নড়াইল মীর্জাপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুলিশের মধ্যস্থতায় পাবলিকের পক্ষ থেকে দুইজন এসে গলায় জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে দিয়ে ক্ষান্ত হয়। ভাগ্যিস জুতার মালা পড়িয়েই ছেড়ে দিয়েছে, পিটিয়ে মেরে ফেলেনি। পুলিশ বিচক্ষণতার সাথে উত্তেজিত জনতার আক্রোশ থেকে তার জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে। ধন্যবাদ পুলিশ।
কিন্তু মরে গেছে সভ্যতা, মরে গেছে মানবতা, মরে গেছে মানবাধিকার, মরে গেছে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা। জয়ী হয়েছে মূর্খতা, জয়ী হয়েছে কূপমন্ডূকতার, জয়ী হয়েছে ধর্মান্ধতা, ধর্মের নামে অনাচার।
পূর্বাপর কিছু ঘটনার সাথে এই ঘটনার মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো ধর্মান্ধতা, অশিক্ষা, অসভ্যতার কাছে রাষ্ট্র, প্রশাসন কতটা অসহায়।
পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিপ্রবণ, মিথ্যাচারপ্রিয়, অসহনশীল, কুশিক্ষিত এই জাতি ধর্মের নামে যেন বারুদ হয়ে থাকে। স্রেফ একটু অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কেউ ছুঁয়ে দিলেই হলো!
এরা না জানে দ্বীন, না বোঝে দুনিয়া। ধর্মের শিক্ষাও নাই এদের অন্তরে। আছে অন্ধত্ব, আছে নির্বোধ চেতনা। ইসলামের অমিয় বাণী এদের হৃদয়ে পৌছায় নাই। এদের আছে বুক ভর্তি ঘৃণা, ক্রোধ, হিংসা।
এরা যখন একত্রিত হয়ে ‘মব’ হয়ে ওঠে তখন যেন তারা ‘জম্বি’ হয়ে যায়। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, কামার, চামার, অফিসার সবাই তখন একাত্ম হয়ে যায়। তারা অন্ধ, বধির, হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হিংস্র অমানুষ হয়ে ওঠে। তারা উন্মত্ত হয়ে সামনের সবকিছু নিমেষে ধ্বংস করে দিতে চায় প্রবল আক্রোশে। এদের দমন করার সামর্থ্য রাখে না রাষ্ট্র, প্রশাসন।
গত এক যুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে এই ঘটনাগুলো ঘটে আসছে। দিনদিন আরো প্রকট হচ্ছে এই সমস্যা।
সমাধান কী???
প্রচলিত শিক্ষা ব্যাবস্থা, শাসন ও বিচার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এই সমস্যার সমাধান সম্ভব না।কেবলমাত্র শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন বিকল্প নাই ।বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা ইউনিয়ন ওয়ার্ড মহল্লায় এই বিপ্লব ঘটাতে হবে।
স্বপন কুমার বিশ্বাসের ভিডিওটা দেখে লজ্জায় ও ভয়ে কুকড়ে গেছি আমি। সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীও কতটা অসহায় অই ‘জম্বি’দের সামনে।
১১টি মন্তব্য
সঞ্জয় কুমার
বর্তমানে ধর্মের নামে অধর্ম চলছে বেশী।
শিপু ভাই
জি
সাদিয়া শারমীন
আপনার লেখা পড়ে স্তম্ভিত হলাম। শ্রদ্ধা,সন্মান সবকিছু মানুষ ভুলতে বসেছে।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধর্ম রক্ষার নামে এখন বিচার ব্যবস্থাপনাতেও অস্থিরতা বিরাজ করছে যা দুঃখজনক এবং আশংকাজনক। ধর্মান্ধতার শেকড় উপড়ে ফেলা ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়েছে। *জম্বি* উপমাটা ভাল্লাগছে 🙂
আরও লিখুন শিপু ভাই।
শুভ ব্লগিং 🌹🌹
বোরহানুল ইসলাম লিটন
অনেক কিছুই ঘটছে যা কেউ কখনো ভাবেনি।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
ফয়জুল মহী
আপনার লেখায় অধ্যক্ষের সাথে জনতা কী করেছে সেটা জানতে পারলাম। আর অধ্যক্ষ কী করেছে সেটা নাই।
পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিপ্রবণ, মিথ্যাচারপ্রিয়, অসহনশীল, কুশিক্ষিত এই জাতি। (এই কথা মনে হয় পুরো ঠিক নয়)। আর কথায় কথায় নিজ দেশের লোককে জঙ্গী বলা উচিতও না। এইসবের জন্য রাজনৈতিক কালচারই দায়ী । মানুষের জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত জীবনমুখি কর্মময় শিক্ষার।
শিপু ভাই
আপনি ভুল পড়েছেন।
জঙ্গী লিখিনি। শব্দটা ‘জম্বি’
রোকসানা খন্দকার রুকু
থু ছিটালে নিজের উপরেই পরে। তিনি হিন্দু আর সংঘর্ষ মুসলমান জঙ্গির সাথে। মুসলমান হয়ে আমরা নিজেদের বরাবর জঙ্গি বানাই।
সুনির্দিষ্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষকেই জঙ্গি বলা হয়। সেখেত্রে আমরা সবাই কোন না কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী জঙ্গি।
আমি শিক্ষার সাথে জড়িত, প্রিন্সিপালরা সবচেয়ে করাপ্ট লোক।।তবে কেউ কেউ ভালোও হয়।
শিপু ভাই
আপনিও ভুল পড়েছেন। জঙ্গী লিখিনি। জম্বি লিখেছি।
আর হ্যা, করাপশনের জন্য তো তাকে এই অপদস্থ করা হয়নি।
জিসান শা ইকরাম
ঘটনা জেনে সাথে সাথেই এর ভিডিও পাই,
ছবি দেখে আর ভিডিও দেখার সাহস পাইনি, তাই দেখিনি।
নুপুর শর্মা কি বলেছে তা অধিকাংশ মানুষ জানেই না,
অথচ চিলে কান নিয়েছে শুনেই দৌড়াচ্ছে সবাই চিলের পিছনে।
দেশ যত উন্নত হচ্ছে, মানুষের চিন্তা চেতনা ততটাই পিছাচ্ছে।
শুভ কামনা।
হালিমা আক্তার
মুল ঘটনা জানি না। ধর্ম নির্ভর রাজনীতিতে এ কালচার থেকে বের হওয়া জটিল বলে মনে হয়। একপক্ষ সব কিছুতেই মৌলবাদ খুঁজে পায়। আরেক পক্ষ ধর্ম হীনতার নাম করে। নৈতিক বোধ না থাকলে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি দিয়ে কাজ হবে না।
শুভ কামনা রইলো।