইরাছ হেলাল
আহা সিরিয়াল।
মুক্তির উপায় নেই।
আকবর হোসেন রবিন
উপায় আসলে নাই। সরকার যদি কোনদিন বন্ধও করে দেয়, মানুষ অন্যকোন উপায়ে দেখা শুরু করবে। এই দেখুন না, পাবজি সহ কয়েকটা গেইমস বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপেরও দেখি মানুষ খেলতেছে, কিভাযে যেন ওরা নতুন উপায় খুঁজে বের করেছে।
আরজু মুক্তা
টিভি দেখিনা। আরও সিরিয়াল।
আকবর হোসেন রবিন
আমিও টিভি দেখিনা। আর এই যে আপনি টিভি দেখেন না, সিরিয়াল দেখেন না। তাইতো এতো সুন্দর করে লিখতে পারেন।
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
যে সব আপু,নানি/দাদি,আম্মা তার সাথে খালা-আম্মা এবং ফ্রী তে বাসার কাজের বুয়া সিরিয়াল দেখেন তাদের কে “তাদের অসীম ধৈর্যের” জন্য অস্কার দেয়া হোক।
“সিরিয়ালে এক লোক ভাতের টেবিলে ভাত খাইতে বইসা,প্লেটের ভাত প্লেটে থাকে,মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে করতে এক পরবো শেষ”।
কেমনে সহ্য করে এরা আল্লাহ মালুম।
আকবর হোসেন রবিন
আমার বড় ভাইয়ের বউ, অর্থাৎ আমার ভাবী খুব সিরিয়াল খোর ছিলেন। বিয়ের পর যখন আমাদের বাসায় আসলেন, তখন প্রায় সারাদিন রাত সিরিয়াল নিয়ে পড়ে থাকতেন। পরে খেয়াল করলেন, উনি ছাড়া আমাদের পরিবারে আর কেউই সিরিয়াল দেখেনা। কেউ সিরিয়াল দেখা পছন্দও করেনা। কেন জানি উনার মধ্যে কি যে উপলদ্ধি হলো জানিনা, ধীরে ধীরে উনি সিরিয়াল দেখা বন্ধ করে দিলেন। উনি এখন আমার মায়ের সাথে বসে খবর দেখেন। বাংলা নাটক দেখেন। ইত্যাদি দেখেন। আমার ছোট ভাইয়ের সাথে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখেন।